মানবতার গান গেঁয়ে যায়-তারুণ্যের প্রেরণায়
বর্তমান বিশ্বে সমগ্র মানব জাতির জীবন ও সভ্যতা জন্য অত্যন্ত বড় হুমকি হলো এইড্স। এটি একটি অত্যন্ত মারাতœক এবং জীবনহননকারী রোগ। এর কোন চিকিৎসা নেই,নেই কোন প্রতিষেধকও, পরিনতি অবধারিত মৃত্যু। এইড্স এর পুরো নাম হলো (A-Acquired) (অর্জিত) (I-Immune) (রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা)(D-Deficiency) (ঘাটতি) (S-Syndrome) (অবস্থা/রোগের লক্ষণ সমূহ) অর্থাৎ অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঘাটতির লক্ষণ সমষ্টিকে এইড্স বলে। এটি (HIV) ভাইরাসের সংক্রমনে হয়ে থাকে।
এ ভাইরাসের কারণে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ রোগের কারণে সেলুলাস ইমিউনিটি দূর্বল হয়ে পড়ে এবং রক্তে লিস্কোসাইটের সংখ্যা হ্রাস পায়। এতে এইড্স আক্রান্ত রোগীর দেহে অন্য রোগ প্রতিরোধ করতে পারে না। ফলে রোগী মারা যায়। দুনিয়া কাঁপানো শতাব্দীর ভয়াবহ আতংক এইড্সের অপ্রতিরোধ্য আগ্রাসন কিছুকাল আগেও ছিল উন্নত বিশ্বের মাথা ব্যথার কারণ।
মাত্র এক দশকের ব্যবধানে এরোগটি দাবালনের মত ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। এমনকি এইড্সের শিকার বর্তমান আমাদের প্রিয় ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুসারে এ পর্যন্ত এইড্স এ আক্রান্ত হয়েছে ১২০৭জন। এবং মৃত্যু বরন করেছেন ১২৩জন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী ধারণা করা হয় বাংলাদেশে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি লোক এইচআইভিতে আক্রান্ত।
আগামী ২০১০ সালে প্রায় ২০ হাজার মানুষ এইডস আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে। প্রতিদিন বিশ্বে ১৪ হাজার লোক এইডসে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশে বাড়ছে এইডস এর ঝুঁকি। যা রীতিমত আঁতকে ওঠার মত। নীচে সা¤প্রতিক মিড়িয়ায় প্রকাশিত তথ্যের আলোকে উপস্থাপন করা হল ঃ-
বাংলাদেশে বয়স ১৮ হওয়ার আগেই যৌন অভিজ্ঞতা হচ্ছে ৫০ শতাংশ শহুরে তরুণের।
এছাড়া প্রায় ৮০ শতাংশ তরুণ পরোক্ষভাবে প্ররোচিত হয়ে যৌন কর্মে লিপ্ত হচ্ছেন। এদের এক-তৃতীয়াংশ আবার লিপ্ত হচ্ছেন দলগত যৌনকর্মে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের যৌনসঙ্গী হচ্ছেন পেশাদার যৌনকর্মী।
কিন্তু এসব তরুণের অর্ধেকই যৌনকর্মে একদমই নিরোধ ব্যবহার করছেন না। বাকীরাও নিরোধ ব্যবহারে অনিয়মিত।
তাই তাদের মধ্যে এইডস ঝুঁকি বাড়ছে।
আইসিডিডিআরবি পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা জরিপ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পেশাদার যৌনকর্মীর কাছে যান এমন এক হাজার তরুণের ওপর এ জরিপ চালানো হয়।
এদিকে এমন অনিরাপদ যৌনকর্মের মাধ্যমে ৫২ শতাংশ এইডস ছড়ায় বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
জাতীয় এইডস কর্মসূচি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে শক্তিশালী যৌন ব্যবসা গড়ে উঠেছে।
আর তরুণরাই বেশি এইডস ঝুঁকিতে রয়েছে।
তরুণদের এইডস ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক মো. ওয়াদুদ বলেন, ‘যৌন আচরণে পরিবর্তন হওয়ার কারণে তরুণের মধ্যে এইডস ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকাসহ শহরাঞ্চলের তরুণদের মধ্যেই এইডস ছড়াচ্ছে বেশি। ’
