গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী সড়ক ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে গতকাল প্রকাশ্য দিবালোকে গোলাগুলি করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই গ্রুপ ঠিকাদার। এ সময় তাদের মধ্যে অর্ধশতাধিক রাউন্ড গোলাগুলি হয়। সড়ক ভবনের সব কাজের টেন্ডারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওই দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ ছিল। সড়ক ভবন এলাকায় এরা শ্রমিক লীগের কামাল গ্রুপ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেন্টু গ্রুপ নামে পরিচিত। রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার কাজ ভাগাভাগি নিয়ে পুরনো দ্বন্দ্ব এবং টেন্ডারের জন্য আসন্ন প্রকল্প ভৈরব, কাঞ্চন ও তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর টোল আদায়ের প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিতে নিজেদের শক্তির মহড়া দিতেই গিয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম শাহরিয়ারসহ ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। গুলিবিদ্ধ ৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও একজনকে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সড়ক ভবন ত্যাগ করে। প্রকাশ্যে গোলাগুলির এ ঘটনায় সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কমিটিকে।
গুলিবিদ্ধরা হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম শাহরিয়ার (৩৫), ছাত্রলীগ নেতা রিপন (২৬), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মশিউর রহমান রাজেস (৩২), ছাত্রলীগ নেতা কাজী মাসুমুল হক (২৭), তৌফিকুর রহমান (২৮) ও সড়ক পরিবহন অফিসের গাড়িচালক জাকির হোসেন (৪০)। শামীম শাহরিয়ারকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে, পরে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাকিদের ঢাকা মেডিকেলে চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায় গুলিবিদ্ধদের চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতারা ভিড় জমিয়ে আছেন সেখানে। চিকিত্সকরা জানান, আহত জাকিরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শরীরের পেছন দিক থেকে গুলি ঢুকে তলপেটে রয়েছে।
শামীমের ডান পাঁজরে গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। তৌহিদের মাথায়, রিপনের বাম হাতে, রাজেশের বাম পায়ের হাঁটুর ওপরে ও কাজী মাসুমুল হকের বাম হাতে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
যেভাবে ঘটনা ঘটে : গুলিবিদ্ধ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিস সহকারী ও শ্রমিক লীগভুক্ত কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন খন্দকার এবং আওয়ামী লীগ নেতা গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ফরিদ আহমেদ সেন্টু ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শামীম শাহরিয়ার গ্রুপ গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। গতকাল বিকাল ৪টার দিকে কামালের নেতৃত্বে ১৬ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী সড়ক ভবনে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে ১২ জন ৬টি মোটরসাইকেলযোগে ও ৪ জন একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কারে সেখানে যায়।
একটি মোটরসাইকেল সড়ক ভবনের প্রবেশপথের পাশে অবস্থিত মসজিদের সামনে থামে। বাকিগুলো রাস্তার মাথায় গিয়ে থামে। গাড়ি থেকে নেমেই অস্ত্রধারীরা আওয়ামী লীগ নেতা ও ঘুপচি টেন্ডারের অন্যতম হোতা গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ফরিদ আহমেদ সেন্টু ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শামীম শাহরিয়ারের নাম নিয়ে উচ্চস্বরে গালিগালাজ করতে থাকে। এরপরই মসজিদের সামনে অবস্থান নেয়া দু’জনের একজন ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরবর্তীতে অন্যরা ঠিকাদারদের রুমে গিয়ে গুলি ছোড়ে।
জবাবে সেন্টু গ্রুপের ক্যাডাররা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। মুহূর্তেই দু’দিকে অবস্থান নেয়া কামাল বাহিনীর সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়। গোলাগুলির সময় আতঙ্কে সড়ক ভবন ও আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। এসময় গুলিবিদ্ধ ক’জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, সড়ক ভবনের সামনের রাস্তায় রক্তের ছাপ পড়ে আছে। ঘটনার পর সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করছেন।
আহত শামিম শাহরিয়ার জানান, বিকাল প্রায় ৪টার দিকে একটি প্রাইভেট কার ও ৬টি মোটরসাইকেলযোগে প্রায় ২০-২৫ জন চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সড়ক ভবনে ঢুকে ঠিকাদারদের রুমে গিয়ে তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ৩০-৪০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় সড়ক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছোটাছুটি করে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে আশ্রয় নেন।
