মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত। ছাত্র-ছাত্রত্ব-ছাত্র রাজনীতি
ছাত্র কে?
সাধারণ অর্থে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে শিক্ষা গ্রহণ করে, সেইই ছাত্র। কি শিক্ষা গ্রহণ করে? ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যা শেখানো হয়। সেই শিক্ষা কি শিক্ষা? কতগুলো বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা। যেমনঃ সমাজ, বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষা।
অবশ্য এই বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার প্রতিটি বিষয়ে আবার একাধিক শাখা রয়েছে। এই শিক্ষা অর্জন করলে কি হয়? সার্টিফিকেট। সার্টিফিকেট দিয়ে কি হয়? চাকুরী। চাকুরী দিয়ে কি হবে? ভালভাবে জীবন-যাপন। ভালভাবে জীবন-যাপন কে করবে? যে শিক্ষিত হবে সে এবং তার পরিবার।
তাতে রাষ্ট্র বা সমাজের কি হয়? কিছুই না।
তাহলে যারা শিক্ষিত হয়, তারা কি সকলেই চাকুরী পায়? না। কেন পায় না? সবাই ভাল রেজাল্ট করতে পারে না। কেন পারে না? সবার টাকা নাই। কেন নাই? গরীব।
মানুষ কেন গরীব হয়? টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ না থাকলে গরীব হয়। কেন টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ থাকে না? জানি না। জানি না কেন? জানার চেষ্টা করি নাই, এজন্য।
প্রথম প্যারাটি থেকে আমরা পেলাম, কেন (প্রশ্ন) শব্দটি আর দ্বিতীয় প্যারা থেকে পেলাম, জানা। প্রশ্ন এবং জানা (প্রকৃত শিক্ষা)।
তাহলে এখন প্রশ্ন হতে পারে জেনে কি লাভ? ওই লাভের নামই হচ্ছে জ্ঞান। তাহলে জ্ঞান দিয়ে কি হবে? জ্ঞান দিয়ে মানুষের, রাষ্ট্রের মঙ্গল হবে (কারণঃ জ্ঞান সম্পদ ব্যক্তিসম্পদে কুক্ষিগত হয় না)। ভাল কিছু হবে। কার হবে? মানুষের। সকলের মঙ্গল বা কল্যাণ হলে দুঃখ হবে কার? কারও না।
পড়তে পারবে না কে, চাকুরী হবে না কার? এমন কেই থাকবে না। কেন? সবার মঙ্গল হওয়ার কারণে। তাহলে প্রশ্ন এবং জানার মাধ্যমে যুক্তি ও বিজ্ঞানের দ্বারস্থ হতে হয়। যুক্তি ও বিজ্ঞানের অভিজ্ঞতাই মানুষের জ্ঞান তৈরী করে।
শিক্ষা কি?
ছাত্র জীবনে একজন ছাত্রের মৌলিক কাজ হলো শিক্ষা অর্জন করা।
শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ, মানুষ, পৃথিবী, রাজনীতি, বিজ্ঞান, দর্শন, অর্থনীতি সংস্কৃতিসহ নানা বিষয়ে সম্যক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা। শুধু জ্ঞান অর্জন করলেই হবে না, প্রয়োগের মাধ্যমে এ অর্জিত জ্ঞানের সাথে সমাজ ও বিশ্ব সভ্যতার বিশ্ব মানবতায় যোগসূত্র তৈরী করতে হবে।
ছাত্রত্ব কি?
শিক্ষা জীবনে একজন ছাত্রের মৌলিক কাজ হচ্ছে তার ছাত্রত্ব অর্থবহ ও পরিপূর্ণ করা। ছাত্রত্ব হলো- শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে তৈরী করা। যেন মানুষটি তার সমগ্র জীবনে সৎ, দেশপ্রেমিক, মানবিক গুনাবলীর অধিকারী, প্রগতিশীল, আদর্শবান, যুক্তিনিষ্ঠ ও বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচয় বহন করার সক্ষমতা অর্জন করে।
কোনো সংকীর্ণতা, সীমাবদ্ধতা যেন তাকে স্পর্শ করতে না পারে। সময়ের কাজ যেন সময়ে করতে শেখে। বুঝে শুনে কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করে। যুক্তি ও বিজ্ঞানমনস্কতার নিরিখে পথ চলতে সক্ষম হয়।
ছাত্র রাজনীতি কি?
