টিনার মনটা বিশেষ খারাপ। বারবার মিতুলের কথা মনে পড়ছে। জীবনে তার অবদান কম নয়। তার উৎসাহেই টিনার লেখাপড়াতে সিরিয়াস হওয়া। জীবন সম্পর্কে চিন্তা ধারা সে পাল্টে দিয়েছে।
মিতুলের একটা ব্যাপার দারুণ ভাল লাগতো। সে স্বার্থপর নয়। দশজনের মঙ্গলের ব্যাপারে চিন্তা করার মত মনমানসিকতা তার আছে। যেটি এখন সত্যি বিরল। তার কাছে হাত পাতলে কাউকে না বলত না ।
কোন প্যাচাগুচা তে নেই। সোজা সাপ্টা মানুষ। ভাললাগতে লাগতে একসময় টিনা ভালবেসে ফেলে মিতুলকে।
মিতুলই তাকে প্রথম ভালবাসার কথা বলেছিল। মনে পরে সেদিন অনেক বৃষ্টি ছিল।
মিতুল বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। তার হাতে তিনটি কদম ফুল। কদমফুল গুলি টিনার হাতে দিয়ে বলল উই শোড লাভ ইচ আদার অর ডাই। তিনবার বলল। প্রমবারে বিস্ময়,দ্বিতীয়বারে ভাল লাগা আর তৃতীয়বারে ভালবাসা।
সেদিন টিনাও মিতুলের হাত ধরে বৃষ্টিতে অনেক ভিজেছে। এ অবস্থায় ডিপার্টমেন্টের এক শিক্ষকের সামনে পরে ওরা দারুণ লজ্জা পেয়েছিল। স্যারকে দেখামাত্র হাত ছেড়ে দিয়েছিল মিতুল। মিতুল টিনাকে ফুসকা খাওয়াতো। ফুসকা মিতুলের সবচেয়ে পছন্দের ।
আর পছন্দ চারুকলা । চরুকলার পানিবিহীন সেই গভীর গর্তটি। মিতুল প্রায়ই বলত জান টিনা ঢাবিতে দুটো পুকুর আছে। একটি শহীদুল্লাহলের পুকুর যেটি কোনদিন পুরো পানি সেচে ফেলা যায়নি। অন্যটি যেটিতে কখনো পানি জমে না ।
সেটি হলো চারুকলার পুকুর। এ ই বলে মিতুল তাকে চারুকলার সে গর্তে নিয়ে যায়। টিনা সেটি দেখে সত্যি বিস্মিত হয়। মিতুলের সঙ্গে তার অনেক মজার স্মৃতি।
বদি তার জীবনটা ওলটপালট করে দিল।
সেই অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালে বদি তাকে প্রেম পত্র দিয়েছিল। তারপর থেকে আর তার পিছু ছাড়ে নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ও। বদ বদির গাজা টানার অভ্যাস আছে। ক্যাম্পাসে যতগুলো গাজা খুর আছে তদের সঙ্গে বদির খুব খাতির।
এমনকি যারা টোকাই পাচ টাকা দিলে হরতালের সময় পটকাবাজি করে তাদের সঙ্গেও। বদি একদিন টিনাকে ফোনে হুমকি দিল। মিতুলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে সে মিতুলকে হত্যা করবে। এতে তার খরচ হবে মাত্র বিশটাকা। একজন গাজাখুরের হাতে ২০ টাকা গুজে দিলে অনায়াসে মিতুল খতম।
তাছাড়া বদিকে বিয়ে করলে সে তার সকল বদ অভ্যাস পরিত্যাগ করবে। তার আর্থিক অবস্থাও ভাল। আর যাই হোক বদি টিনাকে ভালবাসে। আর মিতুলের মত ভদ্র একজন মানুষ তার কিছু একটা খারাপ হয়ে যাওয়ার চেয়ে বদিকে বদপথ থেকে ফিরিয়ে আনাই শ্রেয়। টিনা বদিকেই বিয়ে করবে।
এতে মিতুল নিরাপদ। টিনা হয়ত মনের মানুষকে বিয়ে করতে পারবে না। অন্তত মনের মানুষটি সুস্থ ভাবে বেচে থাকবে এটাই বড় পাওয়া।
তারপর থেকে মিতুলের ফোন আর রিসিভ করে না টিনা । বদির নানা শর্তমোতাবেক চলতে গিয়ে তার স্বাধিনতা নেই বললেই চলে।
কোন ছেলে সহপাঠীর সঙ্গে বা সিনিয়র ভাইয়ের সঙ্গে ফোনালাপ করা যাবে না। রিকশায় ওঠা যাবে না। প্রয়োজনে বইপত্র কিনতে গেলে একাই কিনতে যাবে। আরো কত কি? মানুষ কেন যে প্রেম করে অন্য একটা ছেলের হুকুম তলব করে বেড়ানোর মধ্যে আধুনিকতা খুজে পায় টিনার তা বোধগম্য নয়। প্রেম মানে নারী স্বাধীনতার অকাল মৃত্যু।
এটা আধুনিকতা হতে পারে না।
টিনার মন কিছুটা বিচলিত । বিশেষ করে একটা মেয়ে যখন তার প্রেমিকা পরিচয় দিয়ে টিনাকে ফোন করে। রাগে সে গরগর করছিল। মিতুল কি কোন খারাপ মেয়ের পাল্লায় পড়ল।
কি অসভ্য মেয়ে। টিনা তাকে জিজ্ঞাসা করলো টিনার ফোন নম্বর পেল কি করে? সে উত্তর দিল মিতুলের মোবাইল । সেটি হাতে নিয়ে ফোন বুক থেকে একটা নম্বর দেখে বউ নামে সেভ করা । সেটিই টিনার নাম্বার! কেমন নির্লজ্জ মেয়ে !
