আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"The Wizard of Rhymes" ছন্দের জাদুকর খ্যাত কবি ও ছড়াকার সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমি সত্য জানতে চাই সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত প্রখ্যাত বাঙালি কবি ও ছড়াকার। কবিতার ভূবনে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলা সাহিত্যে তাঁর কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষা যথোপযুক্ত ব্যবহারের কৃতিত্বের জন্য তাঁকে ছন্দের যাদুকর "The Wizard of Rhymes" নামে আখ্যায়িত করা হয়। রবীন্দ্রযুগের কবি হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু, ছন্দ, নির্মাণ কৌশল এবং শব্দ ও ভাষার কারুকার্যময়তায় উজ্জ্বল তাঁর প্রতিটি রচনা। নানা ধরণের ছন্দ উদ্ভাবনে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বি।

তিনি নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর ইত্যাদি একাধিক ছদ্মনামে কবিতা চর্চা করতেন। মেথরদের মতো অস্পৃশ্য ও অবহেলিত সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন। এই কবির কবিতা আজো পাঠকদের অনুরনিত করে। সবিতা, সন্ধিক্ষণ, বেনু ও বীনা, কুহু ও কেকা, ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। বাংলা সাহিত্যের এই খ্যাতিমান কবি মাত্র ৪১ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তাঁর মৃত্যুদিন। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। প্রখ্যাত কবি ও ছান্দসিক সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার কাছে নিমতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতামহ অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন । তার পৈতৃক নিবাস বর্ধমানের চুপী গ্রামে।

পিতা রজনীনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং পিতামহ অক্ষয় কুমার দত্ত ছিলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক। সত্যেন্দ্রনাথের কবিতায় নানা ভাষার শব্দ নিপুণ ছন্দে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদকর্মও করেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৯) এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফএ (১৯০১) কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করার আগে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পিতার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতী পত্রিকাগোষ্ঠীর অন্যতম কবি।

প্রথম জীবনে তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, অক্ষয় কুমার বড়াল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে রবীন্দ্র অনুসারী হলেও তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফার্সি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই। অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান। নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর প্রভৃতি ছদ্মনামে তিনি কবিতা লিখতেন।

দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু। ১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ছন্দ সম্পর্কিত তার প্রসিদ্ধ রচনা ‘ছন্দ-সরস্বতী’ প্রকাশিত হয়। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফারসি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই। তাঁর অপর কৃতিত্ব বিদেশী কবিতার সফল অনুবাদ। আরবি-ফারসি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে বাংলাসাহিত্যের বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি সাধন করেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।

তিনি কয়েক শত ভারতীয় ও বিদেশি কবিদের কবিতার অনুবাদ করেছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথের অনুবাদের একটা বড় অংশ হল ফরাসি কবিতার অনুবাদ ৷ তিনি মোট আটষট্টিটি ফরাসি (তার মধ্যে পাঁচটি দক্ষিণ ফ্রান্সের উপভাষায়) কবিতার বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। এই কবিতাগুলি রয়েছে তাঁর ‘তীর্থসলিল’, ‘তীর্থরেণু’ ও ‘মণিমঞ্জুষা’ নামক তিনটি অনূদিত কবিতার সংকলনে৷ । মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, পৌরাণিক প্রভৃতি বুদ্ধি-বৃত্তিবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্তের অধিকারী ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মঃ কাব্যগ্রন্থ ১।

সবিতা (১৯০০), ২। সন্ধিক্ষণ (১৯০৫), ৩। বেণু ও বীণা (১৯০৬), ৪। হোমশিখা (১৯০৭), ৫। কূহ ও কেকা (১৯১২), ৬।

তুলির লিখন (১৯১৪), ৭। অভ্র-আবীর (১৯১৬), ৮। হসন্তিকা (১৯১৯), ৯। বেলা শেষের গান এবং অনুবাদ গ্রন্থঃ ১। তীর্থ সলীল, ২।

তীর্থ রেণু ৩। ফুলের ফসল ইত্যাদি বাংলা কবিতার ছন্দের জাদুকর কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। বাংলা সাহিত্যের এই খ্যাতিমান কবি মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ জুন তারিখে পরলোকগমন করেন। আজ তাঁর মৃত্যুদিন। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা ভক্তদের জন্য তাঁর "ছিন্নমুকুল" কবিতাখানি উৎসর্গ করলাম যা পাঠে এখনো আমার নয়ন আদ্র হয়ে ওঠে। "ছিন্নমুকুল" সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত সবচেয়ে যে ছোট পিড়ি খানি সেখানি আর কেউ রাখেনা পেতে, ছোট থালায় হয় নাকো ভাতবাড়া জল ভরে না ছোট্ট গেলাসেতে । বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে যে ছোট খাবার বেলা কেউ ডাকে না তাকে । সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল, তারই খাওয়া ঘুচেছে সব আগে । সবচেয়ে যে অল্পে ছিল খুশি, খুশি ছিল ঘেষাঘেষির ঘরে, সেই গেছে হায়, হাওয়ার সঙ্গে মিশে, দিয়ে গেছে জায়গা খালি করে ।

ছেড়ে গেছে পুতুল, পুঁতির মালা, ছেড়ে গেছে মায়ের কোলের দাবি । ভয়ভরা সে ছিল যে সব চেয়ে সেই খুলেছে আঁধার ঘরের চাবি । হারিয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে ওরে ! হারিয়ে গেছে ‘বোল’ বলা সেই বাঁশি দুধে ধোওয়া কচি সে মুখখানি আঁচল খুলে হঠাৎ স্রোতের জলে ভেসে গেছে শিউলী ফুলের রাশি , ঢুকেছে হায় শশ্মান ঘরের মাঝে ঘর ছেড়ে হায় হৃদয় শশ্মানবাসী । সবচেয়ে যে ছোট কাপড়গুলি সেইগুলি কেউ দেয় না মেলে ছাদে, যে শয্যাটি সবার চেয়ে ছোট, আজকে সেটি শূন্য পড়ে কাঁদে । সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল সেই গিয়েছে সবার আগে সরে ।

ছোট্ট যে জন ছিল রে সবচেয়ে, সেই দিয়েছে সকল শূন্য করে । ছন্দের যাদুকরী কবির আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুনঃ সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতার ভুবনে স্বাগতম  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।