uব্লগিং করলে নাকি জাতে উঠা যায় !জাতে ওঠার তীব্র আকুলতায়
পত্রিকার বেশ কয়েক ধরনের পাঠক আছেন । কিছু আছেন যারা পত্রিকার ভাজ খুলে ছবিগুলোর উপর চোখ বুলিয়ে নেয় এবং আলোচিত খবর এর দুই চার লাইন অর্থাত মুখ রক্ষার রসদ জুগিয়েই চলে যান শেষের দিকের পাতায় যেখানে ঐশ্বরিয়ার প্রেগনেন্সির সর্বশেষ আপডেট কিংবা “প্রভা এবং ললিপপ” শীর্ষক গুরু গম্ভীর নারী অধিকার মুলক রঙ্গ আছে । চায়ের দোকানের পাঠকদের সাধারনত ১০ টাকার পত্রিকা কেনার সামর্থ হয় না । তারা তিন টাকার খবরে সন্তুষ্ট । এদের অনেকের আবার অক্ষর জ্ঞান নাই ।
এক কাপ চায়ের বিনিময়ে কেউ যদি অনুরোধের ঢেকি গেলে তাইলে মন যোগ সহকারে শোনে আর মাঝে মাঝে মাথা উপর নিচ করে । ভাবটা এমন সব বুজছি কিন্তু কিছু জিনিস বুঝলাম না । এই শ্রেনীর পাঠকদের প্রিয় বিষয়বস্তু হল সমসাময়িক রাজনীতি (মুলত রাজনীতি নয় দুই দলের নেতা নেত্রীদের কাদা ছোড়াছুড়ি ) ,ধর্ষন আর লাদেন । স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে ধর্ষনের খবরগুলো খুব উপভোগ্য করে ফুটিয়ে তোলা হয় । গরম চায়ের সাথে শরীরটাও একটু গরম করে নেয়া আর কি ।
সামাজিক অবক্ষয়ের নাতিদীর্ঘ আলোচনার শেষে উপসংহার টানা হয় ধর্ষিতা মেয়েটির চরিত্র হয়ত খারাপ ছিল কিংবা সে এমন কিছু করছে যার জন্য ফেরেশতার মত লুচ্চা কুলাঙ্গার ইমানদার পোলাডা ঐ কাজ করতে বাধ্য হইছে । এক ধরনের পাঠক আছে যারা পত্রিকা খুলেই ৪ পাতা উল্টে প্রথমেই দর্শন দেন ইউরোপিয়ান,ফ্রেন্চ,ইটালিয়ান কিংবা স্প্যানিশ ফুটবলের সর্বশেষ আপডেট । এদের পত্রিকার পড়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হল বন্ধু মহলে নিজেকে আধুনিক ফুটবলের মহান জ্ঞান হিতৈসি হিসাবে নিজেকে প্রমান করা । এরা রাত জেগে খেলা দেখার চেয়ে ফেসবুকে “মাইয়া ওরনা গলায় না দিয়া বুকে দে কামে দিব” টাইপের পেজে এডমিন গিরি করে সময় কাটাতে পছন্দ করে । এদের পরীক্ষার এসাইনমেন্ট যেমন গুগল নির্ভর তেমনি খেলা সম্পর্কিত জ্ঞান রিপ্লে নির্ভর।
এভারেষ্ট জয়ী প্রথম মহিলা কে এটি তাদের কাছে তেমন গুরুত্বপুর্ন না যতটা না গুরুত্বপুর্ন রোনান্দো এবং তার অবৈধ সন্তানের দায়িত্ব কে নিতে যাচ্ছেন শীর্ষক ফিচার। এক শ্রেনীর পাঠক আছেন যারা পত্রিকার ভাজ খুলেই মোটা ফ্রেমের ভারী কাচের ফাকা দিয়ে খুজে বেড়ায় আব্দুল গফ্ফার চেৌধুরী ,বদর উদ্দিন উমর কিংবা বিচারপতি হাবিবুর রহমানের কলাম । বলা বাহুল্য এ ধরনের পাঠক কিছুটা বয়সের ভারে নুয়ে পড়া হয় । অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা,চাকরীজীবি,ব্যাবসায়ী যাদের একমাত্র কাজই হল পত্রিকা পড়া আর নাতি নাতনির ঘোড়ার ভুমিকা পালন করা । কালো চুলে পাক ধরে সাদা হয়ে যেতে সময় লাগে ৪০ বছর ।
