আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই বর্বরতার শেষ কোথায়?

কাপুরুষের শেষ আশ্রয় হল দেশপ্রেম আমিনবাজারে ছয় ছাত্রকে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা এবং নোয়াখালীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে তরতাজা এক কিশোরকে পিটিয়ে মারার ঘটনার পর মিডিয়ায় তোলপাড়ের পর আমার মত অনেকেই হয়ত ভেবেছিলেন- মানুষ সচেতন হবে। কিন্তু গত কিছুদিনের পত্রিকায় বাঙ্গালীর বীরত্বের কথা পড়ে সেই ভুল ধারণা ভেঙ্গে গেছে। ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বৃদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যা সিরাজগঞ্জ, মে ২৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সিরাজগঞ্জ সদরে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ এক বৃদ্ধাকে ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করেছে জনতা। নিহত কহিনুর বেগম (৫৫) সদরের কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামের প্রয়াত মোক্তার হোসেনের স্ত্রী। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে সদর থানার ওসি বাসুদেব সিনহা বলেন, সকালে কহিনুর বেগম স্থানীয় কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন।

এলাকার লোকজন ছেলে ধরা সন্দেহে পিটুনি দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করার পর বেলা ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্ততি চলছে বলে জানান তিনি। নিহতের ছেলে লোকমান হোসেন সংবাদিকদের বলেন, তার মা মানসিক ভারসাম্যহীন। অথচ তাকে ছেলেধরা ভেবে পিটিয়ে হত্যা করা হল।

পীরগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে ১ ব্যাক্তিকে পিটিয়ে হত্যা আজম রেহমান,পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও)- গতকাল ২৫ এপ্রিল জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় ছেলে ধরা সন্দেহে এক মধ্যবয়সী অঞ্জাতনামা ব্যাক্তি গনপিটুনিতে নিহত হয়েছে। ঐদিন সকালে ভেলাতৈর হলুদ বস্তি গ্রামের মো: মহির উদ্দিনের পুত্র মো: সুজন(১৫) ক্ষেতের আইলে মোবাইল করতে থাকাকালে অঞ্জাতনামা এক ব্যাক্তি ঐ ছেলের হাত ধরার চেষ্টা করলে ছেলেধরা সন্দেহে তার চিত্কারে আশেপাশের লোকজন এসে ঐ ব্যাক্তিকে আটক করে গনপিটুনি দেয়। পরে তাকে স্থানীয় ৬ নং পীরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালযে নেয় স্থানীয়রা। সেখানেও উত্তেজিত লোকজন তাকে বেধড়ক পেটায়। খবর পেয়ে পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায ঐ ব্যাক্তিকে উদ্ধার করে পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করে।

অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঠাকুরগাও সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সদর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে সন্দেহভাজন ১১ জন সহ অঞ্জাতনামা ৪ থেকে সাড়ে ৪ শ’ ব্যাক্তির বিরুদ্ধে পীরগঞ্জ থানায় দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় একটি মামলা রুজু করেছে, যার নং ০৮ তাং ২৫/০৪/২০১২ ইং । পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন ধরেই এরাকায় ছেলেধরা আতঙ্ক বিরাজ করছিল। অনেকেরই শিশু সন্তান হারানোর সংবাদ বিচ্ছিন্নভাবে পাওয়া গেলেও বাস্তবে কারো কোন শিশু চুরি যাওয়া বা হারানোর কোন ঘটনার রেকর্ড নেই থানায়।

এটাকে নিছক গুজব বলে দাবী করেছেন সচেতন মহল। যে মুহুত্বে চারিদিকে ছেলেধরা আতঙ্ক বিরাজমান ঠিক সেই মুহুত্বে মানষিক রোগী হিসেবে পরিচিত এই মধ্যবয়সী রোগা চেহারার মানুষটির আকষ্মিক উপস্থিতিতে ভরকে গিযে চিত্কার চেচামেচির ফলে উত্তেজিত জনতার মারপিটের শিকার হয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু হলো অসহায় অঞ্জাত এই ব্যাক্তির। থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মেহেদী হাসান বলেন, শুধুমাত্র গুজবে কান দিয়ে কোন প্রকার বাছ বিচার না করে একটা নিরিহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা মানবতা বিরোধী কাজ। এ রকম হলে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি থাকবে না। এসব ক্ষেত্রে জনগনকে আরো সচেতন হতে হবে।

