আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের মানুষ কি মিসর এবং তিউনিসিয়ার মানুষদের আতিথিয়তার কথা ভুলে গেছে....????? (সবার স্মৃতিচারণের জন্য কিছু ছবি)

পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/ মাননীয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রী, মনে পরে সেই দিনের কথা? যখন আপনি সাল্লুম বর্ডারে দাঁড়িয়ে আটকে পরা বাংলাদেশীদের বিপদের কথা আমার মুখ থেকে শুনছিলেন আর কাদোঁ কাদোঁ চেহারা নিয়ে সরকারবিহীন মিসরের সেনাবাহিনী ও সাধারণ জনগণের ভুয়সি প্রসংসা করছিলেন? কারণ তারা আপনার দেশের প্রায় ২০,০০০ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। মনে পরে? আলেকজান্দ্রিয়া এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ বিমান হাতের ঈশারায় দেখিয়ে আপনার ছেলেদের বুঝাতে চেয়েছিলেন, ঐযে আমাদের বিমান, নিজ দেশের বিমানে চড়া মানেই তো নিজ দেশে পৌছে যাওয়া, নিরাপত্তা লাভ করা। জান মালের হেফাজত হওয়া। এবং এটাও বলেছিলেন, মিসর সরকার আমাদের যেই উপকার করল এটা আমাদের ভূলা মোটেও ঠিক হবে না।

আমরা তাদের নিকট ঋণী হয়ে গেলাম। মনে পরে তিউনিসিয়ার বর্ডার রাস'জদিরে অবস্থিত রিফিউজি ক্যাম্প 'শর্শা'র কথা? যেখানে আপনার দেশের প্রায় ৩০,০০০ মানুষ আশ্রয় পেয়েছিল। বর্ডার পার্শ্ববর্তী মরুভুমি এলাকা হওয়া সত্ত্বেও কয়েক কিলমিটার দূর থেকে কিভাবে এলাকার মানুষ নিজেদের মধ্যে চাল উঠিয়ে আপনার দেশের মানুষদের খিচুরি রান্না করে খাইয়ে বাচিঁয়ে রাখত? তখনতো তিউনিসিয়ায় ও সরকার ছিল না। সেখান থেকে কি শিক্ষা পান নি যে, মানুষ বিপদে পরলে নিজের খাবারের অর্ধেকটা দিয়ে সাহায্য করার নামই হলো মনুষত্ব্য। আপনি না কিছুদিন আগেও হজ্ব আদায় করে এলেন, আপনি কি জানেন না হজ্বের মূল শিক্ষা কি? মানুষে মানুষে ভাতৃত্ব্য বন্ধন জোরদার করা, পৃথিবির সীমানা ভূলে গিয়ে এক সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি হিসেবে সকলের পাশে সবসময় থাকা, এটাই কি হজ্বের শিক্ষা নয়? আপনি না শিক্ষিত।

আপনি কি আরবের জাহেলী তথা অন্ধকার যুগের কথা পড়েননি? যেখানে মানুষ খুন করা, লুটতরাজ করা ছিল ভদ্রলোকের পেশা। সেই যুগেও নিজ ঘরে কোন শত্রু আশ্রয় চাইলে তাকে আশ্রয় দেয়ার বিধান ছিল, এমন কি তারা নিজ জান-মালের বিনিময়ে ও অতিথির নিরাপত্তা দিত। তবে কি আমরা অন্ধকার সেই যুগের চেয়েও অন্ধকারে বাস করছি??? এবার আমার জীবনের একটা ঘটনা শুনুন। আমি যখন প্রথম বিদেশ আসি তখন আমাকে বড় ভাইয়েরা রান্না করে খাওয়াইত। আমি মাত্র অনার্সে ভর্তি হয়েছি অথচ অনেক পিএইচডি'র ছাত্ররা আমার খাবার প্লেট ধুয়ে দিত।

