আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সময় কেটে যায়

অনেকদিন থেকেই মনটা লিখবো লিখবো করছে । কিন্তু যখনই গল্প লিখার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে button টেপা শুরু করি, অমনি মাথা ফাঁকা হয়ে যায় । কখনোবা আঙুলের অত্যাচারে ধবধবে screan এ যা ভেসে উঠতো তা নিতান্তই চাঁদের কলঙ্ক বলে বোধ হতো । কি করি ?......কি করি?....ভাবতে ভাবতে facebook এ ঢুকে পড়ি । আমার আর গল্প লিখা হয় না ।

আজ দুপরে বারান্দায় বসে ক্ষণিকের অবসর যাপন করছিলাম। প্রচন্ড গরম পড়েছে আজ। ঘামে ভেজা শরীরটা নিয়ে হাঁস-ফাঁস করছি। বাতাসটা যেনো আসবে আসবে করেও আসছে না। এমন সময় বলা নেই--কওয়া নেই্‌ হুট করে হু-হু করে গরম বাতাস বয়ে গেলো।

আরামে চোখ বুঁজে এলো। তারপর তা নিঃশব্দে কখনো ধীরে কখনো বা বুকের পশমগুলোকে আন্দোলিত করার মধ্য দিয়ে তার অস্তিত্ব জানান দিতে লাগলো । গরমের আলস্যমিশ্রিত অত্যাচারের পর এই ফুরফুরে বাতাস মনটাকে কেমন যেনো বিলাসী করে তুললো। এই ছোট্ট জীবনেই ফেলে আসা দিনগুলোর কতো কথাই না মনে পড়তে লাগলো। আমি তখন খুব ছোট ।

কত ছোট.....এই ক্লাশ ৫ এ । আমাদের পরিবারে তখন স্নায়ুযুদ্ধ চলছে । যুদ্ধের বিষয় আমার বড় ভাই সাজিদ , যাকে আমরা সাজু ভাই বলে ডাকি । আমার ধারণা , সে আমাদের দু’ভাই এর মধ্যে বেশী সুদর্শন। তাহলে বাকী আমি হলাম কুদর্শন।

এরও পেছনে কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উঁত্ পেতে আছে । আমার মায়ের বংশের সব্বাই লাল সাদা । আর বাবার বংশ ডেকচির তলার কালি । শুধু বাহ্যিক না আমার ধারণা মানসিক জগত্টাও তাদের ভিন্ন । খোদা যে কিভাবে তাদের একই ছাদের তলায় ২৬ বছর রাখলেন তা পৃথিবীর অষ্টমার্শ্চযের একটি ।

যাই হোক সে আরেক ইতিহাস । কিন্তু দুঃখের ইতিহাসটা হচ্ছে আমি বাবার বংশের গাত্রবর্ণ বিষয়ক ঐতিহ্যটা আর যাই হোক অন্তত বাহ্যিকভাবে ধরে রেখেছি। আমি ছোটো ছিলাম বলে খুব যে কম বুঝতাম তা কিন্তু না । আমার জ্ঞানের পরিধি মাঝে মাঝে "ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া / উঠিয়াছি চির বিস্ময় আমি , বিশ্ব বিধাত্রীর !" করে উঠতো । আমার এক খালাতো বোন আছে ।

তার নাম মৌ । বড়ই রূপবতী ছিলেন । আমার এইখানটাতে বিপুল আক্ষেপ জমা হয়ে আছে । আমার বিপুল পরিমাণে খালাতো মামাতো চাচাতো ফুফাতো বোন আছে । কিন্তু আমার বিপুল আক্ষেপটা হচ্ছে এরা সবাই আমার চেয়ে বয়সে বড় ! সাজু ভাই তখন পড়তো আলেয়া মাদ্রাসায় ।

সে বড়াবড়ই আধুনিক টাইপ হুজুর । মানে তার dress code শুনলেই বোঝা যাবে । তাকে সবসময়ই দেখতাম সে মাদ্রাসায় জিন্সের প্যান্ট আর সিল্কের পান্জাবী পরে টুপিহীন মস্তকে ছুটতো । একদিন আমাদের বাসায় খালা তার অর্ধবাহিনী নিয়ে বেড়াতে এলো । মানে তার দু'মেয়ে নিয়ে ।