তিনি বলেন, ‘তরুণ সমাজকে এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে আমরা বিশেষ সচেতনামূলক কর্মসূচি হাতে নিচ্ছি। এতে তরুণদের জন্য কাউন্সেলিং থাকবে।
এছাড়া পাঠ্য পুস্তকে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পর্যায়ক্রমে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিষয়টি সিলেবাসে নিয়ে আসা হবে। ’
এছাড়া সরকার জেলা পর্যায়ের প্রতিটি হাসপাতাল যুব বান্ধব করার উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পেশাদার যৌনকর্মীর কাছে যেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া তরুণের প্রায় ৭৯ শতাংশই এইডস সম্পর্কে সচেতন নন। যৌন মিলনের পর যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করলে এইডস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বলেও মনে করেন তারা।
যৌনকর্মে লিপ্ত হতে এসব তরুণের ৮০ শতাংশ যাচ্ছেন আবাসিক হোটেলে। আর ২০ শতাংশ অপেশাদার যৌনকর্মীর কাছে যাচ্ছেন।
আর জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ তরুণ হওয়ায় দেশের বৃহৎ ও নিভর্রশীল এই জনগোষ্ঠী ব্যাপক ঝুঁকিতে মধ্যে আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, তরুণদের অধিকাংশ যৌন চাহিদা মেটাতে যৌনকর্মীর কাছে যাচ্ছেন। সব ধরণের যৌন আচরণ করছেন।
গবেষণায় দেখা যায়, এসব তরুণের প্রায় ২০ শতাংশের মধ্যে যৌনবাহিত ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা যায়। তবে এদের মাত্র ১৫ শতাংশ চিকিৎসকের কাছে যান।
ঢাকার ৯টি আবাসিক হোটেলে আইসিডিডিআরবি পরিচালিত জরিপটিতে আরো দেখা গেছে, তরুণের দুই তৃতীয়াংশ স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া।
তারা যৌনকর্মে প্ররোচিত হন বন্ধু বা বন্ধুস্থানীয় কাউকে দিয়ে। প্রায় ৮০ শতাংশ তরুণ পরোক্ষভাবে প্ররোচিত হয়ে যৌন কর্মে লিপ্ত জন। আবার অনেকে পর্ন সিডি দেখে যৌন কর্মে উৎসাহিত হন। এদের অনেকের বয়স ১১ থেকে ১৪ বছর।
এছাড়া বিবাহিতরাও যৌনকর্মীর কাছে যাচ্ছেন বলে দেখা গেছে গবেষণা জরিপে।
১. সমকামিতাঃ
১৯৮১ সালে মূলত সমকামীদের মাধ্যমে এইড্স এর সূত্রপাত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এজন্য বিশেষজ্ঞগণ সমকামিতাকে এইড্স উৎপত্তির মূল কারণ হিসাবে চিহিৃত করেছেন। বাংলাদেশে সমকামিতা ও বিকৃত যৌনাচার খুব দ্রুতই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা ভাবিয়ে তুলেছে দেশের সচেতন জনসাধারণকে। জাতীয় এইডস ও এসটিটি প্রোগ্রাম (এনএসপি) এর মতে বাংলাদেশে ২০০৭ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এইচআইভি /এইড্স অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে প্রায় ৩লাখ মানুষ।
এর মধ্যে পুরুষ সমকামী ও খদ্দের ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ এবং হিজড়া রয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার। বন্ধু সোস্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (বিএসডব্লিউএস) জানায় ২০০৫ সালেই চট্টগ্রামে পেশাদার পুরুষ সমকামীর সংখ্যা ৩৫০০জন। এই সংখ্যা বর্তমানে ১০হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তাদের মতে,সব শ্রেণীর ও সব পেশার লোকজনই নাকি রয়েছে পুরুষ সমকামীদের মধ্যে।
