আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজকের (২৫।৫।২০১২) প্রথম আলোয় “ রাজনীতি নিয়ে আমার ভাবনা -১” শিরনামে জাফর ইকবাল (স্যার) এর লেখার প্রকাশ্য প্রতিবাদ ও আমার ভাবনা।

বিংশ শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ূ বড় জোর এক বছর। প্রথমেই ক্ষমা চাইতে হবে তাদের কাছে যাদের নিকট আমাদের সম্মানিত স্যার ভীষণ আবেগের আর বিবেকের জায়গা নিয়ে আছেন। আর প্রথমেই বলতে চাই, ব্যক্তিগত আক্রমন করে তার সমালচনা আমি করছিনা, তার আর আমার ভাবনার ভিন্নতার জন্যই আমার এ লেখা। একথা সন্দেহাতীত ভাবে স্বীকার্য যে, তরুন প্রজন্মের কাছে জাফর ইকবাল স্যার দারুন ভাবে জনপ্রিয়, তার এ জনপ্রিয়তায় কেউ কেউ ঈর্ষান্বিত হন বৈ কি। তার জনপ্রিয় কিছু লেখার কেন্দ্রীয় চরিত্র আমার ছেলেবেলার আইকন।

যাহোক, তিনি আওয়ামীলীগ সরকারকে পাস মার্ক দিতে চান যদি আওয়ামীলীগ সরকার দেশের অগনতি সমস্যা সামলে পূর্ণমেয়াদ পার করে দিতে পারে। এটা তার ঐকান্তিক কামনাও বটে, আর এ প্লাস দিতে চান যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা করতে পারে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে উনি সব বোঝেন আর এটা বোঝেন না যে যুদ্ধাপরাধী বিচার আসলেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য। যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা আর ব্যাপ্তিতে তিনি গোলমাল পাকিয়ে বসে আছেন। তার বাবা শহীদ হয়েছিলেন পাকিদের হাতে কিন্তু ঘ্রিনা ঝাড়েন জামাতের উপর! তিনি পারতেন ১৯৫ জন সামরিক কর্মকর্তার বিচারের দাবি তুলতে যারা প্রত্তক্ষ ভাবে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধে জড়িত ছিল।

৭১ এ জামায়াতের রাজনৈতিক বিবেচনা প্রসুত ভুলকে সাধিনতা বিরোধী ভুমিকা বলে ঢালাও প্রচারকরার পিছনে নিশ্চয় অন্য উদ্দেশ্য আছে, ৭৫ পরববরতি সময়ে জামায়াত পুনর্বাসিত হয়েছে তাদের ঐকান্তিক চেষ্টায়, তাদেরকে অনেক জেল ও জুলুম অত্যাচার পার করেই এই অবস্থায় আসতে হয়েছে, শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য। জামাতের কোন গুপ্ত বাহিনি ছিলনা, অথচ জাসদের গুপ্তবাহিনি (গনবাহিনি) থাকা সত্তেও তারা আওয়ামিলিগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ধংসের শেষ প্রান্তে অবস্থান করছে। ভাসানি, মেজর জলিল, সিরাজুল আলম খান, রব, ফিরোজ, তাহের, জিয়াউদ্দিন, ইনু, শহীদ সিরাজ সিকদার- এরকম অসংখ্য নাম থাকা সত্তেও জাসদের রাজনীতি আজ ম্রিয়মাণ। আমার বিশ্বাস সুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা পেলেই যে কোন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা পায়না। এক্ষেত্রে শিল্পমন্ত্রীর বড়ুয়ার আবার জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার আশংকা করছি আর আশা করছি আগামি নির্বাচনে ইনু- মেনন ৩০০ আসনে নির্বাচন দিয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করবেন, কারন তাদের কথা বার্তায় মনে হচ্ছে আওয়ামীলীগ সরকার এ পাচ বছরে তাদের শুধু পুনর্বাসনই করেনি বাংলাদেশকে তাদের কাছে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দেওয়ারও পরিকল্পনা করছে।