একটা সাজু ভাইয়ের সমান আরেকটি আমি একটুর জন্য নাগাল পাই না । বরাবরই একটুর জন্য মিস্ করে এসেছি গাছের মগডালের পাকা টসটসে আমগুলোর মতো । মৌ আপার বিশাল চেহারা । কোনদিক থেকে তার বর্ণনা দেবো বুঝতে পারছি না । অনেক ফর্সা আর চেহারার কাট্ বেশ ভালো ।

ফর্সার আধিক্য তার চুলকেও ঈষত্ লালচে রূপ দান করেছে । আমাকে খুব আদর করতো । করতো কি......এখনও করে । ইস্ সাইজে ছোটো হলে কোলেও হয়তো উঠতে পারতাম । কেন যে হলাম না !! তখন আমরা থাকতাম চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ।

একদিন রাতে পড়ছি । তো এমন সময় উনি ডাকলেন । আমাকে কাছে ডেকে গালে চটাশ্ করে একটা চুমু দিলেন । আমি তো আনন্দে আত্মহারা । পারলে তখনই প্যান্ট খুলে মাথায় বেঁধে নৃত্যকলা শুরু করি ।

কিন্তু লজ্জা নামক এক অদ্ভূত অনুভূতি আমার সে সকল প্রতিভার কোনোটাই প্রকাশ করতে দিলে না , বরণ্চ মাথাকে নিচু করে লাজুক হাসি দিয়ে আপণ রূপটাই প্রকাশ করলো । তারপর আমাকে একটা চিরকুট দিয়ে বললেন "যাও তো সোনা এটা তোমার সাজু ভাইকে দিয়ে এসো । " এটাও তার একটা সৌন্দর্য ছিলো যে তিনি খুব মিষ্টি করে কথা বলতে পারতেন । তারপর দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে ছুটে চললাম সাজু ভাই অভিমূখে । প্রেমিকার হস্তলিখিত পত্র পেয়ে সে নিদারুন সুখানুভূতি প্রকাশ করলেন হাস্যমিশ্রিত ধমক দিয়ে ।

সাজু ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্কটা বরাবরই তেতো । তার চড়-থাপ্পড়-কিল-ঘুষি খেয়ে আমার শরীর তত্কালীন সময়েই রিতিমত গন্ডার হয়ে উঠেছে । তার ভালোবাসার প্রত্যক্ষ দর্শন আমার ওটুকুই । বাকি জ্ঞানটুকু তার গোপন ডায়েরী পড়ে এবং অভিভাবকগোত্রের ফিসফিসানি হতে আহরণ করেছি । ছোটোবেলা আমার বেশ হাতটানের অভ্যাস ছিলো ।

রান্নাঘরে আমার ভয়ে লুকনো মিষ্টির প্যাকেট হতে বাবার মানিব্যাগ পর্যন্ত সবখানেই আমার হাতের কেরামতি প্রকাশ পেতো । তার ভেতরে আমার সাজু ভাইয়ের লুকনো ট্রাঙ্কটাই বা বাদ যাবে কেনো ?? কম্পিউটার নামক হারামীটা তো কোনোকালেই আমার ছিলো না ; তাই ভিডিও গেম্স এর নেশা মেটাতো দোকানগুলো । উফ্.....সে কি নেশা । ড্রাগস এর নেশা তার কাছে পানিভাতই বটে !! একদিন সম্ভাব্য সকল স্থানে আমার ছোট্ট হাতদুটি পর্যাপ্ত অর্থ পেতে ব্যর্থ হয় । নজর সোজা চলে গেলো সাজু ভাইয়ের ছোট্ট ট্রাঙ্কটার দিকে ।

ভাঙাচোড়া ট্রাঙ্কটাকে কেন যেনো গুপ্তধনের খনি বলে মনে হলো । অবশ্য এই মনে হওয়ার পেছনের কারণগুলোও নিতান্ত দূর্বল নয় । আলমারীর এক কোণে কাপড়-চোপড়ের আড়ালে লুকিয়ে কালো ট্রাঙ্কটার এক কোণ যেনো আমার সন্দেহের আঁধারে ঝিলিক্ দিয়ে উঠলো । যে ব্যক্তি ছোট্ট ট্রঙ্ক এতো গোপনে লুকিয়ে রাখতে পারে সে আর একটু কষ্ট করে তালা দিতেই বা কার্পণ্য করবে কেন ?? ছোট্ট তালার কাছে এই বিশেষ কেরামতিপ্রাপ্ত হাতদুটি তো দমবার পাত্র নয় । শুরু হয়ে গেলো "খোঁজ:The Search" ! অনেক খোঁজাখুজির পর একটা বই সেলাবার বুট আবিষ্কার করলাম ।

