সত্যকে গ্রহন করতে প্রস্তুত । যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক দ্য ইকোনমিস্ট গত ২৬ মে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। ‘বাংলাদেশ টক্সিক পলিটিক্স: হ্যালো দিল্লি, ইট ইজ আপ টু ইন্ডিয়া টু ট্রাই টু স্টপ শেখ হাসিনা রুইনিং বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে খোলামেলা মন্তব্য করা হয়েছে। সম্পাদকীয়টি হুবহু তুলে ধরা হলো:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত কয়েক দশক ধরে চলছে পাঞ্চ অ্যান্ড জুডি শোর মতো তুর্কি নাচন। সাবেক রাষ্ট্রপতির কন্যার শাসক দল অপেক্ষায় আছে আরেক সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের সঙ্গে স্থান পরিবর্তনের।
এই ক্ষমতার বদলে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন হয় না বলেই এতকাল বাইরের দুনিয়া এতে মনোযোগ দিয়েছে কমই।
সম্প্রতি দুই দলের চুলোচুলি পরিণত হয়েছে সংকটে, যা আবার বিপদাপন্ন করে তুলেছে প্রায় ১৭ কোটি মুসলমানকে, যারা ধুঁকছে জগতের সবচেয়ে বাজে সরকারগুলোর একটির অধীনে। যখন বাংলাদেশের রাজনীতিকেরা তাঁদের ভাগ্য বদলাতে অনাগ্রহী, তখন দায়িত্বটি বর্তাচ্ছে বাইরের কারও ওপরে।
আওয়ামী লীগের নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা খালেদা জিয়া নব্বইয়ের দশকে যখন ক্ষমতা বদলা-বদলি করছিলেন, তখন দেশের অবস্থা ছিল বেশ খারাপ; কিন্তু গত এক দশকে দেশটির অবস্থা হয়েছে আরও মন্দ। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সরকার ছিল এক নিষ্ঠুর চৌর্য-শাসন।
এরপরে ক্ষমতায় আসে সেনা-সমর্থিত অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে ক্ষমতারোহণ করে। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে লীগ পায় ২২৯টি আর খালেদার বিএনপির পায় মাত্র ৩১টি আসন। এই সমর্থনকে শেখ হাসিনা কাজে লাগান ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে আর তাঁর প্রকৃত ও কল্পিত বিরোধীদের হেনস্তা করতে।
বাংলাদেশে রহস্যজনকভাবে গুম হওয়ার এক জোয়ার শুরু হয়েছে।
গত মাসে বিরোধী দলের ৩৩ জন প্রবীণ নেতাকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়ে নৃশংসতার তদন্ত ও বিচার করতে যে যুদ্ধাপরাধ-বিষয়ক ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে, তা এখন ব্যবহূত হচ্ছে বিএনপি ও ইসলামি দলগুলোর জোটের ওপরে কলঙ্ক লেপনের উপায় হিসেবে। আর ক্ষুদ্র অর্থনীতির পথিকৃত্, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের হয়রানিকে দেখা হচ্ছে ২০০৭ সালে দেশের রাজনীতিতে ‘তৃতীয় শক্তি’ সংগঠিত করার হঠকারী উদ্যোগের জবাব হিসেবে। এর মধ্যেই সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মীরা ভয়ভীতির শিকার হচ্ছেন। গণতন্ত্রের প্রাণশক্তিকে যেসব বেসরকারি সংস্থা ধরে রেখেছে, তারা ভয় পাচ্ছে যে প্রস্তাবিত বিভিন্ন আইন পাস হলে সরকার তাদের ওপরে যথেষ্ট ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ পাবে।
গত বছর লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আইনটি বাতিল করে। এটা যে খুব ভালো হয়েছে, তা নয়। বিএনপির অধীনে নির্বাচনে কারচুপি হবে, এমন অভিযোগে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলে। ফলাফলে বিএনপির পতন হয় এবং ঘটে এক ক্যু। এবার কোনো নিশ্চয়তা না পেলে বিএনপিও ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করবে।
এসব ঘটনায় অচলাবস্থা সৃষ্টিকারী বিক্ষোভ-আন্দোলনের পরিমাণ বাড়বে। রাজনীতি ক্ষেত্রে সৃষ্ট অচলাবস্থা রাজপথের সংঘাতকে বাড়িয়ে দেবে বহুগুণে।
ঢাকায় একমাত্র কণ্ঠস্বর
দেশের বাইরের শক্তিগুলো নিজেদের মতো করে কিছু একটা করার চেষ্টা করছে। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক একটি সেতু নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতেরা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি দেখানো আচরণে এবং রাজনৈতিক কর্মীদের ওপরে নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন উড়ে গিয়েছিলেন ঢাকায়।
অথচ, এর পরেও সরকার অনড়। গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের যেকোনো সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছে সরকার। জানিয়েছে ব্যাংকটি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা, যা আবার হতে পারে ব্যাংকটি ধ্বংসের একটি ধাপও। ঢাকার ওপরে যে দেশটির এখন খানিকটা নিয়ন্ত্রণ আছে তা হলো ভারত।
বাংলাদেশের উগ্রপন্থীদের ভীষণভাবে দমন করাতে সক্ষম হওয়ায়, এখন পর্যন্ত ভারত শেখ হাসিনার নানা ধরনের বাড়াবাড়িকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে। তবে সামনে ভারত সম্ভবত দুই দলের জন্যই বাজি ধরবে। ভারত যদি প্রতিবেশীর ঘরে কার্যকর গণতন্ত্র দেখতে চায়, তবে দেশটিকে তার সমর্থনে আরও উচ্চকিত হতে হবে বৈকি।
সম্পাদকীয়টি সরাসরি পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন
http://www.economist.com/node/21555914/ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।