আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসল ‘মৌলবাদ’ কি ?

বাংলা আমার দেশ মৌলবাদ কোন নিকৃষ্ট বা ঘৃণ্য মতবাদ নয়। এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ উত্তম তত্ত্ব পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার জানা নেই। আমি মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। আমার ভিতরে আছে অনন্ত শক্তি। সেই শক্তি দু’ভাগে বিভক্ত।

একটি দানবত্ব, অপরটি মানবত্ব। মানবত্ব যখন উন্নত হয় তখন তাকে বলে আল্লাহত্ব বা ইশ্বরত্ব। আমি নিজে মৌলবাদী না হলে কেমন করে বুঝবো আমি মানুষ। আমার অশুভ শক্তিকে আমি তাড়াবো কি করে? আমার ভালো তো আমাকেই দেখতে হবে। অন্যের কারণে আমি ভালো থাকতে পারছি না সেটাও আমাকেই দেখতে হবে।

দশজন মিলেই সমাজ। এর মধ্যে নয়জন মন্দ থাকলে একজন কি করে ভালো থাকবে? উত্তর খোঁজা দরকার। আর নয়জনকেও ভাল করা সম্ভব কিনা সেদিকেও গবেষণার প্রয়োজন। এর চিন্তার নামই মৌলবাদ। আর যিনি মূলে পৌঁছাতে চেষ্টা করছেন, তিনিই মৌলবাদী।

এই অর্থে প্রগতিবাদীরাই প্রকৃত মৌলবাদী। অতএব প্রগতি আর মৌলের মধ্যে শুধু শুধুই ব্যবধান রচনা কেন? এই কাজটি যারা করছেন তারা গণ্ডগোল পাকাচ্ছেন। মনে হয় তারা বোকা। রিলিজিয়নের ভন্ড আর প্রগতিবাদের বোকা খুবই কাছাকাছি দু’টি শ্রেণী। গৃহতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় এই দু’টির শ্রেণী দু’টির মাঝে একটি বিভক্তি রেখা টানা রয়েছে।

এই রেখাটি মোটেই দুর্গম নয়। অথচ কেউ পার হয়ে এপার ওপার করতে পারছে না। বোকা প্রগতিবাদী ও ভন্ড মৌরবাদীদের পঙ্গুত্বের কারণে এ কাজটি সম্ভব হচ্ছে না। মৌলবাদের বিপক্ষে যারা কথা বলেন তারাও একধরণের মৌলবাদের সমর্থক। এ ধরণের কথা অভিনব ও হাস্যকর মনে হলেও এর সত্যতা প্রমাণ করা কঠিন নয়।

সাহিত্য যাঁরা সমালোচনা করেন তারাও সাহিত্যিক, একইভাবে মৌলবাদের সমালোচকরাও মৌলবাদী। তেমনি মৌলবাদীদের অতিক্রম করতে না পারলে তার পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন সম্ভব নয়। এই অতিক্রম মানেই উচ্চতর মৌলবাদী হওয়া। প্রকৃত সত্যের সন্ধান করা। এ কারণেই নিন্দুকরা অভিনন্দিত।

সাহিত্যিকরা বলে থাকেন নিন্দুকরাই প্রকৃত বন্ধু। নিন্দা যতই কড়া হবে, শিল্পী ততই বড় হবেন। সমালোচনাই সাহিত্যের সুহৃদ। তেমনি প্রগতিবাদীরাই মৌলবাদের প্রকৃত বন্ধু। কেননা তারা মৌলবাদের সমালোচক।

তাদের সমালোচনা বা নিন্দাই মৌলবাদকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করছে। প্রগতিবাদীদেরও প্রচুর ভুল। তারমধ্যে প্রধান হচ্ছে মৌলবাদী ও অমৌলবাদীদের পার্থক্য বুঝতে না পারা। কথাবার্তা ও পোষাক কখনই জ্ঞানের পরিচায়ক নয়। এমন কি রিলিজিয়নের নির্দেশ মতো প্রার্থনা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছেন তিনিও যে ভন্ড হতে পারেন, এটাও টের পাচ্ছে না প্রগতিবাদীরা।

একজন ভন্ডের বিরুদ্ধে কথা বলার পরিণাম কতটা ভয়াবহ তা সবাই জানে। প্রগতিবাদীর ভিত্তি সত্য। ভন্ডের ভিত্তি মিথ্যা। সত্যের চেয়ে মিথ্যার শক্তি অনেক বেশি থাকে প্রথম দিকে। পরে অবশ্য সত্যেরই জয় হয়।

