shamseerbd@yahoo.com
precious baby, sweety sleep
sleep in peace
sleep in comfort, slumber deep.
i will rock you, rock you, rock you
i will rock you, rock you, rock you.
৩০ শে ডিসেম্বর , শুক্রবার -মাত্র নামায পড়ে এসেছি, এমন সময় তোর মামনি জানাল আজকে তোর নড়াচড়া নাকি একটু কম। আমি যথারিতী আমার মত করে বলে ফেললাম ঘুমাচ্ছে তাই নড়াচড়া কম। আমার এই উত্তরে সে যে সন্তুষ্ট হতে পারেনি তা তার উদ্বিগ্ন চেহারা দেখলেই বোঝা যায় । ডাক্তার বলে দিয়েছেন প্রতি বার ঘন্টায় মিনিমাম দশ বারবার নড়াচড়া কাউন্ট করতে হবে না হলে ব্যাপারটা অবশ্যই চিন্তার। সো এভারেজ মুভমেন্ট যেহেতু কম তোমার মামনি তার চিন্তা শুরু করে দিল।
এরকম কত উদ্বিগ্ন অবস্হার মধ্য দিয়ে যে তোমাকে যেতে হবে সেটা ভেবে আমি এখনই মজা পাচ্ছি, তোমাদের মাতা পুত্রের কানামাছি খেলাটা দেখার মতই হবে, অলরেডী তোমার মামনি ডিসিশান নিয়েছে তোমাকে দূরে কোথাও পড়তে পাঠানো হবেনা, তুমি তার চোখের সামনে থেকেই যা করার করবে । তোকে নিয়ে যে তার কত শত পরিকল্পনা আমি নিশ্চিত কৈশোর আর তারুন্যে এইসব তোর খুবই বিরক্ত লাগবে, কেবল তখনই বুঝতে পারবি যখন তুই তোর সন্তানের কথা চিন্তা করবি, আমার বাবা মায়ের উদ্বিগ্নতাটা এখন ঠিকি উপলব্ধী করতে পারি একটু একটু।
খাওয়া দাওয়া শেষে আরামে ঘুমাচ্ছিলাম, এমন সময় তোর মা ডেকে বলল লাস্ট তিন ঘন্টা ধরে তোর কোন নড়াচড়া সে টের পাচ্ছেনা, আমি আবারও আগের কথায় বললাম ঘুম ঘুম চোখে। তোর ডাক্তার মামীকে ফোন দিলে সে তোর মাকে বলল আর এক ঘন্টা দেখতে তারপর যেন হাসপাতালের জরূরী বিভাগে চলে যায়। আধাঘন্টা না যেতেই দেখলাম সে উঠে রেডী হচ্ছে হাসপাতাল যাবার জন্য ।
আমাদের বাসা থেকে এ্যাপোলো হসপিটাল দশ মিনিটের পথ, জরুরী বিভাগে গিয়ে ঘটনা বলার পর তারা তোর মামনিকে বেডে শুইয়ে দিল, আর ঠিক তখনি সে তোর নড়াচড়া টের পেল। আমি হাসতে হাসতে বললাম শুধু শুধু তাড়াহুড়া করে আসার কি দরকার ছিল, একটু ওয়েট করলেই হত, সে ঘুমাচ্ছিল, এখন ঘুম ভাঙ্গছে তাই নড়ছে। তোর মার সোজা উত্তর বাপের মতই, ঘুম গেলে হুশ থাকেনা- হা হা হা হা ।
ডাক্তাররা তাদের নানান যন্ত্রপাতি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখছেন, রেজিষ্ট্রার ডাক্তার হার্টবিট মনিটরিং মেশিন দিয়ে চেক করে বলেছেন, হার্টবিট নাকি অনিয়মিত, এটা শুনেত তোর মামনিরই হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাবার দশা, ঐ সময় তাকে একা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। আমি সামনে আসতেই তার শুকনা মুখ দেখতে পেলাম আর ঘটনা শুনলাম !!!! জানিনা কেন জানি আমার কাছে ব্যাপারটা সিরিয়াস মনে হলনা, পরীক্ষাকারী ডাক্তারের উপর আমি খুব একটা ভরসা পেলামনা।
