shamseerbd@yahoo.com
২৪ শে জানুয়ারি ২০১২, ১১ মাঘ ১৪১৮, ২৯ সফর ১৪৩৩, মঙ্গলবার তোর মামনির চেক আপের ডেট দিয়েছিলেন ডাক্তার। তোর মামনি আর ফুফু বাসা থেকে ডাক্তারের চেম্বারে চলে যায় , আর আমি অফিস থেকে তাদের সাথে যোগ দিলাম। ডাক্তার অনেকক্ষন চেক করার পর বলল তুই নাকি পৃথিবীতে আসার জন্য প্রস্তুত । আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি বলব, ডাক্তার বলেন কি ? আবার এক দিক দিয়ে ভেবে ভাল লাগছে কারন তোর মামনির এই ডাক্তার এক্সপেক্টেড যে ডেট দিয়েছিলেন সেসময় তিনি ঢাকায় থাকবেননা, অন্য একজনকে রেফার করে যাবার কথা বলেছিলেন। সো তিনি থাকতে পারছেন ভেবে আমরা খুশিই হলাম।
ডাক্তার তোর মামনিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যেতে বললেন।
তোর মামনিকে ভর্তি করিয়ে স্যালাইন দিয়ে দেয়া হল, ডিউটি ডক্টর জানালেন বিকেলের আগে কোন নিউজ হবার সম্ভবনা নেই। এই কথা শুনে আমি আবার অফিসে চলে আসলাম, আমার অফিস থেকে যেহেতু দশ মিনিটের পথ । সেখানে ছিল তোর ফুফু, তোর নানিও চলে আসার কথা কিছু সময়ের মাঝে ।
অফিসে অস্হির সময় কাটাচ্ছি, তিনটের দিকে তোর মামি ফোন দিয়ে বললেন তুমি তাড়াতাড়ি আস, আর কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলেন।
আমি যাবার পর জানালেন তোর মামনিকে ওটিতে নিতে হবে তাই কিছু কাগজে সাইন করার দরকার ছিল, তিনি সব করে দিয়েছেন ততক্ষনে।
তোর মামনির পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। উত্তেজনায় ভরপুর একটা মুখ, উচ্ছাস- ভয় সবই আছে সেখানে। ডাক্তার জানালেন চারটার সময় তাকে ওটিতে নেয়া হবে। আমার কেমন লাগছিল সেটা আসলে আমি ঠিক বুঝতে পারছিলামনা।
তোর মামনি, তুই- আমার যে সবই চায়।
তোর মামনিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সে খুব চাচ্ছিল আমিও তার সাথে ওটিতে যায়। এ নিয়ে তোর মামনি আমার সাথে অনেক আগে থেকেই কথা বলে রেখেছে, আমাকে নাকি তার সাথে যেতে হবে, আমি বলেছিলাম উহু, রক্ত টক্ত এইসব আমি সহ্য করতে পারবোনা। তোর মামনি উপস্হিত ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করল আমাকে সাথে নিয়ে যেতে পারবে কিনা। ডাক্তার জানিয়ে দিল এটা সম্ভব নয়।
তার মনটা হালকা বিষন্ন হল আমি দেখতে পাচ্ছি। তোর মামনিকে নিয়ে সিস্টাররা যাচ্ছে, তোর নানির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে, তিনি সেটা মুছতেছেন, আমার পুরো পৃথিবীটা কেমন যেন টলছিল। তোর মামনির জন্য আমার কেমন জানি লাগছিল। টেনশন, ভয় উত্তেজনায় আমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছিলাম, পুরো শরীর অসাড় হয়ে পড়ছিল।
চারটা তেইশ মিনিট।
আমরা বাইরে সবাই অপেক্ষমান, তোর নানি দাদি দোয়া দরুদ পড়ছেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এমন সময় শোনা গেল তোর কান্না, পুরো পৃথিবীকে তুই জানিয়ে দিল তোর আগমনী। ওটি থেকে একজন এসেও জানিয়ে গেল।
এ অনুভূতি কেমন আমার পক্ষে লিখে বোঝানো সম্ভব নয়, তোর দাদি জানতে চাইল তোর মামনি কেমন আছে, তারা জানাল সে ভাল আছে। আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসল, সবার সামনে থেকে একটু আড়ালে চলে গেলাম।
নিজেকে কেমন অচেনা মনে হতে লাগল। সে সময়ের অনুভূতি টুকু কেমন ছিল সেটা এখন মনে করতে পারছিনা সেভাবে , বলা যায় আসলে সেটা লিখে প্রকাশ করতে পারছিনা । কিছুক্ষন পর আমাদেরকে ডাকা হল তোকে দেখার জন্য ।
প্রথম তোকে দেখার অনুভূতি !! নারে , আমি লিখে বুঝাতে পারবোনা, লিখে বুঝানো সম্ভব না । নিজের অস্তিত্বের এ নতুন বহিঃপ্রকাশ কাউকে বোঝানো সম্ভব না।
এটা বুঝতে হলে এ প্রকৃয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হবে। তুই যেদিন বাবা হবি কেবল সেদিনই তুই বুঝতে পারবি।
তোর দাদা আমাকে জড়িয়ে ধরল। তোর নানি দাদি একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে তারপর শুরু করল সবাইকে জানানোর কাজ। পরিচিত সবাইকে একে একে ফোন করে জানানো হচ্ছে তোর আগমনি সংবাদ।
কিছু সময় পরে তোর মামনিকে ওটি থেকে নিয়ে আসা হল, তখনও সে ঘুমিয়ে পড়েনি, তোকেও দেয়া হল তার পাশে। সবাই আমরা তখন তোকে আর তোর মামনিকে ঘিরে। তুই চুপচাপ চোখ খুলে তাকিয়ে আছিস, তোর দাদা ভাই তোর পাশে গিয়ে আযান দিলেন। একে একে অনেকেই আসা শুরু করল তোকে দেখার জন্য । তোর মামনি একবার তোর দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার আমার দিকে, আমিও তার দিকে তাকিয়ে আছি ।
কেউ কিছু বলছিনা কিংবা কি বলা যায় সেটাই আসলে মাথায় আসছেনা ।
পুরো সময়টাই আমি একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম, আমি জানিনা আমার কি করা উচিত, এদিক ওদিক হাঁটছি, কিছুক্ষন পরপর তোকে দেখছি, তোর ছবি তুলছি।
নিজের অনুভূতি নিয়ে কিছু বলা সম্ভব না হলেও তোর চাচার অনুভূতিটা দেখে খুব মজা পেলাম। সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে- " কিছুক্ষন আগে আমার ভাইয়া আর ভাবির একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে, আমি চাচা হয়ে গেলাম। অস্হির ব্যাপার, চাচা হবার এই ভাব নিয়ে হাসপাতালের এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি " ।
আমাদের তুই এখন আল্লাহর রহমতে আমাদের সাথে, পৃথিবীতে এর চেয়ে সুন্দর আর কিছু হতে পারেনা ।
আমাদের তুই (To The Child) – দ্বাদশ পর্ব ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।