কিছু মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু মানুষ স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে। জীবন আপনার কাছে সেভাবেই ধরা দিবে আপনি যেরকম থাকবেন। অফিসে বড় স্যারের জন্য ফুল নিতে হবে। দৌড়ায় গেলাম কোন ফুলের দোকান খোলা কিনা দেখতে।
অনেক কষ্ট করে এক ফুলের তোড়া পাওয়া গেল। এটাই দোকানের শেষ তোড়া। ফুল কেনার পরেই দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফুল কেনার সময় একজন প্রতিযোগী পাওয়া গেল। সেও ফুল কিনতে এসেছিল।
আমার আগে আসতে না পেরে মন খারাপ করে আছে। করুক মন খারাপ, আমার কি? আমার ফুল আমি পেলাম। বড় স্যারের বাসায় দাওয়াত। ফুলের সাথে রস বা প্রিমিয়াম থেকে দুই কেজি মিষ্টি কিনলেই কেল্লাফতে। সামনে প্রমোশনের সময়।
বেতন আরো বাড়ুক।
- এই রিকশা যাবা ধানমন্ডি?
মজার ব্যাপার এইখানেও সেই ব্যক্তির সাথে প্রতিযোগিতা!! একই রিকশা দুইজনেই ঠিক করছি প্রায়। দুইজনই তাহলে ধানমন্ডি যাব। কেমন জানি মায়া হল লোকটার উপর। বললাম,
- চলেন এক সাথেই যাই।
-না না তা কই করে হয়।
-আহা চলুন। ফুল দিতে না পারি রিকশাতে অন্তত এক সাথে যাই।
উঠলাম দুই জনই এক সাথে রিকশায়। লোক দেখি কথাবার্তাও কম বলেন!
- স্যরি আমার কারনে ফুল পেলেন না।
-না না ঠিক আছে।
- আমার নাম শ্যামল। শ্যামল হাসান আপনি?
- জ্বি আমি রকিব। রকিব রহমান।
- কী করেন?
-মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে আছি।
-ফুল কার জন্য নিচ্ছেন?
-জ্বি আমার বউয়ের জন্য।
-কোন বিশেষ উপলক্ষ্য?
-জ্বি। আজ থেকে ঠিক ২ বছর আগে
কথা শেষ করতে দেওয়ার আগেই আমি বলা শুরু করলাম
- ম্যারেজ ডে?
- না ঠিক এই দিনটা ম্যারেজ ডে না।
- এই দিনে প্রপোজ করেছিলেন?
লোকটা হাসা শুরু করলো। হা হা হা হা হা হা হা হা।
- হাসছেন কেন?
- আপনি খুব মজা করে বললেন তাই।
- আরে এতটুকু যখন বলেছেন পুরাটা বলেই ফেলেন।
-আমার বউয়ের নাম হিয়া। হিয়া কিভাবে আমার বউ হলো এই গল্প আমি যে খুব একটা করি তা না। কিন্তু আপনাকে খুব ভাল লাগল আমার।
মাঝে মাঝে কিছু কথা আছে চেনা জানাদের বলা যায় না কিন্তু অচেনা অজানাদের বলতে ইচ্ছা করে। ভাই রিকশা থামান। একটা পানির বোতল কিনি।
- দাড়ান আমিও নামি। মিষ্টি কিনা লাগবে।
সিগারেট ধরানো লাগবে।
ঝিকাতলার সামনে রসের দোকানে রিকশা থামল। এইখানে ফুলের দোকানও থাকার কথা। আজ সব ফুলের দোকান বন্ধ কেন কে জানে। রকিব ভাই নাইলে ফুল কিনতে পারত।
মিষ্টি কিনে এনে সিগারেট ধরালাম। রকিব ভাই পানির বোতল কিনে আসল।
- রিকশাওয়ালা আর যেতে চাচ্ছেন না। আমি ভাড়া দিয়ে দিয়েছি। আপনার যদি সময় থাকে তাহলে আমার আর হিয়ার কথা বলতাম।
- চলুন কোথাও বসি।
বসলাম দু'জন। কথা শুরু করলেন রকিব সাহেব। শোনা যাক তার গল্প, বসের বাসায় দেরী করেই যাই। আগে যেতে ইচ্ছে করছেনা।
রকিব ভাই গল্প শুরু করলেন।
-আমার নাম রকিব। বন্ধু বান্ধব আমাকে ডাকত হাফ চান্স বলে।
- হাফ চান্স? মজা তো!!