যাই হউক তারা ডিটেইল আলট্রাসনোগ্রাম করার ঘোষনা দিল। তাদের কথা অনুযায়ী সায় দেয়া ছাড়া আমাদের হাতে অন্য কোন অপশন নেই।
আমার সবচেয়ে অপছন্দের জায়গা এই হাসপাতাল। কেন জানি এখানে আমি খুব অসহায় বোধ করি, আমরা মানুষরা যে কত অসহায় তা বোঝার জন্য হাসপাতলের চেয়ে ভালো আর কোন জায়গা নেই। জলজ্যান্ত এক একটা মানুষ স্হবির, নির্জীব অচল হয়ে নানা বিছানায়, এই এইদিকে নবাগত শিশুর জন্য মিস্টি বিতরন তো পাশের আইসিইউ থেকে কারো চির বিদায়ের পথে যাত্রা।
একদম বাধ্য না হলে আমি হাসপাতালের আশে পাশেও ঘেষিনা। ইন্টারে পড়াকালীন তোর ছোট চাচা ক্রিকেট খেলতে গিয়ে মাথা ফাঁটিয়ে ফেলল, ডাক্তার যখন তার মাথায় সেলাই দিচ্ছে সেটা দেখে আমার মাথা ঘুড়ে উঠলে ডাক্তার তোর দাদুকে বলল আমাকে বাইরে নিয়ে বসিয়ে দিতে। তখনই ডিসিশান নিয়েছিলাম ডাক্তারি পড়া আমাকে দিয়ে হবেনা । আর তাই তোর দাদীর ইচ্ছাতে মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং করে পরীক্ষা দিলেও সেটা ছিল নিতান্তই ফান করে দেয়া, পাশাপাশি আমি জামিল আর মিঠু তিন বন্ধুর সিট পড়েছিল হলে, আমরা পরীক্ষা দেয়ার চেয়ে নিজেরা না টিকাটা যে কত মঙ্গলজনক হবে আমাদের জন্য সেটা নিয়েই বেশী চিন্তিত ছিলাম। এই হাসপাতালেই মানুষ তার সবচেয়ে অসহায় সময়টুকু কাটায়, নিয়ত সেটা দেখা যে কত কস্টের হবে, সহ্য করা যে কত কঠিন হবে সেটা ভেবেই আমি অস্হির, অবশ্য আরেকটা ব্যাপারও ছিল-ডাক্তার হবার জন্য যে পরিমান লেখাপড়া করতে হয় সেটা একটা কঠিন সাধনাই বটেই , আর তাদেরকে সারাজীবনই পড়তে হয়-এমনটা করার ইচ্ছা আমার ছিলনা, অনেকগুলো সমীকরন মিলে ফল দাঁড়িয়েছিল আমি এই লাইনে যাচ্ছিনা ।
হাসপাতালের সবচেয়ে ভয়ংকর জায়গা হচ্ছে জরুরী বিভাগ। তোর মামনি সেখানে একটা বেডে শুয়ে আছে, আমি একটু সামনে দাঁড়ানো। হঠাৎ করে দেখি এক মহিলা কোলে তার সন্তানকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আসছেন, সাথে বাবাও। মাটা হাউমাউ করেই কাঁদছেন, বাবারা মনে হয় সবসময় অমনটা পারেননা, তাদেরকে আরো অনেকদিক সামলাতে হয় বলে , বাস্তবতাটা বেশী মোকাবেলা করতে হবে বলে তারা মনে হয় নিজেদেরকে কস্ট করে হলেও নিয়ন্ত্রনে রাখেন, নাহলে দুজনই যদি কান্নাকাটি করতে থাকেন তাহলে পরিস্হিতি আয়ত্ত্বের বাইরে চলে যাবে। শিশুটির বাবা ডাক্তারদেরকে সমস্যা খুলে বললেন, বাচ্চাটির শ্বাস নিতে খুব কস্ট হচ্ছিল আর সে ছিল অসম্ভব রোগা, আর তার বাবা মাকে দেখে আমার মনে হচ্ছিল প্রয়োজন পড়লে এখনই যেকোন জায়গায়, যেখানে নেয়া দরকার তারা বাচ্চাটিকে নিয়ে যাবার ক্ষমতা রাখেন ।
