আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Kept on Flowing..!! বিজয়ী..!!

ভালোকে আমার ভয়,ভালো বেশীদিন থাকবেনা... মন্দকে আমার ভয়, কেননা আমি দুর্বল, আঘাত সইতে পারবোনা... সাফল্যকে আমার ভয়, ব্যর্থতাকেও ভয়... নিরন্তর ব্যস্ততার মহাকালে আমার করণীয় কিছুই নেই... যোগ্যের পৃথিবীতে আমি অযোগ্য, অধম... . - ওকে স্যার, আসছি। সিটিজি মেট্রো ৫ ওভার। তীব্র ক্ষোভে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে খটাশ শব্দে ওয়্যারলেসটা টেবিলে রাখে ফাইজ। মুখের ভেতরে জমে থাকা খাবারটুকু খুব কষ্টে গিলে ফেলে। নিজেকে মনে মনে বিশ্রী রকমের কিছু গালি দেয়।

দুনিয়ায় এতো কাজ থাকতে কেন যে সরকারী চাকরি খুঁজে নিয়েছিল। একটা পালা কুকুরের স্বাধীনতা অন্তত পুলিশের চেয়ে বেশী, অন্তত খাবার সময়টা পায়, আর কিছু না হোক। এটা কোন জীবন...!! হাতটা ধুয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অযথাই চুলে চিরুনি চালাতে থাকে অনেকক্ষণ ধরে। বিরক্তিতে এতক্ষণ খেয়ালই করেনি যে আয়নাতে তার নিজেকে ছাড়া আরও একটি প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। রেণু কখন নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়ে আছে, খেয়ালই করেনি সে।

এতক্ষণ যা ছিল তিক্ততা, নিমিষেই সেটা অসহায়ত্বের বিষাদে পরিণত হল। রেণুকে বৌ করে ঘরে এনেছে প্রায় ২ বছর হতে চলল। অনেকটা সময় একসাথে আছে ওরা। তবু মেয়েটা নিজেকে কেমন নিজের মধ্যে গুটিয়ে রাখে। গ্রামের সহজ সরল মেয়ে রেণু।

এই ব্যস্ত শহরের সব কিছুর সাথে নিজেকে মানাতে পারেনি এখনও। একা ঘরে থাকতে ভয় পায় ভীষণ। এইতো সেদিন, বালিশের কভারের নিচে একটা টিকটিকির লেজ দেখতে পেয়েছিলো। কাপড়টা সরিয়ে দেখেনি ওটা কি, কেঁদেকেটে অস্থির হয়েছে কি না কি ভেবে। পাশের বাসার রানীর মা না এলে সেদিন কি যে করতো রেণু...! এমনিতেই অন্তর্মুখী মানুষ।

তারপর আবার নিজের মাঝে সন্তানের অস্তিত্ব টের পাবার পর থেকে বিধ্বস্ত চাহনিটা আরও বেড়ে গেছে ওর। ফাইজ আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরেছিল রেণুকে সময় দিতে। হল না। রেণু এতক্ষণে টের পেয়ে গেছে যে আজো তাকে একাই থাকতে হবে। -নেরুর মন খারাপ? নিজের কাছেই মজাটা বেমানান শোনাল।

- নাহ। মন খারাপ হবে কেন?? এখন কি রোমান্টিক মুভির কাস্টিং শুরু হয়ে যাবে নাকি?? রেণু হাসে। নির্জনতা ভীতির যদি দৃশ্যমান রূপ থাকতো, তবে তার চেহারাটা দেখতে অবিকলএই হাসিটার মতই হতো। -পেঁয়াজের একটু কাজ পড়েছে। কোথায় কার তরকারীতে স্বাদ কম হয়েছে, আর ডাক পড়েছে এই পেঁয়াজের।

ঠিক করে দিয়ে আসি সেটা। আসবার সময় আমার নেরুর জন্যে কি আনবো?? মজা করে ফাইজকে পেঁয়াজ ডাকে আজকাল। -কিছু লাগবেনা। ঘরে আছে সব। রেণুকে কেমন যেন লাগে ফাইজের।

কতদিন জিজ্ঞেস করেছে সে কি পছন্দ করো, কি আনবো, আমড়া আর পেয়ারা ছাড়া মুখ দিয়ে অন্য কিছুর নাম বেরোয়নি। চাওয়া বলতে আর তেমন কিছুই নেই। একদিন গন্ধরাজ এনে দিয়েছিল সে, খুশি হয়েছিল ও। বিদায় নিয়েই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়ে ফাইজ। ফোর্স অপেক্ষা করছে।

কিন্তু তার আগে যেতে হবে ব্যারাকে। ডিউটি যাবার আগে আর ফিরে এসে ওখানেই ইউনিফর্মটা বদলে নেয়। রেণুর পুলিশভীতি প্রবল। এখনও সে জানেই না, যার সাথে ঘর করে সে-ই... ** চানমারী রোডের মাথায় পুলিশ পাহারা বসেছে। খোঁজ মিলেছে ট্রাকে করে এই পথেই যাবে চোরাই বেলডিভিয়ার।

