আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টক - মিষ্টি - ঝাল = বরিশাল

অফিসের এক প্রোগ্রামে প্রথম বারের মত বাংলাদেশের সুজলা-সুফলা শস্যের ভান্ডার, রুপালী ইলিশের স্থান খ্যাত বরিশাল থেকে ঘুরে এলাম। বাংলাদেশের ৭টি বিভাগের মধ্যে এই একটি বিভাগই আমার দেখা বাকি ছিল। সব মিলিয়ে ৬৪টি জেলার মধ্যে এই বরিশাল নিয়ে ৫৪ টি জেলা দেখা হল। এ ভ্রমনে টক-মিষ্টি-ঝাল এ ৩ ধরনের অভিজ্ঞতাই হয়েছে। একান্তই আমার মত করে ৩ ভাগে সেই অভিজ্ঞতা গুলো শেয়ারের অভিপ্রায়ে এ রচনা - টক :- এই রুটে কোন এসি বাস নাই তদুপরি গরমের কথা মাথায় রেখেও বাসে রওনা দিলাম।

সবার কাছে শুনেছি বরিশাল যাওয়ার মজা হলো লঞ্চে কিন্তু সাঁতারে আমি মজা পাব না (যদি প্রয়োজন হয়) এই ভেবে বাসে যাওয়ার সিধান্ত। সাকুরা পরিবহন এর কাউন্টারে গেলাম ২.৩০ এ ৩.৩০ এর বাস ধরব বলে। রাস্তায় জ্যামের কথা মাথায় রেখেই আগে রওনা দেয়ায় আগে পৌঁছে গেলাম। তাহাদের যাত্রী বিশ্রামাগার এর পরিবেশ এবং দুপুরের প্রচন্ড গরমে বিদ্যুৎবিহীন শোচনীয় অবস্থা সহ্য করে গেলাম প্রথম নতুন কোন জায়গায় ভ্রমনের চিন্তায়। পাটুরিয়া ফেরী পার হওয়ার পরই জানতে পারলাম আগামীকাল রবিবার হরতাল।

মূল চিন্তাটা হলো গতকালই আমাদের প্রোগ্রামটা। যাইহোক আয়োজকদের আশ্বাসে প্রোগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ভরসায় চলতে লাগলাম। বরিশাল বাসীর আঞ্চলিক কথায় আগে থেকেই ব্যাপুক বিনোদন পেতাম। বাসে সেই বিনোদনের মাত্রাটা বেড়ে গেল ২ বরিশাল বাসীর কন্ঠযুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে। প্রথম যাত্রী ফোনে এক বরিশালবাসীকে নেগেটিভ ভাবে বরিশাইল্লা বলে বকা দিয়ে ফোন রাখার পর অপর আসনে বসা আরেক বরিশালবাসী ক্ষেপে উঠল পরবর্তীতে ঐ যাত্রী বলল আমি বরিশাইল্লা বলেই জানি শালা ওই বরিশাইল্লা কত খারাপ।

আরো কিছু দৃষ্টান্ত সে আলোকপাত করল - প্রথম যাত্রী দ্বিতীয় যাত্রী কে লক্ষ্য করে ৩টি উদাহরণ তুলে ধরল - {১) গাজীপুর আর বরিশালে জমিজমা নিয়ে মামলা-হাঙ্গামা বেশী। গাজীপুরের কারণ হল ওখানে দাম বেশী এটা নিয়ে আর বরিশালের কারণ হল এগোরে মাথায় প্যাঁচ বেশী এটা নিয়ে। ২) কোন অফিসে ১জন নোয়াখালী আর ১ জন বরিশালের থাকলে দেখা যায় নোয়াখালীর জন চায় বসরে উপরের আসনে তুলে সে ওই আসনে বসবে আর বরিশালের জন বসরে ফালায় দিয়া বসের ওই আসনে বসতে চায়। ৩) নোয়খালী আর বরিশালের কোন কর্মচারী রে কোন কাজ দিলে নোয়াখালীর সেই কর্মচারী কাজটি করে যা প্রাপ্য তার চেয়ে বেশী বোনাস হিসেবে চেয়ে নেয়। আর বরিশালের সেই কর্মচারীটি কাজ টি সম্পূর্ণ না করেই প্রাপ্যর ধান্দা করে।

} বয়সের অভিঞ্চতায় তাদের আঞ্চলিক ভাষার কথোপকোথন থেকে আমি এই ৩টি তথ্য ধারণ করে রেখেছিলাম। যাইহোক রাত ৯টায় বরিশাল পৌঁছে বরিশালের বিখ্যাত হোটেল এ্যাথেনা ইন্টারন্যাশনালের পথে রওনা হলাম চার্জেচালিত অটোতে করে। যাওয়ার পথে বিপরীত দিক থেকে আসা এক রিক্সার সাথে আমাদের অটোটি দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল। রিক্সার আসনে বসা লোকটি যখন তার আসন ছেড়ে রাস্তায় লুটোপুটি খেয়ে পড়ে গগনবিদারী আওয়াজ তুলল ভাবলাম তার হাত-পা দুইটা বুঝি গেছে। আমরাও অটো থেকে নেমে তার সাহায্যে এগিয়ে গেলাম কিন্তু না তার শরীরে কিছু হয়নি তার হাতে থাকা একখানা কাগজ পাশের ড্রেনে পড়ায় সে এরকম গগন বিদারী আওয়াজে আকাশ-বাতাস ভারী করে ফেলল।