আমার চোখে পানি চলে আসত। তারা বুঝতে পেরে বলতেন, শুনেন এটাই নিয়ম। আমরা যখন আসছি তখন আমাদের বড় ভাইয়েরাও আমাদের জন্য এমন করেছেন। তাই তোমার উপরেও দায়িত্ব থাকবে, তুমি যখন পুরাতন হবে তখন নতুনদের সাহায্য করবে। আমি আজ প্রায় আট বছর পর এখনো ভাবি সেই দিনগুলির কথা,, আসলে তাদের সেই দিনের ঋণ কখনো শোধ করা যাবে না।

বা, তাদের ঋণ শোধ করতে চাওয়াটা ও তাদেরকে অসম্মান করা। বরং এমন সাহায্য নেয়া থেকে কিছু দায়িত্ব চলে আসে। যা অন্যকে সাহায্য করার মাধ্যমে শোধ করতে হয়। মাত্র বছরখানেক আগেই যেখানে তিউনিসিয়া, মিসর আপনার দেশের এতগুলো মানুষকে নিশঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করল, আপনি কি এর পরে একবার সেই দেশের খোজ নিয়েছেন??? বা তাদের ধন্যবাদ দিয়ে কোন চিঠি পাঠিয়েছেন?? নাকি তাদের কোন মন্ত্রীকে দাওয়াত করে আতিথিয়তা করেছেন??? করেন নি। করার দরকারও নেই।

আজ তারাও ভুলে গেছে সেই সমস্ত দিনের কথা। কিন্তু আপনারতো ভুলা ঠিক হয়নি। কারণ আপনি তাদের থেকে যেই সাহায্য পেয়েছেন সেটা না পেলে হয়ত এতদিন আপনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকতে পারতেন না। দীর্ঘদিন বর্ডারে পরে থাকা মানুষগুলো যখন শীতে মারা যাচ্ছিল, 'আই ও এম' এর দেয়া শুকনো খাবার ছাড়া কোন খাবারই ছিল না, মানুষ গুলো যখন নিজেদের বাংলাদেশে জন্ম নেয়াটাকেই দোষ মনে করতেছিল অথচ আপনারা 'আই ও এম' বাংলাদেশ বিমানের তেলের টাকা পরিশোধ করে নি বলে বিমানের কোন ফ্লাইট দিচ্ছিলেন না, অথচ সেদিন বর্ডারে বলে এলেন ভিন্ন দেশ থেকে ফ্লাইট করার কত নিয়ম কানুন, যার কারণে ফ্লাইট দিতে দেরি হলো,, আমরাও পরিস্থিতি সামাল দিতে, বিদেশের মাটিতে কোন হৈহুল্লো না করে নিরাপদে সকলকে দেশে পাঠানোর কথা মাথায় রেখেই আপনার সুরে সুর মিলিয়ে সবাইকে ভুল বুঝিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিলাম। অথচ, সেইদিন মানুষদেরকে যদি জানাতাম যাদের টাকায় দেশ চলে তাদের দেশে পাঠানোর মতো প্লেনের তেল আপনাদের নিকট নাই, তাহলে হয়ত সেদিন আপনি স্বসম্মানে দেশে ফিরতে পারতেন না।

তাহলে কি সেটা করাই উচিত ছিল??? মিথ্যা বুঝানোর পাশাপাশি আপনি কি করলেন!! বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট দিতে পারায় সমস্ত ক্রেডিট আপনি নিয়ে নিলেন। ভাবটা এমন ণিলেন যেন নিজের পকেটের টাকা দিয়ে আপনি তাদের ফ্লাইট দিচ্ছেন। আমরা স্বীকার করি আর না করি, আমাদের দেশ অনেকাংসেই বিদেশীদের সাহায্যের উপর নির্ভর্শীল। আরব থেকে যে টাকা আসে সেটা আসে যাকাতের টাকা, ইউরুপ আমেরিকা থেকে যেটা আসে সেটা বিভিন্ন চ্যারিটি ফান্ডের টাকা। এই টাকা খেয়ে খেয়ে কি আপনাদের হৃদয় মরে গেছে??? তা না হলে আপনি কিভাবে বলেন যে, রোহিংগাদের সীমান্তে ঢুকতে দিতে আমরা বাধ্য নই??? আপনি কি ভুলে গেছেন যে প্রায় প্রতিবছরই আপনার দেশে বিভিন্ন দূর্যোগ হয়, আর সেই দূর্যোগ মোকাবেলার সমস্ত টাকাই আসে বিদেশিদের থেকে।

