D:\Picnic-2010\503.jpg একটি ঝড়-বৃষ্টির রাত বা দিন সম্পর্কে সবারই কমবেশী জানা। বর্ষাকালে এমনও ঘটে যে রাত দিনভর কেবল বৃষ্টি হতেই থাকে। কখনও প্রচন্ডভাবে আবার কখনও ঝিরঝির বৃষ্টি হয়। দিনের বৃষ্টিপাতে জনগণের দু:খ যাতনা অনেক সময় অসহনীয় হয়ে উঠে। জরুরি প্রযোজনেও বাইরে বের হওয়া যায় না।
কিন্তু রাতের বৃষ্টি ততটা দু:খবহ নয়। অনেক সময় সেটা উপকারী হয়। কিন্তু দু:শ্চিন্তার বিষয় হল তখন, যখন রাতের বৃষ্টির সাথে ঝড়-তুফান আরম্ভ হয়। তখন সেই ঝড়-বৃষ্টির রাত হয়ে উঠে ভয়ঙ্কর। শুধু বৃষ্টি হলে তেমন কোন অসুবিধার সৃষ্টি হয় না।
কেননা, রাত আসে বিশ্রামের জন্যই, বিশেষ কোন কাজ না থাকলে কেউ ঘর থেকে বের হয় না। শান্তভাবে রাতের বৃষ্টি মধুর ঘুমের আবেশ এনে দেয়। যার ফলে ভালো ঘুম হয়।
কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি যদি সন্ধ্যা রাতে হয়, তাহলে কি করা যায়? কেননা, সন্ধ্যা রাতে তো আর কেউ ঘুমুতে যায় না। তখন অলস বসে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না।
আর অলস বসে না থেকে যদি বৃষ্টি উপভোগ করা যায়, তাহলে কেমন হয়। বৃষ্টি উপভোগ করা মানে বৃষ্টিতে ভিজার কথাই বলছি। বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসে না এমন লোক কমই পাওয়া যাবে। এমনও কেউ আছে বৃষ্টি হলেই তার মন আনচান করতে থাকে, কীভাবে বৃষ্টিতে ভিজা যায়।
নয়নের বাসায় রাজ এবং সৌরভ এসে জড়ো হয়েছে।
এই বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় তাঁরা জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। সন্ধ্যার কিছু আগে থেকেই বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। বৃষ্টির সাথে প্রচন্ড গতিতে ঝড়ও বইছে। সৌরভ, রাজ আর নয়ন আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিল আজ বৃষ্টি হলে তাঁরা ভিজবে। যেই কথা সেই কাজ।
বৃষ্টি হচ্ছে তাই ভিজতে হবে। কিন্তু প্রচন্ড গতির ঝড়ের মধ্যে কিভাবে বাইরে বের হওয়া যায়? সাহসে কুলুচ্ছে না। যদি কোন বিপদ হয়! বৃষ্টিতে ভিজার জন্যেও তাঁদের মন আনচান করছে।
এসময় সৌরভ বলল- "আমার দাদীমা একবার আমাকে বলেছিলেন, ঝড়-তুফানের মধ্যে ভূত চলে। কাউকে ভূতে ধরলে তার রেহাই নাই।
কাজেই আমাদের যদি ভূতে ধরে? তাই এই ঝড়-তুফানের মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজা কি ঠিক হবে?"
নয়ন বলল- "আমরা পরিকল্পনা করেছি ভিজব, তাই ঝড় হলেও আমরা ভিজব, যা হবার হবে। এতো ভূত-টূতের ভয় পেলে চলবে না। আমরা তো পুরুষ লোক, পুরুষ লোকদের এতো ভয় পেতে হয় না। "
নয়নের কথায় রাজ সায় দিল। নয়ন এবং রাজ এই ঝড়ের মধ্যেও ভিজার জন্যে একমত হয়েছে তাই সৌরভও দ্বিমত করে থাকতে পারল না।
মা বকুনি দিবে তাই তিনজনই ঘর থেকে চুপিচুপি বেরিয়ে রাস্তায় চলে এলো। ঝমঝম তালে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির সাথে প্রচন্ড গতিতে ঝড়ও বইছে। বিদ্যুত চলে গেছে তাই চারদিকে শুধুই অন্ধকার। আকাশে ঘন ঘন বিজলী চমকাচ্ছে।
এ সুযোগে একে অপরকে খানিকটা দেখা যাচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টির কারণে রাস্তায় লোকজনের তেমন আনাগোনা নেই। গাড়িও চলছে না। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে, এই ঝড়-তুফানের মধ্যে ভিজতে দেখলে লোকে হয়তো মন্দ কথা বলত। হয়তো বলত- "রাতে বৃষ্টিতে ভিজছে, পাগল না-কি?"
