আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশ ও জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কি চাই ?পুলিশ না লাইসেন্সধারী স্বাধীন খুনি, ডাকাত, সন্ত্রাসী

টুকলিফাই মারাই আমাদের কাজ, চুরা ছেঁচা দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। ভূমিকাঃ পুলিশিং আধুনিক বিশ্ব সভ্যতায় রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন একটি দায়িত্ব। কোন রাষ্ট্র হয়তো সামরিক বাহিনী ছাড়াও সামরিক চুক্তির মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ভালো ভাবেই রক্ষা করতে পারবে কিন্তু অভ্যন্তরীন আইন শৃংখলা, নাগরীক নিরাপত্তা, উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ, বিচার কোন কিছুই সম্ভব না একটি সুশৃংখল, জনগণের বন্ধুর পুলিশিং ব্যবস্থা ছাড়া। আদিমকালে মানুষ সমাজের কাছে নিরাপত্তা চাইতো, কারন তখন বাঘ ভাল্লুকের থেকে বাঁচার প্রয়োজন পরতো, মানুষ সমাজে দলবদ্ধ ভাবে তা মোকাবেলা করতো, সবাই সবার চোখের সামনে দলবদ্ধ ভাবে বসবাস করে। কিন্তু পরবর্তীতে সভ্যতার অগ্রগতি রাষ্ট্র ব্যবস্থা এনে দিলে, রাষ্ট্রের কাছে নাগরীকেরা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা চাওয়া শুরু করে, কারন এবার নিরাপত্তা হিংস্র জানোয়ার থেকে নয়, ততোধীক হিংস্র মানুষের থাবা থেকে মানুষের নিরাপত্তার প্রয়োজন পরে; মানুষের প্রধান মৌলিক প্রেষনাই হচ্ছে তার নিরাপত্তা - নিরাপত্তা ছাড়া তার কাছে অন্নও অর্থহীন।

সে কারনে দেখা যায় রাষ্ট্র তার একটি অন্যতম মিশন হিসেবে গড়ে তোলে পুলিশিং ব্যবস্থা। আর গত এক দেড় শতাব্দীতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ তাদের পুলিশিং ব্যবস্থা এত সুশৃংখল, জনগণের বন্ধু রুপে গড়ে তুলেছে। আজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পুলিশ সেবা তারা এমন জায়গায় এনেছে যে, পুলিশ প্রতিটি নাগরীকের সাথে ছায়ার মত থেকে তার নিরাপত্তা বিধান করে। যেকোন মুহুর্তে যে কোন মুহুর্তে যেকোন সিচুয়েশনে অংশগ্রহনকারী নাগরীকের টাইমলাইন বলে দিতে পারবে, মুহুর্তে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সেতথ্য ছড়িয়ে দিতে পারবে। এদিকে আমাদের পুলিশিং সিস্টেম গত চল্লিশ বছরে যেখানে পৌছেছে সে সম্পর্কে দশটি শব্দ বললে তার সাতটি অশ্রাব্য শব্দ ছাড়া অসম্পূর্ন থেকে যাবে।

পুলিশ এখানে আজ সংঘবদ্ধ সরকারী লাইসেন্সধারি সন্ত্রাসী, পুলিশ স্বাধীন, পুলিশ স্বাধীন খুনি, দেশের সমস্ত চুরি, ডাকাতি, খুন, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, মাদক, মামলা, মোকাদ্দমার নাটের গুরু পুলিশ। পুলিশের সোশ্যাল পরিচিতিঃ বর্তমানে বাংলাদেশে ঘৃন্যতম এক পেশাজীবির নাম পুলিশ । স্বয়ং পুলিশমন্ত্রী পুলিশকে কুকুরের সমার্থক বলে, সবাইকে পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পরামর্শ দেন। আপনি একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, এই সমাজে কোন শিশুরাও কিভাবে যেন পুলিশ সম্পর্কে অটোমেটিক অভিজ্ঞতা অর্জন করে। গ্রামের রাস্তায় পুলিশের গাড়ি বা পুলিশ দেখলেই, ছোটছোট ছলেমেয়েরা পুলিশ পুলিশ করে চিৎকার করে উঠছে - কেউ ভাবেন না ঐ অভিব্যাক্তিতে কোন বন্ধুকে ডাকছে, বরং তা ঘৃনা, ভয়, শয়তান, ভূত ইত্যাদী আবেগ থেকে উৎসরিত সে পুলিশ।

দীর্ঘদিনের সামাজিক অভিজ্ঞতার ফল এটা। ছোট শিশুরাও পুলিশ কে কুকুর, ভয়, ভুত ইত্যাদী মত শিখছে-হেরিডেটেড ইনফো হিসেবে। আবার দেখবেন ছোট শিশুরা যখন কথা বলতে শেখে, তখন বাবা মা আত্মীয়স্বজন পুলিশ ও কুকুর দুইটিই একই অর্থে শেখায় - ওদের কাছে যাও যাবে না, ওরা শয়তান ওরা কামোড় দেবে ইত্যাদী। পুলিশে মত অপরিহার্য একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের "বর্তমান বাংলাদেশ ভার্শন" গত চারপাঁচ হাজার বছরের পুলিশের ইতিহাসে বিশ্বে বিরল-বা নেই। পুলিশের ইতিহাস ও সভ্যতায় এর চেয়ে নিৎকৃষ্ট রুপ এর আগে কখনও কোথাও পুলিশের বিবর্তন দেখা যায়নি।