সে ক্ষেত্রেও কি আপনাদের উপর অন্যদের সাহায্য করার কোন দায়িত্ব আসে না? দেশের মংগল কে না চায়?? দেশের ভিতর কোন গন্ডগোল হোক সেটা কেহই চায় না। তাই রোহিংগারা যদি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কোন গন্ডগোলের সৃষ্টি করে সেটা আমরাও চাই না। তাইবলে কি সীমান্তবর্তী এলাকায় কোন ক্যাম্প করে শুধুমাত্র শিশু ও মহিলাদের আশ্রয় দিয়ে কিছু খাবারের ব্যাবস্থা করার মত সামর্থ্যও আমাদের নেই??? রক্ত ঝরা শরীর নিয়ে আমাদের দিকে ছুটে আসা কোন মানুষের হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়ার ব্যবস্থাও কি আমাদের নেই??? আমরা কি এতই গরীব??? আজ যদি আমরা ১০,০০০ নারী ও শিশুকে আশ্রয় দিয়ে হালকা খাবার ও চিকিৎসা দিতে পারতাম তবে মিসর ও তিউনিসিয়ার মানুষগুলো দেখত ও জানত এবং মনে মনে খুশি হয়ে বলত আমরা এক সভ্যজাতীর সেবা করেছিলাম। এই একটু খাবার আর পানির বিনিময়ে ভবিষ্যতে অনেক বড় বড় সমস্যায় মানুষের নিকট সাহায্য চাইতে হতো না, তারা এমনিতেই আমাদের বিপদে সাহায্য করত। সোমালিয়াতে জাতিসংঘের দূত হিসেবে আমাদের সেনাবাহিনি যেই সুনাম কুড়িয়েছে এখানেও তার ধারাবাহিকতা রক্ষা পেত।

ওহে দেশবাসি, তোমরা জাগ্রত হও। তোমরা যদি মনে কর যে একদিন হলেও তোমরা মানুষের সাহায্য নিয়েছো তবে এখন সময় এসেছে তোমরাও অন্যের সাহায্য করতে পার। ১৬ কোটি মানুষ ১টাকা করে দিলে কয়েক হাজার মানুষ বেশকিছুদিন খেয়ে বাচঁতে পারবে। >>> সরকারের নিকট আমাদের প্রস্তাব: - সীমান্তবর্তী এলাকায় সেনাবাহনীর তত্ত্বাবধায়নে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প করা হোক, সেখানে বিশেষভাবে নারী ও শিশুদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হোক, এবং ঐ সমস্ত পুরুষ কিংবা যুবক যারা আহত হয়ে আমাদের দিকে আসছে প্রাণ বাচাঁনোর জন্য, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার পুশব্যাক করানো হোক। কোন রোহিংগাকেই আমাদের মূল ভুখন্ডে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না আবার কোন আশ্রয় প্রার্থিকেই নিরাশ করা হবে না।

> এই শুকনো খাবার না পেলে অনেককেই হয়ত না খেয়েই মরতে হতো। > এতটুকু ছাউনি না পেলে হয়ত অনেকে শীতেই মারা যেত। > এভাবে খাবারের লাইন না দিলে খাবার পেতই না। > দাড়িয়ে থাকতে থাকতে যখন কুলাতে না পারত, তখন বসে বসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। >> কয়েকদিন পর পর এইভাবে পানি আনা হতো গোসলের জন্য।

>> সবকিছুই যখন অন্যরা করছে, প্লেন ভাড়াও অন্যেরা দিচ্ছে তখন মন্ত্রী এসে নিজের নামে কৃতিত্ত্ব লিখে নিলেন। ধন্যবাদ মন্ত্রী। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।