আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইনু ভাইদের কলাতঙ্ক

আমরা সব কিছু বুঝি ঠিকই, কিন্তু করতে পারি না! জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একাংশের স্বত্বাধিকারী হাসানুল হক ইনু ও তার ‘চাটাং ফাটাং’ কর্মকাণ্ড নিয়ে অগ্রজ সাংবাদিক মাহবুব কামাল কিছুদিন আগে দৈনিক যুগান্তরে একটি পোস্ট লিখেছেন। জাসদ ছাত্রলীগের এক সময়ের কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার (নাম প্রকাশ করা হলো না) কাছে মাহবুব ভাইয়ের লেখার প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বললেন, ওই লোকটার (ইনু) কারণেই শত শত মেধাবী ও সম্ভাবনাময় তরুণ ব্যক্তিজীবন নিয়ে আজ চরম হতাশার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। একটি বই হাতে তুলে দিয়ে ওই কর্মকর্তা বললেন, এ বইটি পড়লে হাসানুল হক ইনুর হঠকারিতার বিষয়ে জানতে পারবেন। বিশিষ্ট কলামিস্ট সাহাদুজ্জামানের লেখা ‘ক্র্যাচের কর্নেল’ বইটি ৪/৫ দিনেই পড়ে ফেললাম। ১৯৭২-৭৫ সালে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে গঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের দেশ পরিচালনায় চরম ব্যর্থতা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাট ও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন করেই হাসানুল হক ইনুদের দল দেশ-বিদেশে আলোচনায় আসে।

‘আমার ডানে চোর, বামে চোর, সামনে চোর, পেছনেও চোর। দেশ স্বাধীন করলে সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেলাম চোরের খনি। আমি বিদেশ থেকে যা কিছু আনি এ চাটার দল খাইয়া ফালায়’—শেখ মুজিবের এই উক্তিকে পুঁজি করেই হাজার হাজার তরুণ-যুবককে নিয়েই জাসদ ওই সময় আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। টালমাটাল শেখ মুজিব সরকার এক পর্যায়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র হত্যা ও সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। সেই সঙ্গে সব সংবাদপত্রও (শেখ মুজিব সরকারের গুণগান প্রকাশের জন্য চারটি রেখে) বন্ধ করে দেয়া হয়।

একদলীয় বাকশালের কবলে পড়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ওই সময় জাসদও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। নিষিদ্ধ অবস্থা থেকেই ইনু ও কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে ‘শেখ মুজিবকে হত্যার মাধ্যমে উত্খাত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করার কর্মসূচি’ নিয়ে জাসদ গণবাহিনী নামে একটি সশস্ত্র গোপন সংগঠন করা হয়। কামাল ভাইয়ের লেখা পোস্ট ও সাহাদুজ্জামানের লেখা বইয়ে এসব তথ্যই উঠে এসেছে। জাসদ গণবাহিনীর অনুকরণে ওই সময় দেশে বেআইনিভাবে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টিসহ আরও বেশকিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন গড়ে ওঠে। থানার অস্ত্রাগার লুট, দিনে-দুপুরে মানুষ হত্যা, খুন-ধর্ষণের মাধ্যমে এসব সংগঠন দেশবাসীর কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে দেখা দেয়।

কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই আবু ইউসুফের নেতৃত্বে গণবাহিনীর একটি সশস্ত্র কমান্ডো ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনকে কিডন্যাপ করতে গিয়ে উল্টো ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ঘটনাস্থলে সবাই নিহত হয়। শেখ মুজিবের শাসনামলে জাসদের মতো মতিয়া চৌধুরীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিও (ন্যাপ) নিষিদ্ধ হয়। সেই সময় মতিয়া চৌধুরী আজকের কৃষিমন্ত্রী শেখ মুজিবের গায়ের চামড়া দিয়ে ঢোল আর ডুগডুগি বানিয়ে তার হাড় দিয়ে পেটানোর ঘোষণাও দিয়েছেন একাধিকবার। তাদের লেখায় এগুলোও উঠে এসেছে। হাসানুল হক ইনু ও বেগম মতিয়া চৌধুরী ওই সময় শেখ মুজিবকে গণতন্ত্র হত্যাকারী ও জনগণের দুশমন হিসেবে চিহ্নিত করলেও বর্তমানে ‘কাদায় আছাড়’ খেলেও নাকি তাদের মুখ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ বেরোয় না।