সারা বিশ্বে বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে এ বিকৃত যৌনাচারকে আইনগত বৈধতা দেয়া হয়েছে।
এর প্রভাবে বাংলাদেশেও সমকামিতা দ্রুত বিস্তার লাভ করতেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ইলেক্টনিক পদ্ধতিতে সমকামী ও হিজড়াদের শুমারী করা হচ্ছে। এমএসএম ও হিজড়া সুমন হোসেন জানান,দেশে প্রায় ১২ লাখ হিজড়া এবং প্রায় ১লাখএমএসএম সমকামী আছে। এছাড়া ঐড়সড়ংবীঁধষরঃু মৎড়রিহম অওউঝ ৎরপশ রহ নধহমষধফবংয নামক এক রির্পোটে বাংলাদেশে ১০ মিলিয়ন সমকামী নারী পুরুষের বসবাস বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে দিন দিন এ সংখ্যা আরো বুদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও সমকামিতা খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করতেছে। সমকামিতার উপর বাংলাদেেশ অসংখ্যা ওয়েভ সাইটও রয়েছে। রয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সমকামীদের ব্যাপক প্রচারনণা। সমকামীদরে নিয়ে বাংলাদেশী ভিড়িও চিত্রও ছাড়া হয়েছে ইন্টারনেটে। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে,
এইচআইভি ও এইড্স সংক্রমনে মহিলাদের চেয়ে সমকামীরাই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কারণ, ১. পায়ুপথে সঙ্গমে সমকামীদের এইড্স সংক্রমিত হওয়ার আশংকা মহিলাদের চেয়ে অনেক বেশি।
কারণ,পায়ুপথ যৌনকাজ করার জন্য সৃষ্টি নয় এবং পায়ুপথ মহিলাদের যৌনি পথের চেয়ে সরু। পক্ষান্তরে পুরুষদের পুরুষাঙ্গ পায়ুপথের তুলনায় শক্ত ও মোটা হওয়ায় পায়ুপথের পাতলা টিস্যুগুলো অতি সহজে ছিড়ে যায় এবং পায়ুপথ ফেটে সেখানে ক্ষত সৃষ্টি হয় ও তা এইচআইভি এবং এইড্স এর ঝুঁকি বাড়ায়।
২.সমকামীরা সঙ্গমের মাধ্যম হিসাবে পায়ুপথকে ব্যবহার করে কিন্তু এ পথে ায়ু নিঃসৃত কোন রস না থাকায় পিচ্ছল করার জন্য থুথু,তৈল বা অন্য কোন তরল পদার্থ ব্যবহার করতে হয় যা এইচআইভি এবং এইড্স এর ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
৩.সমকামীরা পায়ুপথে যৌনমিলন করায় তারা একই দিন/সময়ে মহিলাদের তুলনায় বেশি খদ্দেরদের সাথে যৌনকাজ করতে পারে তাই তারা মহিলাদের চেয়ে এইচআইভি এবং এইড্স এ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
৪.সমকামীদের সাধারণত নিদিষ্ট কোন যৌন সঙ্গী না থাকায় তারা একাধিক যৌনসঙ্গীর সাখে যৌনকাজ করে তাই তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ।
৫.যে সব দেশে অবাধে সমকামিতা চলে সে সব দেশে এইড্স রোগ মহামারীর মত ব্যপক বিস্তার লাভ করতেছে।
২.অবৈধ যৌন সর্ম্পকঃ-
অবাধ যৌনতার বিশ্বায়নে বাংলাদেশেও ব্যাপক অবৈধ যৌনাচার আজ এইড্সের ব্যাপকতায় মূখ্য ভুমিকা রাখছে। শতকরা ৬০ ভাগ যুবক বিবাহ পূর্ব যৌনতায় অভ্যস্ত। আর্থিকভাবে অসচ্ছল যুবকদের মধ্যে পতিতালয়ের গমনের সংখ্যা বেশি। ডাঃ লূৎফর রহমানের মতে,আমাদের দেশে বিবাহের পূর্বে শতের মধ্যে ৯৯জনই অবৈধ নারী সংস্রবে একবার না একবার জীবনকে ধাবিত করে।