যতটুকু মনে পড়ে তার কথা ছিল ও মোর আল্লারে মুই তো শেষ মোর জমির দলিল মোর বাবার শেষ চিন্হখান শেষ ও রে অটোআলারে তরে মুই খাইয়াহালামু এই বলে অটোচালককে চড়-কিল-ঘুসি মারতে লাগল। যেই অটোচালকের সাহায্যে এগিয়ে আসতে লাগল তাকেও সে আঘাত করতে লাগল। আসলে ওই যাত্রীটি ছিল পুরোদস্তুর লোডেড। মাল খেয়ে টাল হয়ে সে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগালি এবং সবাইকে মারের চেষ্টা করছিল। ঘটনাটা সাধারন হলেও সাধারন জনগনের আশেপাশে অংশগ্রহনে সেটা ছোটখাট একটা মজমায় রুপ ধারন করল।

হরতালের আগের রাতে এরকম একটা জটলা দেখে ঘটনা শেষ হওয়ার পর একদল লোক এল। এই একদল লোক কারা সেটা আর বললাম না বুঝে নেন তারা হল - বাংলা সিনেমায় ছবির শেষ অংশে নায়ক যখন অবিশ্বাস্য ভাবে সব দস্যুকে খতম করে শেষ ভিলেন কে মারতে উদ্ধুত হয় তখন যারা এসে বলে আইন হাতে তুলে নিবেন না, তারা। যাইহোক গরম - ঝগড়া - মাতলামি সব কিছুকে আমার টক বলেই মনে হয়েছে। মিষ্টি :- বরিশাল আসার আগেই বরিশালবাসী এক সহকর্মী ঘোষনা দিয়েছিল বরিশাল যাওয়ার পর আমাদের সকল প্রকার খাবার-দাবার এবং বেড়ানোর সব দায়িত্ব তাঁর। প্রথমত ভেবেছিলাম তাঁকে এই পেইন দেয়ার কোনো মানে হয়না।

কিন্তু সে আমাদের আতীথেয়তা করবেই। অগ্যতা তাঁর আতীথিয়তায় এমন কোন খাবার নেই যে আমাদের জিহবা ও পেট সেই স্বাদ অনুভব করল না। সকালের নাস্তা/দুপুরের খাবার/ রাতের খাবার তো ছিলই সাথে বেলা১১টার খাবার/ সন্ধার খাবার তো ছিলই। একটু জানিয়ে রাখা ভাল না হলে হয়ত আপনারা বিশ্বাস করবেন না। যারা বরিশালে বাড়ি তারা জানবেন সকাল-সন্ধ্যা মিষ্টান্ন ভান্ডার আমাদের ঐই সহকর্মীর, এই মিষ্টান্ন ভান্ডারের শহরজুড়ে শো রুমের সংখ্যা হলো ৮টি।

খাবারের মেন্যুর বিবরণ দিয়ে আর আপনাদের আপসোস বাড়াতে চাই না। তবে বিষয়টা ছিল এমন যে ছেড়ে দে মা আর খাবনা এই টাইপ। এই খাবার গুলোই যখন প্রতিনিয়ত হজম হওয়ার প্রতিযোগিতায় থাকত তার মধ্যে আবার যোগ হয়েছিল যাদের আয়োজনে গিয়েছি তাদের এবং আমার এক বান্ধবীর আত্মীয়ের বাসায়। এত সব আতীথেয়তা কে মিষ্টি না বলে পারা যায় । ঝাল :- লঞ্চের মজাটা মিস করে বাসে আসায় ঝামেলার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে।

রাস্তায় জ্যাম তদুপরি কিছু যাত্রীর অকথ্য ভাষায় ড্রাইভারকে গালাগাল সহ গাদাগাদি করে লোক উঠানো। যাওয়ার পথে সাকুরার সার্ভিস ভাল না লাগায় ঈগল পরিবহনে রওনা দিলাম। সকাল ৯.৩০ এর বাসে রওনা দিয়ে যখন ঢাকার বাসায় ঢুকি তখন ঘড়িতে রাত ১০.৩০। দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটের অবান্তর জ্যাম এবং গাবতলী থেকে ফার্মগেট এর জ্যাম শেষ কালে ভ্রমনটাকে ঝালময় করে তুলেছে। এই হল আমার প্রথম বরিশাল ভ্রমনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।

এই ২দিনে আমার যেটা মনে হয়েছে - ১ # শহর হিসেবে বরিশাল খুবই পরিস্কার একটি শহর। ২ # বরিশালের মানুষরা বাংলার অন্য যেকোন অঞ্চলের মানুষের চেয়ে বেশী সাহসী বিশেষ করে যারা মহিলা বা মেয়ে তারাও অন্য অঞ্চলের মহিলা বা মেয়েদের চেয়ে। এই বর্ণনায় কাউকে হেয় করার জন্য নয়, বরিশালবাসী বা অন্য অঞ্চলের কেউ মনে কষ্ট পেলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।