ঝমঝম বৃষ্টির শব্দে অন্য কোন কিছুর শব্দ তেমন বোঝা যাচ্ছে না।
একে অপরের সাথেও জোরে জোরে কথা বলতে হচ্ছে। তিন বন্ধু ঘটা করে বৃষ্টিতে ভিজছে। একেকজন একেক কিসিমের রসিক-বেরসিক গল্পও শুনাচ্ছে। ঘন্টা তিনেক সময় বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় পার করে দিলেও বাসায় ফিরতে তাঁদের মন চাইছে না। সৌরভের মাথায় আবার মাঝেমধ্যে যতসব আজগুবি ভাবনা চেপে বসে।
এবারো সেরকমটি হলো। সৌরভ বলল- "এই বৃষ্টি ভেজা রাতে একটা ট্যাক্সিতে করে পুরো শহর চক্কর দিতে পারলে আরো ভালো লাগত। "
রাজ বলল- "রাত অনেক হয়েছে, ঠান্ডাও লাগছে তাই বাসায় ফিরতে হবে। "
নয়ন বলল- "সৌরভ যখন চাইছে ট্যাক্সিতে করে পুরো শহর চক্কর দিতে, একটু চক্কর দিই না? তাকে নিরাশ করা তো ঠিক হবে না। পুরো শহর না হোক আমরা কিছুটা জায়গা ট্যাক্সিতে করে ঘুরতে পারি।
কী বলিস সৌরভ?"
সৌরভ বলল- "নয়ন ঠিকই বলেছে। আমরা কিছু জায়গা ট্যাক্সিতে করে ঘুরতে পারি। "
রাজ বলল- "আচ্ছা ঠিক আছে। তবে বেশিক্ষণ নয়। "
সৌরভ বলল- "তোদের সবাইকে তো রাজী করলাম, কিন্তু এই ঝড়ের মধ্যে কি কোন ট্যাক্সি পাওয়া যাবে? ঝড়ের গতি যদি কিছুটা কমত তাহলে হয়তো ট্যাক্সিওয়ালারা ট্যাক্সি নিয়ে বাইরে আসত! আর আমরা ট্যাক্সিতে করে ঘুরে বেড়াতে পারতাম!"
নয়ন বলল- "আমরা কিছুটা সময় অপেক্ষা করি, দেখি কী হয়?"
ঝড় ততক্ষণে কিছুটা কমেছে।
তবে বৃষ্টি থেমে নেই। হঠাৎ একটা ট্যাক্সি কাছে এসে থামল।
সৌরভ বলল- "চল উঠে পড়ি। "
নয়ন এবং রাজ এতে সায় দিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে পড়ল। ড্রাইভারের সাথে কোন কথা না বলেই সবাই গাড়িতে উঠে পড়ল।
কী আশ্চর্য! গাড়িতে উঠতেই আবারো প্রচন্ড গতিতে ঝড় বইতে শুরু করল। গাড়িটিও চলতে শুরু করল। গাড়িটি মাঝোমঝে আটকে যাচ্ছে, আবার চলছেও। যেভাবেই চলুক কেউই এটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। সবাই হইহুল্লোড় করছে আর গাড়ি আপন গতিতে ছুটে চলেছে।
কতক্ষণ চলার পর ফিরে আসার জন্যে সবাই ড্রাইভারকে বলল-"আমাদেরকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যান। আমরা সেখানে পৌছে আপনার ভাড়া পরিশোধ করে দিব। "
ড্রাইভারের কোন সাড়া পাওয়া গেল না।
সবাই অবাক! কী হলো? ড্রাইভার কোন কথা বলছে না কেন?
ড্রাইভারের কোন সাড়া না পেয়ে আবারো তিনজন একসাথে বলল-"ড্রাইভার সাহেব, আমাদেরকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে চলুন। "
এবারো ড্রাইভারের কোন সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না।
সামনে তাকিয়ে সৌরভ দেখতে পেল গাড়িতে কোন ড্রাইভার নেই। অথচ দিব্যি গাড়ি চলছে।
সবার চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা হয়ে গেল!
সবার একই প্রশ্ন- "ড্রাইভারবিহীন গাড়ী চলছে কীভাবে? আর এখন গাড়িটি থামাবে কে?"