বাংলাদেশে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা দেড় লাখ, আপনার কি মনে হয় এই দেড় লাখ পুলিশের সবাই পুলিশের এই অর্জনের ভূমিকা রাখছে ? এমন ভাবলে আমাদের আরও একটি বড় ভুল হবে। প্রকৃত পক্ষে হাতে গোনা কয়েক হাজার ও গুরুত্বপূর্ন পদ ও পোষ্টিংয়ে থাকা সুবিধা ভোগী পুলিশের জন্য আজ সমস্ত পুলিশ বাহিনীর এই পরিনতি। তাই পুলিশ নিয়ে আমাদের ভিষন গভীর ভাবে ভাবতে হবে, এ লেখাও তাই, কারন পুলিশ ছাড়া সমাজ বসবাসের অযোগ্য- ত্রাশ আর সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য, মঘেরমুল্লুক অথবা বাংলাদেশ। পরিচয় পর্বের অসাঞ্জস্যঃ উপরের কথাগুলো কারও কারও কাছে খুব খারাপ লাগতে পারে, সত্য কথা মিথ্যা লোকের কাছে সবসময়ই তিতাই লাগে। সমাজে মানুষের অভিজ্ঞতা বইপুস্তকের শব্দার্থের মত মুখস্ত করিয়ে দেয়া বা মিথ্যা শিখিয়ে দায়া সম্ভব না।

মানুষ তার চারপাশের অভিজ্ঞতা থেকে, দেখে শেখে, যা শেখে তাই বিশ্বাস করে, মুখে না বললেও মনে মনে বলে। আমরা বলি, মনে মনের চেয়ে প্রকাশ্য উত্তম। তাই আজ এই অভিজ্ঞতার বহিপ্রকাশ করতে গিয়ে কোন নাগরীক যদি ঢাকার রাস্তায়, ফেসবুক স্ট্যাটাসে পুলিশমন্ত্রী ও আইজিপিকে "কুত্তা বাচ্চ" বলে ডাকে, তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা যাবে না, তাতে মানুষের মনে পুলিশই আরও নীচে নামবে, আরও কুখ্যাতি অর্জন করবে, পুলিশেরই ক্ষতি করা হবে। বরং আমাদের বুঝতে হবে, পুলিশ-কুকুর সমার্থক, (অনেকে হয়তো বলবেন কুকুরকে এত বড় অপমান করা আমার ঠিক হয়নি। )এ অর্জন খোদ পুলিশের নিজের, অন্য কেউ করে দেয়নি তার জন্য।

আপনি প্রতিযোগীতায় প্রথম হয়ে, আপনি মেডেল নিবেন না, বলতে পারেন না। । কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে তার অর্জিত নামে না ডাকা, কোন দিন শুভাকাংখির কাজ হতে পারে না। বরং তার অর্জনের স্বীকৃতি দেয়াই হবে প্রকৃত দেশপ্রমিক ও পুলিশের সত্যিকার শুভাকাঙ্খীর কাজ এর অন্যথা ভন্ডামী বা ভয়। রাষ্ট্র কারও ভন্ডামী চায় না, যারা ভন্ডামী করে, তারা ভন্ডামী করেই নিজেকে দেশপ্রেমিকও দাবি করে।

বাংলা প্রবাদে পুলিশঃ ছোট বেলায়ই শুনেছিলাম, একবার গ্রামের এক বুড়ি আদালতের কাঠগড়ায় দাড়িয়ে জজ সাহেবের ন্যায় বিচার দেখে, তাকে দারগা হওয়ার আশির্বাদ করেছিলেন, এ থেকে বোঝা যায় এ অঞ্চলে পুলিশের ক্ষমতার ধারনা সাধারন মানুষের মনে কেমন ছিল!পুলিশ নিয়ে এমন অসংখ্য প্রবাদ আছে, বাঘে ছুলে এক ঘা, পুলিশ ছুলে ছত্রিশ ঘা। পুলিশ বাপেরেও ছাড়ে না, টাকা না থাকলে শরীরটা অন্তত চুলকে দিয়ে যা, পুলিশ শালা পরের পুলা কষ্ট বুজে না ইত্যাদী। প্রবাদ সমাজে সময় ও অভিজ্ঞতা প্রদত্ত টেস্টিমুনিয়াল, বা প্রসংশাপত্র। আমাদের নষ্ট হয়ে যাওয়া শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসাপত্র না - দুই টাকায় মিলে না। প্রবাদের সত্যের উপর সত্য নাই।

পুলিশ প্রাগইতিহাসঃ প্রাচীন গ্রীসের নগর রাজ্যে পুলিশের ধারনার উপস্থিতি দেখা যায়। সেখানে রাজার নিযুক্ত ম্যাজিষ্ট্রেটরা কৃতদাস'দের ব্যবহার করতো নগরের পুলিশিং কাজে। ম্যাজিষ্ট্রেট ও আদালতের বিচারের আদেশ বাস্তবায়ন করার জন্য ক্রিতদাসদের পুলিশ হিসাবে ব্যবহারের ইতিহাস আরও অনেক সভ্যতায় পাওয়া যায়। চৈনিক সভ্যতায় পুলিশং এর অস্তিত্ব পাওয়া যায় অনেক পূর্ব থেকেই। চীনে তিন হাজার বছর আগেই পুলিশ ব্যবস্থা অনেক ডেভলপও করেছিল।

সেখানে স্থানীয় ম্যাজিষ্ট্রেট রাজার/সরকারের পক্ষে পারফেক্ট (পুলিশ) নিয়োগ দিতেন। সেই সময় চীনের পুলিশে নারী পুলিশের অস্তিত্ত্বও পাওয়া যায়, যাদের মধ্যে অনেকের নাম আজও চাইনিজ পুলিশ বিভাগের কাছে গর্বের। যেমন Lady Qu of Wuding. চিন থেকে পুলিশের এই ধারনা কোরিয়া ও জাপানে ছড়িয়ে পরে। আধুনিক পুলিশের জন্মের খবর পাওয়া যায় বারশ শতকে ইউরোপে। গ্রেন্ড ওফিসার্স ফর দ্যা কিংডম ফরাসি পুলিশের দায়িত্ব পালন করতো।