বেশী না, তালার জায়গামতো দুটো খোঁচা দিতেই তালা আপনা থেকেই বলে উঠলো "চিচিং ফাক্" ! গুপ্তধন প্রপ্তির সমূহ সম্ভাবনায় হাতের আঙুলগুলো বেহুদাই কাঁপতে লাগলো । উপরের ডালাটা একটু উপরে টান দিতেই ‘ক্যাঁত্‌’ করে আমার অপকর্মের কথা প্রচার করতে চাইলো । বুঝলাম, এর সাথে নম্রতা দেখাতে গেলে চৌর্যবৃত্তি সুষ্ঠুরূপে সম্পাদান কঠিন হয়ে উঠবে। তাই, চিত্কাঝর করে হেরে গলায় গান গেয়ে উঠলাম “ও পিয়া...ও পিয়া ! তুমি কুতায় ?!” এবং ডালাটা উপরের দিকে জোরে দিলাম টান । ট্রাঙ্কের ক্যাড়ক্যাড়ানি আমার পিয়ার নিকট পরাস্ত হলো।

তারপর অনেক অন্যায় প্রয়োজনে আমি অন্যায়ভাবেই ঐ ট্রাঙ্কটার কাছে হাত পেতেছি । কিন্তু তার ভেতরে তিল তিল করে জমানো কিছু ধাতব মুদ্রা আর খসখসে কাগজের বাইরে অগছালো হলুদ খামের সজীব কাগজগুলো ঘেঁটেছি আরো অনেক পরে । ততদিনে আমি আমার অপরিপক্ক ‘আমিত্ব’কে বিসর্জন দিয়া খুব দ্রুতই ভেতরে ভেতরে অকালপক্ক অবাধ্য বালককে নিরবে ধারণ করেছি । আর বাইরে থেকে বলতে গেলে হাফপ্যান্ট ছেড়ে ফুলপ্যান্ট ধরেছি । ক্লাশ সেভেনের বালকের জন্য হাফপ্যান্ট পড়া রীতিমতো অপমানজনকই বটে ! যদি কারো মনে এই মর্মে সন্দেহ জাগে যে, “গত দুবছরে একবারও ধরা খাও নাই ?!” তাহলে আমি তাদের সন্দেহকে অমূলক না বলে বলবো, শুধু ধরা না বেদম প্রহারও এ বেচারাকে সহ্য করতে হয়েছে, তথাপি চৌর্যবৃত্তিটুকু নিষ্ঠার সাথে পালন করতে গাফেলতির আশ্রয় নিতে হয় নাই।

একদিন দুপুরে বাসায় কেউ ছিলো না । সাজু ভাই কোণার রুমে ঘুমুচ্ছিল। অবশ্য বাসায় শুধু বাবার অনুপস্থিতিই আমাকে ভয়ানক স্বেচ্ছচারী করে তোলে । আর আজ তো কেউ নেই। সাজু ভাই থেকেও নেই...সে ঘুমের দেশে।

ঘুমে তার নাক দাকার আওয়াজ বিকট। তার উন্নত নাসিকা মুহূর্মুহূ চিৎকার করে জানান দিচ্ছিল, ‘ওরে সজল! আমি ঘুমুচ্ছি’। আমিও মহানন্দে মনে মনে উত্তর দিই, ‘ঘুমো না! আরাম করে ঘুমা। ’ তাই আজ আর চুপিচুপি নয় । মোটামুটি লাটবাহাদুরের মতো ট্রঙ্কখানা খুলে চোখের সামনে মেলে ধরলাম ।

একটা হলুদ খাম বাহির করলাম । তাতে ছোট্ট একটা কাগজ চার ভাগে ভাঁজ করা । অনেকদিনের ভাঁজ । তাই অতি সাবধানে লেখা মৌ আপার চিঠি । বেশ আগ্রহ নিয়ে অনধিকার চর্চার চূড়ান্ত করা শুরু করে দিলাম মহা উত্সাটহ-উদ্দীপনা নিয়ে........(চলবে) [লেখাটি লেখকের নিতান্তই কল্পনাজাত।

লেখকের ব্যক্তিজীবনের সাথে এর সাদৃশ্য ন্যূনতম। পাঠকের ভালো লাগলেই এই লেখাটি পূর্ণরূপ পাবে। ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।