চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই !
বড় বাধা সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকা দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন নয়নাভিরাম, তেমনি প্রাকৃতিক সম্পদের এক অপার ভাণ্ডারও এই উপজেলা। বর্ষা ও হেমন্তে তাহিরপুর সাজে দুই ভিন্ন সাজে। জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের এই উপজেলায় বর্ষাকালে হাওরগুলো পানিতে টইটুম্বুর হলে অনেকটা আদিগন্ত বিস্তৃত সাগরের মতো মনে হয়। হেমন্তে নীল আকাশ ঢাকা পড়ে অতিথি পাখির ডানার আড়ালে। এখানকার টাঙ্গুয়ার হাওর শুধু সুনামগঞ্জের নয়, সারা বাংলাদেশের গর্ব—বিশ্ব এতিহ্য।
কিন্তু সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় বিকাশ ঘটছে না এখানকার পর্যটন শিল্পের। তাহিরপুরে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বক্তব্য অনেকটা এ রকম: তাহিরপুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তারা মুগ্ধ হন। কিন্তু এখানে থাকা-খাওয়ার কোন সুব্যবস্থা না থাকায় সব আনন্দ মাটি হয়ে যায়। সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় রাজধানী বা দূরের কোনো এলাকা থেকে তাহিরপুর পৌঁছানোও অনেক কষ্টের। অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটছে না।
সরকারও বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
টাঙ্গুয়ার হাওর : শীতকালে অতিথি পাখির অভয়াশ্রম এই টাঙ্গুয়ার হাওর নানা প্রজাতির মাছেরও বড় বিচরণ ক্ষেত্র। শুধু তাহিরপুর নয়, পার্শ্ববর্তী ধর্মপাশা উপজেলায়ও বিস্তৃত হয়েছে ২৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ৫২টি বিলের সমাহার টাঙ্গুয়ার হাওর। বলা হয় ‘৬ কুড়ি কান্দা আর ৯ কুড়ি বিল’ নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর। গোধূলি বেলায় এ হাওর যেন রোমান্টিক হয়ে ওঠে।
সারা টাঙ্গুয়ার হাওর প্রকৃতির এক নিদর্শন।
হযরত শাহ আরেফীন (রহঃ) এর আস্তানা : তাহিরপুর উপজেলাতেই রয়েছে সাধক পুরুষ হযরত শাহ আরেফীন (রহঃ) এর স্মৃতিবিজড়িত লাউড়গড়ের আস্তানা। বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে দুই ধর্মের মিলন মেলা বসে। চলে দিবা-রাত্রি আবহমান গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী বাউল, জারি-সারি, ভাটিয়ালি গান।
পণা তীর্থ : জাদুকাটা নদী তীরে হিন্দু ধর্মালম্বীদের পবিত্র তীর্থ স্থান ।
বছরের নির্দিষ্ট দিনে দেশের দূর-দূরান্তে থেকে লক্ষ লক্ষ তীর্থ ক্ষেত্রে আস্তানা গাড়ে এবং ভারত থেকেও অনেক ভক্ত পবিত্র স্থানে আসে । জাদুকাটা নদীতে স্থান করে দেহকে পবিত্র করে ।
জাদুকাটা নদী : হযরত শাহ আরেফীন (রহঃ) এর আস্তানার পশ্চিমে তাকালেই চোখে পড়বে মেঘালয়ের বুক চিরে নেমে আসা জাদুকাটা নদী। নদীর পানি যেমন শীতল তেমনি স্বচ্ছ। এ নদীতে প্রতিদিন চলে হাজার হাজার শ্রমিকের জীবনযুদ্ধ।
৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক এ নদী থেকে বালি, নুড়ি পাথর আহরণ করে।
বারেকটিলা : জাদুকাটা নদীর খেয়া পেরুলেই দেখা যাবে নদীর পশ্চিম তীর ঘেঁষে রয়েছে প্রায় ৩শ ফুট উঁচু নয়নাভিরাম বারেকটিলা। আঁঁকাবাঁকা পথ বেয়ে বারেকটিলার ওপরে উঠলে চোখে পড়ে ঘন সবুজের সমাহার—সারি সারি ফলদ, বনজ ওষুধি গাছ। টিলার উপর রয়েছে কড়ই গড়া ও রাজাই নামে দুটি আদিবাসী গ্রাম। বারেক টিলার উপর রয়েছে আদিবাসীদের একটি র্গিজা।
বারেকটিলা থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে এগোলেই চোখে পড়ে বড়ছড়া চারাগাঁও শুল্ক স্থল বন্দর। বড় বড় ট্রাকে করে ভারত থেকে কয়লা এনে এখানে নামানো হয়। এখান থেকে কয়লা যায় দেশের বিভিন্ন ইটভাটায় ।
টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প : এখানকার ছোট ছোট টিলা আর বৃক্ষরাজি ঘেরা পুরো খনি প্রকল্পের সৌন্দর্য যে কারো চোখ জুড়ায়। খনি প্রকল্পটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
আগে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির কাঁচামাল এখান থেকে সরবরাহ করা হত।
সূত্র : ই্ত্তেফাক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।