আপনার লেখা আমি অনেক পছন্দ করি। আপনি অ-নে-ক ভালো লেখক। প্লিজ, একটা অটোগ্রাফ দিন। ’ অথবা ‘আপনার অভিনয় আমি অনেক পছন্দ করি। আপনি অ-নে-ক ভালো অভিনেতা।
’ প্লিজ, একটা অটোগ্রাফ দিন। ’ কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক আর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের এ ধরনের অসংখ্য ফাঁদ পেতে প্রাথমিকভাবে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টাটি করে থাকে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী এবং যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক গোষ্ঠী ছাত্রশিবিরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক নেতা-কর্মীরা। তারা আমাদের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের কালো হাত ছড়িয়ে দিতে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই চালিয়ে আসছে অন্ধকারের পথচলা।
দেশের অন্যতম কবি ফররুখ আহমেদ, অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, অধ্যাপক ড. কাজী দীন মুহাম্মদ, কবি আল মাহমুদ, সৈয়দ আলী আহসান, আল মুজাহিদী, হাসান আলিম, অভিনেতা ওবায়দুল হক সরকার, আরিফুল হক, একসময়ের আলোচিত চিত্রনায়ক আবুল কাসেম মিঠুনসহ শতাধিক কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিককে তাদের করে নিয়েছে। যাকে যেভাবে সম্ভব; তাকে সেভাবেই দলে ভিড়িয়েছে জামায়াত-শিবির।
কাউকে ধর্মের কথানুযায়ী বেহেশতের লালসায় ফেলে, কাউকে পৃথিবীর প্রাচুর্য দিয়ে আবার কাউকে নাম-খ্যাতি দেওয়ার মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কবি আল মাহমুদকে যে মাধ্যমটিতে তারা তাদের করে নিয়েছেন; সে মাধ্যমটির কথা। আর তা হলো টাকা। কেননা, একটা সময় কবি আল মাহমুদ শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ঠিক তখনই কবির পরিবারে নেমে আসে দারিদ্র্র্যের কষাঘাত।
আর এ সময় কবিকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে নিজেদের করে নেয় জামায়াতে ইসলামী। তখন থেকেই কবি আল মাহমুদ ছাত্রশিবিরের মুখপত্র নতুন কিশোর কণ্ঠ, জামায়াতের সাহিত্যভিত্তিক মুখপত্র নতুন কলম, রাজনৈতিক মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম, সাপ্তাহিক সোনার বাংলাসহ অর্ধশতাধিক যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থক ছাত্রশিবিরের পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত হোন। বিনিময়ে গুলশানে ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দেয় কুখ্যাত রাজাকার-ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা ও জামায়াতের অন্যতম প্রধান মিডিয়া দিগন্ত টিভির প্রধান মীর কাশেম আলী। পাশাপাশি কবি আল মাহমুদ জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, জামায়াত-শিবিরের পত্রিকায় লেখা দেওয়াসহ তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য একটা মাসিক ভাতা পেতে থাকেন। এভাবে জামায়াত-শিবির ফাঁদ পাতে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, সৈয়দ আলী আহসান আর অভিনেতা ওবায়দুল হক সরকারের জন্য।
যেখানে দেখা যায়, তাদেরকে সব সময়ই জামায়াত-শিবিরের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক নেতা-কর্মীরা প্রশংসাবাক্য উপহার দিত। যেমন, ‘আপনার লেখা আমি অনেক পছন্দ করি। আপনি অ-নে-ক ভালো লেখক। প্লিজ, একটা অটোগ্রাফ দিন। ’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর এতেই কুপোকাত হন বরেণ্য এই মনীষীরা।
নামাজ পড়লে বেহেশতে যাওয়া যাবে, ইসলামি আন্দোলন করলে বেহেশত নিশ্চিত এ ধরনের তথাকথিত ধর্মীয় কথার জাল বুনে ধরা হয় চিত্রনায়ক আবুল কাশেম মিঠুন, অভিনেতা আরিফুল হকসহ অন্যদের। যারা এখন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন সাংগঠনিক সম্পর্ক। বিশেষ করে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনাসহ আরও শতাধিক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে জামায়াত-শিবির টার্গেট করে এগিয়ে আসছে অন্ধকারের সঙ্গে। নির্দিষ্ট করে বললে বলা যায়, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ছাত্রশিবিরের সহযোগী সংগঠন ‘সাইমুম শিল্পগোষ্ঠী’ টাইফুন শিল্পগোষ্ঠী, ফুলকুঁড়ি, কিশোর কণ্ঠসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে গেছেন।
কাজটি তিনি তার অজান্তেই করেছেন। তবু তিনি আটকে যাচ্ছেন জামায়াত-শিবিরের ফাঁদে; এটা নিশ্চিত। অন্যদিকে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও জামায়াত-শিবিরের অন্ধকারের হাত ক্রমেই এগিয়ে আসছে।
সম্প্রতি এমনই একটি আগ্রাসনের বলি হয়েছেন ভারতের আলোচিত কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা। নচিকেতার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তথাকথিত শিল্পী মানিক বের করেছে একটি অ্যালবাম।
এই অ্যালবামটি বাজারজাতও করেছে স্বাধীনতা-স্বাধিকারের পক্ষের প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশন। এখন কথা হচ্ছে, মানিক কে?
জানা গেছে, মানিকের পুরো নাম আমীরুল মোমেনীন মানিক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সহসভাপতি; একই সঙ্গে শিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য। এই মানিক ছাত্রশিবিরের ২০০১ সাল থেকে অনুষ্ঠিত প্রতিটি কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিত কেবল ইসলামি গজল গাওয়ার জন্য। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছিল।
২০০৬ সাল পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলাও ছিল তৎকালীন সভাপতি ছালেহীর সহযোগী হিসেবে।
আমাদের দেশকে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী ও যুদ্ধাপরাধী সমর্থকগোষ্ঠী ছাত্রশিবিরের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে না পারলে অচিরেই সারা দেশে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে, যা আমাদের কারোই কাম্য নয়।
সূত্র: সাপ্তাহিক কাগজ, ১৬ জুন সংখ্যা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।