মানুষ মাত্রই ভুল হয় - “Man is mortal ”। কিন্তু সেই mortal মানুষ ভুল একবার করলে নাকি সেটা ভুল,দুইবার করলে বোকামী আর বারবার করলে হয় পাপ। সেই হিসাবে আমি পাপী। আমার পাপ-আমি হারিয়ে ফেলি। হারানোর ক্ষেত্রটা আমার রুমের চাবি, মানিব্যাগ, অ্যাডমিট কার্ড,মোবাইল,গামছা,ঘড়ি,কলম,খাতা থেকে শুরু করে- কথা বার্তায় প্রাসঙ্গিকতা এমনকি সুন্দরী ললনা দর্শনে হিতাহিত জ্ঞান- পর্যন্ত বিস্তৃত।
কিন্তু,এগুলোর কোনটাই আমাকে ততোটা ভোগায়নি যতটা ভুগিয়েছে মোবাইল হারানো।
হয়ত ভাবছেন আজ পর্যন্ত আমার কত মোবাইল হারিয়েছে তার হিসাব করতে বসলে পাগল হবার দশা হবে। আসলে তা নাহ, উত্তর হইলো- সবগুলো। হ্যা,আজ পর্যন্ত যতগুলো মোবাইল কিনলাম,সব ই কোন না কোন ভাবে হারায় । কবিগুরু বুঝেছিলেন আমার কষ্ট,তাই হয়তো লিখেছিলেন-
“ক্ষুদ্র আশা নিয়ে,রয়েছে বাঁচিয়ে সদা এ ভাবনা
যা কিছু পায়,হারায়ে যায়
না মানে সান্তনা।
”
মোবাইল হারানোটা এক বড় হ্যাপা,তবে প্রেমিকের জন্য মোবাইল হারানোর প্রতিক্রিয়া অভিজ্ঞতাভেদে ভিন্ন। নব্য প্রেমিকের তো,জানের পানি শুকায় সাহারা হইয়া যায় । দিনে শ’খানে মিসকল,তিন কুড়ি মেসেজ আর ঘন্টা পাচেক কথা বলাটাকে যেখানে অতি সাধারণ মনে হয়,সেখানে মোবাইল ছাড়া জীবনটাকেই অনর্থক মনে হয়। আর, আমার মত বর্ষীয়ান প্রেমিকের কাছে এ যেন হঠাৎ অ্যাডভেঞ্চার ( মুখে আঙ্গুল দিয়া অন্য কাউকে না বলার ইমো হইবে) । কোথায় জানি পড়েছিলাম- “দুর্ভাগার হারায় গরু আর ভাগ্যবানের হারায় বউ ।
” এইটাকে একটু এডিট করে বলেই দেয়া যায় হয়ত-“ দুর্ভাগা প্রেমিকের(বর্ষীয়ান) হারায় ল্যাপটপ আর ভাগ্যবানের হারায় মোবাইল । ”
এইসব ভাবতে ভাবতে পিসিটা অন করলাম। আজ সারা রাত মুভি দেখবো,গেম খেল্বো,এমনকি চাইলে ভলিউম কমায় দিয়া আদিরস আস্বাদনেও বাধা নেই -ভাবতেই এক পৈশাচিক আনন্দ খেলে গেলো সারা শরীরে। বিগ ব্যাং থিওরী এর লেটেস্ট এপিসোড টা দিয়াই শুরু করি।
কতক্ষন কাটলো জানিনা,হঠাৎ ভাইব্রেশনে উঠে বস্লাম।
বালিশের তলায় হাত দিয়ে অতি পরিচিত ভঙ্গিতে হাত দিয়ে পরিচিত ধাতব স্পর্শটা না পেতেই মনে পড়ে- আজ আমি ভাগ্যবান,মোবাইল নাই। কিন্তু নিজের ভাগ্যটাকে কেন জানি উপভোগ্য মনে হল নাহ। দুর,কুত্তার পেটে ঘি সহ্য হয়না,এই বলে নিজেকে গালি দিয়ে আবার দেখা শুরু করলাম আরেক এপিসোড। কিন্তু একটু পরেই বুঝলাম,আজ কেন জানি জুৎ হইতেছে নাহ। অখন্ড অবসর আছে,আছে খোরাক –সব থেকেও কি জানি নেই।
কোথায় জানি তাল কেটে যাচ্ছে।
