আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গনি মিয়া

এক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবার বাস করতো । তাদের দালান ঘর ছিল, চাষবাসের অনেক জমি ছিল অনেক চাকর-বাকর আর জনা পাঁচেক বিড়াল ছিল । জনা পাঁচেক বললাম কারণ এগুলো বাড়ির অন্যান্য মানব সন্তানের ন্যায় প্রতিপালিত হতো । ঠিক পাশের কুড়ে ঘরে থাকতো সহায়-সম্বলহীন দরিদ্র গনি মিয়ার পরিবারের বাস । তাদের সকালে খাবার জুটলে তো দুপুরে জুটতো না ,আর দুপুরে জুটলেতো রাতে জুটতোনা ।

দুই আইবুড়ো মেয়ে আর দুটা বাচ্চা ছেলে নিয়ে বাড়ির কর্তা ছিলেন বড়ই অসহায়। মাংসের কথাতো দুরে থাক , চুনো-পুটি মাছ কবে খেয়েছে ওরা তাও ভুলে গেছে । এদিকে পাশের বাড়ির চাকরগুলোতো প্রতিদিন নিয়ম করে বাজারের সেরা চুনোপুটি গুলো কিনে নিয়ে যায় । এদেখে তাদের আর দুঃখের শেষ থাকেনা । গনি মিয়া একদিন ভাবে , "কর্তারা প্রতিদিন এত এত চুনোপুটি খায় , আমিও একদিন বাজারের সেরা চুনোপুটি কিনে আনবো ।

একদিনের জন্য হলেও কর্তাদের সমান হবো । " যেই ভাবা সেই কাজ । দুদিন খুব খেঁটে কিছু টাকা জমিয়ে চলে গেল বাজারে । কিনলো বাজারের সেরা চুনোপুঁটি ; খুশিতে বাগবাকুম করতে করতে বাড়ি আসলো । উঠোনের মাঝে ভাঙা চেয়ারটায় বসে মুখে বিড়ি ফুঁকে কর্তার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে দিবাস্বপ্ন দেখছিলো ।

পাশ দিয়েই যাচ্ছিল কর্তার বাড়ির চাকর রথেন । ওকে যেতে দেখেই গনি মিয়া বলে উঠলো , '' ও রথেন ! আজতো বাজারে চুনোপুঁটি পাওনি তাইনা ?" বলেই একটা অট্টহাসি দিয়ে উঠলো যেন আজ কর্তাকে সে জব্দ করতে পেরে খুব খুশি । রথেন বললো ,"তা আর বলতে ! আজ বাজারে যেতেই দেখি কোন চুনোপুটি নেই । কি আর করা ! আজ বাড়ির বেড়ালগুলোকে পঁচা মাছই খাওয়াতে হবে । " তারপর গনি মিয়ার মুখে ঐ মাছ গিয়েছিলো কিনা জানা নেই ।

মায়ের কাছে শুনা সম্পূর্ন সত্য ঘটনা । এবার পশ্চিম বাঙলা ভ্রমনে ঘুরে এসেছি সেই কর্তাদের বাড়ি ,সেই গনি মিয়া(গল্প নাম)র বাড়ি । কর্তারা আগের মতোই আছে তবে গনি মিয়ার অবস্হা আর আগের মতো নেই । তাদেরও দালান বাড়ি হয়েছে , বাড়িতে পুকুর আছে , চাষবাসের জমি আছে । ছেলে দুটো শহরে চাকুরে করছে ।

তাদের আজ সবই আছে শুধু গনি মিয়া নেই । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।