বাঙ্গালার হাজার হাজার বেশ্যা নারীকে রাজ কন্যার হালে যারা রাখে তারা আমাদের যুবকেরা। তিনি আরো বলেন,শহরের যুবক ছেলেরা যৌবনকালে বেশ্যা বাড়ী যেতে শেখে। একবার সে পথে যাওয়া আরম্ব করলে এ অভ্যাস আর ছাড়ে না। এক নারী থেকে আরেক নারী ,এক বেশ্যা ছেড়ে আরেক বেশ্যার কাছে যেতে চায় প্রাণ! বেশ্যাদের ব্যাধিপূর্ণ শরীরের সংস্রবে এসে ধ্বংস হয় সোনার শরীর,গনোরিয়া,সিফিলিস,বিভিন্ন যৌন রোগ,এইড্স সহ নানা যৌন রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ হারাতে হয়। এছাড়া শতকরা ৭৫ ভাগ ট্রাক ড্রাইভার বিবাহোত্তর যৌনতার শিকার হয়ে পতিতা পল্লীতে যায়।
বিশ্বব্যাংক আগষ্ট ২০০৭ সালে তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ১ লক্ষ ৫ হাজারেরও বেশি নর-নারী যৌন ব্যাবসার সাথে সম্পৃক্ত। প্রতি সপ্তাহে যৌন পল্লীর যৌন কর্মীরা গড়ে ২৮ জন,রাস্তার ভাসমান যৌন কর্মীরা গড়ে ১৭ জন,হোটেলের যৌন কর্মীরা গড়ে ৪৪ জন খদ্দেরের সাথে যৌন কর্ম করে। এনএএস ২০০৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এইচআইভি/এইড্স এ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় তিন লাখ লোকের মধ্যে পতিতালয় ভিত্তিক যৌন কর্মী ৩৬-৪০ হাজার, ভবঘুরে বা রাস্তা কেন্দ্রিক যৌন কর্মী ৩৭-৬৬ হাজার ,হোটেল ও আবাসিক যৌন কর্মী ২৪-২৮ হাজার রয়েছে। এছাড়া স্যাটেলাইট ও ইন্টারনেটের বদৌলতে যৌনতা আজ সর্বব্যাপী কালো থাবা বিস্তার করে চলেছে। যার শিকার ছাত্র-ছাত্রী ,ব্যাবসায়ী ,আমলা ,রিক্সাওয়ালা সহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষ।
এছাড়া প্রবাসীদের মধ্যেও এ রোগের ব্যাপকতা লক্ষণীয়। সিলেট সহ প্রবাসে যাওয়া অঞ্চলে এইড্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।
৩.ড্রাগ বা মাদকাসক্ত ঃ-
বাংলাদেশে এইচআইভি /এইড্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ড্রাগ আরেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। দেশে বর্তমানে ৫০লক্ষ লোক মাদকাসক্ত । এর মধ্যে ৭৫ ভাগ হেরোইন বা ব্রাউন সুগারে আসক্ত,আর বাকী ২৫ ভাগ ফেন্সিডিলে আসক্ত।
এনএএসপি ২০০৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী,বাংলাদেশে এইচআইভি /এইড্স এর জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ইন্ট্রাভেনাস ড্রাগ ইউজার রয়েছে ২০-৪০ হাজার। ষষ্ঠ পর্বের বিএসএস সমীক্ষা ২০০৪-২০০৫ থেকে জানা যায় ঢাকার খুব কাছেই
একদল শিরায় মাদক গ্রহণকারীদরে মধ্যে এইচআইভি সংক্রামক ঘনীভূত মহামারী আকার ধারণ করেছে এবং এই মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ শতাংশ। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা গ্রহনকারীদের মধ্যে জরিপ ৪জন এইচআইভিতে আক্রান্ত। সেখানে হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত এর হার ৫৯.২%। সর্বোপরি মোট ১৬১৯জন আইডিইউর মধ্যে হেপাটাইটিস সি এর হার ৫৪.২%।