এই দীর্ঘ সময় দেশ ধর্ম জাতীয়তা নিয়ে কখনও মাথা গরম করেন নি অথচ এখন চিনি ছাড়া চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চিন্তিত চিত্তে বলেন দেশটা রসাতলে যাচ্ছে । সম্পাদকীয় পৃষ্ঠাতেই এরা আটকে থাকে । দেশ রক্ষার চরম তাগিদে কোন কোন বিষয়ে জ্ঞাননির্ভর কিছু লেখার তাগিদ অনুভব করলেও শারীরিক অক্ষমতায় ইচ্ছাটির মুকুলেই মৃত্যু হয় । এক শ্রেনীর পাঠক আছেন যাদেরকে অপ্রাপ্তবয়স্ক পাঠক বলা যেতে পারে। সাধারনত স্কুলের গন্ডি পাড় না হওয়া সম্প্রদায় এর প্রজাতির অন্তরগত ।
এদের একমাত্র কাজ শিক্ষা পেজের বিভিন্ন প্রশ্ন কাচি দিয়ে খুব সযত্নে কেটে রাখা এবং পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওগুলো খুজে না পাওয়ার ব্যবস্থা করা । এদের হাতে মাঝে মাঝে দেশী বিদেশী নায়ক নাইকারাও কাটা পড়ে । অকালপক্ক স্কুল বালক যার সংগ্রহে পামেলা এন্ডরসনের প্রায় উম্মুক্ত বক্ষের একখানি ছবি আছে বন্ধু মহলে তার কদর ঈর্ষা করার মত । পুর্বে বালিকাদের গোপন জায়গাটা (বেহুদা খারাপ চিন্তা করলেন,বললাম মেয়েরা যেখানে তাদের জমানো টাকা পয়সা কিংবা প্রেমিকের চিঠি লুকিয়ে রাখে ) সালমান শাহের দখলে ছিল । হাল আমলে শাকিব খানের ছবি লুকিয়ে রেখে মেয়েরা আর নিজের ইজ্জত এর ফালুদা করতে চায় না তার চেয়ে বরং ওপারের জিত কিংবা দেব অনেকটা নিরাপদ ।
সর্বশেষ এক ধরনের পাঠক আছেন যারা চলন্ত পাঠক । বাস,ট্রেন,লন্চে উঠেই এদের প্রথম কাজ হয় আধা লিটার মিনারেল ওয়াটারের বোতল কেনা আর একটা পত্রিকা । অবশ্যই সেই পত্রিকা যার সাথে অতিরিক্ত কোন ক্রোড় পত্র সাথে থাকবে । এই ধরনের পাঠকেরা অনেক আয়োজন করে বাসে উঠে এবং বাস ছাড়া মাত্র ঘুমিয়ে পড়ে । তার ১০ টাকায় কেনা পত্রিকা তখন বাসে গড়াগড়ি খায় মাঝে মাঝে কোন ঠ্যাকের পাঠক উঠিয়ে দু কলম পড়ে ঘুমন্ত মানুষটির কোলের উপর ছুড়ে মারে ।
ঘুম থেকে ওঠামাত্র ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে পত্রিকার পেজগুলো একত্রিকরন করতে । অবশেষে শুরু করেন অবিরাম পঠন । জাত ,বেজাত, অজাত, কুজাত ,প্রয়োজনীয় ,অপ্রয়োজনীয় সব খবর পড়তে থাকে । গন্তব্য এখনও অনেক বাকী । পত্রিকাত পড়া শেষ ।
তখন তাদের পড়ার বিষয় বস্তু হয় ক্রয় বিক্রয়,পড়াইতে চাই , পাত্র পাত্রীর খবর , ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন, ইত্যাদি । সর্বশেষ অবস্থায় এরা বোস্তাবেডিং নিয়ে চ্যাংদোলা হওয়া সত্বেও পত্রিকাটা বাড়ী পর্যন্ত নিয়ে যায় ।
(চলবে )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।