আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক কৃষকের গল্প

এক দরিদ্র কৃষকের খুব ইচ্ছা তার দারিদ্র্যকে পরিবর্তন করবে। তো দারিদ্র্যকে পরিবর্তনের জন্যে সে বড় কোনো কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। বেশ কয়েকবার কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হলো, কিন্তু বড় কোনো কাজের সন্ধান পেলোনা । তারপরও সে আশা ছাড়লো না । এবার সে তার স্ত্রীকে বললো বেশ কয়েকদিনের খাবার দিয়ে দিতে যাতে করে সে আরও বেশি দূরে যেতে পারে।

তো কয়েকদিনের খাবার নিয়ে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল । সারাদিন অনেক ঘোরাঘোরির পর কোনো কাজ না পেয়ে একটা গাছের নিচে বসে আছে তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। হঠাৎ সে দেখলো বেশ কয়েকজন বাউল শিল্পী গান গাইতে গাইতে যাচ্ছে তখন কৃষক তাদেরকে জিজ্ঞেস করলো তারা কথায় যাচ্ছে? প্রশ্নের উত্তরে তাদের দলনেতা বললো রাজদরবারে, তখন সে বায়না ধরলো সেও তাদের সাথে যাবে, কিন্তু তাদের দলনেতা সাথে নিতে নারাজ। কিন্তু কৃষক কোনো কথাই শুনল না । সে যাবে তো যাবেই! অবশেষে দলনেতা রাজি হলো এবং কৃষককে সাথে নিল।

পরদিন কৃষক আবারও সারাদিন কাজের সন্ধানে বের হলো। কিন্তু কোনো কাজ না পেয়ে আবারও সন্ধ্যায় সেই গাছটির নিচে বসে আছে। গতকালকের মতো একই সময় সেই বাউল শিল্পীরা যাচ্ছিল। এবারও কৃষক সাথে তো যাবেই তারপর একটা গানও করবে বলে অনেক অনুরোধ করল। দলনেতা আগের মতোই সাথে নিতে রাজি না।

কিন্তু কৃষকের অনেক আকুতি মিনতিতে দলনেতা রাজি হলেন । যেহেতু কৃষক তাদের মধ্যে নতুন শিল্পী সেহেতু দলনেতা রাজদরবারে পৌছে রাজাকে বললেন রাজা আজকে আমরা নতুন একটা শিল্পী নিয়ে এসেছি। তো রাজা বললেন ঠিক আছে তাহলে আজকে নতুন শিল্পীর গান আগে শুনবো। এবার দলনেতা কৃষককে স্টেজে উঠতে বললো এবং গান গাইতে বললো। কিন্তু কৃষক তো গান গাইতে জানেনা।

সে স্টেজে উঠে গান গাওয়া তো দূরের কথা, কোনো কথা বলতে পারল না। অবশেষে দলনেতা কৃষককে নেমে আসতে বললো। বাউল দল সেদিনের গান শেষ করে সবাই বাড়ি ফেরার পথে কৃষককে অনেক বকাঝকা করল। বকাঝকা করাতে তার মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল । রাতে কৃষকের ঘুম হলো না সে ভাবতে লাগল কিভাবে গান শেখা যায় ।

তো পরদিন কৃষক ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সে দেখল একটা ইঁদুর গর্তের ভিতর থেকে টুকরো টুকরো মাটি বাহিরে বের করে দিচ্ছে তখন কৃষক গানের একটা লাইন তৈরি করে ফেললো ১. (কাটি কুটি মাটি ঠেলি) তারপর হাটতে হাঁটতে দেখে একটা খরগোশ এবং খরগোশটা তাকে দেখামাত্রই চুপ করে বসে পড়লো তখন কৃষক গানের আরো একটা লাইন তৈরি করে ফেললো। ২. (চুপি চাপে বসে গেলি ) কিছুদুর যাওয়ার পর দেখে একটা জেলে জাল দিয়ে মাছ ধরছে তো জালে অনেকগুলো চিংড়ি ধরা পড়ছে চিংড়িগুলো বেশ লাফালাফি করছে তখন কৃষক গানের আরো একটা লাইন তৈরি করে ফেললো ৩. (তিড়িং বিড়িং দিচ্ছেন লাফ) এর কিছুদুর যাওয়ার পর দেখে একটা গাধা বেশ লম্বা লম্বা পা ফেলে হেটে যাচ্ছে তখন কৃষক তার গানের শেষ লাইন তৈরি করে ফেললো ৪. (এলেং ফ্যালেং যাচ্ছেন যাও ) এবার কৃষক এই চারটি লাইন বার বার বলে আয়ত্ত করলো । প্রতিদিনের মতো কৃষক সেই গাছটির নিচে বসে আছে এবং সেই একই সময়ে বাউলরা রাজদরবারে যাচ্ছিল। এবার বাউলরা কোনোভাবে কৃষককে সাথে নিবে না, কিন্তু কৃষক শেষবারের মতো তাদেরকে অনুরোধ করলো তাকে সাথে নেওয়ার জন্যে, যাইহোক বাউলরা তাকে শেষবারের মত সাথে নিল ।

