আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মি: অমি রহমান পিয়াল কে তার জ্ঞাতার্থে

অমি রহমান পিয়াল যে লেখাটার প্রেক্ষিতে আমার এই পোষ্ট। আপনি শুরুতেই বলেছেন, " ৯১-৯২ সালে বিএনপি-জামাত জোটের প্রথম শাসনামলে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। " কিন্তু, আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, ১৯৯১-৯৬'এ আমলে কোনো জোট সরকার ক্ষমাতায় ছিলো না। বরং বিএনপির একক সরকার ছিলো। ১৯৯২-৯৬ পর্যন্ত কেয়ার টেকার সরকারের দাবীতে আওয়ামীলীগের সাথে জামায়াত একযোগে দীর্ঘ আন্দোলন, ১৭৫ দিন হরতাল ও লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছিলো।

রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলা ভাষাভাষী বাঙ্গালি। বর্তমান মিয়ানমারের(বার্মা) আরাকান রাজ্যে ১৪৩০ খৃ: থেকে ১৬৩১ খৃ: পর্যন্ত ২০০ বছর মুসলিম শাসন ও সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত ছিলো। কিন্তু ১৬৩১-৩৫ খৃ: পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদী দূর্ভিক্ষের পর থান্দু ধন্মা ও ১৭৮০ সনে বর্মী রাজা বোধাপোয়া আরাকান রাজ্য দখলের পর মুসলমানদের বিতাড়ন ও গনহত্যা শুরু করে। ১৮২৮ সালে বৃটিশ সরকার বার্মা দখল করার পর মুসলমানরা আরকানে কিছুটা স্বস্তিতে থাকে। ১৯৩৭ সালে বার্মায় স্বায়ত্ব শাসন শুরুর পর ১৯৪২ সালে বার্মায় ও আরাকান রাজ্যে ভয়াবহ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং বার্মা সরকারে সহায়তায় মগদস্যু ও রাখাইন বৌদ্ধরা প্রায় ২৫-৩০ লাখ মুসলমানকে হত্যা করা হয়।

১৯৮২ সালে বার্মার সামরিক সরকার আইন করে বাঙ্গালিসহ সকল মুসলমানদের নাগরিকত্ব, ভোটাধিকার, ভূমি মালিকানা কেড়ে নেয়। এমন কি এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সাথে সাথে বর্মী, সেনা বাহিনী, নাসাকা বাহিনী ও রাখাইন বৌদ্ধরা বাংলা ভাষাভাষী রোহিঙ্গা মুসলমানদের গনহারে হত্যা, ধর্ষন, বাড়িঘর জ্বালিয়ে ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করে। ফলে লক্ষ লক্ষ বাঙালি রোহিঙ্গারা জীবন ইজ্জত আব্রু রক্ষা করতে নিরুপায় হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়। যেমনটি ঘটেছিলো ১৯৭১ সনে পাকিস্তানি সেনা বাহিনী গোটা বাংলাদেশ জুড়ে গনহত্যা শুরু করার পর।

প্রায় ১কোটি বাঙ্গালি (৮০% হিন্দু) ও আওয়ামিলীর নেতা, কর্মী ও সংবাদিক, পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ সীমান্ত অতিক্রম ভারতে আশ্রয় নেয়। ধর্মনিরপেক্ষ ভারত সরকার ১ কোটি বঙ্গালি (৮০%হিন্দু) স্মরনার্থীদের আশ্রয় দিয়ে খাদ্য এবং যুদ্ধের জন্য অস্র ও প্রশিক্ষন দিয়ে সহায়তা করে। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় রোহিঙ্গারা যেহেতু বাঙ্গালি ও মুসলমান তাই মুসলিম বিদ্বেষী পশ্চিমা বিশ্ব, প্রতিবেশি দেশ ভারত বা ধর্ম নিরপেক্ষ বর্তমান সরকার রোহিঙ্গাদের প্রতি কোনো প্রকার মানবিক আচরন ও সহমর্মিতা করতে সম্মত নয়। বিদ্যমান সমস্যাকে জামায়াতিকরন চরম মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাবের নগ্ন বহি:প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনি আরো বলেছেন "এক কথায় রোহিঙ্গা মানেই জামাতের কাছে অনুগত ভোটার" কোনো রোহিঙ্গারই বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই, এখানে ভোটার হবার কোনো প্রশ্নই আসে না।

আপনি বলেছেন, "আমাদের বিহারী অভিজ্ঞতা আছে। ধর্মীয় নৈকট্যের দোহাই দিয়ে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো তাদের, অথচ ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক নৈকট্যে তারা পাকিস্তানীদের মতোই। " বিহারীরা পাকিস্তানি নয়। ১৯৪৬ সালে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা ও ১৯৪৭ এ দেশ বিভাগের সময় বিহারীরা ভারতের বিহার রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। তারা ভারত থেকে প্রত্যাগত।

তথাপি যদি ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক নৈকট্যের কারনে তাদেরকে পাকিস্তানি বলা হ্য় তবে একই ভাবে বাংলা ভাষাভাষী রোহিঙ্গা বাঙ্গালিদের বাংলাদেশি গন্য করতে হবে কি..?? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।