যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য বাক স্বাধীনতা আর মত প্রকাশের স্বাধীনতা যে পরম কিছু নয়, তারও যে একটা সীমা থাকা দরকার তা প্রথম আলোয় প্রকাশিত হাসনাত সাহেবের গল্পে “সীমা” চরিত্রের মাধ্যমে শাহবাগের শ্লোগান কন্যাদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা ও তাকে নিয়ে পর্ণোগ্রাফিক লেখার বিরুদ্ধে সৃষ্ট নাগরিক প্রতিক্রিয়ায় তা আবারও প্রমাণিত হল! হাই সাহেবের এই কুরুচিপূর্ণ লেখার যে তীব্র প্রতিবাদ এসেছে (আমি নিজেও আমার নিতান্ত ক্ষুদ্র পরিসরে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে) বিশেষ করে অনলাইন জগতে তার প্রেক্ষিতেই প্রথম আলো ক্ষমা চেয়ে এই গল্প প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। এই প্রতিবাদ এই নৈতিক ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়েই করা হয় যে, তুমি বাক স্বাধীনতার নামে, মুক্ত চিন্তার নামে, মত প্রকাশের অধিকারের নামে কারও বিরুদ্ধে কদর্য, অশ্লীল, মর্যাদা হানিকর, আপত্তিকর কিছু লেখার অধিকার রাখো না! তো এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের এই বাক স্বাধীনতার সীমা পরিসীমা টেনে দেয়ার নৈতিকতা কি বিশেষ কোন চেতনার অনুসারীদের জন্য প্রযোজ্য? এটা কি বিশেষ কোন গোষ্ঠী কিংবা শ্রেণির ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হবে? যখন মুসলিম সম্প্রদায়ের নবী মুহাম্মদ (স)কে নিয়ে আপত্তিকর পর্ণোগ্রাফিক লেখা লিখে তার চূড়ান্ত অবমাননার অভিযোগ উঠে বাংলা ব্লগের কিছু ব্লগারের বিরুদ্ধে তখন কিন্তু অনেক কথিত প্রগতিশীল (সবাই নয়, একটা বড় অংশ)এর প্রতিবাদে সোচ্চার না হয়ে একে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। শাহবাগের শ্লোগান কন্যাকে নিয়ে পর্ণোগ্রাফিক লেখা লিখলে আমাদের অনুভূতিতে লাগে, আমাদের মুক্তবুদ্ধির চেতনা পর্যন্ত মারাত্মকভাবে আহত হয়, আমাদের সেকুলার কিংবা মানবিক অনুভূতি ক্ষতবিক্ষত হয়, তাই প্রতিবাদে আমরা ফেটে পড়ি, হাই সাহেবের ২৮ গোষ্ঠী উদ্ধার করি, প্রথম আলোর বিচার চাই, কিন্তু একই অনুভূতি নবী (স) এর অবমাননার সময় ভোঁতা হয়ে যায় কেন? তখন কেন এই অবমাননার কারনে অবমাননাকারীর প্রতি আর তার মুক্তবুদ্ধির (?) চর্চার প্রতি আমরা পরমত্ব আরোপ করে বাক স্বাধীনতার অবাধ প্রবাহের তত্ত্ব ফেরি করে বেড়াই? নাকি ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত প্রাপ্ত হলে বাক স্বাধীনতার অসীমতায় আমরা বিশ্বাস রাখব, আর অন্য যে কোন অনুভূতি [ রাজনৈতিক অনুভূতিতে আঘাতঃ উদাহরণ স্বরূপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিয়ে কটূক্তি করার কারনে; মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু কামনা করে দেয়া ফেবু স্ট্যাটাসের কারনে; আইনি অনুভুতিঃ আদালতের অবমাননা হলেই মামলা; “সীমা”দের চরিত্র হননের বিপরীতে নাগরিক অনুভূতি] আঘাত প্রাপ্ত হলেই আমরা বলব আমরা বাক স্বাধীনতাকে অবাধ মনে করি না, এরও একটা সীমা টানতেই হবে। এক্ষেত্রে আমরাই মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে কি নাকচ করে দেই না? এটা কি ডাবল ষ্ট্যাণ্ডার্ড নয়? আসলে আমরা কেউই কিন্তু চরম আর উগ্র মত প্রকাশকে মেনে নিতে পারি না যদি তা আমাদের নিজস্ব মতাদর্শ বা নিজস্ব চেতনার প্রতি আঘাত হানে। তাই যদি হয় তাহলে অন্য ঘরানার বা অন্য চিন্তার/চেতনার মানুষদের অনুভূতি যখন ক্ষতবিক্ষত হয় চরম উগ্র বাক স্বাধীনতার নামে তখন তার প্রতিবাদেও সোচ্চার হতে আমাদের এত কুণ্ঠাবোধ কেন? আমাদের আচরন দিয়ে আমরা নিজেরাই প্রমান করছি যতই অবাধ বাক স্বাধীনতার তত্ত্ব কপচিয়ে নিজেদের জঁ-পল সাত্রে ভাবি আমরা কিন্তু এখনও কান্টিয়ান বলয়ের বাইরে যেতে পারিনি!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।