কোকোর পাচার করা টাকাগুলো ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আর এ উদ্যোগ নিয়েছেন দুদক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা ২২ কোটি টাকা সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনার উদ্যোগ সংক্রান্ত আইনি কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করা হয়েছে। ওই টাকা ফেরত আনার জন্য শিগগিরই মামলার রায়ের কপি এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনসহ অ্যাটর্নি জেনারেল স্বাক্ষরিত চিঠি সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওভারসিস ব্যাংক (ইউওবি) কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
২০০৯ সালের ১৭ মার্চ রাজধানীর কাফরুল থানায় আরাফাত রহমান কোকো এবং সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী মরহুম আকবর হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে দুদক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০৯-এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা এ মামলায় কোকোকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত সিঙ্গাপুরে পাচার করা সব টাকা বাজেয়াপ্ত করেন।
দুদক সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুর ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে কোকোর পাচার করা মুদ্রার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪১ হাজার ১৪৩ দশমিক ৫৯ সিঙ্গাপুর ডলার এবং ৯ লাখ ৩২ হাজার ৫৭২ দশমিক ৮১ মার্কিন ডলার।
ডলারের বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর সঙ্গে টাকার সুদও ফেরত আনা হবে। এ টাকা সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনার জন্য ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. আবু সাঈদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, টাকা ফেরত আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনি কর্মকাণ্ড চূড়ান্ত হয় ১৮ এপ্রিল।
ওইদিন দুটি জাতীয় পত্রিকায় মামলা নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এখন মামলার রায়ের কপি, পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি এবং এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে খোলা হিসাব নম্বর অ্যার্টনি জেনারেলের কাছে পাঠানো হবে। তারপর তিনি নিয়মানুযায়ী সিঙ্গাপুর ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বরাবর টাকা ফেরত পাঠানোর জন্য আবেদন করবেন।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে দুদক সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরের নাগরিক লিম সিউ চ্যাং (৬৩) একটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করে সেখানকার ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংক (ইউওবি) লিমিটেডে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। অ্যাকাউন্টের শর্ত ছিল-লিম সিউ চ্যাং ও আরাফাত রহমানের যৌথ স্বাক্ষরেই শুধু সেখান থেকে টাকা উঠানো যাবে।
চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ঢাকা এবং চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড চট্টগ্রামের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক এনএ, নিউইয়র্ক এবং এইচএসবিসি ব্যাংক ইউএসএ থেকে সিঙ্গাপুরের ইউওবি লিমিটেডের ওই অ্যাকাউন্টে এ অর্থ জমা করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণকাজের ঘুষ হিসেবে ওই অর্থ কোকোর অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। এ ছাড়া সরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটকের যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সার্ভিসের জন্য সিমেন্স কোম্পানির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঘুষ আদায় করেন কোকো। সিমেন্সের বাংলাদেশ এজেন্ট মো. জুলফিকার আলী সিঙ্গাপুরের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মাধ্যমে কোকোর ইউওবি লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে ৩ লাখ ৩ হাজার ২৫৪ সিঙ্গাপুর ডলার বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে জমা দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে তার ওই অ্যাকাউন্টে আরও বেশ কিছু অর্থ জমা হয়।
এদিকে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থ রাখা এবং এ বিষয়ে দুর্নীতি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে না জানানোর অপরাধে সিঙ্গাপুরের আদালত ২০১১ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কোকোর সহযোগী লিম সিউ চেংকে অর্থদণ্ড দিয়েছিলেন। এ কারণে টাকা ফেরত আনা সহজ হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কোকোর দুর্নীতি নিয়ে পড়ুন:
Click This Link
Click This Link
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।