নিহত ব্যাক্তির নাম ঠিকানা গতকাল রাত ৯ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কলারোয়ায় ছেলেধরা সন্দেহে প্রতিবন্ধী যুবককে পিটিয়ে হত্যা কলারোয়া (সাতীরা) থেকে সংবাদদাতা কলারোয়ায় ছেলেধরা সন্দেহে বিজিবি সদস্যসহ গ্রামবাসীরা মারপিট করে এক প্রতিবন্ধী যুবককে হত্যা করেছে। প্রত্যদর্শী ও নিহত প্রতিবন্ধীর পরিবার জানায়, গত ২ জুন সকাল ৮টার দিকে উপজেলার ইলিশপুর গ্রামের মশিয়ার রহমানের মানসিক প্রতিবন্ধী পুত্র লিটন (২৫) পথ ভুলে পাশ্ববর্তী ভাদিয়ালী গ্রামে যায়। পরে সে ঘোরাফেরা করতে করতে কামারপাড়া নামক স্থানে পৌঁছালে ওই এলাকার রফিকুল ইসলামের শিশু কন্যা অন্তরা (০২)-কে কোলে তুলে আদর করতে থাকে। এ সময় শিশুটি চিৎকার করে কাদতে থাকলে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়।

পরে ছেলে ধরা মনে করে ভাদিয়ালী গ্রামের রফিকুল ইসলাম, রোকনুজ্জামান, বাবলু, আ. মজিদ, রেজয়ান আলী, আনিছুর রহমান, শাহিন, জিয়াউর রহমান প্রতিবন্ধী লিটনকে মারপিট করতে থকে। এ সময় ছেলেধরা শুনে পার্শ্ববর্তী মাদরা ক্যাম্পের টহলরত বিজিবির নায়েক লিখন ও সিপাহী ফারুক এসে তাদের হাত থেকে প্রতিবন্ধীকে ছিনিয়ে নিয়ে মারপিট করে ফেলে রেখে যায়। প্রতিবন্ধী লিটন মারা যাওয়ার বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য বিজিবি ও ভাদিয়ালী গ্রামবাসী বাধ সাধলে মামলা হয়নি। চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা নড়াইল, মে ০৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে এলাকাবাসী। সোমবার সকালে পুলিশ উপজেলার চাচই গ্রাম থেকে ২৫ বছর বয়সী অজ্ঞাত পরিচয় ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে।

লোহাগড়া থানার ওসি আব্দুর রকিব খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার রাত ৩টার দিকে ওই যুবক লোহাগড়া উপজেলার চাচই গ্রামের হাই মিয়ার বাড়িতে গেলে স্থানীয়রা চোর সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। ওসি আব্দুর রকিব খান বলেন, নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়নি বলে তিনি জানান। চোর সন্দেহে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা চোর সন্দেহে বাছির নামের এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে মহানগরীর হালিশহর জে ব্ল্লক এলাকায়।

বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে সেঙ্গুইন কোচিং সেন্টারে ১০ হাজার টাকা চুরি হয়। এ ঘটনার জন্য কোচিং সেন্টারের কর্মচারী কিশোর বাছিরকে সন্দেহ করেন সেন্টারের কর্মকর্তারা। পরে এ নিয়ে কোচিং সেন্টারে সালিশ বৈঠকে বসে। এতে দোষী সাব্যস্ত করার পর বাছিরকে বেদম প্রহার করা হয়।

এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় বাছির। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে একটি রিকশার ওপর থেকে বাছিরের লাশ উদ্ধার করে। রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মেহেদি ও ইমরান নামের দুই যুবককে আটক করে পুলিশ। খুনের মামলা হয়েছে। চট্টগ্রাম ব্যুরো।

সিলেটে ‘চোর’ সন্দেহে বাড়িমালিকের বর্বরতা : তিন ঘন্টা পিটিয়ে যুবক খুন ‘চোর’ সন্দেহে একটানা প্রায় তিন ঘন্টা অমানুষিক নির্যাতনে মারা গেছেন এক যুবক। বুধবার সকালে সিলেট নগরের পশ্চিম পাঠানটুলা এলাকার একটি মেসবাড়িতে পিটুনিতে মারা যাওয়া ওই যুবকের নাম মির্জা মোহাম্মদ ফয়েজ (২৮)। পুলিশ বাড়িমালিক আফরোজ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ফয়েজের পরিবার ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে পড়েছেন। তাঁর বড় ভাই মির্জা আলী আহমদের দাবি তাঁরা পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।