- নারে ভাই অত মজা না। আচ্ছা আমি আরও গোড়া থেকে বলি।
আমার নাম রকিব রহমান। আগেও বলেছি। আমি গুছানো একটা ছেলে। সব কিছু গুছিয়ে করি। চিন্তা ভাবনা করেই করি।
ইল-লজিকাল ব্যাপার আমার মধ্যে নেই। কিন্তু আমার ভাগ্যে কোন কিছুর মিসিং আছে। ব্যাপারটা ঠিক বোঝাতে পারব না। অনেকটা মনে করেন আমরা সাত বন্ধু-বান্ধব কোথাও গেলাম যেখানে টিকিট আছে ছয়টা। আপনি নিশ্চিত থাকেন আমি বাদ যাব।
কোন ভাবে আমাকে বাদ দেওয়া হবে। এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের সব বন্ধু-বান্ধবের সিট আশে পাশেই পরেছিল। এক্সাম হলে গার্ড ছিল শিথিল সবাই দেখা দেখি করে দিলাম। সবাই গোল্ডেন এ-প্লাস পেল আমি পেলাম নরমাল এ-প্লাস। একবার এক ক্রিকেট খেলায় শেষ বলে ৬ রান লাগত।
আমি সজোরে মারলাম, কোন এক গাছে বলটি আটকে যাওয়ায় ৬ হলোনা। মানে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও আমার ভাগ্যে জোটেনা।
আমার সব বন্ধুবান্ধবের মেয়েবন্ধু ছিল। আমার ছিল না। আমি মিশতে পারতাম না।
আমি খালি এটাই চিন্তা করতাম আমার সমস্যাটা কোথায়? অনেক ছেলেদের দেখতাম মেয়েদের নিয়ে বাজে কথা বলত, কিন্তু তাদের মেয়ে বন্ধু থাকত, অনেক অসৎ ছেলেকে দেখতাম মেয়ে বন্ধু নিয়ে ঘুরত আমার সাথে কোন মেয়ে কখনো কথা বলত না। আমিও তাই সেধে সেধে যেতাম না। ভার্সিটিতে পড়তে গেলাম। মেয়েদের থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকার চেষ্টা করতাম। এমন না যে তাদের সাথে কথা বলায় আমার আগ্রহ ছিলনা।
কিন্তু কি জানি এক অজানা ভয় থাকত। তারপর একদিন এক মেয়ে আমার সাথে কথা বলতে আসল। নিজ থেকেই আসল। সে ফোন করা শুরু করলো। আমরা গল্প করতাম।
অল্প বয়স হলো কৌতুহলের বয়স, দ্রবীভূত হওয়ার বয়স। আমিও দ্রবীভূত হলাম। মেয়েকে মনের কথা বললাম। মেয়ে বলল, উহু এভাবে হবেনা। আমাকে সবার সামনে প্রপোজ করতে হবে।
আমি বললাম, ঠিক আছে। পরেরদিন আমি ভার্সিটি গেলাম। সেই মেয়ে ক্যান্টিনে বসা। আগের থেকেই ঠিক ছিল ক্যান্টিনে আমাকে প্রপোজ করতে হবে। আমি সবার সামনে বললাম।
তিথি, আমি তোমাকে ভালবাসি।
- মেয়ের নাম ছিল তিথি?
-জ্বি।
- তারপর?
তারপরের ঘটনা খুব লজ্জার। সে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করল। এই লজ্জার কথা বলা যায়না।
পুরা ভার্সিটিতে আমি হাসির পাত্র হয়ে গেলাম। ভার্সিটিতে আমার যে দুই একজন বন্ধু-বান্ধব ছিল তারাও আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। আমার সামনে না করলেও আমার পিছনে করত। আমি ক্লাসে যেখানে বসতাম সেখানে বেঞ্চে লিখা থাকত, তিথি আমি তোমাকে ভালবাসি।
- কিন্তু মেয়েটা তো আপনার সাথে কথা বলত তাই না?
- হা বলত।
কিন্তু সবার সামনে অস্বীকার করল।
-সেই মেয়ের কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিলো?
- জানি না আসলে। এটা কি তার কোন মজা কররা ভঙ্গি কিনা তাও জানিনা। কিন্তু এটা কেমন মজা করার ধরন হবে?
- আচ্ছা এরপর কি হলো?
