আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইভ টিজিং অথবা মেয়েদের লাঞ্ছনা - সর্বোপরি আমাদের একচোখা সমাজ

গঞ্জিকা সেবনে বড়ই ব্যস্ত.... পরে আসুন ইভ টিজিং বা মেয়েদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা ভয়াবহ রকম ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সমাজে। প্রতিনিয়ত ঘটনা ঘটছে, আর আমরা দু লাইন কলাম লিখে নিজেদের দায়বদ্ধতা সেরে ফেলছি। ততক্ষন পর্যন্ত আমরা কম্বল সরিয়ে বিছানা থেকে নামছিনা যতক্ষন আঘাতটা আমাদের বোন বা আত্মিয়া কে স্পর্শ করছে। খুব সম্প্রতি বিভন্ন ব্লগে কিছু ব্লগার বিভিন্ন ঘটনা তুলে নিয়ে এসেছেন। সেগুলো নিয়ে ব্লগ ও পত্রিকা সহ সরকারী অফিস আর চায়ের দোকানে বেশ মাতামাতিও হয়েছে।

কিন্তু কাজের কাজ আসলে কিছুই হয়নি। যে সমাজের সর্বক্ষেত্রে পোকা হেটে বেড়াচ্ছে, সে সমাজে দু একটি ইভ টিজিং অথবা শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী লাঞ্ছিত অথবা নেটে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর একজন সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত মায়ের আত্মহত্যা খুব সাধারন ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। শুধুই কি তাই? মানে শুধুই কি ইভ টিজিং নিয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত আমাদের? আসলে কিন্তু তা নয়। খেয়াল করে দেখুন - সরকার আমাদের সকল অবস্থায় উপর কর্তৃত্ব জারি করছে। সাগর-রুনী হত্যাকান্ড দিয়ে আমরা জানতে পারলাম আমাদের বেডরুমের দায়িত্ব সরকার নিচ্ছেনা, পদ্মা সেতু নিয়ে কাঠি চালাচালি দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দেয়া হল বড় এমাউন্টের টাকার ভাগ সবাই নেয়, সুরঞ্জিতের ঘটনায় আমরা জেনেছি মন্ত্রিত্ব অপসারন হয়না - বরং গদি পরিবর্তন হয়, সাংবাদিক মোল্লা আব্দুর রব এবং রিফাত আল মাহমুদ এর হুমকীর কারনে সাবিয়ার আত্মহত্যা কিংবা ধানমন্ডির মতো উম্মুক্ত স্থানে একটি মেয়ের সালোয়ার টেনে ধরার মতো ঘটনা ঘটছে এবং ঘটছে।

আমরা কি করছি? কলম এর যুগ অনেক আগেই শেষ, তাই কীবোর্ড নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ছি। একটি উইন্ডোতে ব্লগ/ফেসবুক এ প্রতিবাদ করছি, আরেক উইন্ডোতে বাংলা সিক্রেট পর্ন সাইট খোলা, অন্য উইন্ডোতে মাল্টি নিক নিয়ে সরকারের সাপোর্ট নিচ্ছি। আমাদের যুব সমাজের উল্লেখযোগ্য অংশ এখন ফেসবুক/ব্লগে অংশগ্রহন করছে। কিন্তু আমাদের উচ্চকন্ঠ আমরা কাজে লাগাতে পারছিনা। আমরা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছি।

কেউ জেনে মারছি, আবার কেউ না জেনেই মারছি। বেশী কথা বাড়াবো না। বেশী কথা বাড়ানোর জন্য আজকে আসিনি। একটি ঘটনা বলে বিদায় নিচ্ছি। ঘটনাটা সত্যি।

আমার ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাস দেখে এক মেয়ে আমাকে তার জীবনের ঘটনা বলে। মেয়েটি আমাকে সকল নাম/পরিচয়/ঠিকানা সরবরাহ করেছিলো এবং বলেছিলো পরিচয় প্রকাশে তার সমস্যা নেই। মেয়েটির নাম জেনী। আজ থেকে কয়েক বছর আগের কথা। জেনী তখন একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হয়েছে।