হাসানুল হক ইনুর ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদনের বিষয়ে আমার বন্ধু খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বললেন, জাসদের ৪০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যার দায়ে শেখ মুজিবকে ইনু ভাই অনেক ঘৃণা করতেন। এখন নৌকা মার্কা নিয়ে এমপি হওয়ায় তা ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে। জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত তিনি তার জন্মদাতা বাবাকে যতটা না স্মরণ করেছেন, বঙ্গবন্ধুকে এখন তার চেয়েও বেশি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছেন। ‘শেখ মুজিবকে হত্যার মাধ্যমে উত্খাত’ করার মন্ত্র যিনি আমাদের রাতদিন শেখাতেন তিনিই আজ জীবন দিয়ে হলেও শেখ মুজিবের সেই চাটার দলকে রক্ষা করতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অথচ ৪০/৫০ বছর ধরে রাজনীতি করে ইনু ভাইয়েরা এমপি হওয়া তো দূরের কথা, নির্বাচনী লড়াইয়ে জামানতও রক্ষা করতে পারেনি।

এবার হয়তো আরও কিছু পাওয়ার লোভে অথবা রক্ষীবাহিনী আতঙ্ক থেকে তারা বঙ্গবন্ধুতে জীবন বিলীন করে দিয়েছেন। একবার এক আড্ডায় আমার বন্ধু এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ফরিদ আলম ইনু ভাইদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি ঘটনা বলেছিলেন। কোনো একটি পশ্চিমা দেশের ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের চা-চক্রের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বুর্জোয়া কিংবা পেটি বুর্জোয়া (?) নেতাদের মতো তাদের গাড়ি না থাকায় শেষ পর্যন্ত পাবলিক বাসে চড়ে তারা গুলশানে ওই রাষ্ট্রদূতের বাসায় গিয়েছিলেন। স্যান্ডউইচ, স্নেক ও অন্যান্য আইটেমের সঙ্গে একটি করে সাগরকলাও দেয়া হয়েছিল নেতাদের।

চা-চক্র উপভোগ করার পর নেতারা যে যার পথ ধরে চলে গেছেন। বাম নেতাদের কেউ কেউ নাকি বিস্কিট ও স্যান্ডউইচ খাওয়ার পর কলাটি নেড়েচেড়ে কল্লি তাঁতের (মোটা কাপড়ের বড় পাঞ্জাবি) পকেটে পুরে নিয়েছেন। হেঁটে তারা গুলশান বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ৬ নম্বর বাসে উঠেছেন তোপখানা রোডে পার্টি অফিসের উদ্দেশে। প্রচণ্ড ভিড়ে ও মানুষের চাপে কলাটি নষ্ট হয়ে যায় কিনা কিংবা কেউ পকেটে হাত দিয়ে তা নিয়ে যায় কিনা এ আশঙ্কায় তিনি সর্বক্ষণ কলাটি ধরে রেখেছেন। ফার্মগেটে আসার পর এক যাত্রী ওই নেতাকে বলে উঠলেন, ভাই এতক্ষণ তো আমারটা ধরে ছিলেন।

আমি এখানেই নামব। এবার আরেকজনেরটা ধরেন। ফরিদ ভাইকে নাকি এ ঘটনাটা একজন বাম নেতাই বলেছিলেন। বরাবরই অপরেরটা ধরে চলতে অভ্যস্ত সেই বাম নেতারাই নাকি এখন পাজেরো কিংবা প্রাডো গাড়ি ছাড়া অন্যকিছু পছন্দ করেন না। লেখক : এমএ নোমান, সাংবাদিক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।