আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৮নং লোকাল সিটিং সার্ভিস ও একজন শিক্ষক !

পৃথিবীর বাধা-এই দেহের ব্যাঘাতে/ হৃদয়ে বেদনা জমে;-স্বপনের হাতে/ আমি তাই/ আমারে তুলিয়া দিতে চাই। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদকে যখন বলতে শুনি ম্যাগসেসে পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তার চিকিৎসা-বাড়িভাড়ার খরচ চালাতে হয় তখন বুকে মোচর দিয়ে উঠে। এই যে সরকার নীতিমালা করে টিউশনি বন্ধ করে দিল-শেষ বয়সে আমার অবস্থা কী হবে? অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের মত ম্যাগসেসে পুরস্কার কয়জন শিক্ষক পাবে তার চিকিৎসার খরচ যোগাতে। ডাক্তার আর শিক্ষকদের পেশা এক নয় জানি। তবে শিক্ষকরা স্কুল টাইমের বাইরে নিজের মেধা-শ্রম দিয়ে কিছুটা আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য ছাত্র পড়িয়ে থাকলে কী এমন ক্ষতি তা বোধগম্য নয়।

ডাক্তাররা সরকারি চাকুরী করেন। সন্ধ্যায় চেম্বারে বসেন; রোগী দেখে্ন। তাদের বিরুদ্ধেও অপেশাদারিত্বের অভিযোগ আছে। ডিউটি টাইমে হাসপাতালে না থেকে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখে। সরকারি হাসপাতালের চেয়ে ক্লিনিকে অনেক ভাল চিকিৎসা করেন।

আরো অনেক অনেক। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। পুরো ডাক্তার শ্রেণীকে বলা হয় না-আপনারা দিনে অন্য হাসপাতালের সর্বোচ্চ ১০ জন রোগীর বেশী দেখতে পারবেন না। এবং যাদের দেখবেন তাদের নাম ঠিকানা, বয়স, লিংগ-সব তথ্য হাসপাতাল প্রধানের নিকট জমা দিতে হবে এবং রোগী চেম্বারে নয় বাসায় দেখতে হবে। মাথা ব্যথা হলে আমরা কী মাথা কেটে ফেলি? গুটিকয়েক শিক্ষককের দায়ভার পুরো শিক্ষক সমাজকে বহন করতে হবে কেন? যেসব অসাধু শিক্ষক নিজের কাছে প্রাইভেট না পড়লে নম্বর কম দেন; প্রশ্ন ফাঁস করেন; দুর্ব্যবহার করেন-তাদের চিহ্নিত করা কী খুব কঠিন কাজ? প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে খোঁজ নিলে এইধরনের শিক্ষদের বের করা কোন ব্যাপারই না।

যারা ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগী নয় বাইরে পড়ানোতে অধিক আগ্রহী তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠানপ্রধানই যথেষ্ট। কিন্তু এভাবে আইন করে সকল শিক্ষককে পরিশ্রম করে একটু স্বচ্ছলতা আনয়নে বাধা কেন? শিক্ষকরা সারা জীবন ভাড়াবাড়িতে থাকবে এটাই যেন এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলেওতারা একখন্ড মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নতে পারবে না। সেইপথ বন্ধ। সন্তানরা তাদেরকে ঘৃণা জানাবে।

তাদের ঘরে জন্ম হওয়াটাকে পাপ মনে করবে তারা। ভাল ভাবে বেঁচে থাকা, ভাল প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা লাভ-বিদেশে পড়তে যাওয়া সম্ভব নয় তাদের সন্তানদের পক্ষে। কোনদিন তারা একটা ভাঙ্গা গাড়ি কেনার স্বাধও করতে পারবে না। ৮নং লোকাল সিটিং সার্ভিস একজন শিক্ষক ও তার উত্তরাধীকারীর চিরদিনের নির্ধারিত বাহন-এই তাদের নিয়তি। জয়তু নীতিমালা! ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এই নীতিমালা না মানলে শিক্ষকের শাস্তি হবে। বরখাস্ত-চাকুরীচ্যুতি। নীতিমালা-০১: নীতিমালা অনুযায়ী অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অনুমতি লাগবে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে লিখিতভাবে ছাত্র-ছাত্রীর তালিকা, রোল ও শ্রেণী উল্লেখ করে দিতে হবে। সমালোচনাঃ নীতিমালাতেই যেখানে বলা আছে ১০জন পড়ানো যাবে।

