আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডেস্টিনি-২০০০ আনলিমিটেড এবং আমার ইয়েস ইয়েস অভিজ্ঞতা !!!

বিষাদময় জীবন এগিয়ে যায় যুক্তিহীন মৃত্যুর দিকে !!! ডেস্টিনি নিয়ে অনেক পোস্ট দেখা হয়। অনেক মানুষ কে দেখি ডেস্টিনির খপ্পরে পড়তে। তাদের অনেক মজার অভিজ্ঞতা শুনে আমার মনে হল আমার যে অভিজ্ঞতা আছে তাও আপনাদের সাথে শেয়ার করি। তবে মনে হয় না আমার মত অভিজ্ঞতা আর কারও হয়েছে। ডেস্টিনি কথা অনেক আগে থেকেই শুনেছিলাম, এমন ভাবে শুনেছি যে শুনে মনে হয়েছে এ যেন আলাদিনের জাদুর চেরাগ।

কিছুদিন পর দেখি আমার পরিচিত একজন বাসায় এসে আব্বুকে এই ব্যাপারেই কিছু বুঝাচ্ছে। অনেকক্ষন বুঝানোর পর শেষে হয়ত (ঠিকমত!!!) বুঝাতে না পেরেই হোক অথবা আব্বুর অনাগ্রহের কারনেই হোক, ডেস্টিনিওয়ালা চলে গেলেন। তখন কিছু কথা ভাসা ভাসা শুনেছিলাম। যেমন একটা প্রোডাক্ট থেকে কত ভাগে লাভ পাওয়া যায়, কি কি প্রোডাক্ট সেল হয় ইত্যাদি। পরে আব্বুর কাছে শুনে যা বুঝলাম - এরা হইল আ কাইন্ড অফ হায় হায় পার্টি !!! গতবছরের মার্চ / এপ্রিল মাস, হঠাৎ করেই আমার এক এক্স-রুমমেটের রুমে যেয়ে দেখি ডেস্টিনির মহামূল্যবান প্যাকেজ।

যেই প্যাকেজে আছে কিছু সিডি/ডিভিডি, কিছু চটি বই (অবশ্যই ডেস্টিনি সম্পর্কিত ) এবং একটা ডায়রি। তত দিনে ডেস্টিনি কি জিনিষ ভাল ভাবেই বুঝে গেছি। সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কা সত্ত্বেও বন্ধুকে জিজ্ঞাস করলাম, এগুলা কি ভাই? বন্ধু একটু বিজ্ঞের মত হেসে বলল, এগুলো হল আমার ইনভেস্টমেন্ট, এই জিনিস ইনভেস্ট করে লাখপতি হয়ে যাব। শুনে আমি হা হয়ে গেলাম( মানে ভাব করলাম আরকি)। তখন বন্ধুর কাছে এর গূঢ়ার্থ জানতে চাইলাম।

তখন বন্ধু আমাকে বুঝানো শুরু করল, একেবারে ডায়মণ্ড অথবা ক্রিস্টাল এক্সিকিউটিভ পর্যন্ত বুঝাল। সবশেষে বলল কি করে আমিও ওইগুলা হতে পারব। আমিও অনেক বুঝে গেছি এমন একটা ভঙ্গি করে হেসে দিলাম। তারে বললাম-দেখি চিন্তা করে !!! ( মনে মনে বলছি, হায়রে বন্ধু, তুমিও এই ফাদে পড়লা !!!) বেশ কিছুদিন পরে আবার ওর রুমে গেলাম। যেয়ে দেখি পড়ার বইয়ের পাশে পাশে ডেস্টিনির চটি বই আর ডিভিডিগুলা সাজানো।

সে কম্পুতে বসে বসে ডেস্টিনির ভিডু দেখতেসে আর চটিগুলা পড়তেসে। আমি আগের মত বিপদে পড়ার আশন্কা থেকে ওকে কিছু বললাম না। ওর সাথে সাথে মাথাও দুলাইলাম। এবং সেটাই হল আমার জন্য বড় ধরণের ভুল। হঠাৎ করেই সে এক শনিবারে ফোন করল, শনিবার আমাদের ভার্সিটি বন্ধ থাকে।

সপ্তাহে শুক্র আর শনিবারটাই ভেজাল ছাড়া, আর ঐদিনে তার কাছ থেকে পাওয়া ফোন আমার ভয় আরও বাড়িয়ে দিল। ফোন ধরে শুনলাম আজ নাকি তাদের একটা অনুষ্ঠান আছে , সে ঐ অনুষ্ঠানের টিকিট করে ফেলছে। আমার আশু উপস্থিতি প্রয়োজন। ও আমাকে আরও আশ্বস্ত করে বলল আমাদের সার্কেলের ৩-৪ জন যাচ্ছে। আমিও আশ্বস্ত হবার ভন্গি করে বললাম, ঠিক আছে।

আমি চলে আসবো। আমার নিজেকে কখনও এত অসহায় মনে হয় নাই। আমার যতদুর মনে আছে আমিই ওকে ঠান্ডা করার জন্য বলেছিলাম আমি তোমাদের অনুষ্ঠানে যাবো। এখন নিজের ফাদে নিজেই পড়লাম। যাই হোক, যথাসময়ে রুমে এসে উপস্থিত হলাম।

