আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অণুগল্প-২০

এক. মা রাত জেগে থাকে । দুই সন্তানকে কত দিন হলো দু'মুঠো খাবার দিতে পারেনি। বর্ষার এই জনপদে মঙ্গার জ্বালা পেটে ও দেহে । দেড় মাস হলো রহিম মিয়া ঢাকায় । কোন খবর নেই , লোকটা কেমন আছে ! মনটা আনচান করে মায়ের ।

মন্টু মিয়ার দোকানে বাকিতে চাল নিতে বলেছিল সে। কিন্তু মন্টুমিয়া লোকটা বজ্জাত, এখন থেকে চাল দিবে না আর বলে দিয়েছে । কোথায় যাবে মা-গ্রামের সবারি তো একই অবষ্থা ! মঙ্গা গোটা গ্রামে। এই লোকটাই গতবারে খারাপ প্রস্তাব দিয়েছিল এক কেজি চালের জন্য। এবার বুঝি মরা ছাড়া কোন উপায় থাকে না।

মায়ের চোখ দুটো ছলছল করে পানি তে । মা মন্টু মিয়ার কথায় রাজি হতে পারে না, একবার ভাবে সবাই মিলে গলায় দড়ি দিবে, কিন্তু মাসুম দুটো বাচ্চার দিকে তাকিয়ে পারে না । বাচ্চাদুটো সারাবাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আর মা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে । মন্টু মিয়া এক কেজি চাল দিয়েছে । দুর আসমানে বিধাতা দেখছে ক্ষুধা আর ভালবাসার বিসন্ন মিল বন্ধন ।

দুই. মিরপুর-৬, আল ফ্যাশন গার্মেন্টসের নিচে জটলা। মেয়েটির কী কান্না ! কোলে মরা মেয়ে । মেয়েটার বাবা জন্মের আগেই পালিয়ে গেছে যেন কোথায় । অনেক খুঁজেও তার দেখা পায়নি । কামে আসার সময় অবুঝ শিশুটিকে কোথায় রাখবে সে ! পাশের বাসার বস্তির ফুললতার কোলে দিয়ে প্রতিদিন সে গার্মেন্টসে আসে ।

আজ সে ছোট খুপড়ি ঘরের নিচে পানিতে পরে মেয়েটা মরে যায়। লোকজন উঠায়ে নিয়ে আসে এখানে। তিন. অভ্যাস আমার খুব খারাপ । নারীদেহের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ । নতুন নতুন মেয়ে আনে এমন অনেকের সাথে পরিচয় ।

কাল সকালে নাইম আমাকে ফোন করল । বস একটা ভালা মাল আসব আজকে । সারারাত থাকতে পারবেন-পাঁচ হাজার টাকা দিলেই চলব । কথামতো মিরপুর-১০ এ গেলাম । যথারীতি সে আমাকে হোটেলে নিয়ে গেল ।

মেয়েটিকে তখনো আমি দেখিনি । রাত দশটার পরে মেয়েটা আসল । কোলে একটা সাত আট মাসের মেয়ে । আমার মন খারাপ হয়ে গেল । এটা যে সদ্য পোয়াতি মেয়ে ! আমি নাইমের উপর এক ঝাড় ঝাড়লাম ।

সে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করছে । মেয়েটা নাকি অনেক ভাল । যা হোক থাকলাম । ওকে বিদায় করলাম টাকা দিয়ে । মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করলাম সে কেন এ অবষ্থায় এখানে এ কাজে এসেছে? বাচ্ছাটিই বা কার ? উত্তরের এক সীমান্তবর্তী জেলায় তার বাসা।

ঢাকায় একটা কোম্পানিতে চাকরী করত। চলার পথেই পরিচয় হয় একজন ধনীর দুলালের সাথে । বিয়ে হয় তার সাথে । কিছুদিন এক সাথে থাকে । ছেলের বাবা মা প্রভাবশালী ।

ছেলেকে বিয়ে দিয়ে তারা আমেরিকা পাঠায়ে দেয় । মেয়েটা মামলা করলেও কিছুই হয় নি । দেশে ফিরেও বাবা মা আর সমাজের কাছে নিঘৃত হয়ে এক বন্ধুর মাধ্যমে এ কাজে আসা । টাকা ইনকাম করে সে তার বাচ্ছাটাকে মানুষ করবে আর স্বামীকে খুঁজবে । কিন্তু তখনও মেয়েটা জানে না সে কোন জগতে পা দিয়েছে ।

যেখানে সবাই খাদক । সারাদিনের ক্লান্তিতে মেয়েটা নড়াচড়া করতে পারছিল না । সুন্দর দেখতে মেয়েটা । খুব খারাপ লেগেছিল মেয়েটাকে দেখে । যদিও বলে রাখি আমি রক্ত মাংসে গড়া একটা কামুক মানুষ ! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।