আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমন এক বাংলা মুভি যে মুভিতে কোন নারী চরিত্র নাই সত্যজিত রায়ের রয়েল বেঙ্গল রহস্য রিভিউ

everything is fair in love and war আমার এমন কোন বাণিজ্যিক মুভি মনে পড়ে না যেটাতে কোন নারী চরিত্র ছাড়া চিত্রায়ন করা হয়েছে । কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের কাহিনি অবলম্বনে সন্দীপ রায়ের সুনির্মিত এবং অবশ্যই শ্রেষ্ঠ ছবি এটা বলতে হবে । কিন্তু আজব ব্যাপার হল সন্দীপ রায় মুভিটিতে একটাও নারী চরিত্র ব্যাবহার করেন নাই । এবার এই মুভির রিভিউ তে আসা যাক ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’ ছবিতে একটা সময়হীন আবেশ আছে। এখনকার ট্রেন বা গাড়ি বাদ দিলে বিশেষ কিছুই বুঝতে দেয় না যে কাহিনি রচনাকাল থেকে আমরা প্রায় ৪০ বছর সরে এসেছি।

সন্দীপ ছবিতে শুধু রহস্যমোচনের লক্ষ্যেই এগোননি, ফেলুদা ও তোপশের আলাপচারিতে বিভূতিভূষণ, জিম করবেট, কেনেথ অ্যান্ডারসন, বাঘের পদচ্ছাপ, খাবার ধরন, গুবরে পোকার গাত্রজোর, বাঘ আসার ইঙ্গিত, সবই একটু করে খোলসা করেছেন। এবং সংলাপ প্রয়োগগুণে ফেলুদা’র তথ্যের জোগানকে মাস্টারি মনে হতে দেননি। উপন্যাসটি দাঁড়িয়ে আছে বন, বাঘ আর একটা ধাঁধার ওপর। শিকারি জমিদারবাড়ির অতিথি ফেলুদা, তোপশে ও জটায়ু। জমিদার মহীতোষ সিংহরায় একটা ধাঁধা ধরালেন ফেলুকে, যে ধাঁধায় আড়াল আছে একটা গুপ্তধন।

সেই গুপ্তধনের অনুসন্ধানে সিংহরায় পরিবারের অনেক গুপ্তকথা সামনে আসতে লাগল ফেলুদা’র। সামনে এসে পড়ল মহীতোষের অসুস্থ মস্তিষ্কের দাদা দেবতোষ। আর যারা সারাক্ষণ সামনেই আছে সেই মহীতোষ, তাঁর সচিব তড়িৎ সেনগুপ্ত আর বন্ধু শশাঙ্ক সান্যাল ক্রমশ আলো-আঁধারিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। কেন ক্রমশ রহস্য দানা বাঁধতে থাকল সিংহরায়দের ট্রফি-ঘরে? যেখানে শিকার করা বাঘ ও অন্য বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি হন্তারক রাইফেলের গায়ে গায়ে সাজানো আছে খাপখোলা সাবেক তরোয়ালও। ফেলুদা’র চোখে আরও পড়ল মহীতোষের ডিক্টেশন নিয়ে বই লেখার সঙ্গে আরেকটি কাজও গুছিয়ে করেছেন তাঁর সচিব তড়িৎ: মহাভারত চর্চা।

বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সহসা একটা মৃত্যু দিয়েই গুপ্তধন আর বাঘরহস্য নতুন মোড় নিল। ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’-য় ফেলুকাহিনি হিসেবে নতুনত্ব বেশ ক’টাই। প্রথমত ফেলু হিসেবে সব্যসাচী চক্রবর্তীর হাঁটাচলাতে একটা টানটান ভাব ফিরেছে বলে মনে হল, বিশেষত পোড়ো মন্দির থেকে যে ভাবে দু’-বার স্টাইলের সঙ্গে বেরোলেন। আর ফলাও করে না বলা হলেও এ ছবিতে ফেলুর মগজাস্ত্রের ব্যবহার খুব স্পষ্ট, কারণ সব্যসাচীর অভিনয়ে ওকে সারাক্ষণ অন্তর্মুখিনও ঠেকেছে; ভুরু কোঁচকানো ফেলু নয়, কিছুটা চিন্তিত, উদাস। লালমোহনবাবুকে এক অন্য মাত্রা দিয়ে গেলেন।

তাঁর ভয়-ভীতি-বাগাড়ম্বর-মূর্ছা যাবার প্রবণতা সবই অটুট, কিন্তু তার মধ্যেও এক সজীব চতুরতা, চেষ্টা না-করেও হাসিয়ে যাবার ক্ষমতা। উন্মাদ দেবতোষের হাতে ওঁর চিরুনি তুলে দেওয়া কী ফিরিয়ে নেওয়া দু’টি নিখুঁত, নির্বাক কৌতুক দৃশ্য। তুলনায় তোপশের কাজ এ বার কম। তবে সেই কিশোর তোপশে এখন লম্বা-চওড়া হয়ে ফেলুর কানের কাছে পৌঁছে গেছে। বেশ লাগল দেবেশ রায়চৌধুরীর শশাঙ্ককে, সারাক্ষণ ভাবিত, হতোদ্যম এক নিঃসঙ্গ মানুষ, যার অপরাধে জড়ানোটা খুবই স্বাভাবিক।

আর বড় প্রশংসার অপেক্ষায় থাকবে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেবতোষ। নানা দিক দিয়েই এক প্রধান, যদিও উৎকেন্দ্রিক চরিত্র এই দেবতোষ। শুধু ওঁর চাহনিটা অত তীব্র, স্পষ্ট না হয়ে এলোমেলো হলে ভাল হত। বাসুদেব মুখোপাধ্যায়ের মহীতোষ, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ের তড়িৎ ভাল লাগে, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের পুলিশ অফিসার দিব্যি স্মার্ট। আমার মতে সত্যজিৎ রায় এর কাহিনি নিয়ে এ ছবি সন্দীপ রায়ের সবচেয়ে সুনির্মিত এবং অবশ্যই শ্রেষ্ঠ ছবি! যাদের রিভিউ পড়ে মুভিটা দেখতে ইচ্ছা করছে তারা স্যাম এবং অ্যানোনিমাস এর এই দুটি টরেন্ট এর যেকোন একটা নামাতে পারেন ।

এদের টরেন্ট ফাইল সাধারনত খারাপ হয় না । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।