সতেরশ শতকে এসে উন্নত নগরগুলোতে মেট্রপলিটন পুলিশের ধারনাও চলে আসে। বাংলা পুলিশের ইতিহাসঃ বাংলাদেশে আমরা আজ যে পুলিশ দেখছি তার বয়সও কিন্তু কম না, দেশের অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক পুড়নো বুড়া এরা। বয়স যদি জ্ঞান আর অভিজ্ঞতার মাপকাঠি হয় তাহলে পুলিশকে বলা যায় দেশের ওল্ডেস্ট ফক্স, জ্ঞান গড়িমা ও অভিজ্ঞতায় প্রবীনতম প্রতিষ্ঠান, যার আছে সবচেয়ে বেশি সময়ের প্রাতিষ্ঠানিক মেমরির। বৃটিশরা এ অঞ্চলে আধুনিক পুলিশিং ধারনা প্রথম প্রবর্তন করলেও হাজার বছরের বাংলার ইতিহাসেও পুলিশিং এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। জমীদার, সামন্ত, রাজা, বাদশার অধীন কোন লাঠিয়াল বা স্বসস্ত্র বা সৈন্য বাহিনী কে পুলিশিংয়ের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।

১৭৯২ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ বাংলা, বিহার, উড়িশ্যার জন্য পুলিশ রেগুলেশন জারী করলে জমিদারদের নিজস্ব পুলিশ বাহিনী রাখার বিধান রহিত হয়। ১৮৬১ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এ অঞ্চলে পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল প্রণয়নের মাধ্যমে যাত্রা আমাদের আজকের পুলিশের। সে সময় আজকে এক একটি জেলার আয়তনের সমান একটি পুলিশ স্টেশন বা পিএস বা থানা গঠন করা হয়। প্রত্যেক পুলিশ স্টেশনের দায়িত্বে নিয়োগ দেয়া হয় একজন দারোগা। যোগাযোগ ও দূরত্বের কারনে দারোগাকে নিয়মিত বেতন দেয়া হত না, তাই তাকে উদ্ধারকৃত চোরাই মালের দশ ভাগের একভাগ, ভোগ করতে দেয়া হতো আর একজন ডাকাত গ্রেফতার হলে দশ টাকা করে পুরস্কার দেয়া হত।

বৃটিশরা মূলত কর আদায়, কর দিতে অনাগ্রহী ও কৃষক বিদ্রহ দমনকে সামনে রেখে তখন পুলিশ আইন করেছিল এবং এদেশের অশিক্ষিত হোমড়া-চোমড়া, সবলদেহী যুবকদের নিয়ে তারা তৈরি করেছিল খাকি-পোষাকের পুলিশ বাহিনী। তাছাড়া ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিল্পবের অভিজ্ঞতায় ইংরেজরা বুঝেছিল কোলনি পরিচালনার জন্য সাদা চামড়ার সেনাবাহিনীর সাথে এ অঞ্চলের মানুষ দিয়ে তৈরী একটা অস্ত্রধারী বাহিনী দরকার যারা ভারতবাসীর সাথে মিশে থাকবে কিন্তু সাহেবদের জী-হুজুর বাহিনী হবে। খাজনা আদায়ের জন্য বৃটিশরা কতগুলো থানা এলাকা নিয়ে গঠন করা হয়েছিল এক একটি কালেক্টর এলাকা বা ডিসট্রিক্ট/জেলা/মহকুমা। ঐ অঞ্চলে খাজনা আদায় ও আইনশৃংখলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ইংরেজ কালেক্টর তথা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের। তাই গ্রামদেশে শোনা যায়, দেশ চালায় ডিসি আর ওসি।

কৃষকের কাছ থেকে খাজনা আদায় ও এলাকার খুন-খারাবি, চুরি-ডাকাতি রোধে পুলিশ বাহিনী ছিল কালেক্টর/ডিএম এর অন্যতম অস্ত্র। পুলিশ রেগুলেশন অব ব্যাঙ্গল ১৮৬১ তে পুলিশকে অপরাধ দমন, অপরাধ প্রতিরোধ ও তা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশের মুখ্য কাজ আইন-শৃঙ্খলা রাক্ষা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধী ও দুষ্কৃতকারীদের ধরে এনে বিচার-আদালতের সম্মুখীন করা। কিন্তু পিআরবি'র কোথাও পুলিশকে জনগণের বন্ধু হতে বলা হয়নি - খুবই স্বাভাবিক ভাবেই। নাগরিকদের বিরুদ্ধে পুলিশের ক্ষমতার বাড়াবাড়ি, অসদাচারণ কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘণের প্রতিকার প্রাপ্তির কোন আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি এই আইনে ছিল না ইংরেজদের সুবিদ্ধার্থেই, কারন পুলিশকে দিয়ে যা খুশি করাবে, কিন্তু বিচার করা যাবে না, ইন্ডেমনিটি বা ধরা ছোয়ার বাইরে থাকবে।

পুলিশের চেইন অব কমান্ডে বিবর্তনঃ পুলিশের নিয়ন্ত্রন বা চেইন অব কমান্ডের ভিত্তিতে বাংলা আধুনিক পুলিশকে দেখলে, ১৫১ বছরের ইতিহাসে তিনটি অধ্যায় পাওয়া যায়। ১৮৬১ সালে যাত্রা করে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ছিল পুলিশের ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়। দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানী ও স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পুলিশের দ্বিতীয় অধ্যায়। এর পর থেকে আজ ২০১২ সালের পুলিশ সম্পূর্ন নতুন, অচেনা ও শেষ অধ্যায়। প্রথম অধ্যায়, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন অনুযায়ী পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসতেন বৃটেন থেকে, বাকিরা বাঙালী তৃতীয় চতুর্থ শ্রেনীর কনস্টবল, দারগা।

