আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২২ বছর পর সংশোধিত হচ্ছে ডিসিসির জনবল কাঠামো দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পাচ্ছে ২৪২২ ও উত্তর পাচ্ছে ১৮৫৮ জনবল বিলুপ্ত হচ্ছে ৮৫২ পদ

যেমন কর্ম তেমন ফল। দীর্ঘ ২২ বছর যুগোপযোগী করা হচ্ছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (ডিসিসি) জনবল অবকাঠমো (অর্গানোগ্রাম)। নতুন এই অর্গানোগ্রামটি তৈরি করে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে দেখছে। নতুন অর্গানোগ্রামে কিছু নতুন পদ সৃষ্টি করা হলেও ৮৫২টি পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে।

এসব পদে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো কাজ ছিল না। এসব পদে থাকা জনবলকে নতুন পদে পদায়ন, স্বেচ্ছায় অবসর দেয়া বা অন্য পদে বদলি করার পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন অর্গানোগ্রামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পেয়েছে ২ হাজার ৪২২ জন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন পেয়েছে ১ হাজার ৮৫৮ জন জনবল। জানা গেছে, ১৯৯০ সালের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী ডিসিসিতে স্থায়ী জনবল ছিল ৪ হাজার ৯০০। পরবর্তীতে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, পরিবেশ সার্কেল বিভাগ তৈরিসহ কিছু চালকের পদ সৃষ্টি করায় বেড়ে হয় ৫ হাজার ১৩২টি।

কিন্তু সেখানে এমন কিছু পদ ছিল, ওই পদে থাকা কর্মচারীদের কাজ কী সেটাও কেউ জানতেন না। নতুন অর্গানোগ্রামে সেসব পদই বিলুপ্ত করা হয়েছে। অর্গানোগ্রাম প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা জানান, মেয়র পদটি সিটি কর্পোরেশনের সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতার মালিক হলেও আগের অর্গানোগ্রামে মেয়রের স্টাফসংখ্যা ছিল আটজন। অথচ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (প্রনিক) স্টাফ ছিল ১১ জন। নতুন অর্গানোগ্রামে মেয়র দপ্তরের স্টাফ ঠিক রেখে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্টাফ ৫ জন করা হয়েছে।

আবার যান্ত্রিক বিভাগের একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী স্টাফ ছিল ৭ জন। সেটা তিনজন করা হয়েছে। অন্যদিকে মশার ওষুধ ছিটানোর ৪৬০টি স্প্রেম্যানের পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। কারণ হিসেবে অর্গানোগ্রাম প্রণয়নকারীরা জানিয়েছেন, বছরের সব মৌসুমে মশার ওষুধ ছিটানোর প্রয়োজন হয় না। আবার কিছু কিছু সময়ে অনেক বেশি ওষুধ ছিটানোর জন্য এর চেয়ে বেশি স্প্রেম্যানের প্রয়োজন হয়।

ফলে অনেক সময়েই স্প্রেম্যানরা অলস বসে থেকে শুধু বেতন নেন। নতুন অর্গানোগ্রামে তাই সকল স্প্রেম্যানের পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। এখন থেকে মশার ওষুধ সরবরাহকারী ঠিকাদারকেই ডিসিসির চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ স্প্রে করার দায়িত্ব দেয়া হবে এবং তারাই স্প্রেম্যান সরবরাহ করবে। ওষুধ কেনার দরপত্র বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে এই শর্তও যুক্ত থাকবে। একইভাবে ডিসিসির যান্ত্রিক বিভাগে মিলার আদার অপারেটর, ফিটার- এ ধরনের কিছু পদ ছিল।

এসব পদের কাজ কী সেটাও কেউ জানতেন না। এ রকম ৮০টি পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। আবার ডিসিসির বাস টার্মিনালগুলোতে মালি, ইলেক্ট্রিশিয়ান, নিরাপত্তাপ্রহরীর মতো অনেক পদ ছিল। কিন্তু টার্মিনালগুলো ইজারাদারের মাধ্যমে চালানোর কারণে সকল বিষয়ই ইজারাদার নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। এসব জনবলের কোনো কাজ থাকে না।

আবার টার্মিনালগুলোতে গাছপালা লাগানোর মতো অবস্থাও নেই যে মালিরা সেখানে ফুলবাগান করে যত্ন নেবেন। ফলে এসব পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে নগর পরিকল্পনা বিষয়ক কোনো রকম ডিগ্রি ছাড়াই কিছু কর্মচারী আগে নগর পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। এ ধরনের পদ বিলুপ্ত করে তাদেরকে নগর পরিকল্পনাবিদের সহকারী করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি আগে ছিল তিনটি বিভাগের অধীনে।

পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীরা বর্জ্য সংগ্রহ করতেন। পরিবহন বিভাগের কর্মচারী বহন করতেন। আরেক বিভাগের কর্মীরা বর্জ্য ফেলার স্থান দেখভাল করতেন। ফলে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিত। এতে নগরীও সারা বছর আবর্জনায় ভরা থাকত।

এবার তিনটি কাজই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীনে নিয়ে স্বতন্ত্র বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠন করা হয়েছে। রাজধানীর কবরস্থান, শ্মশানঘাট, ব্যয়ামাগার, লাইব্রেরি, মিলনায়তন, কমিউনিটি সেন্টার প্রভৃতি ক্ষেত্রে মনিটরিংয়ের জনবল ছিল খুবই কম। অথচ নগরবাসীকে সেবাদানের ক্ষেত্রে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সকল আঞ্চলিক কার্যালয়ে একজন করে প্রথম শ্রেণীর সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার বাজার সার্কেলের কার্যক্রম আগে ডিসিসির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পরিচালিত হতো।

এবার সকল কাজ আঞ্চলিক কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ রকম অনেক বিষয় পরিবর্তন করে অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সেটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিলুপ্ত পদের জনবলকে আত্মীকরণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ডিসিসির নিয়োগ বিধি, চাকরি বিধি, বেতন স্কেল প্রভৃতি চূড়ান্ত করার শর্ত দিয়েছে।

বর্তমানে চলছে এসব শর্ত পূরণের প্রক্রিয়া। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব মোঃ শামসুজ্জামান বলেন, নতুন অর্গানোগ্রামে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। এতে হয়তো দুয়েকজনের ব্যক্তিস্বার্থের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু সার্বিকভাবে জনগণের সেবার বিষয়টি নিশ্চিত করার বিষয় মাথায় রেখেই এটা করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই হয়তো চূড়ান্ত হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরের নাগরিকদের সেবার বিষয়টিই নতুন অর্গানোগ্রামে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে এটা করা হচ্ছে। এতে জনগণের সেবা বাড়বে ছাড়া কমবে না। তবে কিছু নতুন পদ তৈরি হবে। যেমন দুজন মেয়র, দুজন প্রধান প্রকৌশলী, দুজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, দুজন সচিব- এ রকম আরো কিছু নতুন পদ তৈরি হবে।

ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জনবল বাড়বে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে জনবল কমবে। তবে কাউকেই জোরপূর্বক চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে না। তাদেরকে যেসব স্থানে কাজে লাগনো যায়, সেটা করা হবে। তারা অবসরে গেলে নতুন করে ওই পদে আর জনবল নিয়োগ দেয়া হবে না।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।