ঢাকায় এতসব ঝামেলা ছিল না। পরিবেশগত দিক থেকে তুলনামূলক কম ঝঞ্ঝাটের শহর বলেই মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে ফাইজ চট্টগ্রাম বদলি করিয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে আগেই ভালো ছিল, ভাত খাওয়া ছেড়ে উঠে যখন তখন ভদকা ধরতে উঠে আসতে হয়নি। একটার পর একটা গাড়ি চেক করে যাচ্ছে। চোরাই মালের নাম নিশানা কিছুই নেই।

চলে যেতে ইচ্ছে করছে ফাইজের। ইশারায় থামতে বলল আরও একটা গাড়িকে। ছোট পিক আপ। ৪ জন কনস্টেবল মিলে ঘেঁটে চেক করলো, আখ ছাড়া কিছু নেই। তেরপলটা নামাতেই হঠাৎ ফাইজের মনে হল এই গাড়িটার গড়ন কেমন অদ্ভুত ধরনের।

কিনারগুলো পুরু, বেশি না, ৫ ইঞ্চির মতো। জায়গাটা ফাঁপা। আবার চেক করতেই বুঝতে পারলো যা আছে, এর ভেতরেই। এদের বুদ্ধি দেখে অবাক হল ফাইজ। এদিকটায় তাকাতেই দেখে লুঙ্গি পরা বোকা চেহারার ড্রাইভারটা ছুটে পালাচ্ছে।

কি বিপদ...! গাড়ি চালাতে পারে কি না সেটাই সন্দেহ হয়েছিল। ওর বোকা মার্কা চেহারা দেখেই প্রথমে চেক না করেই গাড়ি ছাড়বে ভেবেছিল সে...!! কিছুটা পথ দৌড়েই টের পেল সে। মুখমণ্ডলে মেকী সারল্যে যেমন এরা আর সব পাকা অভিনেতাদের ছাড়াতে পারে, তেমনি দৌড়েও ভেঙ্গে দিতে পারে অলিম্পিক রেকর্ড। ফাইজের মনে হল পেটের চামড়া ভেতরের দিক থেকে কেউ খামচে ধরেছে। হাঁপাচ্ছে খুব।

মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হচ্ছে। পানি খাওয়া দরকার। কনস্টেবল মিজান আছেন সাথে। বাকিরা ড্রাইভারের পেছনে ছুটছে। মিজান সাহেবই তুলে ধরে পাশেই একটা বেঞ্চে বসিয়ে গেলেন পানি আনতে।

পানি খাইয়ে বাতাস করাতে একটু সুস্থ বোধ হল। গাড়ি ফাঁকা ফেলে আসা হয়েছে, যাওয়া দরকার। নাহলে আসামী চোরাই মাল একসাথে জলে যাবে। গাড়িতে গিয়ে একটু হেলান দিয়ে বসলো ফাইজ। ক্ষীণ একটা নড়াচড়ার শব্দ কানে আসছে।

সামান্য ভয় পেল। পুরো গ্যাং হাজির হল না তো?? সাথে ফোর্স নেই। খুব বিপদ হয়ে যাবে। আবার...! এবার আরও একটা শব্দ আসছে। বিড়াল নাকি?? বাচ্চা বিড়ালের মতই তো লাগছে শুনতে।

-মিজান ভাই -জি... - কিছু শুনছেন?? -কি স্যার?? -কিছু একটা নড়ার শব্দ?? - না তো? -চলেন চারপাশটা দেখে আসি। বলা তো যায় না...... শেষটুকু বলতে ইচ্ছে করলনা। এখানেই চুপ করে গেল। - জী স্যার, আসেন যাই। আকাশে চাঁদ আছে।

শীতের শুরু হবে কেবল। আবছা কুয়াশা। রাস্তাটা পাহাড়ের পাশে। ১.৫ ফিট গভীরটার ড্রেন দু'পাশে। ঘরবাড়ি খুব একটা নেই বলেই চলে।

দূরে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা আলো দেখা যায়। আবার নড়াচড়ার শব্দ, খুব কাছে থেকে। অজানা ভয়ে দু;জন একে অপরের গায়ের সাথে সেঁটে যায়। ক্ষীণ কান্নার শব্দ। মানুষ...!! পকেট থেকে টর্চটা বের করে দ্রুত এদিক ওদিক দেখতে থাকে মিজান।

কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। ড্রেনে আলো পড়তেই নড়াচড়াটা চোখে পড়ল এবার। দুর্বল পায়ে এগিয়ে খুব সাবধানে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল ফাইজ। ওর দেখাদেখি মিজানও। অসংখ্য ছোট বড় পিঁপড়ে।

এর মাঝখান দিয়েই তাকিয়ে আছে এক জোড়া চোখ। কাঁদছে। একটা বাচ্চা। ড্রেনে পানির স্রোত গেলো একটা। বাচ্চাটা থেমে গেলো।