আইনে পুলিশের অফিসারদের নিয়ন্ত্রন ছিল সরাসরি কালেক্টর বা ডিস্ট্রিক ম্যাজিষ্ট্রেটের হাতে। এখানে লক্ষ্যনীয় যে বৃটিশরা তাদের কোলনিতে পুলিশিং করতে গিয়েও পুলিশ ও জনগণের সম্পর্কের মৌলিক স্বত্ত্বসিদ্ধ ভায়োলেট করেনি। প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়ন্ত্রনেই রাখেন। পুলিশকে একক স্বাধীনতা দিয়ে কর আদায় ও আইন শৃংখলা রক্ষা তাদের জন্য আরও সহজ হলেও তা করেনি। পুলিশের এই চেইন অব কমান্ডে সে সময়ের অনেক বেদনা দায়ক ঘটনার ইতিহাস শোনা গেলেও এর বিপরীত চিত্রও ভাবনার দাবি রাখে।

যেমন- "ইংরেজকালে হাটুর নিচে চাইলত গুলি, স্বাধীন দেশে ভাইয়ে ভাইয়ে উড়ায় মাথার খুলি, ওবাঙালী" এমন গানও মেলে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে পাকিস্তান আমল থেকে বাংলাদেশের প্রথম দশকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পুলিশের নিয়ন্ত্রন বৃটিশ আমলের মত থাকলেও পুলিশকে সরকার যখন খুশি ব্যবহার করা হয়েছে আইনগত সুবিধা ও রাষ্ট্র পরিচালনা কাঠামোর কারনে। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দেশের অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মত, জেলা পুলিশ সুপার পদে সেনাবাহিনীর অফিসারদের ডেপুটেশন দেন, তখন আর্মির অফিসাররা প্রশ্ন তোলে, তারা পুলিশ সুপার হলে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছ থেকে এসিআর বা এনুয়াল কনফিডেনশিয়াল রিপোর্ট নিতে পারবে না। কিংস পার্টির সদস্যদের কন্ট্রলিং অথরিটি ব্লাডি সিভিলিয়ান ডিএম হয় কিভাবে ? ইগো বলে একটা বিষয় আছে না!দেশ-জাতি গোল্লায় যাক, আগে চাই আমাদের গোষ্ঠী সুপ্রিমেসি- এতো বাংলার আবহমান কালের প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট, ঐতিহ্যও বটে। তাই তখন মার্শাল "ল" এ্যাডমিনিসট্রেটরের এক আদেশে ডিসট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম)এর কাছ থেকে এসপি'দের এসিআর প্রত্যাহার করে নেয়।

তখন থেকে শুরু হয় পুলিশের জনবিচ্ছিন্ন অধ্যায়ের সূচনা। আশি নব্বুইয়ের দশকের পুলিশ তার নতুন শৈশব কৈশর কাটি পরের দুই দশকে আজ ফ্রী পুলিশের যৌবন। আর এদিকে গত আইএমএফ সরকার সময় করা ত্রুটি যুক্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, শুধু যে বিচার বিভাগকেই স্বাধীন ভাবে মক্কেল এ্যাক্সপ্লয়েট করার স্বাধীনতা দিয়েছে তেমনি জেলা পুলিশের সাধারণ নিয়ন্ত্রণ এখন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের হাতে এক ছটাকও রাখেনি। ওসি ডিসির দেশে আজ ওসির সাথে ডিসির মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। মোবাইল কোর্টের কথা বললে বলতে হবে, গ্রীসের যেই ম্যাজিষ্ট্রেট স্লেইভদের দিয়ে নগরে আইন প্রোয়গ করতো সেই স্লেইভের কাছে নিজের নিরাপত্তা নিয়েই যদি তাঁকে শংকিত থাকতে হতো তাহলে কি আজকের পুলিশ এভাবে সৃষ্টি হতো ?বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার পর ও ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের কোন পরিবর্তন না করার ফলে পুলিশের চেইন-অব-কমান্ড ও ব্যালেন্স বলে কিছু নেই।

পুলিশ এখন ভার্টিক্যাললি চিফঅব পুলিশ ছাড়া আর কোথাও কারো কাছে দায়বদ্ধ না। পুলিশ আজ মুক্ত বহঙ্গের মত জনগণের জমদূত। বর্তমানে যদি কোন ভাবে পুলিশের চেইন অব কমান্ড থেকে থাকে তবে, তা সরাসরী যে রাজনৈতিক দলের সরকার তাদের হাতে, ক্ষমতাশালীদের হাতে, যার বা যেখানে অবৈধ্য সুবিধা পাবে তার হাতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে পুলিশ দলীয় মন্ত্রীর সাথে সংযুক্ত হয়। খোলা তোলোয়ার পেয়ে পুলিশকে দিয়ে যা খুশি করানো মন্ত্রীর এখন হাতের এপিঠ আর ওপিঠ মাত্র।

