আমেরিকা এবং ইউরোপের খ্রিস্টান, ইসরাইলের ইহুদী, ভারতের হিন্দু, থাইল্যান্ড-মায়ানমারের বৌদ্ধ, রাশিয়ার নাস্তিক সকলেই সমানভাবে মুসলিম নির্যাতনে আজ সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে। মুসলমানদের রক্ত ঝড়াতে কেউ পিছিয়ে নেই।
মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ভারত, ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, বসনিয়া, চেচনিয়া, মিশর, চীন, সুদান, নাইজেরিয়া, আলজেরিয়া, আজারবাইজান, পাকিস্তান, লেবানন এবং আরো বহুদেশে প্রতিদিন মুসলমানদের রক্ত ঝরছে।
অথচ এসব দেশে মুসলমানদের এই নির্যাতন, নিপীড়নের নেপথ্যে রয়েছে নানা কারণ।
যেমন-
১. মুসলমানদের সম্পদ দখল এবং ইহুদীদের স্বার্থ।
২. দেশ দখল এবং ইহুদীদের স্বার্থ।
৩. রাজনৈতিক ফায়দা এবং ইহুদীদের স্বার্থ।
৪. অস্ত্র বিক্রি এবং ইহুদী-নাছারাদের স্বার্থ।
৫. পরাশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো এবং এখানেও ইহুদীদের স্বার্থ।
৬. সবশেষে মুসলিম জাতি নিধন এবং ইহুদীদের স্বার্থ।
মুসলমানদের নির্যাতনের নেপথ্যে সকল কারণগুলো এবং কাফির, মুশরিক আর ইহুদীদের সৃষ্টি। আর তাদের কারণে প্রতিদিন অসংখ্য, অগণিত মুসলমান শহীদ হচ্ছে। অত্যন্ত নির্মমভাবে অত্যাচারের স্টিমরোলার চালানো হচ্ছে শিশু-মহিলাসহ সকল বয়সের মুসলমানদের উপর। এবার প্রথমেই আমরা আলোচা করবো।
প্রথমে ইরাক:
১. মুসলমানদের সম্পদ দখল এবং ইহুদীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে যে নির্যাতন চালানো হয়েছে।
গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার নামে আমেরিকা- ইরাক দখল করেছে। লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে। লাখ লাখ মানুষকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু করে দিয়েছে। ধ্বংস করেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, শিল্প কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এটাকে যুদ্ধ বলা যায় না।
এ যুদ্ধ হচ্ছে- ইরাকের বিশাল সম্পদ দখলের যুদ্ধ। এখানে চলছে সাধারণ জনগণ, নারী, শিশু হত্যার যুদ্ধ। সম্পদ লুণ্ঠনের যুদ্ধ। আমরা সকল মুসলিম দেশে মুসলমানদের নির্যাতনের তিনটি বিষয় প্রায়শই উপস্থিত থাকতে দেখেছি।
১।
গণহত্যা, ২। বন্দি নির্যাতন, ৩। মহিলা ও শিশু নির্যাতন।
ইরাকে গণহত্যা:
ইরাকের ফালুজা শহরে বিমান ও ট্যাঙ্কের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী মার্কিন বাহিনী সেখানে সর্বাত্মক হামলা চালায়। সুন্নি অধ্যুষিত শহরটির মসজিদ, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাধারণ নাগরিকদের বাড়ীঘর কিছুই বাদ যায়নি।
তারা এই শহরে নাপাম বোমা নিক্ষেপ করে। যেখানে নাপাম বোমার আগুনলাগে তা কোনভাবেই নেভানো যায় না। নাপাম বোমার টুকরা যখন কোন মানুষের গায়ে পড়ে, তখন বালতির পর বালতি পানি ঢেলেও নেভানো যায় না। শেষ পর্যন্ত মানুষকে ক্রমে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে। (নাউযুবিল্লাহ)
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ফালুজায় আমেরিকা গণবিধ্বংসী বোমা ও গ্যাস প্রয়োগ করে এমন এক ধ্বংস সংঘটিত করেছে যে অল্পকিছুদিন পর পৃথিবীর মানুষ ইরাকের মানচিত্রে কষ্ট করে ফালুজা নগরীকে খুঁজে বের করতে হবে।
ইরাকের কারাগার এবং বন্দীশিবিরগুলোতে শুধু সন্দেহ ও অজ্ঞতাবশত ধরে এনে আটক করা হয় নিরীহ বেসামরিক পুরুষ ও মহিলাদের। শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি বস্ত্রহীন করে রাখা হয় বন্দিদের। বিভিন্ন ভঙ্গিতে তাদের কসরত করতে বাধ্য করে উপহাস উল্লাস করতো। কুকুর লেলিয়ে দিয়ে, শরমগাহে স্থলে ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে, ছাদের সাথে ঝুলিয়ে রেখে পাশ্চাত্য নির্যাতনের আধুনিক মাত্রা সৃষ্টি করে।
মহিলা ও শিশুদের নির্যাতন:
দখলদার আমেরিকান ও ইউরোপীয়ান সৈন্যদের পৈশাচিক সম্ভ্রমহরণের নির্যাতনের কবল থেকে ইরাকী নারী বন্দিরাও রেহাই পায়নি।