আজ সারাদিনের কথা মাথায় ঘুরঘুর করতেছে, তেমন কিছুই তো করলাম নাহ,সিগ্নালের বোরিং ক্লাস লেকচারগুলো আজকেও সেইরকম অখাদ্য ছিল,ভ্যাপ্সা গরমে আজও অতীষ্ট ছিলাম,বলদ ছাত্রী আজও আমার ধৈর্যের সীমার চরমতম পরীক্ষা নিছে, এমনকি রাতে ডাইনিং এর মুরগীর পিসটাও ভালো পড়ে নাই-এই সবই তো প্রতিদিন হয়,সে ও জানে,তাও হাজার বার বলা এই কথাগুলো আজ বলতে ইচ্ছা করছে।
আমি শিওর,আজ ওর দিনও আর দশটা দিনের মতই ছিল-সেই প্রেজেন্টেশন, আইবিএ-সিসি,মীটিং, জিএমসি এর পেইন,দুপুরে ক্যান্টিনে জয়নাল ভাই,বাবু ভাইকে খাবার নিয়ে ঘ্যানঘ্যান,বাসায় ফিরে বিড়াল নিয়ে এক গাদা আদিখ্যেতা আর পড়াশোনা বাদ দিয়ে ড্যান-ব্রাউনের বইয়ে ডুবে থাকা- এইতো,এর বাইরে কিছু নাহ, সব ই জানি। তবুও কেন জানি ওর মুখ থেকেই জানা কথা গুলো শুনতে ইচ্ছা করছে।
প্রত্যেকদিন রাতেই বলি-আমার কথা শেষ,আর কোনো কথা নেই ।
ও চুপ করে থাকে,কিছু বলে নাহ। তারপর নিজেই কথা আগে বাড়ায়,কথাগুলো মানুষ,জীবন,বাস্তবতা ছাড়িয়ে কখন যে আহ্লাদে চলে যায়,খেয়াল থাকে নাহ। আমি নিস্পৃহভাবে শুনি, যতটা পারি প্রতিক্রিয়া দেখাই তারপর একসময় সকালে ওর ক্লাস আছে এই দোহাই দিয়ে বিদায় করি। পাগলীটা একান্ত বাধ্যগতের মত রেখে দেয়। জানি ওর খারাপ লাগে, বুঝতেও পারি,কিন্তু আমার যে কোন গল্প নেই,নেই আদ্র-আহ্লাদ, আবদার নেই,দিন দিন কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি,রোবট-রোবট।
চোখে ভাসে ওর নিষ্পাপ মুখটা,কখন যে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসলো খেয়াল নাই । নাহ নাহ, চোখের কোণ আদ্র হয় ঠিকই, ভিজে ওঠে নাহ,ওটা ছেলেদের উঠতে নেই। এই রুক্ষতাই আমার বর্ম,এই মৌনতাই আমার প্রকাশ ঠিক যেমন গ্রীষ্মের খরতাপ ই তার অশ্রুহীন রোদন।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি,পাশের রুমের জুনিয়র নব্য প্রেমিক দেখি তাল্গাছের মত ঠায় দাঁড়িয়ে এয়ারটেলের ব্যবসা বাড়াচ্ছে। তার নাকি একটা ব্যাকাপ ফোন ও আছে,পাছে আমার মত মোবাইল হারায় ফ্যালে।
বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে ভাবি, দুরো বাল এখনও বর্ষীয়ান প্রেমিক হতে পারলাম না.........শালার প্রেমের আব্বুকে আম্মু ......
ডিসক্লেইমারঃ
বাস্তবের সাথে মিল খুজিয়া নিজে লজ্জা পাইবেন নাহ আর আমাকেও লজ্জা দিবেন নাহ। আর যাহারা ইয়ার-বন্ধু রহিয়াছো,তাহারা নিজ দায়িত্বে সব চাপিয়া যাইবে নতুবা আমার জান-মাল এর নিরাপত্তা লইয়া টানাটানি পড়িয়া যাইবে। ধন্যবাদ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।