বাচ্চাটির শীর্ণকায় শরীর দেখে আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসল, সে আর খুব বেশী দিন পৃথিবীতে থাকতে পারবে কিনা আমার সন্দেহ হচ্ছিল, মাটার অঝোড়ে কান্না আমাকেও দুর্বল করে দিচ্ছিল, আমি সেখান থেকে সরে গেলাম। মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। শিশুটির বাবা মার জন্য, শিশুটিত বটেই- আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেল। মনে হল পরমকরুণাময় আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে সুস্হ সন্তান, অন্য আর কিছু হতে পারেনা। তার কাছে আমার হাজারো চাওয়া, সব কিছু তাকেই পুরন করতে হবে আমি জানি, সবকিছু তার কাছেই আমি চাই, সব কিছু- কিন্তু সেরা উপহার আসলেই সুস্হ সন্তান।
পুরো ঘরজুড়ে তরতর করে একটা শিশু ছুটে বেড়াচ্ছে এর চেয়ে সুন্দর আর কিছু হতে পারেনা। মনে মনে কামনা করলাম আল্লাহ যেন ঐ শিশুটিকে সুস্হ করে তার বাবা মার মুখে হাসি ফুটিয়ে দেন।
এর কিছুক্ষন পর আরেকজন মা তার শিশুকে নিয়ে আসল কপাল দিয়ে রক্ত ঝড়ছে, জানা গেল খেলতে গিয়ে সে পড়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে, তাকে বেশ কয়েকটি সেলাই দিতে হল চোখ এর ঠিক উপরে। তোমার ভাগ্য ভাল তোমার মামনি এই ঘটনা দেখেননি, যদি দেখত তবে সে তখনই ঠিক করে ফেলত যে তোমার খেলাধুলা করার কোন দরকার নেই, তুমি বাসায় বসে থাকবা আর তোমার মামনির সাথে বসে বসে কার্টুন দেখবা । ব্যাপারটা ভেবে আমি মাঝে মাঝে খুব অবাক হই এবং ভাবতে চেস্টা করি দৃশ্যটা কেমন হবে- তোর মামনি নিজেই কার্টুনের ভক্ত, এখনও সে টিভিতে কার্টুন চ্যানেল দেখে, আর বাচ্চারা এমনিতেই কার্টুন ভক্ত হয়, সো তোমরা দুইজন একসাথে কার্টুন দেখছ খুব মনোযোগ দিয়ে কারো প্রতি কারো কোন খেয়াল নেই- হা হা হা , মজাই হবে দেখতে।
তবে খেলাধুলা করাটাই বেটার, এক দুবার কপাল ফাটা কোন ব্যাপারনা, বেড়ে উঠার জন্য ঐ লাফালাফিটা অনেক জরুরী।
জরূরী বিভাগে আমি আর থাকতে চাচ্ছিলামনা, এখানে বেশীক্ষন থাকলে যেকোন সুস্হ মানুষও অসুস্হ বোধ করতে পারে, আর তোমার মামনিকে বেশীক্ষন এখানে রাখাটাও ঠিক হবেনা, সিরিয়াস কোন পেশেন্ট দেখে সে ভয় পেলে সেটা তার জন্যও ক্ষতির কারন হতে পারে। অবশেষে সিস্টার এসে তোমার মামনিকে নিয়ে চলল আলট্রাসনো করানোর জন্য ।
