আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটম বোমা আবিস্কারের ইতিহাস ( পর্ব-৪)

হ্যানিম্যান এভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুই মিত্র ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় মিত্র রাশিয়াকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে পারমাণবিক বোমা তেরির উদ্যোগ গ্রহন করল। অবশ্য এটা জানা কথা যে ব্রিটেন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র কউই বলশেভিক রাশিয়াকে খুব একটা সুনজরে দেখে না । অতএব তাদের এই আচরণ অবাঞ্ছনীয় হলেও অপ্রত্যাশিত ছিল না । কান টানলে যেমন মাথা এসে পড়ে , পারমানবিক বোমা সংক্রান্ত কোন আলোচনায় তেমনি ‘ ভারী পানির’ প্রসঙ্গ এসে পড়বেই । কিন্তু এই ভারী পানি বস্তুটি যেমন আমাদের অপরিচিত ঠিক তেমনি অতি দূর্লভ ।

আমরা জানি যে পানি একটি যৌগিক পদার্থ যার একটি অণুতে আছে দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণু আর একটি অক্সিজেন পরমাণু । এর আগে ইউরিয়াম মৌলের আলোচনা প্রসঙ্গে আমরা উল্লেখ করেছিলাম যে ইউরিয়াম তিনটি আইসোটোপয় অবস্থায় বিদ্যমান ইউরিনিয়াম-২৩৪, ইউরিনিয়াম-২৩৫ ও ইউরিনিয়াম-২৩৮ । হাইড্রোজেন মৌল দুইটি আইসোটোপিয় অবস্থায় প্রকৃতিতে বিরাজ করে প্রোটিয়াম , ডয়টেরিয়াম । প্রোটিয়ামের ভর সংখ্যা ১.০০৭৮২u । প্রকৃতিতে বিদ্যমান হাইড্রোজেনের শতকরা ৯৯.৯৮৫ ভাগ এই প্রোটিয়াম ।

কিন্তু শতকরা মাত্র ০.০১৫ ভাগ হাইড্রোজেন বিরাজ করে যে আইসোটোপীয় অবস্থায় তার নাম ডয়টরিয়াম এবং তার ভর সংখ্যা ২.০১৪০u । সুতরাং প্রোটিয়ামকে আমরা হাল্কা হাইড্রোজেন এবং ডয়টরিয়ামকে ভারী হাইড্রোজেন বলতে পারি । আমাদের অতি পরিচিত পানির অণুতে আছে প্রোটিয়াম আর অক্সিজেন । কিন্তু আমরা যে ভারী পানির উল্লেখ করেছি সেই পদার্থটির অণুতে আছে ডয়টরিয়াম ও অক্সিজেন । এ জন্যই তাকে বলা হয় ভারী পানি ।

পারমাণবিক শক্তি বা অস্ত্র তৈরিতে একটি মহার্ঘ উপাদান এই ভারী পানি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় কয়েক বছর আগে থেকে পারমাণবিক শক্তি বা অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্যে চারটি সংস্থা গবেষণা চালাচ্ছিল । ব্রিটেনের থমসন কমিটি, ফ্রান্সের ফ্রেডারিক জোয়ালিয়োর নেতৃত্বে কলেজ ডি ফ্রান্স দল , জার্মান দল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিগস কমিটি । পারমাণবিক শক্তি ও বোমা তৈরির উদ্দেশ্যে পরিচালিত গবেষণায় এই চারটি দলের মধ্যে ফরাসীরাই ছিল অগ্রগামী । ফরাসী দল ইতিমধ্যেই গ্রাফাইটকে মডারেটর হিসাবে ব্যবহার করে যে পরীক্ষা চালিয়েছিল তা থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছানো সম্ভব হয় নি ।

সুতরাং তারা ভারী পানিকে নিয়ন্ত্রক বা মডারেটর হিসাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল । ১৯৪০ সালের প্রথম দিকে একমাত্র নরওয়ের রুকানে শিল্প মাত্রায় ভারী পানি তৈরী হচ্ছিল । ফরাসী বিজ্ঞানীরা ফরাসী সমরাস্ত্র মন্ত্রী দুত্রীকে এটা বোঝাতে সমর্থ হলেন যে নরওয়ের ভারী পানির ভান্ডার তাদের হস্তগত করা খুবই জরুরী । এ ব্যাপারে প্রস্তুতি গ্রহণের পুর্বেই ফরাসীরা যে সংবাদ পেল তা রীতিমত ভীতিকর । গোয়েন্দা সুত্রে তারা জানতে পারল জার্মানরা যে শুধু নরওয়ে কারখানার গোটা মজুদ ভান্ডার কেনার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে তাই নয় তারা আরও বেশি পরিমাণে এবং নিয়মীত ভারী পানি সরবরাহের জন্য তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ।

এ রকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে এলেন লেফটেনান্ট জ্যাকুস আলিয়ার নামে একজন তরুন ফরাসী । আলিয়ার ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী । তাকে ফরাসী গোয়েন্দা সংস্থার একটি বিশেষ শাখায় একজন অফিসার হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল । জার্মানদের পারমাণবিক গবেষণা সম্বন্ধে ফরাসীদের জ্ঞাত সব কিছুই আলিয়ার সমরাস্ত্র মন্ত্রীকে ব্যাখ্যা করলেন । কিন্তু এই জ্ঞান ছাড়াও তার যে গুণটি ছিল আরও গুরুত্বপূর্ণ তা হল তিনি যে ব্যাঙ্কের সদস্য ছিলেন সেই ব্যাঙ্কের বিরাট আর্থিক লগ্নি ছিল নোর্স্ক হাইড্রো কোম্পানীতে ।

আর এই হাইড্রো কোম্পানীই ছিল রুকান ভারী পানি কারখানার মালিক । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।