আমি দিগবিজয়ী কোন ব্যাক্তি নই, অতির মধ্যে আরও অতি সাধারণ, আড্ডা মারতে পছন্দ করি,... পড়ালেখা করা আমার ভীষণ অপছন্দ, কিন্তু আফসোস ওটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে করতে হয়... বয়স নিয়ে লোকজন প্রায়ই বিড়ম্বনার শিকার হন, কারো বয়স বেশি দেখায় বলে আফসোস করেন, আবার কারো বয়স কম দেখায় বলে আফসোস করেন। আমি দ্বিতীয় দলের লোক। ছোটবেলা থেকেই আমার যা বয়স, তার থেকে নাকি অনেক কম দেখায়। আর এ কারণে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিব্রতকর অবস্থার শিকার হয়েছি, এরকমই কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করছি-
ঘটনা-০১
সে অনেক কাল আগের কথা, আমি তখন ক্লাস টেন এ পড়ি, বাসে করে কোচিং করতে যাই, তো এরকম এক কোচিং করতে যাওয়ার দিন আমি ঠেলে ঠুলে বাসে উঠে পড়লাম। উঠতে না উঠতেই দেখি এক ভদ্রমহিলা আমাকে তার পাশের সিটে বসার জন্য ডাকছে, আর সেই সিটে অলরেডি একজন লোক বসার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে, যাইহোক সেই মহিলা আমাকে ডাকা ডাকি করে তার পাশে বসালেন, তারপর জিজ্ঞেস করলেন কোথায় যাচ্ছি?? আমি জবাব দিলাম কোচিং এ।
তিনি বললেন এত বাচ্চা অবস্থায় কোচিং- কোন ক্লাসে পড় তুমি??? আমি বললাম ক্লাস ১০, তিনি আমার জবাব শুনে চোখ কপালে তুলে বললেন কি??? আমি তো ভেবেছিলাম ক্লাস ফাইভে বা সিক্সে পড় , তারপর তিনি বললেন তোমাকে তুমি করে বললাম কিছু মনে করোনা, আমিও প্রায় তোমারই সমবয়সি ।
এরপর তিনি পুরাই ঝিম মেরে বসে থাকলেন, আর একটা কোথাও বললেন না ।
ঘটনা-০২
গত নির্বাচনে জীবনে প্রথম বারের মত ভোটার হলাম । জাতীয় আইডি কার্ড পাওয়ার পর নিজেকে সেরকম গুরুত্তপূর্ণ লোক মনে হতে লাগলো, ভাবটাই বেড়ে গেলো অন্যরকম, যদিও নামের বানানে ভুল, আর চেহারা তো মাশাল্লাহ, এইটা কি মানুষ না পাখী সেটাই বুঝা গেলনা, যাইহোক তারপরও ভাব একটুও কমলো না । তো দেখতে দেখতে ভোটের সময় এসে গেলো, নির্বাচনের দিন একেবারে নায়কের মত সাজ দিয়ে, নায়ক নায়ক ভাব নিয়ে বন্ধুবান্ধব পরিবার সবাইকে বাদ দিয়ে সবার আগে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাড়িয়ে গেলাম।
এবং যথাসময়ে ভোট দিয়ে ফেললাম। ভোট দিয়ে বের হতেই দেখি আমার একবন্ধু ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাড়িয়ে আছে, চিন্তা করলাম তাকে ভোট দেয়া নিয়ে একটু জ্ঞান দেই। যেমন ভাবা তেমন কাজ, তার কাছে গিয়ে বললাম, কিরে এখন আসলি আমার তো ভোট দেয়া শেষ। যেই না এই কথা বললাম তখনি এক মুরুব্বী টাইপ লোক আমার হাত পাকড়াও করে আসামী ধরার ভঙ্গিতে বললেন- তুমি ভোট দিয়েছ?? আমি একটু ঘাবড়ে গেলেও সাহস নিয়ে বললাম জ্বী আঙ্কেল। তিনি আবার বললেন আসলেই ভোট দিয়েছ?? আমি বললাম জ্বী আঙ্কেল।
তিনি বললেন তোমার ১৮ বছর হয়েছে বলে তো মনে হয়না, দেখি তোমার আইডি কার্ড দেখাও। কপাল ভাল যে মানিব্যাগ এ আইডি কার্ড ছিল, তা দেখিয়ে দিলাম, তিনি কার্ড দেখে বললেন-এই ছবি তো তোমার বলে মনে হয়না, আমি তখন মনে মনে বললাম আজকে মনে হয় কপালে খারাবি আছে , যাইহোক আমি উত্তর দেয়ার আগেই আমার বন্ধু পেছন থেকে বলল, না আঙ্কেল সব কার্ডেই একই সমস্যা, চেহারা বুঝা যায়না, ও আর আমি একসাথে ফর্ম পূরণ করেছি, আমরা একই এলাকায় থাকি। এই কথা শুনে আঙ্কেল ওকে জিজ্ঞেস করলেন তোমার বন্ধু?? ও বলল জ্বী আঙ্কেল। তখন আঙ্কেল বললেন দেখে তো মনে হয়না, মনে হয় একটা বাচ্চা ছেলে। এরপর নিতান্ত অনিচ্ছায় আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললেন যাও বাবা বাসায় যাও, আর আমিও কোন মতে যান নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
ঘটনা-০৩
তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ফাইনাল ইয়ারে উঠেছি, বাসা চেইঞ্জ করে নতুন ফ্ল্যাট এ উঠলাম। পাশের ফ্ল্যাট এ এক অত্যন্ত বয়স্ক আঙ্কেল তার পরিবারের সাথে বসবাস করেন। প্রায়ই সিঁড়ির মাথায় তার সাথে সাক্ষাৎ হয়, এবং তাকে দেখলেই লম্বা একটা সালাম দেই, কিন্তু আফসোস তার কোন সুন্দরী মেয়ে নাই। যাইহোক আমার সালাম দেয়ার কারণেই হোক, বা আমার নূরানি চেহারার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণেই, হোক একদিন তিনি আমাকে সিঁড়ির মাথায় জিজ্ঞেস করে বসলেন- বাবা তুমি কোন ক্লাসে পড়?? তার প্রশ্ন শুনে আমার শীতকালেও ঘাম ছুটে গেলো , আর মনে মনে চিন্তা করলাম, আঙ্কেলের চোখ মনে হয় বয়সের কারণে তার সাথে বেঈমানি শুরু করেছে। যাইহোক, আমি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষন খাম্বার মত দাড়িয়ে থেকে বললাম আঙ্কেল আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তিনি বললেন ও ফার্স্ট ইয়ার?? আমি বললাম না আঙ্কেল- অনার্স ফাইনাল ইয়ার।
আমার উত্তর শুনে এবার তিনি খাম্বার মত দাড়িয়ে গেলেন, আর কোন কথা না বলে শুধু একটা 'ও' বলে বাসায় ঢুকে গেলেন, আর আমিও কোনমতে বাসায় ঢুকে সিদ্ধান্ত নিলাম- সবই কপাল আর কপালের আরেক নাম গোপাল
এরকম আরও বেশ কিছু অভিজ্ঞতা আছে যা বলার ইচ্ছা ছিল কিন্তু পোস্ট মনে হয় বড় হয়ে যাচ্ছে, তাই আপাতত বিদায় নিলেও , আবার আসিবি ফিরে, এই ব্লগের নীড়ে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।