আমি আলট্রাসনো রুমের বাইরে বসে আছি, তোর মামনি ভেতরে, ডাক্তার তার পরীক্ষা করছেন। হাসপাতালের ভেতরে নানারকম মানুষ, হাজারো সমস্যায় ভরা তাদের জীবন, কারো দিকে তাকিয়ে বেশীক্ষন ভাবার অবকাশ নেই।
আল্লাহর কাছে মনে মনে একটায় প্রার্থনা করে যাচ্ছি তিনি যেন আমাদের তোকে সম্পূর্ণ সুস্হ রাখেন, কোন ধরনের জটিলতায় যেন পড়তে না হয়। নানা রকম দূশ্চিন্তা মাথায় আনাগোনা করার চেস্টা করলেও সেগোলুকে অন্য দিকে সরিয়ে দিলাম। জানিনা কেন জানি আমার সাহসের কোন কমতি ছিলনা, বারবার একটা কথায় মনে হচ্ছিল আল্লাহর রহমতে তোর কোন সমস্যা হবেনা, অযথাই বেশী টেনশন নেবার দরকার নেই, কিছু কিছু সময় আমার ইন্দ্রিয় শক্তি বেশ ভাল কাজ দেয় বলেই আমার মনে হয়।
কিছুক্ষন পর নার্স এসে বলল আমি চাইলে ভেতরে যেতে পারি। দেরী না করে ভেতরে গিয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলাম তোর কন্ডিশন কি।
ডাক্তার সোজা বললেন আমিত কোন সমস্যা দেখছিনা, তোর মার চেহারায় স্বস্তি দেখতে পেলাম একটু।
ডাক্তার তোর হার্টবিট পরীক্ষা করছে, ধুম ধুম ধুম ধুম- একের পর এক বিট আসছে, শিশুদের হার্ট বয়ষ্কদের তুলনায় অনেক দ্রুত চলে, তাই বুঝতে পারলাম আরেকবার, কেমন যে লাগতে ছিল এই হৃদয়ের অনুরনন, কানের মাঝে এখনও লেগে আছে, আচ্ছা তুই ও কি শুনতে পাচ্ছিলি তোর হার্টবিট ।
ডাক্তার আলট্রাসনোর রেডিও রিসিভারটা তো মামনির পেটের উপর ঘুরাচ্ছিলেন আর তোর শরীরের একেকটা অংশ একেকবার দেখা যাচ্ছিল। ডাক্তার হঠাৎ বলে উঠল এই যে আপনাদের বাবুর মুখ দেখেন। কিছু সময়ের জন্য আমার সময় যেন স্হির হয়ে গিয়েছিল, এমন স্বর্গীয় দৃশ্য আমি এর আগে আর দেখি নাই।
প্রথমবারের মত তোর পরিপূর্ণ মুখবয়াব দেখতে পেলাম, সবাই বলে সব শিশুরাই নাকি দেখতে একই রকম, নারে আমার তেমনটা মনে হয়নি, এ তুই যাকে এর আগে আমি কখনো দেখিনি, আল্লাহর অনুপম উপহার আমাদের জন্য । ছোট্ট একটা মুখ তার মাঝে ঠোঁট দুটো বেশ উজ্জ্বল, ঠোঁট দুটো নড়ছিল, ডাক্তার বলল বাবু কিন্তু ঘুমাচ্ছে, আর ঐ যে খেয়াল করেন ঠোঁট নড়ছে, সে এখন পানি খাচ্ছে !!!! অবাক বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু ঐ মুহুর্তে ভাবার সুযোগ ছিলনারে, আর অপেক্ষা কখন তোকে ছুয়ে দেখব !!!!
এরপর ডাক্তার আরো ভাল করে পরীক্ষা করছিলেন, হঠাৎ করে বলে উঠলেন এই যে দেখেন তার একটা হাত মাথার উপর রেখে সে ঘুমাচ্ছে, তোমার মা পাশ থেকে বলে উঠল বাপের মতন !!!