- আমি খুব মনোকষ্টে থাকতাম। লেখাপড়া করার চেষ্টা করতাম পারতাম না।
সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার কেউ আমাকে বিশ্বাস করত না। আমি বললাম আমি ৬ মাস তিথির সাথে ফোনে কথা বলেছি কিন্তু আমাকে কেউ বিশ্বাস করতে রাজী না। আমার সব থেকে কাছের বন্ধুব তখন আমার নাম দিলো হাফ চান্স।
- হাফ চান্স মানে?
-শুরুতে বুঝতে পারিনাই। তারপর একদিন শুনলাম হাফ চান্স মানে হলো আমার যে কোন মেয়েরে সাথে প্রেম করার হাফ চান্স আছে।
মানে আমার দিক দিয়ে সমর্থন আছে কিন্তু ওই দিক দিয়ে নাই। ভার্সিটি জীবনে কিছু কিছু ব্যাপার খুব নিষ্ঠুর হয়। ব্যাপারটা এমন যে আমার আর কাউকে ভালোবাসার অধিকার নেই। অন্য মেয়েরাও আমাকে কেমন জানি ভাল ভাবে নেয় নি। আমি মাঝে মাঝে ক্লাস মিস দিলে নোট নেওয়ার জন্য কারো কাছে যেতে পারতাম না।
কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে গেলেই সবাই বলত ঐ যে হাফ চান্স যাইতেছে। এরপর আমিও বাদ দিলাম।
- খুবই হরিবল অবস্থা দেখি।
- জ্বি তাই।
-তারপর কি হলো।
-ভার্সিটির বাইরে আমার দুই একজন বন্ধু ছিল। স্কুলের বন্ধু। তারাও তখন এনগেজড। তাই তাদের সাথে যে খুব সময় কাটাতে পারতাম তা না। তবে ঘুরতে যেতাম মাঝে মাঝে।
ওরা সবাই মেয়ে বন্ধু সহ। আমি একা। আমি একা , এটা নিয়ে বন্ধুদের বান্ধবীরা মজা করার চেষ্টা করে, হতে পারে সেগুলো সরল রসিকতা কিন্তু আমার খারাপ লাগত। তবে কিছু বলতাম না। তবে খুব মনোকষ্ট নিয়ে থাকতাম।
- তারপর?
-ভার্সিটি থেকে বের হলাম। চাকরি শুরু করলাম। আমার হাফ চান্স পদবী পিছু ছাড়ল না। কেউ না কেউ এসে লাগিয়েই দিত যে উনি হইলেন ঐখানকার হাফ চান্স। বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গেলে আগেই মেয়ের কাছে খবর যায় উনি হাফ চান্স।
এমন একটা অবস্থা যে প্রেমে ব্যর্থতা খালি আমার আছে এ জগতে এই অভিজ্ঞতা আর কারো নাই। আমার চেনা জানা কয়েকজন এই প্রেম শেষ হলে ঐ প্রেম ধরত আর আমি ওই এক "তিথি, তোমাকে ভালবাসি" বলার কারনে আমার এই অপবাদ নিয়ে থাকতে হবে। আমি একদিন মহা বিরক্ত হয়ে বাসায় বললাম, আমি যেমনই হই, যাই হই, আমি আর কোনো অপমান সহ্য করব না। দয়া করে আমার জন্য কোন মেয়ে দেখবা না।
- দুঃখজনক।
- বাসায় এতদিন আমার অবস্থা না বুঝলেও এখন বুঝল। তারা কৌশলে মেয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করল। আমি বুঝতে পারলাম না। আমার এক বন্ধু এসে বলে কোন এক জমিদার বাড়ি নাকি ঘুরতে যেতে হবে। ঢাকার বাইরে।
সকালে যাব সন্ধায় আসব। গেলাম ঢাকার বাইরে সেই জায়গায়। জায়গাটা সুন্দর। কিন্তু আমার মন খারাপ হলো। কারন আমার কাছে মেয়ে দেখার ব্যাপারটা গোপন থাকল না।
বরং এখানে আমার জন্য অনেক বড় অপমান অপেক্ষা করছে।
-কেন?
- যেই মেয়ে দেখতে আসছি সেই মেয়ে অসম্ভব সুন্দর। এই মেয়ে আর যাই হোক আমাকে বিয়ে করবেনা। তারপর আরও শুনলাম এই জমিদার বাড়ি ঘুরতে এরকম আমার মত আরও ২ টা ছেলে এসেছিল। তারা ঘুরে গেছে।
আরও একজন আমার পরের দিন আসবে। আমার আগে যিনি এসেছেন তিনি আমেরিকায় পিএইচডি করছেন। তারা যোগ্যতায়ও আমার থেকে অনেক অনেক বেশি।
- আপনি নিজেকে এত ছোট মনে করছেন কেন?
