নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!! নৃতাত্ত্বিক, সামাজিক, অজ্ঞতা, গড়ে হরিবোল প্রবণতার কারণে যুগ যুগ ধরে বাঙ্গালী 'ভাল ছাত্র' ৮ম শ্রেনী পাস করার পর বিজ্ঞান বিভাগে যায়। হার কমলেও এখনো সে প্রবণতা মোটাদাগে বিদ্যমান। দ্বাদশ ক্লাশ শেষে বিভাগ পরিবর্তনের 'মনো:কস্ট' মেনে না নিলে আর মেডিক্যাল/ইন্জিনিয়ারিং/কৃষি ইত্যাদিতে তে চান্স না পেলে এদের বিরাট অংশ ভর্তি হয় মৌলিক বিজ্ঞানের নানা শাখায়।
পদার্থ, রসায়ন, গণিত, উদ্ভিদ, প্রাণি, পরিসংখ্যান -এ ৬টি বিষয় প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ানো হয়। ১০০-২০০ করে সিট।
যথারীতি ৪ বছর মেয়াদী কোর্স। কোথাও সেমিস্টার কোথাও বছর সিস্টেমে। ৫০ থেকে ১০০ মার্কসের ৩০-৪০টির মত কোর্স। বেশীরভাগের সাথেই প্র্যাকটিক্যাল পার্ট আছে এবং তাতে আলাদাভাবে পাশ করা বাধ্যতামূলক। ফলে স্যারদের প্রিয়-অপ্রিয় পাত্র হওয়ার লাভ-লোকসান এখানে প্রকট! তাছাড়া আন্দাজ অনুমান ও সাধারন জ্ঞানভিত্তিক চাপাবাজি করে পরীক্ষা পার করার ফুরসৎ মৌলিক বিজ্ঞানে নেই বললেই চলে।
বুঝতে হবে এবং বেশ কিছু তথ্য মুখস্থও করতে হবে! আমাদের প্রজন্মে পদার্থবিদ্যায় প্রচুর ফেল, থার্ড ডিভিশনের প্রকোপ ছিল। তাই সাধু সাবধান!
প্রথম প্রথম মৌলিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা হোঁচট খায় ভাষাগত কারণে। কেননা উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ে বাংলায়। এ পর্যায়ে টেক্সট গুলো ইংরেজীতে। ভারত, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের লোকদের লেখা।
ফলে গ.সা.গু র সাথে সে পরিচিত হলেও H.C.F দেখে ঘাবড়ে যায়! অণু বুঝলেও Molecule বুঝেনা!! হালে বাংলাভাষায় কিছু 'খুছরা' ধরনের বই পাওয়া যায় কিন্তু কোনোভাবেই তা ভাল টেক্সট বা রেফারেন্স নয়। মজার বিষয় হল- শিক্ষার্থীদের এ সমস্যা ফার্স্ট ইয়ারেই কেটে যায়। এমনকি পরে অনেকে নিজেই ভাল 'আর্টিকেল' লিখতে পারে, এবং তা ইংরেজীতে!
গড়পড়তা অন্যান্য বন্ধুদের চেয়ে অনেক বেশী হার্ডওয়ার্ক করে বিজ্ঞানে স্নাতক হলেও বাংলাদেশের চাকরির বাজারে তাদের জন্য 'বিভীষিকা' ছাড়া কিছুই অপেক্ষা করে না। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সেলস, সংশ্লিস্ট বিষয়ের শিক্ষক ব্যতীত হোলসেলে কোন চাকরি এসব স্নাতকদের নেই। রসায়নের কিছু ছাত্র শিল্পে চাকরি পায়।
কিন্তু মোটাদাগে বিজ্ঞানে স্নাতকদের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত নয়। কেননা এটা এখনো ট্রেডিং কান্ট্রি। নিজস্ব রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ব্র্যান্ড, পেটেন্ট, পণ্য বা শিল্প না থাকার কারণে মাল আমদানী, রপ্তানী, বিক্রয় ও হিসাব নিকাশের মধ্যেই অর্থনীতি গোত্তা খাচ্ছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুলা বেগুনের মত ফলিত/পেশাগত বিজ্ঞানের শাখায় স্নাতক কোর্স খোলার কারণে মৌলিক বিজ্ঞানীরা রামধরা খাচ্ছেন চাকরির বাজারে! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।