অনেকেই পেছনের বাউন্ডারি দেয়াল লাফিয়ে পালিয়ে যান। আর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সামনের ও পেছনের গেট দিয়ে বীরদর্পে নিরাপদে চলে যায়। গেটে থাকা নিরাপত্তাকর্মী ও অদূরে থাকা টহল পুলিশ রহস্যজনক কারণে তাদের বাধা দেয়নি। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ঢাকাস্থ গোপালগঞ্জ ছাত্রকল্যাণ সংসদের সভাপতি শেখ মো. গোলাম আযম মামুন বলেন, সড়ক ভবনে নিয়মতান্ত্রিকভাবে টেন্ডার ভাগবাটোয়ারার বিষয়ে আলোচনা চলছিল। সড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে এ সংক্রান্ত একটি আবেদনপত্রও জমা দিয়েছিলেন তিনি।
এতে তারা উল্লেখ করেছেন, কারও একক দখলদারিত্বে টেন্ডার কেনাবেচা করা যাবে না। সারাদেশের সড়ক মেরামতের শত শত কোটি টাকার কাজ নিয়মতান্ত্রিকভাবেই সরকারদলীয় ঠিকাদারদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এসব বিষয় নিয়ে যখন আলোচনা চলছিল, ঠিক তখনই সড়ক পরিবহনের অফিস সহকারী খন্দকার কামাল উদ্দিন, অফিস স্টাফ ফজলুল হক ও বহিরাগত মাস্তান রফিকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ঠিকাদারদের ওপর হামলা চালায়। এসময় ঠিকাদাররা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। ঘটনাস্থলে আম বিক্রেতা মো. শওকত বলেন, গোলাগুলি দেখে মসজিদে আশ্রয় নেই।
পরে দেখি রাস্তার ওপর দু’জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছেন। ৩০-৪০ রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, বিকাল প্রায় ৪টার দিকে সড়ক ভবনের সামনের গেটে নিরাপত্তাকর্মীরা টহল দিচ্ছিলেন। তখন হঠাত্ করে সামনের গেট (প্রধান গেট) দিয়ে ৬টি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেট কারযোগে কিছু লোক ঢুকে মূল ভবনের সামনে গাড়ি থামিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে করতে ঠিকাদারদের রুমে গিয়ে ৫ ঠিকাদারকে টার্গেট করে গুলি করে। এরপর কেউ সামনের গেট, কেউ পেছনের গেট দিয়ে নিরাপদে চলে যান।
যে কারণে ঘটনার সূত্রপাত : সূত্র জানায়, সড়ক ভবনের টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ ও ভাগবাটোয়ারা এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মচারী ইউনিয়ন নেতা কামাল বাহিনীর প্রধান কামাল গ্রুপের সঙ্গে প্রতিপক্ষ সেন্টু গ্রুপের বিরোধ চলছিল। সেন্টু গ্রুপের বেশিরভাগ ঠিকাদার গোপালগঞ্জের বাসিন্দা। কামাল গ্রুপ টেন্ডারের সব কাজ গোপনে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার পক্ষে ছিল। আর সেন্টু গ্রুপ সিন্ডিকেট করে নিজেদের মধ্যে ভাগভাটোয়ারা করার চেষ্টা চালায়। এছাড়া সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার এবং ব্রিজের টোল আদায়ের কাজ পেতে দু’গ্রুপই মরিয়া।
পুরনো এ দ্বন্দ্বের জের ধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এর আগে ৩ জুন শাহবাগ থানায় কামাল গ্রুপের বিরুদ্ধে একটি মামলা (নম্বর ৩৯) দায়ের করা হয়। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে বিরোধ চরমে পৌঁছে। গোয়েন্দা সূত্র ও আহতরা জানান, সড়ক ভবনে স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার কামালের নেতৃত্বে তেজগাঁও এলাকার তালিকাভুক্ত ভাড়াটে সন্ত্রাসী রফিক, ফজলু, রহমান, জালালসহ ২০-২৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছোট-বড় (পিস্তল, রিভলভার ও কাটা রাইফেল) আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।
পুলিশ ও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে পুলিশের রমনা জোনের ডিসি সৈয়দ নুরুল ইসলাম আমার দেশ-কে বলেন, সেন্টু ও কামাল গ্রুপের ঠিকাদারদের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা শুনে ৪-৫টি টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছি। ভিকটিম পক্ষ জানিয়েছে ৩০-৪০ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছে। হামলাকারী কামালকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আমিনুর রহমান লস্কর বলেন, গোলাগুলি হয়েছে বলে শুনেছি। নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি শঙ্কিত নই; তবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, গেটে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের কাছে অস্ত্র নেই। গেটের কন্ট্রোল আমাদের হাতে নেই। এ কারণে আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে পারি না।
তদন্ত কমিটি গঠন : সড়ক ভবনে গোলাগুলির ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. আলীকে প্রধান করে গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইকতেদার চৌধুরী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুল হক।
আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী আমিনুর রহমান লস্কর। কাজী মো. আলী জানান, নির্দিষ্ট সময়ে তারা রিপোর্ট জমা দিতে পারবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।