সেই জয়ের মুখ দেখার আগেই প্রগতিবাদীদের মুখ বন্ধ করে দেন ভন্ডরা। ভন্ডদেরকে মৌলবাদী মনে করার মতো ভুল আর আছে কি? যুগোপযোগী সংস্কারের নামই ধর্ম। ধর্ম হচ্ছে পরিবর্তনশীল একটি তত্ত্ব। কেননা অপরিবর্তনীয় সংবিধানের শাসনে শিক্ষাকে এবং সততাকে বাধা যায় না। যুগে যুগে পরিবর্তনশীল সিলেবাসের ভিতর দিয়ে শিক্ষা চলতে থাকে।

চরিত্র বা সততাও ঠিক সে রকম একটি চলমান পক্রিয়া। গত যুগের সততা আর এ যুগের সততার ধরণ এক কিন্তু গড়ন ভিন্ন। ধর্মের সাথে প্রগতিবাদীদের কোন পার্থক্য নেই। যারা এ দুটেকে অভিন্ন ভাবতে পারেন না তারা অবশ্যই ভুল করছেন এবং ঝগড়া বাধাচ্ছেন। উল্লেখ্য যে, রিলিজিয়নের কুসংস্কার, সুসংস্কার, সংস্কার, রক্ষণশীলতা, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন কোনটাই নেই।

বরং কোন কর্মকান্ড গ্রন্থ বহির্ভূত মনে হলে সেটিকে গ্রন্থভিত্তিক করা রিলিজিয়নের নীতি। অতএব দেখা যাচ্ছে রিলিজিয়ন হচ্ছে গ্রন্থকেন্দ্রিক মৌলবাদ। অন্যদিকে ধর্ম বা প্রগতির ধারাটি হচ্ছে জ্ঞান বা বিজ্ঞান ভিত্তিক মৌলবাদ। অশেষ সুন্দরের লক্ষ্যে তায় নিরন্তর চলা। চলা মানেই বিজ্ঞান চেতনা বা সংশয় ভিত্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

আর সেই চলার মূল গন্তব্যটি হচ্ছে সুন্দর পৃথিবী। যেখানে পৌঁছাতে পারলে মানুষ হবে দেবতা, পৃথিবী হবে স্বর্গ। যেহেতু সুন্দর অশেষ, তাই দেবতা ও স্বর্গের অবস্থান মহাকাশের অসীমে। যাত্রাও তাই অনন্ত। সেই যাত্রার অনেক নাম, যেমন- মানবতাবাদ, পার্থিববাদ, প্রগতিবাদ ইত্যাদি।

যত নামই দেয়া হোক এর আসল নামটি বিজ্ঞানভিত্তিক বা প্রগতিশীল মৌলবাদ। গ্রন্থকেন্দ্রিক মৌলবাদকে ঘৃণা করার অধিকার প্রগতিশীল মৌলবাদীদের থাকা উচিত নয়। ঘৃণা থেকে আসে প্রতিঘৃণা। অহিংসা থেকে আসে অহিংসা। এই ভাবনাটিও প্রগতির অংশ।

কাউকে দলে টেনে দলভারী করার নীতি প্রগতিবিরোধী। সুপরিবেশে সুমতি আপনাতেই জন্মে। ধর্ম বা প্রগতি বা বিজ্ঞানভিত্তিক মৌলবাদের সেটাই লক্ষ্য। গ্রন্থবাদীরাও মানুষ। পরিবেশের কারণে তারা কেউ ফ্যানাটিক, কেউ ভন্ড, কেউ উগ্র।

এদের চিকিৎসা উদ্ভাবন করতে হবে। কিন্তু কোনভাবেই অপরধী মনে করে এই শ্রেণীকে শাস্তি দেয়া, ঘৃণা করা, গালাগালি দেয়া, সমালোচনা করা ঠিক হবে না। এই বোধের নামই বিশুদ্ধ মৌলবাদ। খন্ড চিন্তায় সমস্যা বাড়ে অথবা কমে কিন্তু কখনোই সমাধানে আসে না। প্রগতিবাদ অথবা বিশুদ্ধ মৌলবাদের একমাত্র লক্ষ্য সম্পূর্ণ সমাধান।

সত্যিকারের মৌলবাদের আবাদ হলে তাতেই তা সম্ভব। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।