ক্লাস করে, ক্লাস শেষে বাসায় ফিরে যাওয়াই তার কাজ। অন্য আর দশটা মেয়ের মতো বাইরে ঘুরে বেড়ানো বা প্রেম করার চিন্তা ভাবনা তার ছিলোনা। সে রাজনীতি বুঝেনা, বুঝেনা সমাজনীতিও। তাই, এই সমাজ তার কাছে ছিল নিষ্পাপ। কিন্তু একদিন তার সামনে উম্মুক্ত হয়ে যায় এই সমাজের একটি নর্দমা।

জেনীর ক্লাসের ইসলামের ইতিহাস পড়াতেন যে শিক্ষক, তিনি ক্লাসে পড়ানোর সময় জেনীর কাছ থেকে বই নিয়ে আর ফেরত দেননি। উনি ক্লাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আরো কয়েকটা ক্লাস হয়ে যায়। এক সময় কলেজ ও ছুটি হয়ে যায়। জেনী তার বই ফেরত নিতে টিচার্স কমন রুমে গিয়ে ইসিলামের ইতিহাসের শিক্ষক কে খুজে বের করে। শিক্ষক বলে যে একটু অপেক্ষা করতে, কারন উনি ব্যস্ত আছে।

কলেজের বারান্দায় পায়চারি করতে করতে কলেজ কে খালি হতে দেখে জেনী। একসময় শিক্ষক বের হয়ে আসেন রুম থেকে। চলে যেতে গিয়ে জেনীর দিকে তাকিয়ে বলেন - ওহ, তোমার বই এর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। তারপর আশে পাশে তাকিয়ে বলেন - কলেজ দেখি খালি হয়ে গিয়েছে। আচ্ছা, তুমি আমার রুমে আসো, তোমার বই দিয়ে দিচ্ছি।

রুমে গিয়ে জেনীকে বই ফেরত দেন শিক্ষক। তারপর পড়াশুনা নিয়ে টুকরো টুকরো কথা বলতে লাগলেন। জেনী দেরী হয়ে যাচ্ছে বলেও পার পাচ্ছিলো না। জেনীর মন বলছিলো এখানে থাকা উচিত হচ্ছেনা। কিন্তু শিক্ষক ও ছাড়ছিলেন না।

শিক্ষক জেনীর খুব কাছে এসে বলেন যে জেনী তার মেয়ের মতো। এই বলে তিনি জেনীর গায়ে হাত দেন। প্রথমে পাথরের মতো জমে গেলেও জেনি একসময় শিক্ষকের হাত ধাক্কা মেরে সরিয়ে রুম থেকে বের হতে চায়। কিন্তু শিক্ষক তখন তার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন। জেনী আমাকে বলেছিলো - ভাইয়া, সেদিন কিভাবে কিভাবে যেনো আমি শরীর ঝাড়া দিয়ে এক দৌড়ে বাসায় চলে এসেছিলাম।

আমার গাঁ কাপতে ছিলো। মাথা ঝিমঝিম করতেছিলো। আমি বুঝতেছিলাম না মাত্রই কি ঘটে গেলো। এরপরের ঘটনা খুব সংক্ষিপ্ত। জেনী যেনো কোন চার্জ আনতে না পারে এই জন্য সেই শিক্ষক তারপর দিনই জেনীর বিরুদ্ধে চার্জ করেন এই বলে যে জেনী শিক্ষক কে অপমান করেছে।

জেনী কিছুই বলতে পারেনা। কি বলবে সে? তার কি বলার ছিলো? সে কি পারতো সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে যে এই শিক্ষক তাকে লাঞ্ছিত করেছে? না, পারতো না। তেমনি, আমাদের সমাজের ৯৫% মেয়ে পারেনা, পারবেওনা। আমাদের সমাজ তাদের সেই শিক্ষা দেয়নি। আর যেই ৫% প্রতিবাদ করে উঠে তাদের আমরা খুব সহজেই পতিতা ট্যাগ লাগিয়ে দেই।

এখন আপনারাই ঠিক করুন। আমার লেখায় লাইক/কমেন্ট দিয়ে প্রতিবাদ করবেন সেটা ঠিক আছে। কিন্তু এভাবে কিবোর্ড নিয়েই কি পড়ে থাকবেন? নাকী সত্যিকার কিছু একটা করে দেখাবেন? অনেক আগে একবার বলেছিলাম - যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করুন, তাহলেই অনেক করা হয়ে গেলো। তবে প্রতিবাদ করুন আপনার মুখ দিয়ে, শরীর দিয়ে; কিবোর্ড দিয়ে নয়। ঘটনাটা সত্য (সংকলিত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।