ঢাকা শহরের প্রথম শ্রেণীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫হাজারের বেশি ছাত্রী মারাত্বক আকারে ড্রাগে আক্রান্ত। এছাড়া ঢাকার একটি ছোট এলাকায় শুধুমাত্র ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবনকারীদের ওপর পরিচালিত বিগত তিনটি জরিপের তথ্যে দেখা যায় এই বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৪% থেকে ৮.৯% এবং সর্বশেষ ১০.৫%। এইচআইভি সংক্রমনের হার ১০% এর উপরে চলে গেলে সেটাকে নিয়ন্ত্রন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের এইচআইভি এইড্স প্রতিরোধ প্রকল্প এইচআইভি এবং এইড্স টার্গেটেড ইন্টারভেশন (হাতি) প্রকল্প এর মাধ্যমে ৪০হাজার ৫০০ জন মাদক সেবন(সুই দ্বারা নেশা গ্রহনকারী এবং হেরোইন সেবী) দের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সা¤প্রতিক সময়ে মহিলা যৌন কর্মীদের ৪৪শতাংশ একই শিরায় যারা মাদক গ্রহন করে তাদের মধ্যে সিফিলিসের হার বেড়েছে যা এইডস এর ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
দুঃখ জনক হলেও সত্য যে,মহিলা মাদক সেবীরা নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য বেশ্যাবৃত্তিতে লিপ্ত হয়। এছাড়াও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ব্যবহৃত সুঁচ আবার বিক্রি করে ও মাদকাসক্তদের মধ্যে এ রোগ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
৪.পেশাদার রক্তদাতা ঃ-
বাংলাদেশে পেশাদার রক্তদাতারা অভাবজনিত কারণে রক্ত দিয়ে থাকে,যাদের অধিকাংশ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ যৌনক্রিয়ায় আক্রান্ত থাকে। এছাড়া মাদকসেবীরা নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য রক্ত বিক্রি করে থাকে। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার ব্যাগ রক্ত সংগৃহীত হয়।
৫.কনডমের ব্যবহার ঃ-
বাংলাদেশে কনডম ব্যবহারের হার অত্যন্ত কম। ২০০৩ থেকে ২০০৪ সালে সম্পন্ন বিসএস সমীক্ষা থেকে জানা যায়,রাস্তার যৌন কর্মীদের শতকরা ২৪ জন এবং যৌন পল্লীর ৪৪ জন কনডম ব্যবহার করেছিল। আবার কনডম ব্যবহারের হার যৌন কর্মীদের নিয়মিত খদ্দেরদের ক্ষেত্রে অনেক কম। গ্রামাঞ্চলে যৌনমিলন কালে কনডম ব্যবহার অত্যন্ত কম। এটি শতকরা ৬ ভাগ।
যদিও শহরাঞ্চলে কনডম ব্যবহারের হার প্রায় ১৭.৬ ভাগ । সমীক্ষায় দেখা গেছে কনডম ব্যবহারই এইডস আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা শতকরা ৬০ভাগ কমিয়ে দিতে পারে। অবাধ যৌনমিলনের এ যুগে তাই কনডম ব্যবহার এইডস প্রতিরোধে অন্যতম মূখ্য ভুমিকা পালন করতে পারে। তবে অবাধ কনডম ব্যবহারের মাধ্যমে অবাধ যৌনতা যাতে ব্যাপক বিস্তার লাভ না করে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
৬.প্রতিবেশি দেশের কারণে ঝুঁকি ঃ-
বাংলাদেশে তিন দিকে ভারত ও মায়ানমারের দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা রয়েছে। উক্ত দেশ সমূহ এইড্স এর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং আক্রান্তের সংখ্যা ও অনুপাত বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিভিন্ন কারণে তিন দেশের মানুষই প্রতিনিয়তই সীমান্ত অতিক্রম করে। এতে এইড্সের ঝুঁকি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে মালামাল আনা-নেয়ার কাজে নিয়জিত ট্রাক ড্রাইভারের কারণেও এইড্সের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৭.ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠির কারণে ঝুঁকি ঃ-
* বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় যে,ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষ এইড্স রোগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখে। ২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী ১৫-২৪ বছর বয়সীদের মাঝে শহরে ৩ জনে একজন ও গ্রামে ৫ জনে একজন পুরুষ এইচআইভি ও এইড্স সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানে। আর সাধারণ মানুষের মধ্যে (১৫-২৪) শতকরা ৫৯ জন বিবাহিত পুরুষ এ রোগটির সংক্রমনের বিষয়ে কোন তথ্যই জানে না।
* যে সব মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ তারা সমাজের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ভয়ে খুবই কম স্বাস্থ সেবা নিতে আগ্রহী । এছাড়া বিস্তৃতি যৌন ব্যবসা ,অপ্রর্যাপ্ত কনডম সরবরাহ ও কনডম ব্যবহারে অনীহা.যৌনরোগ ,একই সিরিজ ব্যবহার ,সঠিক জ্ঞানের অভাব,আক্রান্ত ব্যক্তিদের কুসংস্কার ও ঝুঁকিপূর্ণ আচরণকারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিতে অনীহা।
তাছাড়া প্রতিবেশি দেশে এইচআইভি আক্রান্তের ব্যপকতা গোটা বাংলাদেশবাসীকে এইচআইভি সংক্রমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এছাড়া এইড্স আক্রান্ত মহিলার গর্ভে যে সন্তান জন্ম নেবে সেই সন্তান গর্ভবস্থায় প্রসবকালে অথবা মাতৃদুগ্ধ পানের মাধ্যমে এইড্স আক্রান্ত হতে পারে। যেহেতু এইড্স এর কোন প্রতিকার নেই মৃত্যুই একমাত্র পরিণতি ,তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।
* এইচআইভি /এইড্স প্রতিরোধের উপায়ঃ-
১.অবৈধ যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা । স্বামী-স্ত্রী বিশ্বস্ত থাকা,ধর্মীয় বিধি-বিধান পালন করা,সমকামিতা নামক বিকৃত যৌনাচার বিরত থাকা এবং প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করা।
২.যৌন উত্তেজক উপকরণ সমূহ (অশ্লীল সিডি,ভিসিডি,বই,ম্যাগাজিন,পর্ণো সাইট) নিষিদ্ধ করা এবং কঠোর হস্তে দমন করা।
৩.রক্তনালীতে নেশাকারক ঔষধ গ্রহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সিরিজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডিসপোজেবল সিরিজ সর্বাধিক নিরাপদ। এছাড়া যথোপযুক্ত পরীক্ষা বা স্কিনিং ছাড়া রক্ত গ্রহন বা দান না করা।
৪.কনডম বিহীন অরক্ষিত এবং অবৈধ যৌনাচার থেকে বিরত থাকুন।
তাড়াতাড়ী বিয়ের ব্যবস্থা করা। প্রবাসীদের স্ত্রী ফেলে বছরের পর বছর বিদেশ অবস্থান না করার ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া।
তৃতীয় বিশ্বে ক্ষুধা ও দারিদ্রতার পাশে এইড্স একটি মারাত্বক আঘাত। বাংলাদেশে এইড্স মহামারী আকার না নিলেও ভবিষ্যতে পার্শ্ববতী দেশ গুলোর কারণে দেশে এক মারাত্বক অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। উন্নয়নশীল বিশ্বের জনগণের নিজেদের সহজ সরল বিশ্বাস,সুস্থ মন এবং উন্নত নৈতিক চরিত্রের আলোক শিখা দিয়ে এইড্সের সহ সকল অপকর্মের ধ্বংস সাধন করে যুব সমাজের নেতৃত্বে এক সুস্থ সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে এগিয়ে আসা আর এটাই হবে এখনই উন্নয়নশীল বিশ্ব কর্তৃক উন্নত বিশ্বকে দারুণ চপেটাঘাত করার মত সফলতম কাজ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।