তেমনি পুলিশও তার কৃতকর্মের নিরাপত্তা ও জবাবদীহিতা থেকে বাঁচতে মাস্টারের হাতের লাঠি। আইজিপি দৌড়ায় মন্ত্রীর দিকে আর ওসি, সেকেন্ড অফিসার থানা সরকারী দলের সভাপতির কাছে, এমপির কাছে, চেয়ারম্যনের কাছে। তার জুরিসডিকশনে সরকারী দল বা ক্ষমতাশালির পচ্ছন্দের নাগরীক ছাড়া বাকিদের উপর যা খুশি তা করার লাইসেন্সও পুলিশ নিয়ে নেয় তার ১৫১ বছরের অভিজ্ঞতা ও নলেজ ব্যবহার করে। এখানে পুলিশের নীতি একটাই সরকারের দেয়া অস্ত্র ও আইন ব্যবহার করে চাকরি নিতে দেয়া ঘুষের টাকা প্রতি মাসে একবার উঠানো যায়। অন্য দিকে পুলিশ-প্রধান পদের আস্বাদ নিতে ঊর্ধ্বতন পদের কর্মকর্তাগণ সর্বদাই ক্ষমতাসীনদের তোষামোদে ব্যস্ত, রাজনীতিবিদ ও তাদের চামচাদের খুশী করে চলে।

সরকারগুলো ক্ষমতায় আসার প্রথম দিনই পুলিশকে হাতের মুঠোয় নিতে চায়। সংসদ সদস্যগণ বেছে বেছে অসৎ পুলিশ অফিসারদের নিজ নির্বাচনী এলাকায় বদলী করে আনেন, তাকে দিয়ে অপকর্ম করান এবং প্রয়োজনীয় সুবিধাদি প্রদান করেন আর অফিসাররাও প্রতিযোগীতায় নামে বেশি সুবিধার পোষ্টিংয়ের জন্য। তাই পুলিশ তার কৃত কর্মে দেশবাসির কি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, তা ভাবার সময়টুকুও পান না। ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছেমত প্রতিপক্ষকে হয়রানী করা এবং স্বপক্ষীয় ব্যক্তিদের গুরুতর অপরাধ করার পরেও রেহাই দেয়, এবং, সর্বোপরি যে অপরাধীদের গ্রেফতার করা উচিত সেই সব অপরাধীদের কাছ থেকে অনুগ্রহ প্রার্থনা করা ইত্যাকার হাজারো কারনে বাংলার পুলিশ আজ সাধারণ মানুষের কাছে রীতিমত এক ভয়ের বস্তু। যদি গভীর রাতে কোন ভদ্রলোকের বাসায় পিছন দরজা দিয়ে চোর ঢোকে এবং একই সাথে সামনের দরজায় পুলিশ এসে দাঁড়ায়, ঐ ভদ্রলোক চোরকে ঘরে রেখে পুলিশকে বিদায় দিতে পারলেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।

আইনের প্যাচে পুলিশঃ এদিকে ২০০৯ সালে আরেকটি মজার ঘটনা ঘটে গেছে যার ফলে গত দুই বছর ধরে পুলিশ হেডকোয়াটারে জমাপড়া প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি'দের) এসিআর অবৈধ্য। কারন ২০০৯ সালে হাইকোর্টের রায়ে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিলের পর স্বয়ংক্রিয় ভাবে পুলিশ সুপারের এসিআর দেয়ার দায়িত্ব (কন্ট্রোলিং অথরিটি) জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কার্যালয়ে ফেরত চলে আসে, যদি আইন মানি। এই সংশোধনী বাতিলের সাথে সাথে জিয়াউর রহমান কর্তৃক ঘোষিত সামরিক শাসন এবং ১৯৭৭ সালে প্রণীত ও সংযোজিত ৫ম সংশোধনীর সবগুলো বিষয় বাতিল করা হয়েছে। ঐ রায়ে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সহ অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয় ছাড়াও ১৯৭৮ সালে যে, জিয়াউর রহমান জেলা পুলিশ সুপার পদে সেনাবাহিনীর অফিসারদের ডেপুটেশন দিয়ে পুলিশ সুপার এসিআর ডিসট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম)এর কাছ থেকে প্রত্যাহার করে নেয় তাও অবৈধ্য হয়ে গেছে। বর্তমান পুলিশ সুপারেরা ভবিষ্যতে এসিআর জটিলতায় পরবে।

পাঠক হয়তো বলবেন, আমি বোকার মত কোথাকার রেজাল্ট কোথায় যোগ করছি, বলতে পারেন!তবে একটু ভেবে দেখলেই দেখবেন, আসলে বিষয়গুলো এ রকমই। মানুষের দেহে যেমন নার্ভাস সিস্টেম - রাষ্ট্রের তেমনি রাষ্ট্রসিস্টেম - প্রতিটি অংঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে সঠিক সংযোগ ও ব্যালেন্স রাখা ও আইনের শাসন বিরাজ করা - তানা হলে কোন অঙ্গ প্যারালাইজড হয়ে যায় বা ম্যালফাংশন শুরু করে দেয়। এই বিষয়টি নিয়ে এখন একটা রিট করলে হাইকোর্ট নিজের রায়ে নিজেই আটকা পরে যাবে। যদিও আইনের শাসন ও প্রশাসন ব্যবস্থার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি হাইকোর্ট রীট করে বলবৎ করতে হলে, তা কোন গণতান্ত্রীক দেশের জন্য তা খুবই লজ্জ্বার বিষয় হবে। তারপরও এ ধরনের একটা রিট করার জন্য দেশের ৬৪ জেলার যেকোন জেলা প্রশাসনেরই দায়িত্ব নেয়া উচিত।

