দার্জিলিং,ব্রিটিশদের গড়া অন্যতম একটি হিল স্টেশন। আমরা নানা কাজে কর্মে কিংবা উঠতে বসতে ব্রিটিশদের যতই সমালোচনা করি না কেন,কিছু ব্যাপারে ওদেরকে বাহবা দিতেই হবে। কারন ব্রিটিশরাই লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যাওয়া এই স্বর্গপূরীকে হিল স্টেশন বানিয়ে এটিকে বিখ্যাত করে যা কিনা যে কোন ভ্রমণ পিপাসু মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
আমার ব্যাক্তি জীবনে যতটুকু ভ্রমণের সৌভাগ্য হয়েছে তার বেশির ভাগই জুন-জুলাই মাসে করা,কারণ আমার পরীক্ষা শেষ হতো জুনে আর তার পরই শুরু হয়ে যেত মাথা থেকে গ্রন্থগত বিদ্যা ঝেড়ে ফেলার পালা (ঘোরাঘুরির পালা)। আমাকে অনেকেই বলেছে বর্ষাকালে ঘুরতে বের হওয়া বোকামির শামিল,ঐ সময় কিছুই দেখা যায় না।
কিন্তু আমার এই পিপাসু মন ভ্রমণকে কোন সময়ের গণ্ডীতে বেঁধে রাখার পক্ষে ছিল না। আমি বিশ্বাস করি ঘুরতে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় দরকার হচ্ছে মন,সেখানে সিজনটাকে খুব বেশি বড় করে দেখার কিছু নেই কারণ আমরা যে এই নাগরিক জিবনের ব্যাস্ততাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ঘুরার সময় বের করছি সেটাই অনেক বেশি। ডিসেম্বর মাসে কক্সবাজার ভালো কিংবা শীতকালে সিলেট ভালো এসবই আমার কাছে অর্থহীন মনে হয়। কারণ বর্ষায় সমুদ্রের গর্জন এখনও আমাকে দুই হাত দিয়ে ডাকে। তাই আমি সবাইকে বলবো সময় পেলে বেরিয়ে পড়ুন,প্রতিটি মুহূর্তেই প্রকৃতি বদলায় সেই বদলানোটা দু চোখ ভরে দেখতে পাওয়াটাই মূল কথা,তাছাড়া প্রকৃতি কখনো আপনাকে বঞ্চিত করবে না।
আমি দার্জিলিং গিয়েছিলাম ২০১০ এর জুলাই মাসে। প্রথমে আমি ভীষণ দ্বিধার মধ্যে ছিলাম যাবো কি যাবো না কারণ এর কিছুদিন আগেই সেখানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছিল। আমি তখন নিয়মিত ওয়েদার রিপোর্ট দেখতাম দার্জিলিং এর। একদিন নেট ঘাটতে গিয়ে সন্ধান পাই মিজানুর রহমান [ভাই] নামের একজন ভদ্রলোকের যিনি কিনা একটি ভ্রমণ গল্প লিখেছিলেন এবং ঐখানে ফোন নাম্বারও দিয়েছিলেন। উনার সাথে কথা বলেই আমি উৎসাহ পাই এবং উনি আমাকে বাজেট সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা দিয়েছিলেন, আমি আজও সেই কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।
যাই হোক,আমরা ৩ জন ভিসার জন্য দাড়াই এবং এর পরদিন ভিসা পাই। আমরা ভিসা পাওয়ার পরদিনই টিকেট বুক দেই। মাঝখানের দিনটা যে কিভাবে কেটেছিল সেটা বলে বুঝানো যাবে না,সময় মনে হয় কাটছিলই না। যাই হোক আমরা পরদিন রাত ৯ টায় যথারীতি শ্যামলীর কাউন্টারে গিয়ে হাজির কিন্তু গিয়ে দেখি বিধি বাম। আমাদের দুই বন্ধুর স্থল বন্দর ছেংরাবান্ধা লিখা থাকলেও অপরজনেরটা ছিল সাতক্ষীরা বর্ডার।
মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেল,কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না,মনে হচ্ছিল নিজের মাথার চুল নিজে ছিঁড়ি। এর মধ্যে ফয়সাল দালালের সাথে যোগাযোগ করল এবং সে নিশ্চয়তা দিল যে কাল সব ঠিক করে দিবে কিন্তু আমরা যে ৩টি টিকেট কিনলাম তার কি হবে?অবশেষে ৩ জন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা ২ জন যাবো গিয়ে সাথে সাথেই ফয়সালকে ফোন করে আমাদের হোটেলের ঠিকানা জানিয়ে দিব,এই মর্মে ফয়সাল পরদিন আসবে বলে আমাদের কথা দেয়।
রাত ১০টায় রওনা হয়ে আমরা বুড়িমারি পোছাই পরদিন সকাল ৭ তায়,মাঝে আধা ঘণ্টার ব্রেক ছিল। বর্ডার খুলেছিল ৯টায় এবং সেখানে আমাদের প্রায় দেড় ঘণ্টা লেগেছিল ফর্মালিটি সারতে। আমরা শিলিগুড়ি পৌঁছেছিলাম বিকেল ৩ টা ৩০ মিনিটে,তখন রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল,এখন কি অবস্থা আল্লাহ মালুম।
শিলিগুড়ির বিরিয়ানি কয়জন খেয়েছেন আমি জানি না,তবে কেবল এতটুকুই বলবো যে এর বাহ্যিক রুপ দেখে মোহিত হবার কোন কারণ নেই। ওখানের বিরিয়ানি দেখতে যতটাই সুন্দর,খেতে ঠিক ততখানি পচা। আমি ভাবতে লাগলাম এরা যদি পুরনো ঢাকার বিরিয়ানির স্বাদ পেত তাহলে জীবনে বাংলাদেশ ছেড়ে যেত না। খাওয়ার পর্ব সেরে আমার ৩গ্রুপ মিলে একটি জিপ ভাড়া করি দার্জিলিং যাওয়ার জন্য যার ভাড়া ছিল ৯০০ রুপি। তো শুরু হল আমাদের যাত্রা।
শিলিগুড়ি ছেড়ে সামনে এগুলেই চোখে পড়বে অজস্র চা বাগান,তার একটু পরেই একটি ক্যান্টনমেন্ট ছিল,ক্যান্টনমেন্টের পরিবেশ খুবই এককথায় মনোমুগ্ধকর। দার্জিলিং যাওয়ার পথে কত যে চা বাগান আর কত যে ঝর্না পড়ে সেটা কেবল যারা গিয়েছেন তারাই বলতে পারবেন।
এই ছবিটি যাওয়ার পথে তোলা।
পথিমধ্যে এমন মেঘের আনাগোনা খুবই সাধারন ব্যাপার।
আমরা প্রায় ৩ ঘণ্টা পর দার্জিলিং পৌছাই,আমাদের ভ্রমণ সঙ্গীরা হোটেল সোনার বাংলাকে বেছে নিলেও আমরা বেছে নিয়েছিলাম মল রোড এর পাশের একটি হোটেল কারণ শ্রদ্ধেয় মিজান ভাই বলেছিলেন ওখান থেকেই নাকি মেঘের সবচাইতে ভালো ভিউ পাওয়া যায়।
বাস্তবিকই আমরা উনার কথা প্রমান হাতে নাতে পেয়েছিলাম।
এই পথ ধরে উপরে গেলেই মল রোড।
[চলবে] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।