এরপর ডাক্তার দেখালেন তুমি পায়ের উপর পা তুলে দিয়া ঘুমাচ্ছ, কিছু সময়ের জন্য আমি যেন আমাকেই দেখতে পেলাম। এত আমারই ঘুমানোর স্টাইল- পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে মাথার কাছে একটা হাত রেখে ঘুমানো !!!!!! তাকিয়ে দেখি তোমার মা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে ।
সবরকম ভাবে টেস্ট শেষে ডাক্তার জানালেন আল্লাহর রহমতে কোন সমস্যা নেই, সব কিছু ঠিকই আছে, টেস্টে ১০/১০ রেজাল্ট পাওয়া গেছে , তিনি সাথে যোগ করলেন- অনেক সময় বাচ্চাদের মুভমেন্ট ঠিক থাকলেও মায়েরা তা টের পাননা, এটা নিয়ে অত টেনশনের কিছু নেই। এই স্বস্তির কোন তুলনা হয়না।
বেড থেকে নামতে নামতে তোমার মামনি স্বগোতোক্তি করল একদম বাপের মতন , ঘুম গেলে আর কোন হুঁশ থাকেনা । আসলেই তাই , আমি একবার ঘুমিয়ে যেতে পারলে পৃথিবীর কি হল না হল তার কোন কিছুই আর আমার কানে ঢুকেনা ।
সব রিপোর্ট ভাল আসলেও ডাক্তাররা তোর মামনিকে রিলিজ দিলনা, তারা একদিন অবজার্ভেশনে রাখতে চাই, আরেকটা কারনও আছে-যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্বাবধানে তোর মামনি ছিল তিনি সব রিপোর্ট একবার দেখবেন এইজন্যও ডাক্তাররা রেখে দিতে চাচ্ছিলেন। আমাদের না বলার কোন অবকাশ নেই, বাইরের পৃথিবীতে সব বিষয়ে যতই দরকষাকষি করিনা কেন বা করার সুযোগ থাকুকনা কেন, হাসপাতালে ডাক্তারের সাথে দরকষাকষির কোন অবকাশ নেই। যদি বলি বাসায় চলে যাব তখন ডাক্তার একটা কাগজ ধরিয়ে দিবেন যেটাতে লেখা থাকবে আমরা স্বইচ্ছায় বাসায় চলে যাচ্ছি কোন ধরনের সমস্যা/ রিস্ক হলে সেটার জন্য আমরাই দায়ী থাকব।
জীবনে সবসময় সব অবস্হাতেই সাহসী হবার বা সাহস দেখানোর কোন মানে নেই, মাঝে মাঝে পরিস্হিতিকে মেনে নেয়াই বুদ্ধীমানের কাজ, সেটা একই সাথে অনেক দুঃশ্চিন্তা থেকেও রক্ষা করবে। শারীরবৃত্তীয় ব্যাপার ডাক্তারই সব থেকে ভাল বুঝবেন, যেটা যার ক্ষেত্র সেখানে অন্যকারো না জেনে বেশী নাক গলানো উচিত না, আমরা ডাক্তারের কথা মেনে নিলাম, তোর মামনিকে ভর্তি করিয়ে নেয়া হল।
এদিকে বাসায় তোর দাদা দাদী অন্যদিকে তোর নানী মামী কিছুক্ষন পরপরই ফোন করে জানতে চাচ্ছে কি অবস্হা, জানালাম তাকে ভর্তি করিয়ে নেয়া হয়েছে। রাতে তোর মামনির সাথে কে থাকবে এইটা একটা বিষয়। অবশ্য এই হাসপাতাল রোগীদের ব্যাপারে বেশ যত্নশীল, কেউ না থাকলেও তেমন কোন সমস্যা নেই।
তোর নানী জানালেন তিনি থাকবেন, তোর দাদীও জানালেন তিনি থাকবেন , কিন্তু তোর মামনির ইচ্ছা আমি থাকি। আমি হাসতে হাসতে বললাম তোমার বাবুও ঘুমাচ্ছে, তুমিও ঘুমাও , আমিও বাসায় গিয়ে ঘুমাই। না তার একই কথা আমাকেই থাকতে হবে। কিছুক্ষন পর তোর নানী, মামা মামী আসলেন। তোর মামনি জানাল আমি থাকব, তাই তোর নানীর থাকার দরকার নেই ।
