লিবিয়ায স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক। রাজধানীতে ভাড়াবাসায় থাকেন অথচ তিক্ত অভিজ্ঞতা নেই এমন লোকের সংখ্যা নেহায়েতই কম। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়ার দরজায় এসে হানা দেয়। অতিরিক্ত ভাড়ার আশায় নোটিশ ছাড়া পুরাতন ভাড়াটেকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলা হয়। রাত করে বাসায় আসা যাবে না, অতিথি থাকা নিষেধ, এমন অনেক কড়া নিয়ম মেনে মালিকের রাজ্যে বসবাস করতে হয় ভাড়াটিয়া নামক প্রজাদের।
একটু নিশ্চিন্তে, ঝামেলাহীন বসবাসের জন্য নিজের ছাদের নিচে থাকতে মানুষের অনন্ত প্রত্যাশা থাকে। আর সেই প্রত্যাশা সবার জন্য উপযোগী করতে আবাসন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এসেছে। তারা এখন আর কোনো গতানুগতিক বিপণনে বিশ্বাসী নন। তারা এখন চমকপ্রদ বিভিন্ন অফারে ক্রেতাদের জর্জরিত করতে চায় না। আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় অনেকটা বাস্তবভিত্তিক অফার দেয়া হচ্ছে।
একটা প্লট বা ফ্ল্যাটের মালিক হওয়ার অফুরন্ত আশায় বিভোর কোটি কোটি মানুষ। তাই সবশ্রেণীর কথা মাথায় রেখে এবারের মেলায় অনেক প্রতিষ্ঠান বিশেষ অফার দিয়েছে। তবে সরকারের সঙ্গে ভারতীয় কোম্পানি সাহারা’র সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা বিদেশি কোম্পানিকে হটানোর কথা স্পষ্টভাবে না বললেও দেশি-বিদেশি কোম্পানির সমান সুযোগ দাবি জানিয়েছেন। অনেক উদ্যোক্তা অবশ্য বলেছেন, বাংলাদেশে স্বল্পসময়ে জমিতে বিনিয়োগে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
সাহারা সে সুযোগে আবাসন শিল্পে জেঁকে বসতে চাইছে। দেশীয় শিল্পের স্বার্থে তাদের প্রতিহত করা হবে। রাজধানীর শেরে বাংলানগর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত ১৪ জুন থেকে চারদিনব্যাপী রিহ্যাব সামার ফেয়ার শেষ হয় ১৭ জুন । এবারের মেলায় মোট ১৬৬টি স্টল ছিল। এর মধ্যে ১৬১টি রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান এবং পাঁচটি বিল্ডিং মেটেরিয়াল প্রতিষ্ঠান।
এবারের রিহ্যাব সামার ফেয়ারে ১৫টি প্রতিষ্ঠান কো-স্পন্সর হিসেবে অংশগ্রহণ করে । মেলার প্রথম দু’দিনে দর্শক সমাগম অন্যবারের তুলনায় কম হলেও শেষ দিনে বেশি দর্শক পেয়ে অবশ্য অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রন্তাষ প্রকাশ করেছে। তবে গ্রাহকদের অভিযোগ করেছেন, ক্রেতারা বার বার আবাসন প্রতিষ্ঠানের কাছে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এতে এ খাতের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না অনেকেই। পূর্ব পরিচয় নেই এমন কোনো প্রতিষ্ঠানে সাধারণত কেউ বুকিং দিতেও সাহস পায় না।
তবে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোও এ অভিযোগ অস্বীকার করেনি। তাদের যুক্তি দু’একটি প্রতিষ্ঠানের অপকর্মের জন্য সমগ্র খাতকে দায়ী করা ঠিক নয়। তবে সুশীল সমাজ মনে করে আগামী ৬০ বছর পর দেশের কোথাও এক ইঞ্চি পরিমাণ খালি জায়গা পাওয়া যাবে না কারণ নালা নর্দমা, এক ফসলি, জলাশয় দখল করা থেকে বিরত থাকছে না ভূমিদস্যুরা। পরিবেশ বান্ধব আবাসন আজ সময়ের দাবি। একটি কথা স্মরণ রাখতে হবে, একটি প্রতিষ্ঠানের ভুলের মাশুল সব প্রতিষ্ঠানের ওপর বর্তায়।
তাই এদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রিহ্যাব নি:সন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ফ্ল্যাট প্লট ক্রেতারা প্রতারিত হলে সেই সমস্যার সমাধান ভূক্তভোগীদেরই করতে হবে। আইনে রয়েছে কেউ মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতা ঠকালে সেই প্রতিষ্ঠানতে ৫ লাখ টাকা জরিমানাসহ সংশ্লিষ্ট আইনে সাজা দেয়া হবে। দেশে রিহ্যাবভুক্ত ৯১৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। একই সাথে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করেছে। তবে রিহ্যাবকে অবশ্যই স্বার্থ, মুনাফা ও ব্যবসার পাশাপাশি দেশের ১৬ কোটি মানুষের অধিকারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিবেশ যাতে রক্ষা করা হয়, এটা কঠোরভাবে দেখতে হবে। মাথাগোজার ঠাঁই নিশ্চিত করতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আবাসন মেলায় প্লট ও ফ্ল্যাটের সন্ধান করেছে হাজার হাজার মানুষ।