আর আমার বিশ্বাস যুদ্ধাপরাধ বিচার শেষে এদেশে জামায়াতের নাম গন্ধও কোথাও থাকবেনা। জাফর ইকবাল স্যার, আপনার নাম দুজন বিখ্যাত ব্যক্তির নামের সাথে মিল আছে জারা এই উপ মহাদেশের রাজনীতি ও দর্শনের সাথে মিশে আছে। আপনিও মিশে আছেন এ দেশের কোমলমতি অনেক শিশুর অন্তরের সাথে তাই নিজের বিবেকের সাথে দন্দে আপনি হেরে যাবেন যদি সে বিবেক আপনি ধারন করেন। আপনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শিবিরের উত্থানের প্রসঙ্গে, অথচ আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি আইকন হওয়া সত্তেও আপনি সে উত্থান ঠেকাতে পারেন নি, এতা কি আপনার ব্যক্তিগত বার্থতা নয়? আপনি কি করলেন তাহলে এতদিন? খোদ আপনার বিশ্ববিদ্যালয়েই আপনি হয়ে পড়েছেন সংখ্যালঘু বিবেক? এ প্রশ্ন কখনও নিজেকে করেছেন? মহামান্য স্যার, আপনার বিস্ময়ের আর সীমা থাকেনা যখন আপনি দেখেন, ৭১ এর অমন একটা ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কোন তরুন যখন শিবিরের রাজনীতিতে জরিয়ে পড়ে!! আশ্চর্য হই আপনার বিস্ময়বোধ দেখে, মুক্তিযুদ্ধ চেতনার পক্ষের রাজনীতি শক্তি গুলোর ছাত্র সংগঠনের কার্যকলাপ দেখে আপনি বিস্মিত হন না, সত্তিই আশ্চর্য আপনার বিস্ময় বোধ! শিবির রগ কেটেছে, আপনি দেখেছেন, জাহাঙ্গীরনগরে ভি সি গ্রুপ ছাত্রলীগ রগ কাটছে, মানুষ মারছে এটা আপনি শোনেনওনি- স্বাভাবিক! সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকাল, ইঞ্জিনিয়ারিং এ যে বিপুল সংখ্যক ছাত্র প্রতিবৎসর মেধাতালিকায় স্থান করে নিচ্ছে তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী শিবির পরিচালিত প্রতিষ্ঠান থেকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি শিক্ষা গ্রহন করে, আপনার রগ কাটা খবরের সাথে নিশ্চয় এ খবরটাও আপনার কাছে আছে, আপনি এটা জানেন, আমি বিশ্বাস করি, কিন্তু এটা বিশ্বাস করিনা সে খবর প্রাপ্তিস্বীকার করার সৎসাহস আপনার আছে! স্যার, মুক্তিযুদ্ধ চেতনা কি কোন প্রোডাক্ট, এটার কি কোন সুদৃশ্য মোড়ক আছে, এটার কোন বিজ্ঞাপন হয় এ প্রস্নের উত্তরও আপনার জানা। আপনার স্নেহপরায়ন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ছাত্র সংগঠনের আসল ও কদর্য চেহারা সম্বন্ধে আপনার জানতে আর কিছু বাকি আছে? আপনি কি জানেন, আপনার মেয়েতুল্য এক তরুনি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে নাচতে যেয়ে ধর্ষিত হয়েছিল (সাতক্ষীরা) আপনার স্নেহতুল্ল্য চেতনাধারি ছাত্রসঙ্গথনের সভাপতি দ্বারা? এর পরো কি আপনি শিবিরের উত্থান নিয়ে আশ্চর্যান্বিত হবেন? মনে হয় না, আপনি দ্রাবিড়ের আর বুদ্ধের অবক্ষয় নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন কিন্তু বখতিয়ারের ঘোড়ার সমালোচনা করতে পারবেন না কারন আপনার ভীষণ এক ঘোড়া রোগ আছে।