কান্নার আওয়াজ শোনা যাওয়া আর থেমে যাওয়ার ব্যাপারটা বুঝল ফাইজ। দ্রুত টান দিয়ে তুলে নিল বাচ্চাটাকে। সারা শরীরে পিঁপড়ের কামড়ে হাত দেয়ার জায়গা নেই। এই ড্রেনের নোংরা পানিতে পড়ে থেকেও কি মিষ্টি গন্ধ আসছে বাচ্চাটার শরীর থেকে...!! পিঁপড়ে টের পেয়েছে এই মিষ্টতা, শুধু মানুষই টের পেলো না... মানুষের স্বাদ গন্ধ নেবার শক্তি কি দিনে দিনে লোপ পাচ্ছে??? দ্বিধায় পড়ল দুজনেই। একে সারা গায়ে ক্ষত, তার উপর অনেকক্ষণ পানিতে থাকাতে শ্বাসকষ্টের মত হচ্ছে বাচ্চাটার।

চারপাশে অসংখ্য গাছ, এতো অক্সিজেন , তবু এই ছোট্ট মানুষটা সেটা নিতে পারছেনা। পুলিশ কি করে??? কার সেবা করে??? এই শহরের সব অক্সিজেন কেনার ক্ষমতা বড় বড় রুই কাতলার থাকা সত্ত্বেও ওদের পাহারায় পুলিশ। এই নিষ্পাপ শিশুটির নিরাপত্তার ভার নেয়ার মানুষ কে?? যার জন্ম হয়েছে কোন এক অমানুষের ঘরে...!!! একরকম জোর করেই অনেক কষ্টে একটা ঘরের দরজা খোলাতে পারে ওরা। গভীর রাত, তার উপরে পুলিশ। লোকে দরজা খুলবেই বা কি করে...!! একজন মহিলা পাওয়া গেল।

বহু কাকুতি মিনতি করে তাকে গোসলের দায়িত্ব দেয়া হল। কি অপূর্ব দেখাচ্ছে বাচ্চাটাকে...!! অনেক বুঝিয়ে সেই মহিলার কাছে বাচ্চাটা দেয়। আশা, যদি কেউ খোঁজে আসে, সহজেই খুঁজে পাবে। গাড়িতে ফিরেই কান্না পেল ফাইজের। যে বেলডিভিয়ার ধরতে এসেছে, সেটা ধরা পড়লেও যেমন কাজে লাগবেনা, না ধরা পরলেও কোন বড়লোক পাকস্থলীতে যাবে।

যে মানুষটাকে কে এতো অবহেলায় ফেলে রেখে গেছে, তাকে নিতে কে আসবে?? কতো মানুষই তো এই পথে যায়, কেউ পেলনা, সে কেন পেল?? এটা কি বিধাতার কোন প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত?? ** চট্টগ্রাম কার্ডিকেয়ার হার্ট হসপিটালের সামনে জীপটা এসে থামল। রেণু ছুটে আসছে। কি হয়েছে ফাইজের??? এই প্রথম ওকে পুলিশের ইউনিফর্মে দেখে রেণু। বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে সে। মুখে অক্সিজেনের মাস্ক পরা ছোট্ট মেয়ের হাতটা রেণুর হাতে ছুঁয়ে দেয় ফাইজ।

-আমড়া পেয়ারা কিছুই পাইনি। সিজন নেই তো। এই পুতুলটা এনেছি তোমার জন্যে। সারাজীবন থাকবে তোমার সাথে, নেবে না??? -আমার পুতুল...!! রেণু হাসে। - না, তোমার একার না।

আমাদের দুজনের, ছোট্ট '''ফুল'''' ... কচি হাতটা আশ্রয়ের আঁচল খামচে ধরে। তার কি মায়াময় চাহনি নিয়ে মায়াবতী ফুল তাকিয়ে থাকে মায়ের দিকে... !! কেউ জানেনা মাস্কের নীচে টকটকে লাল ঠোঁটটা হেসে উঠে...!! ( কখনো কখনো দু'ফোটা চোখের জল আরেকটা মানুষের চিরদিনের হাসি এনে দিতে পারে। কিছু ঘটনা সামনে বেরিয়ে আসে, কিছু আত্মত্যাগ আড়ালে থেকে যায়। কখনো কাওকে বলা হয়না। আসলে বলতে চাওয়াটা দুঃসাহসের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

সবার সেই সাহস হয়না। ১৭ বছর বয়সী এরিসের লেখা এটা। অবশ্য এর চেয়ে উন্নততর কিছু করতে পেরেছিলামই বা কবে...!! ক্লাইম্যাক্স, রিচ পয়েন্ট কিছুই নেই। শুধুই লিখে যাওয়া, অকারণ। ক্ষমা করবেন, আমি নিশ্চিত, আমি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য।

আমি কে, আমার অবস্থান সম্বন্ধে আমি জানতে চাইনা। আমি চাই মানুষের জন্যে মানুষের ভালোবাসা বেঁচে থাকুক... অমানুষ থাকতেই হবে, কেননা পৃথিবীটা ভালো মন্দের মিশ্রণ। মানুষকে চাই বিজয়ীর বেশে, অমানুষের সকল হিংস্রতার উর্ধে... ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।