বিশ্বের ইতিহাসে কোথাও কখনও পুলিশের নিয়ন্ত্রন নিরস্ত্র ম্যাজিষ্ট্রেটের বাইরে ছিল, তার নজির কেউ দেখাতে পারবে না। আধুনিক পুলিশিংয়ে পুলিশ কমিশন, নগর, মেট্রো সহ বিশেষায়িত পুলিশকে ম্যাজিষ্ট্রের চেয়েও স্বাধীন, আরও বেশি জনমূখী, সিভিল সোসাইটি তথা জনগণ তথা নিরস্ত্র মানবাধীকার সংস্থার সমান্তরালের প্রতিষ্ঠানের/ব্যাক্তির হাতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুলিশের অপরাধের অভিযোগ নেয়া তদন্ত করার দায়িত্বও পুলিশ থেকে সম্পূর্ন বাইরে মানবাধিকার চ্যামপিয়ন সংস্থার হাতে আমাদের পাশের মহাদেশ অস্ট্রেলিয়াও বিশ বছর হয়ে গেছে। পুলিশের নিয়ন্ত্রন জনগণের হাতে দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো কিন্তু তা সরাসরি কোন কন্সেপ্টে তা সম্ভব নয় বলে আর্বান পুলিশকে আরও জনগণ সম্পৃক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন ভাবে। যা হলে সবাই রাজি। পুলিশিংয়ের দর্শনঃ পুলিশ জনগণের বন্ধু হবে এটাই পুলিশের জন্ম তত্ত্ব।

জনগণ, গণতন্ত্র, রাষ্ট্র যেখানে নাগরীকের নিরাপত্তা দিতে পারবে না, সেখানে নাগরীক কেন বসবাস করবে ? শান্তি কালিন সময় একটি গণতান্ত্রীক রাষ্ট্রে আইন শৃংখলা, বিচার এর সাথে নাগরীক, সমাজ ও রাষ্ট্রের কতগুলো মৌলিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হয় তা মানুষ হাজার বছর আগে শিখেছিল। মানব সভ্যতায় কখনও কোথাও সাধারন জনগণ ও অস্ত্রধারী বাহিনী সরাসরি একে অন্যের বন্ধু হয়নি, হওয়ার সুজোগই রাখা হয়নি কোথাও। সে আপনি দশক, শত বা হাজার বছরের ইতিহাস ঘেটে দেখতে পারেন। কোথাও কখনও কোন গণতন্ত্রীক ব্যবস্থায় এ চিত্র পবেন না। পুলিশি রাষ্ট্র কাঠামোতেও অস্ত্র ও জনগণকে সরাসরি বন্ধু হওয়ার সুজোগ দেয়নি।

এমন বন্ধুত্ব যদি হতো, তাহলে সামরিক বাহীনি হতো আইন শৃংখলা রক্ষায় সর্বত্তম বাহীনি। কারন তাঁরা পুলিশের চেয়ে আধুনিক, দক্ষ ও সুসজ্জিত বাহিনী, আর নিজের চেইন অব কমান্ডের বাইরে সংসদেরও নিয়ন্ত্রনের বাইরে, ফ্রী ইন এ্যবস্যলুট ক্যাপটিভিটি। তাদের কাঁধে বিচারকের দায়িত্বও দিয়ে দেয়া যেত। হাতে অস্ত্র যখন আছে তখন গ্রেফতার, বিচার ও রায় ঘোষনা অনস্পটে হয়ে যাবে। অস্ত্রসহ তাদেরকে ছেরে দেয়া হতো সমাজে, গ্রামে।

বলা হতো, আপনি বাড়ি চলে যান, দরকার পরলে ডাকবো। আপনি জনগণের বন্ধু হন। অস্ত্র হাতে আপনার গ্রামে শান্তি ও ন্যায়বিচার বিরাজ করান, অপরাধ, অন্যায়, অবিচার কমিয়ে দেন। কত সহজে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত, তাই না ? কিন্তু না, ইহা প্রমানীত ভুল। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগের আইনশৃংখলা রক্ষার বাহিনী খোলা তলোয়ারের মত ছেড়ে দেয়া হয়নি।

খাপের ভেতর রাখা হতো, খাপে তলোয়ারই ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, খাপ ছাড়াটা নয়, কারন তলোয়ারটা জীবন্ত। শোষক বৃটিশরাও ফৌজদারি বিধিমালা ও পেনালকোর্ডে অস্ত্রধারীর নিয়ন্ত্রনে একজন নিরস্ত্র সদস্য রেখেছিল। রাজা, জমিদার এমনকি মাতাব্বর সভ্যতায়ও অস্ত্রধারী/লাঠিয়াল বাহিনীকে উন্মুক্ত সমাজে ছেড়ে না দিয়ে প্রাসাদের পাশে ব্যারাক করে সেখানে রাখা হতো। কারন অস্ত্র ও মানুষ কখনও বন্ধু হয় না। বরং অস্ত্রের জন্মই হয়েছে মানুষকে হত্যা করার জন্য, ভয় দেখানোর জন্য, নির্যাতন করার জন্য, অবৈধ্য সুবিধা আদায়ের জন্য।

সেই অস্ত্রকে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যবহার করতে অস্ত্র একজনের হাতে দিলেও তার নিয়ন্ত্রন রেখেছে নিরস্ত্র আরেক জনের হাতে কারন আইনশৃংখলা রক্ষাকারীর বাহিনী কখনও সরাসরি জনগণের বন্ধু হতে পারে না, হওয়া উচিতও না। এখন পুলিশের চেইন অব কমান্ডঃ ঐ যে আপনার গ্রামে থানা তার ওসিও ভার্টিক্যাললি আরেক অস্ত্রধারী চিফঅব পুলিশ ছাড়া আর কোথাও কারো কাছে দায়বদ্ধ না। আর চিফ অব পুলিশের মোটো, উপরে আল্লাহ নিচে মন্ত্রী। যত খারাপ তত মন্ত্রির ভক্ত, মন্ত্রীয়ও করে সাত খুন মাপ নিজের কামে। আমাদের এই আদলের আইনশৃংখলা বাহিনী কখনও জনগণের বন্ধু হতে পারে না।