রুমে একে একে আমার বন্ধুরা জমা হল। সবাই চলে আসার পর আমরা একযোগে অনুষ্ঠানস্থলের দিকে রওনা হয়ে গেলাম। অনুষ্ঠানটা ছিল খুলনার জিয়া হলে !!! আমার অপছন্দের জায়গার তালিকার প্রায় শীর্ষে। জিয়া হলের সামনে যেয়ে যা দেখলাম তাতে আক্কেল গুড়ুমের পর যদি কিছু থেকে থাকে তাই হল। দেখি অনেকগুলা বাস জিয়া হলের সামনে দাড়ানো, সেই সাথে অনেক মানুষ।

মোটামুটি জনসভা টাইপ অবস্থা। শুনলাম যে ১ম সেশন এখন মাত্র শেষ হয়েছে। আমাদের পরের সেশনে ঢুকতে হবে। তবে আমার বন্ধুটি জানি কিভাবে করে আমাদের ঠিকই ভিতরে নিয়ে গেল। ভিতরে যাওয়ার আগে শুনছিলাম, একটা লোক জানি কি বলছে- কিছু লোক তার সাথে সাথে বলছে ইয়েস...ইয়েস।

হলের ভিতরে যেয়ে বসলাম, বন্ধু চেনা পরিচিত থাকায় কারও সাথে সিট নিয়ে মারামারি করতে হল না। সব বন্ধুরা একসাথে বসে আছি আর আমার ডেসটিনি বন্ধুকে না জানিয়েই নিজেরা নিজেরা ডেসটিনি সম্পর্কে বিনুদুনমূলক কথা বলছি। অবশ্য ঢুকার সময়ই আমরা ঠিক করেছিলাম যে আধাঘন্টার মধ্যে বের হয়ে আসব !!! যাই হোক, অনুষ্ঠান শুরু হল একটা গান দিয়ে। এইটা খুব সম্ভবত ডেসটিনির থিম সং। আর যাই হোক গানের মধ্যে স্পিরিট আছে।

আমাদেরই তো প্রায় রক্ত গরমই হয়ে গিয়েছিল। গানের কথা খেয়াল নাই, বিচ্ছিন্ন কিছু শব্দ খেয়াল আছে। যেমন- বিজয় নিশান, আধার, দেশ গড়বো ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে একটা লাইন স্পষ্ট খেয়াল আছে সেটা হল- ডেস্টিনিতে আমরা আছি মুক্তিযোদ্ধা যত যতবারই এই লাইনটা আসছে ততবারই আমরা কয়েকবন্ধু হাসতে হাসতে গড়াগড়ি। আশেপাশের মানুষজন ভাবতেসে এই খ্যাতগুলা আবার আসলো কোত্থেকে !!! অনন্তকাল ধরে চলা (ঐদিন থিওরি অফ রিলেটিভিটির আরেকটা উদাহরণ পেলাম) এই দেশাত্মবোধক গান একসময় শেষ হল।

গান শেষ হওয়ার পর মন্চে আসলেন টুপি মাথায় এক লোক। ইনি সম্ভবত পি.এস.ডি., নামটা খেয়াল নাই, তবে খুলনায় যারা থাকেন তারা এনাকে চিনবেন। খুলনা নিউমার্কেটের পিছনে পুরা ডেস্টিনি ভবন জুড়ে এনার হাস্যজ্জ্বল ছবি লটকানো আছে। উনি ওনার বক্তব্য শুরু করলেন, বিনুদুনও শুরু হল। কি বক্তব্য শুনছি খেয়াল নাই তবে কিছুক্ষন পরে মনে হল যখনই উনি কোন পয়েন্টের এন্ডিং টানছিলেন, দর্শকসারিতে বসা সবাই সমস্বরে, মন্ত্রমুগ্ধের মত বলছিল- ইয়েস, ইয়েস !!! সে সুর আমাকে এতই মুগ্ধ করেছিল আমি প্রায় ঘুমিয়েই যাচ্ছিলাম...হঠাৎ আমার বন্ধুটি পাশ থেকে আমাকে খোঁচা দিয়ে বলে- কিরে বের হবি না।

আমি বল্লাম - ইয়েস ইয়েস অবশ্যই বের হব এত তাড়া কিসের ??? তাড়া কিসের বললেও কিছুক্ষন পরে ডেস্টিনি বন্ধুকে বললাম- ভাই এইবার তো আমাদের উঠতে হয়। ও কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। তারপর বললো আচ্ছা ঠিক আছে। তোমরা যাও। আমার আসতে দেরি হবে।

এরপরে আমরা ও তাকে বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম। এই ঘটনার মাস ২-৩ পরে সে ডেস্টিনি ছেড়ে দেয় বলেই শুনেছিলাম, তার টাকা আর সময় ২টাই জলে গিয়েছিল বলেই মনে হয়। ****কথোপকথন বেশকিছুটা কল্পিত হলেও মূলভাব অবিকৃত। আগের মত এত কিছু মনে রাখতে পারি না। ****রচনাকাল- ডিসেম্বর-০৫, ২০১১  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।