আমি সুমাইয়া বরকতউল্লাহ। ছাত্রী। লেখালেখি করা আমার ভীষণ পছন্দ। আমি ছড়া, গল্প লিখি। পত্রিকায় নিয়মিত লিখি।
লেখালেখি করে বেশ কয়েকটা পুরস্কারও পেয়েছি। শিশু অধিকার রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ (প্রিণ্ট মিডিয়া) পর পর ৩ বার জাতিসংঘ-ইউন দাদা বইটা বন্ধ করতে করতে বললেন, এগুলো তোমাদের বানানো ভূত। এ বইতে তুমি ভূত নিয়ে যা লিখেছ -এর কিছুই আমি বিশ্বাস করি না। ভূত থাকলে এ জীবনে আমার সামনে একটা না একটা ভূত পড়তো। এতদিনে বহুবার ভূতের সাথে মানুষের কিলাকিলি হতো।
ভূতের ভয়ে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারতো না। কই, জীবনে তো একটা ভূতও দেখলাম না। খালি গল্পে পড়েছি ভূতের কথা। আসলে ভূত বলতে কিচ্ছু নেই।
আমি বললাম, এখন যদি এ নিয়ে আমি তর্ক করি আর যুক্তি দিয়ে বোঝাই যে, অবশ্যই ভূত আছে, তখনই তুমি বলবে, ‘সুমাইয়া তুমি এতো পাকামো করো না, বয়স আমার কম হয়নি।
বেয়াদবির একটা সীমা আছে, ফাজিল মেয়ে কোথাকার। ’ কী দাদা, এসব বলে ধমকে আমাকে তাড়িয়ে দিতে না তুমি?
দাদা বললেন, যেই জিনিস নেই, যার দেখা কোনদিন পেলাম না এমন একটা বিষয় নিয়ে তর্ক করলে তো বলবই।
আমি বললাম, দাদা এ বিষয়টি নিয়ে আমি তোমার সঙ্গে মোটেও তর্ক করবো না। এর প্রমাণ দেবো হাতে-নাতে।
দাদা কপালে চোখ তুলে বললেন, হাতে-নাতে প্রমাণ দেবে মানে? তুমি কি ভূতকে ঘাড়ে ধরে এনে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলবে নাকি, ‘দাদা এই দেখো ভূত, কত ভয়ংকর ভূত, দেখো!’
আমি বললাম, আজ সূর্য়টা ডোবা পর্যন্ত অপো করবো।
তারপরই দেবো ভূতের প্রমাণ। দাদা বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, আমিও এ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো ভূতের প্রমাণের জন্য। দেখি কী প্রমাণ দাও তুমি।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলো। গেলাম দাদার ঘরে।
দাদা চোখ বন্ধ করে ঝিম ধরে বসে আছেন। আমি জোরে পা ফেলতেই দাদা চমকে উঠে বললেন, কে? কে?
দাদা আমি সুমাইয়া। দাদা বললেন, ভূত নিয়ে এসেছ নাকি? বললাম, নাহ্। প্রমাণ দিতে এসেছি।
দাদা বললেন, প্রমাণ? দেখাও দিখি ভূতের প্রমাণ।
দাদার ঘরে টেবিলে পানিভর্তি জগ আছে, পাশেই আছে গ্লাস। আমি গ্লাসে পানি ভরলাম। তারপর পানিভর্তি গ্লাসটা দাদার হাতে দিয়ে বললাম, দাদা এই ধরো গ্লাস। দাদা হাত বাড়িয়ে ধরলেন। তারপর বললাম, এই পানিভর্তি গ্লাসটা এভাবে ধরে এখন তুমি যাবে ওই মাঠের গোরস্থানে।
সেখানে একটা কদম গাছ আছে না? ওই গাছ থেকে একটা কদমফুল ছিঁড়ে নিয়ে আসবে। আর গ্লাসের পানি যেন গ্লাসেই থাকে। বুঝেছ এবার?
দাদা হা করে বললেন, এগুলো কী বলছ তুমি? মাথা খারাপ হয়েছে নাকি তোমার। বললাম, ভূতের প্রমাণ দিতেই এসব করছি, আর কিছু না। আর কোন কথা নেই এখন রেডি হ্ও তুমি।
একহাতে পানিভর্তি গ্লাস আরেক হাতে একটা লাঠি নিয়ে ঘর থেকে বের হলেন দাদা। এসব দেখে বাড়ির ছোট-বড়ো সবাই উঠোনে জড়ো হয়েছে। কেউ বলছে, দাদা লাঠিখানা শক্ত করে ধরো, সামনে কিছু দেখলে দিবা জোরে বাড়ি।
দাদি এসে বললেন, এহ্ ওনি যাবে গোরস্থানে। কতো বড়ো বীর।
এখনই তো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। আচ্ছা যাও যাও দেখি কেমন বেটা তুমি, যাও।
দাদা বিড়বিড় করে কি সব পড়ে সারাগায়ে ফু দিয়ে, আল্লাহ্ ভরসা বলে রওনা হলেন।
দাদা উঠোন পেরিয়ে গোরস্থানের পথ ধরে একটু সামনে গিয়ে ডেকে ডেকে বলছেন, কইরে, তোরা কি আমার পেছনে আছিস নাকি? আমার তো পা চলছে নারে। আমরা চুপ করে বসে রইলাম।
কোন শব্দ নেই। হঠাৎ করে বাড়ির আওতা-বেড়া ভেঙ্গে হুমড়িখেয়ে উঠোনে এসে পড়লো দাদা। হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, আমাকে ধর, যমের হাত থেকে ফিরে এলাম। পানি দে।
আমি বললাম, দাদা কদমফুল কই, গ্লাস কই?
দাদা একটা ভেংচি মেরে বললেন, আরে রাখো তোমার কদমাফুল আর গেলাস।
আরেকটু হলে তো আমাকেই খুজে পেতে না। আরে আমি তো গোরস্থানে যেতেই পারিনি। একটু যেতেই সামনে কি একটা এসে দাঁড়াল। কালো মতোন। বলল, ‘তর হাতে এইডা কি?’ কইলাম, ‘গেলাস।
’ বলল, ‘দে আগে পানি খাইয়া লই। তারপরে তোর ব্যবস্থা। ’ আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে গ্লাসটা নিয়ে গড়গড় করে পানিটুকু খেয়ে ফেলল। ভাবে বুঝলাম, এখন খাবে আমাকে। পরেই না দিলাম দৌড়।
পায়ের জোরে কোনমতে ফিরে এলাম। ভয়ে আমার কলজে শুকিয়ে কাঠ। পানি দে।
আমি পানি দিতে দিতে বললাম, কী দেখলে দাদা?
দাদা পানি খেয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললেন, বাপরে বাপ! ভয়ংকর! ভয়ংকর!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।