মুসলিম দেশগুলোতে কোন মহিলা সম্ভ্রমহরণের শিকার হলে সামাজিকভাবে তাকে অপদস্ত হতে হয় বলে প্রকৃতসংখ্যা জানা যায়নি তবে এই সংখ্যা অগণিত। মুসলমান মহিলারা কতটা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন সেটা এক নির্যাতিতা ইরাকি বোনের চিঠিতে ফুটে উঠেছে।
প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরাকের প্রতি জাতিসংঘের শুধু নিষেধাজ্ঞার কারণে মারা যায় ৫ লাখ শিশু। আন্তর্জাতিক প্রতিবাদের মুখেও ২০০৩ সালে ১ মার্চ তেল সমৃদ্ধ ইরাকে পুনরায় আগ্রাসন চালানো হয়।
মুসলমান নরনারী, শিশু, সম্পদ ধ্বংস ও লুট করে আমেরিকা, ব্রিটেনের উড়োজাহাজে পাচার হয় মূল্যবান সম্পদ।
আমেরিকার এ যুদ্ধ- ধ্বংসের যুদ্ধ, তেল সম্পদ ও প্রাচীন ঐতিহ্য ধ্বংসের যুদ্ধ, লুট করে আন্তর্জাতিকভাবে মুসলমানদের সর্বহারা করার যুদ্ধ।
এদের নিক্ষিপ্ত ইউরেনিয়াম বোমার কারণে জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য বিকালঙ্গ শিশু। দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃতিতে বিরাজ করবে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি।
সম্পদ লুন্ঠনের অভিনব পদ্ধতি:
বোমা ফেলে দেশের সকল স্থাপনাসমূহ ধ্বংস করা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে। এখন তারা আবার ঠিকাদারীর কাজকরে হাতিয়ে নেবে তেল সম্পদের পাশাপাশি নগদ অর্থ।
ইরাকে প্রথম ঠিকাদারীর কাজ পেয়েছে মার্কিন বেকটেল গ্রুপ। ইরাকের ধ্বংস ও মেরামতের কাজকর্ম করার জন্য ইরাক সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। বেকটেল গ্রুপ বিদ্যুত, জ্বালানি, পানি ও পয়নিস্কাশনের দায়িত্ব পেয়েছে। ইরাকের তেল সম্পদ বিক্রি করে পুনর্গঠনের কাজ চালাবে।
আমেরিকার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে, কাস্পিয়ান সাগর ও পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল দখল করা এবং এ অঞ্চলে মার্কিন ঘাটি প্রস্তুত করা।
মার্কিন সৈন্যরা ৪/৫টি আমেরিকান তেল কোম্পানির কাছে ইরাকের তেল বন্টনে ব্যস্ত।
আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশ দখলে রেখে তেল সম্পদ লুন্ঠনই শুধু নয়, মার্কিনীদের মধ্যপ্রাচ্য মিশনের আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, ধর্মীয় শাসন ও সামাজিক আবরণ ভেঙ্গে ফেলা। আর সে কারণে মহিলাদের উপর সম্ভ্রমহানীর নিপীড়ন চালানো হয়েছে এবং হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে; যেন সারাজীবনের জন্য সে মানুষটির মনোবল ভেঙ্গে দেয়া যায়। আর শিশুদের হত্যা করা হয়েছে পৃথিবী থেকে মুসলমান সংখ্যা কমিয়ে দেবার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে।
ইসরাইল সরকার এ যুদ্ধের পক্ষে গোপনে ইহুদী সম্প্রদায়ের শক্তি বিস্তারের জন্য চেষ্টা করছে।
এ ধরনের পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে ধৈর্য্য ধরে আমেরিকা-ব্রিটেনকে বিশ্বস্ত অনুচর করে গুপ্ত কূটনৈতিক পলিসি প্রয়োগ করেছে।
সম্পদ দখলের আরও নমুনা:
কৃষ্ণসাগরে বিশ্বের বৃহত্তম তেল মজুদ রয়েছে। পাশ্চাত্য তেল রপ্তানীর জন্য এই রুটকে নিরাপদ রাখতে চায়। আবার রাশিয়াও তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই কৃষ্ণসাগরের উপকূলে রয়েছে রাশিয়া, ইউক্রেন, জর্জিয়া, তুরস্ক, গ্রীস, রুমানিয়া।
জর্জিয়ার উত্তর পশ্চিম কোনে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা হচ্ছে আবখাজিয়া। জর্জিয়াকে পরাজিত করে স্বাধীনতাও লাভ করে। রাশিয়া আবখাজিয়া এবং দক্ষিণ ওসেটিয়াকে প্ররোচিত করাতে জর্জিয়া তাদের আক্রমণ করে। পরে দক্ষিণ ওসেটিয়ায় জর্জিয়ার সামরিক অভিযানের অজুহাতে মস্কো জর্জিয়াতে সামরিক হস্তক্ষেপ করে। যুদ্ধকে আবখাজিয়া ও জর্জিয়ার মূল ভুখন্ডে ঠেলে দেয়।
তেল নিয়ন্ত্রনের জন্য আবখাজিয়ার মুসলমানদের অনেক প্রাণহানী ঘটে।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।