আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘১০ নম্বরের’ নেইমার

সবে কৈশোরের চৌকাঠ পেরিয়েছেন। ১৭ বছর বয়স। বিশ্বকাপে অভিষেক হলো ইতিহাসের কনিষ্ঠতম খেলোয়াড়ের। এই খেলোয়াড়ই ১৯৫৮ সুইডেন বিশ্বকাপে নেমে নিজের আগমনী বার্তা দিলেন সারা বিশ্বকে। নাম এডসন অরান্তেস দো নাসিমেন্তো পেলে।

১০ নম্বর হলুদ জার্সি যখন গায়ে চাপালেন পেলে, তখন কি ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিলেন একদিন এটাই হয়ে উঠবে ব্রাজিলিয়ানদের স্বপ্ন-উন্মাদনার প্রতীক?
সাদা চোখে দেখলে এটা একটা সংখ্যাই তো। এর আবার আলাদা মাহাত্ম্য কী? কিন্তু যাঁরা ফুটবল ভালোবাসেন, তাঁরা জানেন এই জার্সি কতটা অমূল্য। এই জার্সি গায়ে চড়ানোর আশায় পৃথিবীর অলিতে-গলিতে ফুটবলে বুঁদ হয়ে থাকেন কত অগুনতি যুবক। এই জার্সি একবার পরতে পারলেই বর্তে যান অনেক বিখ্যাত ফুটবলারও। আর দেশটা ব্রাজিল হলে তো কথাই নেই।

যেখানে ফুটবল খেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে জীবনেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘জোগো বনিতো’র দেশে ১০ নম্বর জার্সি শুধু একটা জার্সিই নয়। একটা স্বপ্ন, জীবনের ধ্রুবতারা।
এই জার্সিটা এখন এমন একজনের গায়ে, যাঁকে ঘিরে আবর্তিত কোটি ব্রাজিলিয়ানের বিশ্বকাপ-স্বপ্ন—নেইমার। তরুণ এই ফরোয়ার্ড কোচকে এখন ধন্যবাদ দিতেই পারেন।

কনফেডারেশনস কাপ শুরুর আগে কোচ লুইস ফেলিপে স্কলারিকে নিজে যেচে গিয়ে বলেছিলেন জার্সিটা তাঁর চাই। দলের সেরা খেলোয়াড়কে না বলতে পারেননি স্কলারি। কিন্তু একটা ভয়ও নিশ্চয়ই কাজ করছিল কোচের মনে—জার্সিটা যে দুধারী তলোয়ারও। এটি যাঁর গায়ে উঠবে, তাঁকে সামলাতে হবে প্রত্যাশার পাহাড়সম চাপ। তাতে নুয়ে পড়লে হারিয়ে যেতে হবে বিস্মৃতির অতলে।

উল্টোটা হলে জার্সিটাই হয়ে দাঁড়াবে প্রেরণা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নেইমারের জন্য এখন এটা ‘আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ’। ১১ বদলে ১০ নম্বর পরার পর যে নেইমারের গায়েও অন্য আলোর বিভা!
একুশ পেরোনো এই স্ট্রাইকার জানেন জার্সিটার ভার কতটুকু। সেই পেলে থেকে শুরু—এরপর দলের সেরা খেলোয়াড়দের গায়েই উঠেছে ১০ নম্বর। ১৯৮২ ব্রাজিল দলকে বলা হয় বিশ্বকাপ না-জেতা সেরা দলগুলোর একটি।

সেই দলে ১০ নম্বর জার্সি পরেছিলেন ‘সাদা পেলে’ জিকো। পেলের পরে এই জার্সি গায়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছেন দুজন—১৯৯৪-এর রাই ও ২০০২-এর রিভালদো।
২০০২ বিশ্বকাপ থেকেই ১০ নম্বর হলুদরঙা জার্সিটি ম্রিয়মাণ হতে থাকে। রোনালদিনহো-কাকার সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ ছিল না কখনোই। কিন্তু ১০ নম্বর জার্সির বার্সেলোনার রোনালদিনহো বিস্তর ব্যবধান গড়ে দিলেন ব্রাজিলের রোনালদিনহোর সঙ্গে।

২০১০ বিশ্বকাপে কাকা ১০ নম্বর জার্সি গায়ে চাপিয়ে যেন অনুভব করলেন সিন্দাবাদের ভূতের ভার। এরপর অনেক দিনই পাকাপাকি কাউকে পরতে দেখা যায়নি জার্সিটা। কাকা-রোনালদিনহোর পর একসময় এটি উঠল গানসোর গায়ে। কাকা-রোনালদিনহো এখন নিজেদের কঙ্কাল। সেদিনের গানসোই হয়ে গেছেন বিস্মৃত এক নাম।


এই বছরও জার্সিটা দেখেছে ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ খেলা। একবার কাকা তো আরেকবার রোনালদিনহো, এমনকি অস্কারও পরেছেন জার্সিটা। কিন্তু ‘নাম্বার টেনের’ শাপমোচনের দিন বুঝি এবার ফুরোল। নেইমার আভাস দিচ্ছেন, জার্সিটা তাঁর গায়েই থাকবে দীর্ঘদিন।
কদিন আগেই নেইমার বলেছিলেন, জাতীয় বীর তিনি হতে চান না।

ওটা বড় চাপের। সেই সামর্থ্য তাঁর নেই। কেননা প্রতিদিনই তো জালের ডান দিকের কোনায় বল পাঠানো সম্ভব নয়! তবে তিনি চান আর না-ই চান, জাতির স্বপ্নসারথি তাঁকে হতেই হচ্ছে। অবশ্য ব্রাজিলে জার্সিটা যতই নিজের করে নিন, ক্লাব বার্সেলোনায় ওটার স্বত্ব আরেকজনের—লিওনেল মেসি। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।