রাজনীতি কি? সাধারণ অর্থে রাষ্ট্র পরিচালনার উত্তম নীতি (এটা বুর্জোয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানও স্বীকার করে)।
উত্তম নীতি কি? সার্বজনীন নিয়ম-শৃঙ্খলা। সার্বজনীন নিয়ম-শৃঙ্খলা কি? যা সবার জন্য কল্যাণকর ও মঙ্গলময়। এটা প্রতিষ্ঠিত হয় কি করে? জ্ঞানের মাধ্যমে। এই জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা অর্জন ও রাষ্ট্র নির্মাণ এবং উত্তম নীতি দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য শিক্ষার্থীরা যে কাজ করবে তা-ই ছাত্র রাজনীতি। ছাত্র রাজনীতি হলো আদর্শ, দেশপ্রেম, ত্যাগের রাজনীতি।
সেই রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছে বৃহত্তর ছাত্র সমাজের মৌলিক স্বার্থের পাশাপাশি এদেশের গরীব দুঃখী-মেহনতী মানুষের সার্বিক অধিকার ও মুক্তির পথনির্দেশ রয়েছে।
এজন্য একজন ছাত্রকে অবশ্যই অন্যান্য ছাত্রদের সাথে যুক্ত হয়েই তার প্রকৃত শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা ও অধিকার আদায় করতে হবে। এই লক্ষকে সামনে রেখে সকলের মধ্যে সচেতনতা এবং একতা গড়ে তোলা অপরিহার্য।
কিন্তু সেই সাথে নিজেকে উপযুক্তভাবে জ্ঞানসমৃদ্ধ ও সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। অন্যকে যুক্তিবান ও বিজ্ঞানমনস্ক করতে হলে প্রথমে নিজেকে যুক্তিবান ও বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
সমাজটাকে পরিবর্তন করতে চাইলে নিজেকেও পরিবর্তন করতে হবে। বিপ্লব করতে চাইলে নিজেকেও বিপ্লবী হিসেবে তৈরী করতে হবে। আমি বা আমরা যা-ই করতে চাই না কেন তার জন্য মানুষের কাছে যেতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে এবং তাদের কাছ থেকেও শিখতে হবে।
শুধু তত্ত্ব চর্চা নয়, বাস্তবে প্রয়োগ, সত্যিকার আন্দোলন সংগ্রাম, ছাত্র সমাজ ও জনগণের মাঝে প্রত্যক্ষ কাজ ইত্যাদির মাধ্যমে উন্নত জীবন দর্শন ও সামাজিক কর্মযজ্ঞের নিবেদিত প্রাণ কর্মী হয়ে ওঠার নিরন্তন প্রয়াস চালাতে হয়।
অন্যথায়, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের আগ্রাসী আধিপত্য সংস্কৃতি (পুজিবাদ, ভোগবাদ, সুবিধাবাদ, আমিত্ববাদ) থেকে নিজেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না। এই সংস্কৃতির পালটা সংস্কৃতি (মানবতা-সাম্যের) মননে-শ্রমে-কাজে নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে সমজে নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া সমাজে-রাষ্ট্রে বিপ্লব সম্ভবপর হবে না। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এই শিক্ষাই দিচ্ছে যে, প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার আমূল রূপান্তর ও শাসক-শোষক শ্রেণীকে পরাভূত না করতে পারলে আকাঙ্খিত সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন, স্বপ্নেই থেকে যাবে। এজন্য লড়াই-সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই।
এজন্য সর্বপ্রথম মননে-মগজে-আচারণে কমিউনিস্ট সংস্কৃতি, মানবতা-সাম্যের সংস্কৃতি নির্মাণ প্রয়োজন। খুব সম্ভবত এই কারণেই ম্যাক্সিম গোর্কী ‘মা’ তার মা উপন্যাসে বলেছেন, ‘বিপ্লব আগে দরকার চেতনায়’।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।