- না পেশাগত যোগ্যতায় তারা কিছুটা হলেও এগিয়ে। একজনের ছবি দেখেছি দেখতেও ভাল।
- কে দেখিয়েছে এগুলা আপনাকে?
- আমার সেই বন্ধু যার সাথে গেলাম। ভাল কথা সেই বন্ধুও কিন্তু একজন পাত্র। আমি এরকম অদ্ভুত ব্যাপার কখনো দেখিনাই। মেয়ে দেখানোতে মেয়ের অপমানের কথা সবাই শুনেছে, ছেলেদেরটাও কম বিপদজনক না।
- তারপর কি হলো?
- মেয়েকে দেখলাম।
ছবির থেকেও সামনা সামনি বেশি সুন্দর। কেমন জানি অন্তরে ধাক্কা লাগে। কেমন মন খারাপ করা সুন্দর। এই সুন্দরকে আমি কখনোই পাবনা। সারাজীবন বুকের মধ্যে ভালবাসা না পাওয়ার বেদনা মোচড় দিয়ে উঠল।
সেই জমিদার বাড়িতে এক শিউলী গাছ ছিল। বিকালে দিকে বৃষ্টি হলো। আমার বন্ধু এসে বলল, আমি বা সে কারও চান্স নেই। হাফ চান্স এখন শূণ্য চান্স। আগেরদিন দেখে যাওয়া ছেলেটার সাথেই বিয়ে হবে।
পরিবারের লোকজন মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছে। আমার বন্ধু সেই ছেলেটার ছবিও আমাকে দেখাতে চাইল আমি দেখি নাই। আমার আর সহ্য ক্ষমতা নাই। আমি শিউলী গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি। বৃষ্টি হচ্ছে গা ভিজে যাচ্ছে সেটাকে পাত্তা দেওয়ার কোন ইচ্ছা আমার নাই।
বৃষ্টি যেন আমার দুঃখ হয়ে ঝড়ে পড়ে।
হটাৎ দেখি সেই সুন্দর মেয়েটা আসছে আমার দিকে। তার হাতে দু'টা কফির মগ। সম্ভবত একটা মগ আমার জন্য। ঠিক তাই, সে এসে কফির মগ দিল,
- আপনি বৃষ্টিতে ভিজছেন কেন? আসুন ভেতরে এসে কফি খাই।
- আপনি দেখি ভিজতে ভিজতে কফি নিয়েই এলেন।
- চলুন ভিতরে যাই।
- উহু, আমি যাব না। আপনি কফি দিয়ে চলে যান।
- কি আজব ব্যাপার।
বৃষ্টিতে ভিজবেন নাকি?
- হ্যা ভিজব। আমার একটা অনুরোধ আছে আপনি কি রাখবেন?
- কি?
- আমি আমার শৈশব, কৈশোর কাটিয়েছি। আজ পর্যন্ত কখনো কোন মেয়ের সাথে একসাথে বসে কফি খাই নি। আমার কখনো কোন মেয়ের সাথে ফ্রেন্ডশীপ হয়নি। আপনার সাথেও আমার কখনো বন্ধুত্ব হবেনা।
আপনি যদি অনুগ্রহ করে এক কাপ কফি আমার সাথে খান আমি সারাজীবনের জন্য একটা ভাল স্মৃতি নিয়ে যাব। আমি জানি আমি এই স্মৃতি নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারব।
- আপনি এত মন খারাপ করছেন কেন?
