আমি জাতির আধার রাতের আলো...
একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে 'মুসলিমবিরোধী', 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ' ও 'অযৌক্তিক' প্রমাণ করতে তৎপরতা চালাচ্ছে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিদেশি বন্ধুরা। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পত্রিকায় নিবন্ধ লিখে এ বিচার সম্পর্কে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি এ কাজে তারা ব্যবহার করছে ফেসবুকের মতো সামাজিক গণমাধ্যম এবং একাধিক ভাষার ওয়েবসাইটও। সৌদি আরবের এক সাবেক কূটনীতিক গত বুধবার সৌদি আরবের একটি পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় এক নিবন্ধে জামায়াত নেতা গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগকে 'অবিশ্বাস্য' আখ্যা দিয়ে তাঁকে মুক্তির নির্দেশ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
জেদ্দা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সৌদি গেজেটে সম্পাদকীয় পাতায় অভিমত কলামে লেখাটি ছাপা হয়েছে।
'লেটার টু শেখ হাসিনা' (শেখ হাসিনাকে চিঠি) শিরোনামে এটি লিখেছেন সাবেক সৌদি কূটনীতিক ড. আলী আলগামদি।
ড. আলী আলগামদি বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাসে দায়িত্ব পালনের সময় ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন বলে সৌদি গেজেটের অন্য প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।
নিবন্ধে আলী আলগামদি দাবি করেন, শেখ হাসিনা তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের 'বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত' বাতিল করে যুদ্ধাপরাধের ইস্যুটি আবার সামনে আনায় সবাই বিস্মিত হয়েছে। তিনি আরো দাবি করেন, শেখ হাসিনার আগের মেয়াদে এবং তাঁর বাবার মেয়াদে যেসব 'মুসলিম নেতা' গ্রেপ্তার হননি, তাঁদের গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত কোনোভাবে ন্যায়সংগত হতে পারে না। শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'ওই সিদ্ধান্ত দেশের জন্য ভালো কিছু আনতে পারে না।
এটি জনগণকে বিভক্ত করবে এবং দুর্ভোগ বাড়াবে। এর প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের নেতা হিসেবে আপনার (শেখ হাসিনা) ওপরও পড়বে। '
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণকে ভালোবাসেন বলে দাবি করে ড. আলী আলগামদি বলেন, গোলাম আযমের মতো 'মুসলিম নেতাদের' গ্রেপ্তার করায় 'গোটা মুসলিম বিশ্ব হতাশ। ' তিনি এ-ও দাবি করেন, ৪০ বছর আগের ঘটনার জন্য গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
লেখাটিতে অনেক তথ্যগত ভুল রয়েছে।
আলী আলগামদি লিখেছেন, 'যুদ্ধাপরাধ' আইনসহ বেশ কিছু আইন করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। 'যুদ্ধাপরাধ' আইনের বলে নাকি ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হয়েছিল! পরে ওই ১৯৫ পাকিস্তানিকে ক্ষমা করে দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান নাকি মুসলিম বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। আলী আলগামদি বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগীদের বিচারের জন্য আইন পাস করার পর এক লাখেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়া ওই ব্যক্তিদের কেউই নাকি রাজনীতিক ছিলেন না!
বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে আগেও সৌদি সংবাদমাধ্যমে লিখেছেন ড. আলী আলগামদি। গত ৯ মে সৌদি গেজেটে তিনি গোলাম আযমকে গ্রেপ্তারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
জানা গেছে, এ বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে নানারকম অপপ্রচার চলছে। 'জামায়াত নেতাদের মুক্তি আন্দোলন- রাজনৈতিক এই নিপীড়ন মানবতাবিরোধী', 'ফ্রি জামায়াত লিডারস' নামে ওয়েবসাইট খুলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া গোলাম আযম ডট নেট নামে আরেকটি ওয়েবসাইট রয়েছে, যাতে বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় তথ্য প্রচার করা হয়।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি কূটনীতিক বলেন, অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় অনেক সময় যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি আসে। একটি মহল বিদেশিদের এ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দিচ্ছে।
এটি উদ্বেগের। সৌদি গেজেটে ড. আলী আলগামদির লেখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সৌদি আরব বিদেশে আমাদের প্রধান শ্রমবাজার। সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে এমন প্রচারণায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। ওই লেখায় এমন ধারণা দেওয়া হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রীই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিচ্ছেন। এটা যে আদালত ও আইনের আওতায় হচ্ছে, তা প্রচারের সুযোগ রয়েছে।
'
ওই কূটনীতিক বলেন, 'যুদ্ধাপরাধের বিচার স্পর্শকাতর হলেও আসলে কী হচ্ছে তার কিছুটা হলেও যদি বিদেশিদের জানার সুযোগ থাকে, তাহলে উদ্বেগ বা অপপ্রচার অনেকটাই কমবে। '
পাঠকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে নীচে ৯ই মে সৌদি গেজেটে প্রকাশিত ড. আলী আলগামদির লেখার অনুবাদটি প্রকাশ করা হলো
সৌদি গেজেটে প্রশ্ন : ৪০ বছর পরে গোলাম আযমকে গ্রেফতার কেন?
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য হিসেবে অভিহিত করেছে প্রভাবশালী সৌদি গেজেট। ৪০ বছর পর গোলাম আযমকে গ্রেফতার কেন?- প্রশ্নটি করে পত্রিকাটিতে আজ বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গোলাম আযম তার ধার্মিকতা, ন্যায়নিষ্ঠতা, সততা ও বিশ্বস্ততার জন্য ইসলামি বিশ্ব শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। অথচ তার বিরুদ্ধে এখন ৪০ বছর আগের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এটা শুধু বিস্ময়কর বিষয়ই নয়, এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়ও।
৯০ বছর বয়স্ক এবং ১০ বছরেরও বেশি সময় আগে রাজনীতি থেকে অবসরগ্রহণকারী ব্যক্তিটিকে কারাগারের নিঃসঙ্গ সেলে আটক রাখার কোনো যুক্তি আছে কি?
প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন ৪০ বছর পরে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দসহ গোলাম আযমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং পশ্চিমা দেশগুলোর বিপুলসংখ্যক প্রখ্যাত আইনজীবী নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন।
সৌদি গেজেটে বলা হয়, গোলাম আযম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ১৯৯৩ সালে বিএনপি’র আমলে তিনি ১৬ মাস আটক ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট তাকে মুক্তি দেয়ার আকোনো প্রমাণ আমরা পাইনি।
’
এখন ৪০ বছর পরে আবার বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। অথচ আটককৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো সরকারের আমলেই কোনো অভিযোগ ওঠেনি। এমনকি ১৯৯৬-২০০২ সালে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ আমলেও নয়। কারো বিরুদ্ধেই মানবতাবিরোধী কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। ফলে ৪০ বছর পরে গোলাম আযমের মতো একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিকে আটক রাখার কি যুক্তি থাকতে পারে?দেশে বলেন যে ‘স্বাধীনতার যুদ্ধকালে কথিত নৃশংসতার সাথে তার প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততারকোনো প্রমাণ আমরা পাইনি।
’
কস্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ এবং আসুন আমরা সকলে মিলে মহাযুদ্ধাপরাধী, জামাইত্যা-রাজাকার গংদের বিরুদ্ধে আমার-আপনার মনের সমস্ত ঘৃণা(মন্তব্যের) মাধ্যমে..............-প্রকাশ করি......... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।