গাড়িটি কি কোন খাদে গিয়ে পড়বে? নাকি কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লাগবে? আল্লাহই জানেন।
সবাই দোয়া-দুরুদ পড়তে শুরু করে দিল। সৌরভ একটু বেশী বেশী দোয়া-দুরুদ পড়ছে আর বলছে- "আমি আগেই বলেছিলাম, ঝড়-তুফানের সাথে ভূত চলে।
কাজেই ঝড়-তুফানের রাতে ভিজার দরকার। শুধু শুধু ভিজতে গেলাম। আমি নিশ্চিত ভূত আমাদের পিছু নিয়েছে। এই গাড়িটিও মনে হয় ভূতের গাড়ি। নাহলে এই গাড়িটি চলছে কিভাবে? কেউ-না-কেউ তো গাড়িটি চালাচ্ছে, না-কি? আমার মনে হয় অদৃশ্য কোন ভূত গাড়িটি চালাচ্ছে।
ভূত এখন তার গাড়িতে করে আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাবে? আল্লাহই জানেন। "
নয়ন বলল- "এতো দুশ্চিন্তা করো না। দেখ, সব ঠিক হয়ে যাবে। "
গাড়িটি ঠিকই একপর্যায়ে আপনা-আপনি থেমে গেল। আশ্চর্য ব্যাপার! কারো কোন ক্ষতি হলো না।
সবাই গাড়ি থেকে নেমে পড়ল।
বৃষ্টি তখনো চলছে। তবে ঝড় তেমন নেই। অন্ধকারের মধ্যে একটি বাসার সামনে তিনজন দাঁড়িয়ে আছে। শরীরটা তাঁদের কাঁপছে।
ভয়ে না-কি ঠান্ডায়? আজ এসব কি হচ্ছে তাঁদের, কেউ বুঝে উঠতে পারছে না। যাক, মারাত্মক কোন দূর্ঘটনা থেকে তো রক্ষা পাওয়া গেল। এই হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির মাঝেও রাজ রসিকতায় পিছিয়ে নেই। রাজ সৌরভকে ঠাট্রা করে বলল- "কীরে সৌরভ, তোর ভূত গেল কই? ভয়ে কাঁপছিস নাকি?" আসলে সে নিজেও কাঁপছে।
রাজের কথা শুনে সৌরভ বলল- "তোর তামাশা বন্ধ কর।
ভীষণ ঠান্ডা লাগছে। ভিজা শরীর শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে জ্বর এসে যাবে। পাশের কোন বাসায় গিয়ে যদি জামাকাপড় পরিবর্তন করে শুকনো জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করা যেত!"
রাজ বলল- "আশেপাশে তো পরিচিত কারো বাসা নেই যে আমরা সেখানে গিয়ে উঠব। "
এসব কাঁনাঘুষা কথাবার্তার মধ্যেই পাশের বাসা থেকে একজনের ডাক শুনতে পাওয়া গেল- "এই কে ওখানে? ওখানে কি করছ?"
নয়ন সৌরভকে বলল- "আমাদেরকে মনে হয় কেউ ডাকছে।
"
হ্যাঁ। পাশের দু'তলা বাসা থেকে একজন মহিলা ডাকছেন। বলছেন- "বৃষ্টিতে ভিজছো কেন? জ্বর এসে যাবে তো! আমার বাসায় চলে এসো। এখানে ফ্রেশ হয়ে নাও। বৃষ্টি থামলে তারপর তোমাদের বাসায় ফিরে যেয়ো।
"
রাজ নয়নকে বলল- "কোন অপরিচিত মহিলার ডাকে এভাবে সাড়া দেয়া কি ঠিক হবে?"
নয়ন সৌরভকে ঐ মহিলার পরিচয় জানতে বলল।
সৌরভ মহিলাকে জিজ্ঞেস করল- "আপনি কে? আপনাকে তো আমরা চিনি না। "
মহিলা বললেন- "আমার পরিচয় জানা কি খুব জরুরি? আচ্ছা ঠিক আছে, মনে কর আমি তোমাদের একজন ভাবী!"
নয়ন বলল- "ভাবী! আপনাকে আমরা ভাবী বলে ডাকব?"