- আপনি আমার সাথে কফি খান। আমি আর কখনো মন খারাপ করব না।
শিউলী গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমরা কফি খেলাম।
বৃষ্টি থেমে থেমে পড়ল। হাওয়ায় মেয়ের চুল মাঝে মাঝে দোলা দিয়ে যায়। আমি জানি এই স্মৃতি আমার জন্য যথেষ্ট। অল্প কিছু ভাল লাগা মুহুর্ত দিয়ে মানুষ সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। আমি কাটিয়ে দিব।
সন্ধ্যার পর আমরা বের হবো। ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবো। হটাৎ হিয়া বের হয়ে এল। সেই মেয়ের নামই হিয়া। হিয়া এসে বলল,
- আমি সারা জীবন আপনাকে ভাল স্মৃতি দিতে পারব কিনা জানিনা।
কিন্তু একটু আগে আমি সবাইকে জানিয়ে এসেছি আমি আপনার সাথে সারাজীবন থাকতে চাই। আমাকে বিয়ে করতে অনেক ছেলেই এসেছে। কেউ একবারও বলেনি আমার বন্ধু হতে চায়। কেউ বলেনি আমার স্মৃতি দিয়ে সে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চায়। খালি একটা ব্যাপার মনে রাখবেন।
আমি আপনার সাথে কফি খাওয়ার সময় আপনি যেমন মুগ্ধ হয়েছেন। এই মুগ্ধতা যেন কখনো না কমে। আর হা , আমার ফুল খুব পছন্দ। মনে রাখবেন মেয়েদের জন্য সবসময় ফুল নিয়ে যেতে হয়।
রকিবের গল্প শেষ হলো।
রকিব এরপর বলল,
- ভাই আমি কতটা খুশি বোঝাতে পারবনা। গতবছর এই দিনে ফুল নিয়ে গিয়েছি। আজও যাব। হোক বন্ধ সব ফুলের দোকান। আমি আবার ফুলের দোকানে যাব।
ডবল-ত্রিপল দাম দিয়ে ফুল আনব।
কি বলব ঠিক বুঝলাম না। আমরা আবার রিকশাতে চড়লাম। রকিবের মত এমন সরল আনন্দের লোক খুব দেখেছি বলে মনে পড়ে না। রকিবের বাসা আমার বড় স্যারের বাসার আগে।
- আপনি ফুল কিনবেন কোথেকে?
- ফুল না কিনে আমি বাসায় যাব না। সাভার চলে যাব নাকি ভাবতেছি।
- কিছু মনে না করলে আমার ফুলের তোড়াটা নেন। আমার বড় স্যার এটার মর্ম বুঝবেনা।
- আপনার ফুল আমি নিব?
- ফুল তো ফুলই।
ফুল আল্লাহর দান। এটা একজন আরেকজনেরটা নিতেই পারে।
বড় স্যারের বাসায় গেলাম। খাওয়া দাওয়া শেষে নিজের নিয়ে যাওয়া রসের মিষ্টি নিজেই খেলাম। এখন বাসায় যাওয়ার পালা।
আমিও বিবাহিত। রকিব সাহেবের মত ভালবাসা নিয়ে আমিও সুখে শান্তিতে আছি। রকিব রহমানরা সুখে থাকবে শ্যামল হাসানরা থাকবেনা তা হয় না। বাসায় গিয়ে দেখি তিথি না খেয়ে বসে আছে।
- আমার তো দাওয়াত ছিল, তুমি গেলাও না, বাসায় নিজেও খেলা না? এটা কেন?
- আরে তোমাকে ছাড়া খেতে ভাল লাগেনা।
- আচ্ছা তোমাকে জানি কে প্রপোজ করেছিল সবার সামনে? তুমি অবাক হয়ে গিয়েছিল?
- ও হা। রকিব নাম ছেলেটার। খুবই অবাক হয়েছিলাম। তবে হ্যা, ছেলেটার দোষ ছিল না, ফারজানা নামে আমাদের ক্লাসে এক মেয়ে ছিল। সে আমার নাম নিয়ে রকিবের সাথে কথা বলত।
এটা জেনেছি ভার্সিটি ছাড়ার পরে।
- ফারজানা নিজে প্রেম করেনায় কেন?
- ওরা ফাজিল টাইপ ছিল। এরকম প্রায়ই করত। ফাজিল তো আর খালি ছেলেরা হয় না। মেয়েরাও হয়।
ঘুমাতে যাওয়ার সময় তিথি বলল,
- তুমি অনেকদিন আমার জন্য ফুল আন না। ব্যাপারটা কি? কালকে আনবা। নাইলে কিন্তু জমিদার বাড়ির ফুলের কথা মনে করায় দিব।
- কোন এক জমিদার বাড়ি কবে এক মেয়ে দেখতে গেছিলাম ফুল নিয়ে, গিয়ে শুনি মেয়ে আগের দিনই কার সাথে ভাগছে, সেই কথা কি সারাজীবন মনে করায় দিবা নাকি? ফুল আমার বড় স্যারের জন্যও কিনেছিলাম। তোমার জন্যও কিনেছিলাম।
দুটোই দোকানে ফেলে আসছি। কালকে নিয়ে আসব এখন ঘুমাও।
ঘুমানোর সময় কথা বলার অভ্যাস আছে শ্যামলের। সে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠল, শালা হাফ চান্স।
ব্যাপার না, আমাদের সবার জীবন হাফ চান্স।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।