হাসপাতালে একটা মজার জিনিস খেয়াল করলাম, যখনই যে ডাক্তার দেখতে আসছেন তিনি জানতে চাচ্ছেন এটা আপনাদের কততম বাচ্চা। আমি একটু অবাক হচ্ছি, ঘটনা কি, সবাই এটা জানতে চাচ্ছে কেন, কততম বাচ্চার সাথে চিকিৎসার কি সম্পর্ক। শেষে আর চেপে রাখতে না পেরে এক ডাক্তার কে জিজ্ঞাসাই করে ফেললাম, আচ্ছা সব জায়গায় আপনারা জানতে চাচ্ছেন ' এটা আপনাদের কততম বাচ্চা, প্রথম বাচ্চা কিনা, এর কারন কি, প্রথম দ্বিতীয় যাই হউকনা কেন বাবা মার কাছেত সবাই সমান গুরুত্বপূর্ণ '। ডাক্তার আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, প্রথম বাচ্চার সময় বাবা মারা একটু বেশী টেনশনে থাকেন, সামন্য বিষয়েই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, ডাক্তারের কাছে ছুটে আসেন, দ্বিতীয় বাচ্চার সময় তারা অত বেশী উদ্বিগ্ন থাকেননা, তাই আমরা জানতে চাই, তাহলে আমাদের ও রেসপন্স করতে সুবিধা হয়। উত্তর শুনে আমি হেসে দিলাম, ডাক্তারও হাসলেন।
আসলেই কথা সত্য , সামান্য কিছুতেই এখন আমরা টেনশন শুরু করে দিচ্ছি। আর তোর ডাক্তার মামী থাকার কারনে যেকোন বিষয়েই ধুমধাম তাকে ফোন করা হচ্ছে, এটা কেন ওটা কেন জানতে চেয়ে।
হাসপাতালের রুম পরিষ্কার করছিল এক আয়া, সে কাছে এসে তোর মামনির কাছে জানতে চাইল ম্যাডাম আপনার বাবুর এখন বয়স কত। তোর মা বলার পর সেও জানাল তার হতে যাওয়া বাবুরও একই বয়স। এইবার ডাক্তারদের মতন আমিও জানতে চাইলাম এইটা তার প্রথম বাচ্চা কিনা।
হাসতে হাসতে সে জানাল না এটা তার দ্বিতীয় বাচ্চা। প্রথম বাচ্চার বয়স তিন বছর, সে ফরিদপুরে দাদা দাদীর কাছে থাকে। আমিত আকাশ থেকে পড়লাম, বলে কি, এতটুকুন বাচ্চা বাবা মাকে ছেড়ে থাকে কি ভাবে। মহিলা হাসতে হাসতে বলল , স্যার আমরা স্বামী স্ত্রী দুইজনই চাকুরী করি, বাচ্চা দেখার কেউ নেই, তাই বাড়িতে রেখে এসেছি, কস্ট হলেও কিছু করার নাই, মায়ের মমতা মাখানো মুখ খানা হালকা বিষন্নতায় ছুয়ে গেল, আমি দেখলাম। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলল, বাচ্চাটা খুব ভাল আছে দাদা দাদীর কাছে, ওনারা অনেক আদর করেন, বুড়ো বয়সে তাদেরও ভাল সময় কেটে যায় নাতিকে নিয়ে, বাড়িতে আর অন্য কেউ ও নেই ।
মহিলার চোখে স্বস্তির ছায়া দেখে ভাল লাগল, জীবন আর জীবিকার প্রয়োজনে জীবনের সব চেয়ে বড় ধনটাকেও নিজের কাছে রাখতে পারছেননা এই বাবা মা, এই কস্টের কোন সীমা থাকতে পারেনা, তবুও ভবিষ্যত সুখ স্বপ্নের জন্য আর বেঁচে থাকার নিমিত্তে তাদের এই কস্টকে মেনে নেয়া । এই পৃথিবী বড়ই কঠিন, সবই এখানে জীবনের জন্য - এর বাইরে অন্যথা হবার কোন সুযোগ নেই । তবুও মানুষকে স্বস্তি খুজে নিতে হয়, আর এই স্বস্তিটুকুই সুখ হয়ে ধরা দেয় আমাদের চোখে।
নিত্য আমাদের জীবন সংগ্রাম, এখানে হেরে যাবার কোন সুযোগ নেই, লড়াই করে এগিয়ে যেতে হবে, জিততেই হবে এমন কোন কথা নেই, তবে হেরে যাওয়া চলবেনা, লড়াই থামানো যাবেনা।
দশম পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।