আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই সব অসহায় মানুষের পাশে

চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই ! ছয় বছর আগের ঘটনা। ইরাকি শিশু আবদুল্লাহ দাউদ রাজধানী বাগদাদে তার এক স্বজনের দাফন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল। হঠাত্ বোমা ফাটল। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো ১২ বছরের এই শিশুটির মুখের বাঁ-দিকের অংশ। উড়ে গেল বাঁ-পা।

প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগল সে। সুস্থ সবল শিশুটির নাম উঠে গেল প্রতিবন্ধীর খাতায়। কিন্তু কে দেবে আবদুল্লাহকে সঠিক চিকিত্সা? যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে এমন উন্নত চিকিত্সা আশাই করা যায় না। অবশেষে একটি হাসপাতালে তার চিকিত্সার উপায় হলো। তার মুখমণ্ডল নতুন করে প্রতিস্থাপন করতে হয়েছে।

পিঠের মাংস নিয়ে তার মুখ ও ঠোঁটে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ জন্য আলাদা ২৫ বার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তবে তা ইরাকের কোনো হাসপাতালে নয়। আবদুল্লাহর এমন উন্নত চিকিত্সা সম্ভব হয়েছে জর্ডান-ভিত্তিক একটি দাতব্য হাসপাতালে—মানবসেবায় ব্রত একদল চিকিত্সকের কল্যাণে। বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

২০০৬ সালে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে দাতব্য সংস্থা মেডিসিন স্যানস ফ্রন্টিয়ার্সের (এমএসএফ) একদল চিকিত্সক মিলে একটি হাসপাতাল চালু করেন। লক্ষ্য ছিল ইরাকে বোমা বিস্ফোরণ বা হামলায় আহত সেসব ইরাকি যারা নিজ দেশে চিকিত্সা পায়নি, তাদের চিকিত্সা করা। শুরুতে চিকিত্সকদের ভাবনাটা ছিল শুধু ইরাককে নিয়ে। কিন্তু পরে সহিংসতা শুধু ইরাকে নয়, ছড়িয়ে পড়ের লিবিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়াতেও। হাসপাতালে আবদুল্লাহর সঙ্গে থাকা তার চাচা কায়েস বলেন, ‘আমাদের কাছে আবদুল্লাহ এখনো সুন্দর।

বারবার সে তার নতুন চেহারা আয়নায় দেখে। সে এখন স্বাভাবিক একটি জীবনে ফিরছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে এই হাসপাতালের সুচিকিত্সার কারণে। ’ শুধু আবদুল্লাহ নয়, হাসপাতালে আরও বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে। তাদের কারও মুখ পুড়ে গেছে, কারও বা শরীর।

মধ্যপ্রাচ্যর বিভিন্ন দেশের আহত শিশুর ভিড় এখন ওই হাসপাতালে। ২০০৬ সালে যখন হাসপাতালটি গড়ে ওঠে, তখন এটি ছিল অস্থায়ীভিত্তিক। চিকিত্সকেরা ভেবেছিলেন, যেসব ইরাকি জটিলভাবে আক্রান্ত, শুধু তাদের চিকিত্সা হবে এখানে। কিন্তু ইরাকে একের পর এক চলমান সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে হাসপাতালের কলেবর আরও বাড়াতে বাধ্য হন চিকিত্সকেরা। হাসপাতালটিতে যেসব রোগী রয়েছে, তাদের বেশির ভাগই সন্ত্রাসী হামলা, বোমা হামলা বা গোলাগুলিতে আহত।

গত কয়েক মাসে আবদুল্লাহ নামে ওই ইরাকি কিশোরের মতো হাসপাতালটিতে চিকিত্সা নিয়েছেন একের পর এক ইয়েমেনি, লিবীয়, ফিলিস্তিনি ও সিরীয়রা। আম্মানের এমএসএফ হাসপাতালের প্রধান অ্যান্টনি ফচার বলেন, সিরিয়ায় যখন থেকে সহিংসতা শুরু হয়েছে, সেই সময় থেকে হাসপাতালে আহত মানুষের ভিড় অনেক বেড়ে গেছে। আহত ব্যক্তিদের চাপে এখন হাসপাতালের পরিধি আরও বাড়াতে হচ্ছে। এই হাসপাতালে কেবল ভয়াবহ সহিংসতার শিকার রোগীরাই ভর্তি হয়। শুধু তাদেরই চিকিত্সা দেওয়া হয়।

হাসপাতালে এসব রোগী একেকটি দিন কাটায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা আর কষ্টে। হাড়ের রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক মাজিদ এল রাস বলেন, হাসপাতালের বেশির ভাগ রোগী সন্ত্রাসী হামলা, বোমা হামলা বা গোলাগুলির মতো ভয়ংকর সব ঘটনার শিকার। তিনি বলেন, ‘রোগীদের মনোবল আর দৃঢ়তাকে আমি সম্মান করি। তারা মানসিকভাবে অনেক শক্ত। ’ চিকিত্সাধীন আরেক রোগী সিরিয়ার বাসচালক সাইদ।

সিরিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করার সময় তাঁর এক পায়ে গুলি লাগে। এ অবস্থায় সাত মাস লুকিয়ে ছিলেন সাইদ। ধরা পড়ার ভয়ে বাইরে যাননি। দীর্ঘ সাত মাস বিনা চিকিত্সায় তীব্র ব্যথা আর যন্ত্রণায় সহ্য করেছেন সাইদ। পরে সুযোগ বুঝে পালিয়ে গিয়ে ভর্তি হন এমএসএফ হাসপাতালে।

তিনি বলেন, ‘আরও আগে যদি এই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারতাম, তাহলে আমার পা হয়তো রক্ষা পেত। ’ হাসপাতালের আরেক রোগী আবু হাশেম আরও ভয়াবহ হামলার শিকার। দিরা শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করার সময় তাঁকে আটক করা হয়। তাঁর ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় সেনাসদস্যরা। আবু হাশেম বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে সিরিয়ার সেনাদের অভিযোগ ছিল যে তিনি বিদেশ থেকে সিরিয়ায় অস্ত্র নিয়ে আসেন।

আসলে তা তিনি করেননি। কিন্তু সেনাসদস্যরা তাঁর কথায় কান না দিয়ে নির্যাতন চালাতে থাকেন। শাস্তি হিসেবে তাঁর পায়ের পাতায় গরম কয়লা ঢেলে দেওয়া হয় আর ক্ষতস্থানে গরম পানি ঢালা হয়। এমনকি রাবার দিয়ে মূত্রত্যাগ করার পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমন ভয়াবহ সব নির্যাতনের পর এমএসএফ হাসপাতালে কিছুটা স্বস্তি খুঁজছেন আবু হাশেম।

এমএসএফ হাসপাতালে এখন এ রকম আহত ব্যক্তির ভিড় বাড়ছে। এসব রোগীর বেশির ভাগই ইরাক, ইয়েমেন ও সিরিয়ায় বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। বর্তমানে রোগীর চাপ এতই বেশি যে এখন ওই হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে কোনো রোগীকে অন্তত এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।