সস্বস্ত্র আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সাথে যখনই একজন নিরঅস্ত্র পাবলিক দেখা করবে তখন স্বাভাবিক ভাবেই অস্ত্রধারী নিরঅস্ত্র সাধারনের উপর ডোমিনেট করবে। যেখানে প্রধান্য বিস্তার হবে, সেখানে এ্যাক্সপ্লয়টেশন হবে, কারন ওখানে জনগণ পুলিশ অস্ত্র তিনটি বস্তু আছে, । একটি গণতান্ত্রীক দেশের জন্য এই ফরমেটের আইনশৃংখলা বাহিনী খুবই বিপদজনক, এর বাস্তব প্রমান বাংলাদেশের পুলিশের রেকর্ড বিশ্বে কেউ ভাংতে পারবে না। এখানে পুলিশকে কেউ বিশ্বাস করে না, পুলিশের নিজ পিতাও না। যেকোন সময় চোখ উল্টাইয়া দিতে পারে এরা, বাংলাদেশে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীরাই পুলিশের যে পরিমান নির্যাতনের শিকার হয়েছে তার রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারবে না।

এখানেও আসলে ব্যক্তির দোষ খুজে লাভ নেই, অস্ত্র তার নিজস্ব ভাষায়ই কথা বলে। আর সেই অস্ত্র যখন দেড়শ বছর আগের আইনের নিৎকৃষ্ট অপসংস্কারের আইনে চলে তখন তার বহিপ্রকাশ বাংলাদেশের মত ভয়া বহ হয়। আসলে খোলা তোলোয়ার ফেলে রাখলে যা হয়, যেই পায় সেই একটু কুবাকুবি প্রশিক্ষন করে, আর তলোয়ার নিজেও যেহেতু জীবন্ত- ও কুবানো তার মূখ্য মটিভেশন। অস্ত্র অনিষ্ঠ করবেই যত সুশিক্ষিতই হোক তার ব্যবহারকারী। সেনাবাহিনীর মত এত সুশিক্ষিত প্রশিক্ষিত বাহিনীই যখন সহসাই জনগণের বন্ধু হতে পারে না।

পুলিশকে জনগণের বন্ধু করতে চাইলে পুলিশ আর জনগণের মাঝখানে একজন নিরস্ত্র, সিভিল থাকতে হবে। যার কাছে গ্রামের ভয়কাতুরে নিরিহ ছেড়া লুঙ্গীপরা হত দরিদ্রটিও এ্যাপরোচ করতে পারবে। তার উপর আস্থা রেখে পাশের বেত হাতে পুলিশকেও বন্ধু ভাবতে পারবে। এটা সভ্যতার একটা টাইম টেস্টেড স্বতসিদ্ধ। যেখানেই যাবেন দেখবেন পুলিশ আর সাধারনের মাঝখানে কিছু একটা আছে-হাজতখানা হলেও দেখবেন গরাদ, চাবি অন্য কারও হাতে।

মফস্বল ও গ্রামের বাস্তবতাঃ যেখানে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ বসবাস করে, যারা রাষ্ট্র থেকে নূন্যতম নাগরীক সেবা দূরের কথা রাষ্ট্রের নির্যাতনের থাবা থেকে জমি, স্ত্রী, সন্তান বাঁচাতে বাঁচাতেই জীবনকাল অতিবাহিত করতে হয় সেখানে উপজেলা পুলিশ ও প্রশাসনের ফাংশনালিটির খবর কতটুকু রাখেন ? ওসি, এমপি, চেয়ারম্যান, ইউএনও এই চারজন আইনশৃংখলার ক্ষেত্রে উপজেলার নিরংকুশ কর্তা ব্যাক্তি। উপজেলায় খুন, র্ধষন, চুরি, ডাকাতি, জাগাজমি, পারিবারিক মামলা সহ যেকোন আইনশৃংখলা বিষয়ে তাদের ভুমিকা প্রাথমীক। ধরুন কোন উপজেলায় কোন গ্রামে জুয়া খেলা হচ্ছে। সেই জুয়া কার্যকরি ভাবে বন্ধ করতে হলে যে কেউ বলবে, পুলিশের বাধ্যতামূলক সহযোগীতা অপরিহার্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জুয়ার কথা এলাকার ও উপজেলার সবাই জানে।

কিন্তু ওসি যদি বলে আমি জানি না, তাহলে এসপি ছারা আর কেউ তাকে স্বিকার করাতে পারবে না - আর এসপি থাকে বহুদূরে। সে তার জায়গা থেকেই নড়বে না, কোন প্রকার প্রফেশনালইজম দিয়ে কাজ হবে না। আবার ওসি ও এমপি দুজন মিলে যদি জুয়া চালায় তাহলেও কেউ বন্ধ করতে পারবে না। চেয়ারম্যান ওসি এক হলেও কেউ পারবে না। তাহলে সেই জুয়া-গ্রামের সাধারন জনগণ কোথায় যাবে, বন্ধুর খোজে ?যেহেতু নেতা, এমপি, চেয়ারম্যান নিজেরাই এলাকায় প্রতিটি অপকর্মের শরিক বা ভাগ খায়, ভোট রক্ষার জন্য হলেও খেতে হবে, তার কাছে জুয়া বন্ধ আশা করা খুবই কষ্টকর।

তাহলে সাধারন মানুষ যাবে কোথায় ? সরাসরি অস্ত্রের সামনে গেলেই তো তাদের পিলা কেঁপে ওঠে। সমাজ রাষ্ট্র প্রশাসন এগুলো কিছু ব্যালেন্স ইমবেলেন্সের বিষয়। যেখানে যেমন হওয়ার, তানা হলে উল্টা রিয়েকশন হয়। জেলা, রাজধানীতে আইন শৃংখলার ম্যাকানিজম আরও করুন অবস্থা। পুলিশ সম্পর্কে আমাদের চিন্তা ভাবনাঃ ৬৪ জেলার ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট দেশ পাঁচ ছয়শ বর্গ মাইলের এক একটি জেলায় ১৫-২০ লাখ নাগরীক।