আপনি, বি এন পির ভবিষ্যৎ বাতলেছেন, অতচ নিজেরটা বাদ দিয়ে। আপনি সুদুর প্রবাসে শুনেছিলেন, শিবির বাংলাদেশে রগ কেটে বিদেশে রপ্তানি করছে আর দেশে এসেও দেখলেন না যে গোলামের (আজম) বাতলে দেয়া তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা, চেতনার আধার রাজপথে খুনসুটি করছেন? স্যার, তখন কি জামায়াত টাইম মেশিনে করে ৭১ পূর্ব সময়ে চলে গিয়েছিল না ভিনদেশি প্রযুক্তি দিয়ে আওয়ামীলীগের স্মৃতি বিলোপ করে দিয়েছিল? আওয়ামীলীগ কি নিদারুন ভুলে গিয়েছিলো জামায়াত যুদ্ধাপরাধী!! আমি জানি তারপরও স্যার আপনার বিস্ময় কাটবেনা। স্যার জামায়াত যদি মানবতা বিরোধী অপরাধ করে তাহলে ৭২- ৭৫ আওয়ামীলীগ কেও একদিন হেগে দাড়াতে হতে পারে, আপনি নিশ্চয় রক্ষীবাহিনীর কথা শুনেছেন। আপনার পরতে পরতে আশ্চর্য বোধ আমাকে ভয়ানক শঙ্কিত করে তুলেছে। আপনার এই এক চোখের দৃষ্টি প্রসুত চর্বণ আগামি প্রজন্মকে কি ভয়ানক বিভক্তির দিকে ঠেলে দেবে? এবার আমি আশ্চর্য হচ্ছি আপনার দর্শন ভেবে।

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সিন্ডিকেট নির্বাচনের খবর পড়ছিলাম- কি ভয়ানক!! খবরে লেখা- “সাদা দলের নিরঙ্কুশ বিজয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সিন্ডিকেট নির্বাচনে স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তির নীল দলকে হারিয়ে বি এন পি ও জামায়াত পন্থি সাদা দলের নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ”। - আপাত সাদামাটা এ খবরে বিচলিত হওয়ার মতো কিছু আছে। তাহলে যারা নির্বাচনে জিতল তারাকি তাহলে স্বাধীনতা বিরোধী? তাই যদি হয় তাহলে এ দেশে অরা কেমন করে আছে আর তারা কিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন করল? কি ভয়ানক, এ প্রশ্নের উত্তর কার কাছে আছে? আমরা কি ভয়ানক ভিভক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর আপনাদের মতো বিবেকসর্বস্ব অধ্যাপক রা কি নিখুত নিশানাই আঘাত হানছেন, বাবা মুক্তিজুদ্ধা আর ছেলে শিবির করে- কি ভয়ানক হাস্যকর থেওরি সামনে আনলেন স্যার। আপনি আপনার মেয়েকে সাবধানে রাখবেন, বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ছাত্রলীগ সভাপতি আপনার বিবেকের চেয়ে নিরাপদ।

কেও কেও এদেশে বখতিয়ার খিলজিকে সাম্রাজ্যবাদের কু সন্তান ভাবেন আর কেও কেও তার সন্তানকে বখতিয়ার খলযির মতো সাহসি পুরুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। আমি জানিনা আপনি কোন গোত্রে পড়বেন! আমি জানিনা ইসরাইলি বোমারু বিমান যে বাবাকে সন্তানের কোল থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় কেড়ে নিল সে বাবাকে শহীদ ভাবেন না বিচ্ছিন্নতাবাদি হামাস ভাবেন, আমি এও জানিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ১০০ টা মেয়ের সম্ভ্রম কেড়ে নেওয়া তাদের বাবাদের আপনি কি বলে সান্ত্বনা দিবেন, চেতনা(নাশক) ধারী ছাত্রলীগ নেতাকে স্নেহময় শাসন করবেন নাকি তীব্র ঘৃণাজুক্ত স্লেশা নিক্ষেপ করবেন? জুগে জুগে এমন জ্ঞানধারী বাদুর ইতিহাসের অসত্থ গাছে উলটো হয়ে ঝুলে আছে, দায়িত্ব আপনার। ইতিহাসে আপনি উলটো হয়ে থাকবেন নাকি বিবেকের সঠিক প্রহরী হবেন- স্বর্ণ ঈগলের মতো। ক্ষমা করবেন। জি ডি পিতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ৬ শতাংশ হলে আমি বিশ্বাস করি পদ্মা ব্রিজ উরাল সেতু আর পাচ বছর পড়ে হলেও সমস্যা হতনা।

আপনার সাথে একমত। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।