মহিলা বললেন- "হ্যাঁ, তোমরা আমাকে ভাবী বলে ডাকতে পার। "
অসম্ভব রকমের ভাবীপ্রিয় সৌরভ বলল- "ও, ভাবী! ঠিক আছে। আমরা আসছি।
"
নয়ন এবং রাজও সৌরভের পিছু পিছু সদ্য পরিচয় হওয়া ভাবীর বাসার দিকে ছুটল। সিঁড়ি বেয়ে দু'তলায় উঠতেই সবাই রীতিমত চমকে উঠল। সবাই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। বিদ্যুত নেই মোমবাতির আলোয় যতটুকু দেখা যাচ্ছে তাতেই ঐ মহিলাকে কী সুন্দর লাগছে! আকাশ থেকে যেন পরী নেমে এসেছে! আধো অন্ধকারের মধ্যেও যেন তার রূপ ঝলমল করছে! কেউ দৃষ্টি ফেরাতে পারছে না।
ভাবী বললেন- "কী হলো? এভাবে তাকিয়ে কী দেখছ? ভেতরে আস।
ফ্রেস হয়ে নাও। "
সৌরভ কিছুটা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল- "ও, ঠিক আছে। আমরা ভেতরে আসছি। আমাদেরকে কি একটা তোয়ালে দেয়া যাবে? ভেজা শরীরে ভীষণ ঠান্ডা লাগছে। "
ভাবী ভেতর থেকে একটা তোয়ালে এনে দিয়ে বললেন- "যাও, বাথরুমে ঢুকে এটা গায়ে জড়িয়ে নাও।
আর জামাকাপড়গুলো খুলে আমার কাছে দাও। আমি চুলোয় শুকোতে দিই। ওগুলো শুকালে আবার গায়ে পরে নিও। ঠিক আছে?"
রাজ ভাবীকে বলল- "আমাদেরকে কী ট্রাউজার দেয়া যাবে?"
রাজের কথা শুনে ভাবী বললেন- "আমি ট্রাউজার পাবো কোথায়? আমি ট্রাউজার পরি নাকি? আমার শাড়ী আছে, দিব?" বলেই ভাবী মুচকী মুচকী হাসলেন।
নয়ন ভাবীকে বলল- "না, বলছিলাম যে, ভাইয়া মানে আপনার স্বামীর কোন ট্রাউজার যদি থাকে তাহলে ওগুলো দিলেই চলবে।
"
ভাবী বললেন- "ভাইয়া মানে আমার স্বামীর কথা বলছ? ওকে পাবে কোথায়? ও তো ডাক্তার মানুষ। খুলনায় থাকে। মাসে একবার আসে। আর ওর জামাকাপড় সব ঐখানে থাকে। এখানে আসার সময় দু-একটা নিয়ে আসে।
"
নয়ন বলল- "ভাইয়া খুল.....নায় থাকে!
ভাবী বললেন- "হ্যাঁ, জনাব। "
সৌরভ বলল- "ও, তাহলে ভাইয়া বাসায় নেই?"
ভাবী বললেন- "আরে ধুর বোকা, তোমাদের ভাইয়া বাসায় থাকলে কি তোমাদেরকে এখানে আসতে বলতাম!"
সৌরভ বলল- "ঠিক আছে, এবার তাহলে আমরা জামাকাপড় খুলে আপনার কাছে দিই। আপনি ওগুলো শুকানোর ব্যবস্থা করুন। "
রাজ ফিসফিস করে সৌরভকে বলল- "আমরা কি বস্ত্রহীন হয়ে জামাকাপড় খুলে দিব নাকি?"
সৌরভ বলল- "বস্ত্রহীন হতে হবে কেন? তোয়ালে পরে নিবি। "
নয়ন বলল- "তোয়ালে তো মাত্র একটা আর আমরা মানুষ হচ্ছি তিনজন।
কাপড় শুকোতে দিলে দু'জনকে অন্তত বস্ত্রহীন থাকতে হবে। আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে। আমার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। "
সৌরভ ঠাট্রার স্বরে বলল- "আমার বেশ ভালো লাগছে। ভাবীর বাসায় আজ তোকে বস্ত্রহীন করে রাখব! হি হি হি....... "
ভাবী মনে হয় আড়াল থেকে কথাবার্তা কিছু শুনছেন।
তিনি কাছে এসে বললেন- "কাউকে এতো দুশ্চিন্তায় ভুগতে হবে না। কী লজ্জা পাচ্ছে! এ বয়সে এতো লজ্জা পেলে কি চলবে? ঠিক আছে, আমি তোমাদেরকে আরো দু'টি তোয়ালে দিচ্ছি। " বলেই ভাবী ভেতর থেকে দু'টি নূতন তোয়ালে এনে দিলেন।
একজন একজন করে বাথরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে নিল। তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে সবাই জামাকাপড় শুকাতে ভাবীর কাছে দিয়ে দিল।
আধো শরীরে তোয়ালে পরে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে। লজ্জাও লাগছে। কেননা, শরীরের অধিকংশই তাঁদের দেখা যাচ্ছে। একজন সুন্দরী মহিলার সামনে এভাবে বসে থাকা ভীষণ কষ্টকর।
ভাবী জামাকাপড় শুকাতে চুলোর উপর দিয়ে আসলেন।
ফিরে এসে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে খোশ গল্প শুরু করলেন। এদিক-সেদিক তাকিয়ে তিনি মুচকী মুচকী হাসছেনও। অন্যদিকে লজ্জায় একেকজন রীতিমত কাঁপছে।
ভাবী বললেন- "সবাই কাঁপছ কেন? এখনও ঠান্ডা লাগছে নাকি? ঠিক আছে, আমি তোমাদেরকে গরম করার ব্যবস্থা করছি। "
এ কথা শুনে সৌরভের চোখ যেন মাথার উপরে উঠে গেল, বলল- "কিভাবে?"