আকাশ থেকে দেখলে অল্প একটু আকাশ। আমরা পুলিশকে জেলার আকাশে অফিস বানিয়ে দেব। ধরুন কোন জেলায় কোন মাসের আইন শৃংখলা মিটিং হচ্ছে। মিটিংয়ে উপস্থিত আছেন ঐ জেলার সকল কর্তা ব্যাক্তি এমপি, ডিসি এসপি সহ সকল বিভাগীয় প্রধান, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরমেয়র, ওসি, ইউএনও, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধাও। মিটিংয়ে আলোচনা হবে গত মাসের তিনটি মার্ডার, চারটি ধর্ষন, মাদক, জঙ্গীবাদ ইত্যাদী।

কিন্তু এবার জেলা প্রশাসনের কনফারেন্স রুমটি স্টুডিও। মাইক্রোফোনে কথা বলার আগে মনে রাখবেন এফএম ৮৭.১ এ ভিকটিমের বাবাও শুনছে ওসি সাহেব মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে কি বলছে। জঙ্গীবাদের প্রচারের আশিভাগ ঐ মিটিংয়েই শেষ। বাংলাদেশ পুলিশ বাহীনির জন্য ওয়াইম্যাক্সের ১০ মেগাহার্স স্পেকটার্ম সরকার ফ্রি দিয়ে রেখেছে - যার প্রতি ইউনিটের মূল্য দুইশ কোটি টাকা - তা ব্যবহার করে ওসি সাহেবের থানার সবগুলো রেজিস্ট্রার থানার উপর আকাশে স্থাপনের ব্যবস্থা করে দেবে। আমাদের মোটো -খোলা বাংলাদেশের খোলা পুলিশ।

ছোট্ট শিশুটি যেমন মায়ের কাছে নিরাপদ নাগরীক তেমন নিরাপদ হবে পুলিশের কাছে। মা যেমন তাঁর শিশুর সম্পর্কে প্রতিমুহুর্তে সচেতন, তেমনি হবে পুলিশ তার প্রতিটি নাগরীকের প্রতি। উপসংহারঃ উপরের পুলিশ বিষয়ক বিস্তারীত আলোচনায় ধরে নেব পাঠকের মনে দেশের পুলিশিং এর অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং করণীয় সম্পর্কে পাঠকে একটা ধারনা হয়েছে। উপসংহারে এসে পুরো বিষয়টিকে ভেঙ্গেচুরে শুধু পুলিশকে না বরং দেশের সম্পূর্ন গণ কর্মচারী সম্পর্কে ধারনা নিয়ে শেষ করি। আসলে পুলিশ একাই না বরং ২৯টি ক্যাডার, মিলিটারি সহ স্বায়ত্ব শাসিত আধা সরকার সবার অবস্থা তথৈবচ।

বেচারা ট্রাফিক সার্জেন্ট, তার আফিসটাই রাস্তায় তাই তার লেনদেন সবার চোখে পরে, অফিসে বসে আরও লক্ষ কোটি গুন বড় বড় খাওয়া দাওয়া হয়। আমাদের কোন একটি প্রতিষ্ঠানও পাওয়া যাবেনা তা সঠিক ভাবে কাজ করছে। সিভিল সার্ভিসের ২৯ ক্যাডার একে অন্যের সুসংগঠিত প্রাতিষ্ঠানিক শত্রু আর মিলিটারি আমলা সবার শত্রু। এদের ভেতর সব সময় কে বড় কে ছোট এই প্রতিযোগীতা, হিংসা আর ঘৃনা। শুধু পুলিশ প্রশাসন আর্মী না ২৯ ক্যাডারের মধ্যে যে পরিমান প্রফেশনাল জেলাসি, ওর্গানাইজেশনাল সুপিউরিট কম্পপ্লেক্স, হীন্যমন্যতা ও শত্রুভাবাপন্নতা কাজ করে তা সত্যি খুবই দূঃখজনক ও লজ্জ্বার বিষয়।

অথচ এখানে কোন ছোট বড়র হওয়ার বিষয় না। আর স্বাধীন দেশে লেঃ কর্নেল, এসপি, ডিসি, এক্সেন, সিএস, সচিব, আইজি এগুলো আলাদা আলাদা চেয়ার হলেও সেখানে যারা বসে ও বসবে তারা সবাই এই দেশেরই সন্তান, হয়তো একই গ্রামের সমবয়সী কয়েক জ্ঞাতী ভাইবোন, হয়তো যৌধ পরিবারের ২৯ ভাই ২৯ ক্যাডারে, হয়তো একই মায়ের ২৯ সন্তান যারা সিভিল সার্ভিসে যোগদেয়ার আগে একে অন্যের অতি আপন, ভাইবোন সবার লক্ষ্য পরিবারের উন্নতি, কিন্তু চাকুরীতে যোগ দিয়ে যেন হয়ে গেল একে অন্যের শত্রু তবে ব্যক্তিগত ভাবে না, প্রতিষ্ঠানিক ভাবে। ব্যাক্তিগত ভাবে একে অন্যের বন্ধু কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে একে অন্যের শত্রু কে বড় কে ছোট কে সৈয়দ কে আশরাফ এই প্রতিযোগীতায় ব্যাস্ত। অথচ ব্যক্তিগত মিথষ্ক্রিয়ায় প্রতিটি সৈনিক ও অফিসার তার সমসাময়ীকের মধ্যে সবচেয়ে ভদ্র, সভ্য, শিক্ষিত যদিও প্রতিষ্ঠানিক ভাবে কখন আমাদের সাথে বন্ধুত্বের নজির নেই। by: ব্লগার সহজপৃথিবী  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।