কবিতা-গল্পে-ছড়াতে
তোমায় নিয়ে লেখাতে
শতশত বার জানিয়েছে মা তোমাকে শুভেচ্ছা ।
প্রতিটি শুভেচ্ছাবাণী যেন আমার নিজের মাকে জানানো হয়েছে বলে মনে হয় । তুমি “মা” শাশ্বত, চিরায়ত জননী । আজকের বিশ্বে তোমার সন্তানেরা একটা দিন ধার্য করে দিয়েছে তোমাকে শুভেচ্ছা জানাতে । এটা একটা উপলক্ষ্য মাত্র, তবু সবার সেকি আগ্রহ এইদিনটিকে ঘিরে ।
এই দিনটা এতো মাধুর্যপূর্ণ যে যখন সন্তানেরা শুভেচ্ছা জানায়, যারা মা হয়েছে শুধু তারাই জানে । আমি সেসকল নারীদেরকেও শুভেচ্ছা জানাই যারা অদৃষ্টের অবহেলায় মা হতে পারেনি । যাদের সন্তান নেই, যারা বন্ধ্যা কিন্তু আমি বলবো তাদের সন্তানের অভাব নেই । আমার মায়ের তিন সন্তান কিন্তু তাঁর সন্তান অসংখ্য । আমি তাদের প্রতি জানাই অকৃত্রিম ভালবাসা।
সত্য কথা বলতে আমার ভয় নেই, আমি কোন “মা” দিবসেই তোমার কাছে থাকতে পারিনি । যোজন যোজন দুরত্ব ছিলেম কিন্তু তোমায় ভুলে যায়নি, একটি বারের জন্য হলেও কথা বলেছি, তোমাকে স্মরণ করেছি অসংখ্যবার, কতবার যে বলেছি “মা তোমাকে ভালবাসি” ।
মা তোমাকে আজ আমি একটা পুরাতন কিন্তু চিরন্তন সত্য একটা প্রশ্ন করবো।
তুমি প্রথম কবে “মা” হয়েছিলে??
তুমি উত্তর দিলে কেন আবার ১৪ই মে।
আমি বললাম সেটাতো আমার জন্মদিন।
তুমি বললে তুই আমার প্রথম সন্তান, তোর জন্মদিনটাইতো আমার প্রথম “মা” হওয়ার দিন তাই নয় কি?
কিন্তু আমি যে বিশ্বাস করি সেটা আমার “ভুমিষ্টদিন” । বিশ্বাস করি বলতে, আমি কিছুটা যুক্তিবাদী তাই আমার মতে ঐদিনটা জন্মদিন নয়, ঐদিনটা “ভুমিষ্টদিন” । যেদিন প্রতিটি শিশু তার মা-বাবার ভালবাসায় সিক্ত হয়ে এই পৃথিবীর আলোতে আসে ।
“মা” খুব রাগ করলেন, অনেকটা চটেও গেলেন, ক্ষেপে গিয়ে বাবাকে ডেকে বললেন তোমার ছেলে কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলে শোন । বাবা প্রতি উত্তরে বললেন, ছেলে বড় হয়েছে কত কথায় এখন বলবে......।
যাই হোক, মাকে আমি আমার যুক্তির কথাটা বলতে পারিনি কারন মা চটে গিয়েছিল, আপনাদের বলতে আমার এতটুকু দ্বিধাবোধ নেই । আমরা সবাই জানি, প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর অসীম ভালবাসার ফসল এই আমরা সন্তানেরা । আমরা আমাদের বয়স গননা শুরু করি সেই দিন থেকে যেদিন আমরা প্রথম এই পৃথিবীর আলোতে আসি। সমস্ত ভর্তি ফরম, জন্মসনদ, বিবাহ রেজিস্ট্রি, পাসপোর্ট, যেখানেই জন্মদিনের কথা লেখা থাকে সেখানেই যেদিন আমরা পৃথিবীতে আলো দেখেছিলাম সেইদিনের কথা লেখে রাখি । আমরা সব জায়গাতেই “ভুমিষ্টদিনের” কথাই লিখি কিন্তু ”জন্মদিনের” কথা লিখিনা।
সত্যি বলতে আমরা নিজেরা তো বটেই আমাদের বাবা-মায়েরাও জানেনা আমাদের সঠিক “জন্মদিন” কবে??
সবাই ধাক্কা খেলেন মনে হচ্ছে, অনেকেই আমাকে মনে মনে গালাগালি দিতে পারেন। আমার এই কথাটা শোনা মাত্র সবাই নানা রকম কথা শোনাতে আমাকে বাকি রাখেনি। আমি পাগল, বেশি বুঝি, দুই কলম লেখাপড়া জেনে বেশি কপচাই আরো কত কথা। আমিও শুনেছি কিন্তু আমি আমার যুক্তির পথ থেকে এতটুকু সরে আসিনি।
আমরা যেদিন পৃথিবীর আলো দেখি সেদিন আমাদের “ভুমিষ্টদিন”।
আর আমাদের বাবা-মায়েরা প্রথম যেদিন সফল মিলনের মাধ্যমে শুক্রানু-ডিম্বানুর সঠিক মিলন ঘটিয়েছিলেন সেদিনটাই প্রকৃতপক্ষে আমাদের “জন্মদিন”। শুক্রানু-ডিম্বানুর নিষিক্ত করনের ঐদিনটা কবে ছিল তা আমরাতো নয়ই আমাদের বাবা-মায়েরাও সঠিক ভাবে বলতে পারবেনা। কারন তাদের মনেতো এই প্রশ্ন কখনওতো আসেনি যে তাদের সন্তানেরা জিজ্ঞেস করতে পারে আসলে তাদের সঠিক জন্ম কবে??
এই হিসাব ভুমিষ্টদিন থেকে ১০ মাস ১০ দিন বাদ দিয়েও করা সম্ভব নয়, কেননা সবাইতো আর গর্ভে ১০ মাস ১০ দিন পূর্ণ করতে পারেনা। কেউ ১০ দিনে আগেই জন্মায়, কেউ ১ মাস আগেও জন্মায়, আবার দুই মাস আগেও জন্মায়।
গেল প্রজন্ম হয়তো জানতে পারেনি কিন্তু আগামী প্রজন্মকে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানতে দিতে হবে।
আর কত আমরা ভুল দিনে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবো? তাই আমার প্রত্যাশা চলুন আমরা সবাই ভুমিষ্টদিনের শুভেচ্ছা জানাই। অন্যকেউ উৎসাহিত করি যেন ভুমিষ্টদিন নয় জন্মদিন কোনটা জানার চেষ্টা করুন।
সকল মা-বাবাদের প্রতি অনুরোধ জানাই, আপনার সন্তানের সঠিক জন্মদিনটা জেনে রাখুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।