ভাবী বললেন- "অপেক্ষা কর।
আমি ভেতর থেকে একটু পরে আসছি। " বলেই ভাবী ভেতরের রুমে চলে গেলেন। সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে- "এসব কী হচ্ছে? আমরা কোন বিপদে পড়তে যাচ্ছি না তো?"
দশ-পনের মিনিট পরে ভাবী ট্রে হাতে উপস্থিত হলেন। টেবিলে ট্রে রেখে সোফার এক কোনায় তিনি বসলেন আর বললেন- "এখানে শরবত এবং চা দু'টোই আছে। শরবতটাও হালকা গরম পানিতে বানানো।
সুতরাং তোমাদের ঠান্ডা লাগার চান্স নেই। যার যেটা পছন্দ সেটা খেতে পার। "
সৌরভ বলল- "আমি চা পছন্দ করি না। "
নয়ন এবং রাজও একই সুরে বলল- "আমিও পছন্দ করি না। "
ভাবী বললেন- "আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে শরবতই পান কর।
"
ভাবীর কথামত সবাই শরবত পান করল। পান করে মনে হলো শরবত তো নয়, যেন অমৃত। এতো সুস্বাদু শরবত আগে কখনো পান করেছি কিনা সেটা কেউ মনে করতে পারছে না।
ভাবীর সাথে তাঁদের আড্ডাটা বেশ জমে উঠেছে। সবার মুখ থেকে যেন আজ কথার ফুলঝুরি বেরুচ্ছে।
কারো কথা যেন শেষই হচ্ছে না। ততক্ষণে বিদ্যুতও চলে এসেছে। বৈদ্যুতিক আলোয় ভাবীকে আরো বেশী অপূর্ব লাগছে। এখান থেকে চলে যেতে কিছুতেই তাঁদের মন চাইছে না। তবু তো যেতে হবে।
দেয়াল ঘড়ির দিকে খানিক তাকিয়ে ভাবী বললেন- "রাত অনেক হয়েছে। বৃষ্টিও থেমে গেছে। তোমাদেরকে এখন বাসায় যাওয়া উচিত। তোমাদের বাসার লোকজন হয়তো দুশ্চিন্তা করবে। লোকে দেখলেও মন্দ কথা বলতে পারে।
আজকালকার লোকেরা কখন কী বলে বসে, বলা তো যায় না! দেখি, তোমাদের জামাকপড় শুকিয়েছে কিনা?" এতোক্ষণে চুলোর আগুনে জামাকাপড় সব শুকিয়ে গেছে।
ভাবী ভেতর থেকে শুকনো জামাকাপড় এনে দিলেন। নিজেদের জামাকাপড় পরে সবাই নিজ নিজ বাসায় ফিরে এলো।
সৌরভ, রাজ এবং নয়ন ঐ মহিলাকে দেখে প্রথমে কত কিছুই না ভেবেছিল। অথচ মোটেও সেরকম কিছু নয়।
তিনি খুবই ভালো মানুষ। তাঁর ব্যবহারে তারা তিনজনই মুগ্ধ। পৃথিবীতে এমন বহু মানুষ আছেন, যাঁরা ভালো মানুষের সান্নিধ্য পেলে খোলা মনে আড্ডা জমিয়ে তোলেন।
আজও তাঁরা ঐদিনটির কথা ভুলতে পারে না। এতো অতিথিপরায়ন মানুষটিকে কি ভুলে থাকা যায়?
অত:পর ঐ মহিলার সাথে পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পবিত্র সম্পর্ক আজ অবধি অটুট আছে।
আপন ভাবী না হলেও সৌরভ, রাজ এবং নয়ন তিনজনই শ্রদ্ধাভাজন ভাবী হিসেবেই তাকে মান্য করে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।