সেখানে এই ১০জন পড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানপ্রধানের কাছে পুনরায় অনুমতির কী দরকার? আজ একজন চলে গেল কাল একজন নতুন এলো; তার নাম আবার প্রতিষ্ঠানপ্রধানের কাছে জমা দেওয়া। বাহ! পড়ানো বাদ দিয়ে আইন রক্ষায় দৌড়া-দৌড়ি ভালই হবে। নীতিমালা-০২: দিনে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়ানো যাবে। সমালোচনাঃ বাসায় ছাত্র পড়াতে গেলে বাড়িওয়ালারা মনে করে পাইছি মওকা। দ্বিগুণ ভাড়া দাও।

আবার অনেকে শিক্ষকদের কাছে বাসা ভাড়া দিতে চান না। অন্য ভাড়াটিয়ারা আপত্তি করে। তাই ভাড়া দিলেও ছাত্র বাসায় পড়ানো নিষেধ। নীতিমালা-০৩: মহানগর এলাকায় অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক বিষয়ের জন্য ৩০০ টাকা করে নেয়া যাবে। সমালোচনাঃ একজন শিক্ষার্থীর ১০ বিষয় পড়ার জন্য ৩০০০ টাকা লাগবে।

খরচ বাড়লো না কমলো? একটি প্রতিষ্ঠানে ১৭০ জন শিক্ষককে বাড়তি উপার্জনের সুযোগ দিতে সবাইকে কোচিংয়ে ক্লাস দেয়া কী সহজ হবে? ফলে বাড়বে দলাদলি। পড়ানো রেখে এসবই করে বেড়াবে শিক্ষকরা। নীতিমালা-০৪: শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত কোচিং ফি এর ১০ শতাংশ কেটে রাখবে প্রতিষ্ঠান। সমালোচনাঃ অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে কোচিং আগে থেকে চালু আছে সেখানে প্রতিষ্ঠান-প্রশাসন ৯০ ভাগ রেখে বাকী ১০ ভাগ শিক্ষকদের দেয়। গত বছর এক প্রতিষ্ঠানে তিন মাসের কোচিং ফি বাবদ ২ লক্ষ টাকা উঠেছিল।

এই টাকার মধ্যে তিন মাসে ৬০ জন শিক্ষককে ৬০০/৭০০ টাকা করে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয় । বাকী টাকা? বললাম না। নীতিমালা-০৫: শিক্ষকরা কর্মঘণ্টার বাইরে প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের পড়াবেন। সমালোচনাঃ একজন শিক্ষককের সপ্তাহে ২৪-২৮ টা ক্লাস অর্থ্যাৎ দিনে ৭ পিড়িয়ডের মধ্যে ৪/৫ টি ক্লাস নিয়ে কতটুকু এনার্জি অবশিষ্ট থাকে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই জানে। বিচারক ও শিক্ষককে জোর-জবরদস্তি করে কিছু আদায় করা সম্ভব নয়।

শিক্ষক যখন দেখবে তাকে আইনের ফাঁদে ফেলে খাটানো হচ্ছে তখন পাঠে কতটা আন্তরিকতা থাকবে তা সহজেই অনুমেয়। অসৎ শিক্ষকদের জন্য আমরা এ মহান পেশাকে কলংকিত হতে দিতে পারি না। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে যারা অর্থ উপার্জন করতে চায় তাদের চিহ্নিত করে এ পেশা থেকে বহিস্কার চাই। শ্রম-ঘাম মেধার মাধ্যমে এগিয়ে যাক শিক্ষক সমাজ। পরিশেষে, শিক্ষকদের হাত পা বেধেঁ --বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারগুলোকে উৎসাহিত করার জন্য ধন্যবাদ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।