এবারও বাউলদের নেতা রাজাকে বললো রাজা কৃষক এবার ভাল একটি গান গাইবে । রাজা বললো ঠিক আছে এবার কৃষক স্টেজে উঠে গান গাওয়া শুরু করলো । কাটি কুটি মাটি ঠিলি চুপি চাপে বসে গেলি তিড়িং বিড়িং দিচ্ছেন লাফ এলেং ফ্যালেং যাচ্ছেন যাও কৃষকের গান শুনে রাজদরবারে সকলে হো হো করে হেসে উঠল । সেদিনের মতো গানের আসর শেষ করে সবাই যে যার বাসায় চলে গেল । রাজা এবং রানী রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমানোর জন্যে বিছানায় গেলেন ।

দুজনে গল্প করছেন গল্প করতে করতে রানীর কৃষকের সেই গানের কথা মনে পড়ে গেল । রানী রাজাকে সেই গানটি গাইতে বললে রাজা ১ম লাইনটা বলল, কাটি কুটি মাটি ঠিলি ঠিক সেই মুহুর্তে একটা চোর রাজদরবারে ঢুকে চুরি করার জন্যে (সিধ) মাটি কাটছিল এবং মাটি সরিয়ে রাখছিল রাজা যখন "কাটি কুটি মাটি ঠিলি" বলল, চোর ভাবলো রাজা মনে হয় বুঝতে পারছে । বুঝতে পারছে কিনা সেটা শিওর হওয়ার জন্যে সে চুপটি করে বসে আছে ঠিক সেই মুহুর্তে রাজা ২য় লাইনটা বললো "চুপি চাপে বসে গেলি" চোর ভাবলো রাজা মনে হই সত্যি সত্যি বুঝতে পারছেন তখন চোর খুব ভয় পেয়ে গেল এবং সে মাটির ভিতর থেকে লাফ দিয়ে উঠলো । ঠিক সেই মুহুর্তে রাজা ৩য় লাইনটা বলল, "তিড়িং বিড়িং দিচ্ছেন লাফ" তখন চোর জোরে দৌড় দেওয়া শুরু করলো ঠিক সেই মুহুর্তে রাজা শেষ লাইনটা বলল, "এলেং ফ্যালেং যাচ্ছেন যাও" বলা মাত্র চোর ভয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো চিৎকার শোনার সাথে সাথে প্রহরীরা চোরটাকে ধরে ফেললো । তখন চোরকে উপযুক্ত সাজা দেওয়া হলো ।

সাজার ফলে চোর প্রতিজ্ঞা করলো সে আর কখোনো চুরি করবেনা । পরদিন সকালে রাজা উজিরকে সেই কৃষককে রাজদরবারে হাজির করার জন্যে বললো । উজির খুঁজতে খুঁজতে কৃষককে সেই গাছের নিচে পেল এবং তাকে রাজদরবারে হাজির করলো । রাজা কৃষককে চোরের ঘটোনাটা খুলে বললো । কৃষকের গানের কারোনে রাজদরবারের অনেক মূল্যবান সম্পদ বেচে গেল এ জন্যে রাজা কৃষকের প্রতি খুশি হয়ে তাকে বেশ কিছু-সোনা দানা ও টাকা দিয়ে দিল ।

কৃষক মনের সুখে উপহার গুলো নিয়ে বাড়ি চলে গেল । এবং সে সুন্দরভাবে জীবন যাপন শুরু করলো । "চাওয়ার দায়িত্ব আমাদের দেওয়ার দায়িত্ব আল্লাহর" "আমরা শুধু হৃদয়ের গভীর থেকে চেয়ে যাব আল্লাহ অবশ্যই আমাদের চাওয়া পুরণ করবেন" ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।