টিনার মনে অজানা আশংকা। মিতুলের জন্যে।
মিতুলকে সে হয়তো পাবে না। দূর থেকে ভালবেসে যাবে। কিন্তু মিতুল ও তাকে এখনো মনে প্রাণে ভালবাসে। আর অন্য কাউকে মিতুল ভালবাসতে পারবে কিনা সন্দেহ। অথচ রুমকি যেভাবে বলল সে মিতুলকে ভালবাসে।
তাতে মিতুলের মন থেকে তার উপস্থিতি ধীরে ধীরে মুছে যাবার সময় হল কিনা । টিনা ভাবছে।
অজানা কষ্ট । চোখে পানি চলে আসছে। বদির কারণে মিতুলের মত ভাল মানুষের কিছু হলে নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবেনা টিনা।
বদি বদের হাড্ডি মিতুলের জায়গা সে কখনই কেড়ে নিতে পারবে না।
মিতুল যেন ওকে ভুলে যায় নতুন জীবন শুরু করে। কম চেষ্টাও করে নি। সেদিন বড় আকারের ভূমি কম্প হলে মিতুল তাকে ফোন করে সাবধান হতে বলে। টিনা মিতুলকে বলেছিল আমি তোমার কে? বাস মিতুলের টানা তিন দিন জ্বর।
কেমন পাগলামো।
মিতুলের ভালর জন্যে মিতুলকে ছেড়েএখন বদির সঙ্গে তার ভালবাসার ঘর। বদি বদ হলেও এটি সত্য সে টিনাকে ভাল বাসে। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সে গাজা টানা ছেড়েছে। মিতুলের কোন ক্ষতিও সে করেনি।
ফালতু আড্ডাও ছেড়েছে। বাবার ব্যবসার হালও শক্ত ভাবে ধরেছে। প্রতিটি পরীক্ষায় পাশ করলেও বদি টিনার ভালবাসা নয়। টিনার ভালবাসা কিন্তু মিতুল। এমন সময় বদিরআগমন।
টিনা কেমন আছো সুইটি?
ভাল।
না তুমি কেদেছো মনে হয়।
না কাদিনি।
আমার চোখ লুকোতে পারবে না।
মিতুল ফোন করেছিল?
না।
ওকে তুমি এখনো ভালবাসো?
না ।
ভালবাসলে মিতুলের কপাল পোড়বে। বিশ টাকা খরচ করবো শেষ।
না সেটি করার দরকার কি? তুমি আমাকে কথা দিয়েছো মিতুলের কোন ক্ষতি করবে না। তুমি কি চাও?আমাকে নাকি মিতুলকে হত্যা করতে?
তোমাকে চাই ।
তোমাকে চাই ।
তাহলে মিতুলের ক্ষতি করার কথা ভুলেও মুখে আনবা না। প্রমিজ।
প্রমিজ।
মিতুলের কে হও তুমি?
টিনা কোনউত্তর দেয় না ।
মনে মনে বলে আমি মিতুলের কিছু না হলেও এট লিস্ট ওর বান্ধবী। টিনা অন্য দিকে তাকায়। টপ টপ করে চোখের নোনাজল পড়ছে। প্রতিটি ফোটায় মিতুলের জন্য অবারিত ভালবাসা ।
জানি না কি আশার নেশায়
-----------মেতেছিলেম কাব্য কথায়।
ভেসেছিলেম সুখের ভেলায়
------------ আজি তুমি বিষম খেলায়।
আমি তাই ঘোর হতাশায়।
------------কিসের আশায়?
কিসের মায়ায়?
------------ জীবনটা আজ ভীষণ ব্যথায়।
বান্ধবী (গল্প)
বান্ধবী-২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।