বিনামূল্যে নয়, ৫০ টাকা মূল্যমানের টিকিট কিনেই মেলায় এসেছিল তারা। তবে প্রতিবারই মেলায় আসা দর্শনার্থীদের অভিযোগ চড়ামূল্যের কারণে ফ্লাটের মালিক হওয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য। আর রাজউক অনুমোদিত নয় এমন কিছু প্রকল্প মেলায় প্রদর্শিত হওয়ায় ক্রেতারাও অনেক সময় বিভ্রান্তিতে থাকে। অপরদিকে অনেক সময় বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, অনুমোদনহীন কোন প্রকল্প বিক্রি করা হচ্ছে না। কিন্তু মেলায় ডিসকাউন্ট আর উপহারের কোন কমতি নেই।
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আবাসন ব্যবসায়ীদের জন্য এই দুই শ্রেণীর মানুষ হতে পারে সবচেয়ে বড় বাজার। কারণ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত, বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ, ফলে এর জমি নিয়ে কিছু সমস্যা থাকবে। রিয়েল এস্টেট সেক্টরের মূল ধারণা শহর বানানো। আবাসন ব্যবসায়ীরা সবাই এখনও এই কাজটি পারেনি।
মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের প্রয়োজনে এখনও তেমন কিছু করা হয়নি। অথচ এটাই হতে পারে সবচেয়ে বড় মার্কেট। সেই জায়গাতে যদি কাজ করা হয়, তাহলে সরকারের সহযোগিতা লাগবে। কারণ ব্যক্তিমালিকানায় এত জমি নেই, সরকারের জমি আছে। আবাসন খাত দেশের অনেক বড় একটি খাত।
প্রায় ৩০ লাখ লোক স্থায়ীভাবে আবাসন সেক্টরে চাকরি করে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১ কোটি লোক জড়িত। তাই এই বিষয়টির প্রতি পৃথকভাবে গুরুতাব প্রদান করতে হবে।
রিহ্যাব ফেয়ার মানেই জনপ্রিয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের পাহাড় ! বিজ্ঞাপনের আধিক্যে পত্রিকার পাতায় নিউজের ঠাঁই নেই অবস্থা। বর্তমানে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে ডেভেলপার কম্পানিগুলো।
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিচ্ছে নামি-দামি ডেভেলপার কম্পানিগুলোর পাশাপাশি অখ্যাতরাও। গ্রাহকদের কাছে নিজেদের আস্থা ও বিশ্বস্ততা বাড়াতে প্রচারই প্রসার' এমন প্রবাদে এগিয়ে চলেছে কম্পানিগুলো। এ উপলক্ষে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় চলে বিজ্ঞাপনের জমজমাট ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই সংবাদ মাধ্যমে যোগাযোগ করে রঙবেরঙের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেয়। কার আগে কে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করবে তা নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে রয়েছে এক ধরনের প্রতিযোগিতা।
মেলা শুরু হওয়ার আগে থেকেই স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে বিভিন্ন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের হরেক রকমের বিজ্ঞাপন।
তবে বিজ্ঞাপন,ফ্ল্যাট আর প্লটের বাইরেও রিহ্যাব ফেয়ারে দৃষ্টি কেড়েছিরো রং ও টাইলসের স্টলগুলো। কিন্তু আবাসন ব্যবসায় যে বড়ই খারাপ দিন যাচ্ছে-এ কথাটি এখন এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছোট-বড় সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন। মেলা, খেলা, র্যাফেল ড্র কোনো প্রতিযোগিতাই এই ব্যবসার হাল ঘুরাতে পারছে না। এবারের রিহ্যাব সামার ফেয়ারে এই চিত্রই ফুটে উঠেছে।
ক্রেতা ও দর্শনার্থীর ভিড় থাকলেও আশানুরূপ সাড়া পায়নি মেলায় অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলো। আর এভাবেই শেষ হয়েছে রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত রিহ্যাব সামার ফেয়ার-২০১২।
বড় কোম্পানীগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়াই এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সামার ফেয়ার-২০১২।
রিহ্যাবের প্রভাবশালী সূত্রে জানা যায়, রিয়েলএস্টেট সেক্টরের বাজার মন্দা, গরম আবহাওয়া এবং রিহ্যাবের অনির্বাচিত নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থার কারণেই বড় কোম্পানীগুলো এবার মেলায় অংশ নিচ্ছে না। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি হাউজ লোন ছিল সেটা ৭৫০ কোটি টাকা দেয়ার পর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে এ খাতের মন্দা দূর করতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে এ খাতে বিনিয়োগ করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া যেতে পারে। কারণ মানুষের মৌল মানবিক চাহিদার মধ্যে বাসস্থানের চাহিদা যে তৃতীয় স্থানে সেকথা কী অস্বীকার করা সম্ভব ? ##
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।