পরিবারের একটি ছাপাখানার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বসতেন ফয়েজ। তাঁকে চোর সাজিয়ে হত্যার পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। ঘটনা সম্পর্কে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম পাঠানটুলার নিকুঞ্জ-৩ আবাসিক এলাকায় ছয়তলা বিশিষ্ট ‘আল-আফরোজ টাওয়ার’ পুরোটায় মেসবাড়ি হিসেবে ভাড়া দেওয়া হলেও একাংশে বাড়ি মালিক আফরোজ মিয়া (৪২) থাকতেন। গতকাল সকাল আটটায় ‘চোর’ সন্দেহে ফয়েজকে আটক করেন বাড়ি মালিক। এর প্রায় তিন ঘন্টা পর ছয়তলার নিচতলায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায় ফয়েজকে।

খবর পেয়ে ওই সময় আল-আফরোজ টাওয়ারে গেলে প্রতিবেশীসহ এ প্রতিবেদকের কাছে ফয়েজ ঘটনার বর্ণনা দেন। ফয়েজ জানান, তাঁকে একটি ল্যাপটপ ও আই ফোন চুরির অভিযোগে আটক করে ছয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে রাখা হয়। বাড়ি মালিকসহ আরও তিনজন যুবক তাঁর হাত ও পা বেঁধে ডান হাতের দুটো নখ উপড়ে ফেলে কুনুইয়ে ইটের টুকরো দিয়ে আঘাত করেন। এ সময় ফয়েজ চিৎকার করলে তাঁর মুখে পরনে থাকা শার্ট গুজে দিয়ে ডান পায়ের হাঁটুতে রড দিয়ে পেটাতে থাকেন। বাড়ি মালিক তখন রান্না ঘর থেকে দুটো সিদ্ধ ডিম এনে তাঁর মলদ্বারে প্রবেশ করলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

সকাল প্রায় আটটা থেকে একনাগারে ১১টা পর্যন্ত এভাবেই তাঁর ওপর অকথ্য নির্যাতন চলে। এক সময় তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর দেখেন মেঝেতে পড়ে আছেন। খবর পেয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার উপরিদর্শক (এসআই) শাহ মো. মুবাশ্বিরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে গেলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য সাড়ে ১১টা নাগাদ সেখান থেকে নিয়ে আসা হয়। শাহ মুবাশ্বির জানান, হাসপাতালে জরুরি বিভাগে থাকা অবস্থায় সোয়া ১২টার দিকে ফয়েজ মারা যান।

ফয়েজকে পুলিশে সোপর্দ করার সময় বাড়ি মালিক আফরোজ হাতেনাতে চোর ধরেছেন বলে জানান। তাঁকে পুলিশে না দিয়ে অকথ্য নির্যাতন করলেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ধাওয়া খেয়ে পালাতে গিয়ে তাঁর এ অবস্থা হয়েছে। ’ আফরোজ জানান, তাঁর বাড়িতে যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা থাকে, সেহেতু ফয়েজকে ধরে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানানো হয়। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। সকাল আটটায় ধরে সাড়ে ১১টায় পুলিশে হস্তান্তর করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা না বলে বাড়ির ভেতরে ঢোকে ফটক তালাবদ্ধ করে দেন।

ফয়েজের পরিবার সূত্র জানায়, চার ভাইয়ের পরিবারে ফয়েজ ছিলেন দ্বিতীয়। আম্বরখানা চন্দনটুলায় তাঁদের বাসা। আম্বরখানা এলাকায় ‘ক্লাসিক কালার প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং’ নামে একটি ছাপাখানা রয়েছে তাঁদের। ফয়েজ ওই ছাপাখানায় নিয়মিত বসতেন। ফয়েজের বড় ভাই মির্জা আলী আহমদ জানান, গতকাল সকালবেলা তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেল (নম্বর সিলেট-হ-১১-২৩০৪) নিয়ে ছাপাখানায় যান ফয়েজ।

তিনি ছাপাখানায় গিয়ে তাঁকে পাননি। বেলা সাড়ে ১১টায় একজন পুলিশের ফোন পেয়ে তিনি হাসপাতালে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। পুলিশ জানায়, ফয়েজের ভাই মির্জা আলী আহমদ বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহ মো. মুবাশ্বির জানান, বাড়ি মালিক আফরোজকে আটক করে প্রাথমিকভাবে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করছে পুলিশ।

................................................................................................. আমি এবং আমার আশেপাশের মানুষগুলো দিন দিন জানোয়ার হয়ে যাচ্ছি ভাবতেও ঘৃণা হয়!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।