আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এরই নাম ঢাকা, আপার মেয়ে আপা!

আমি দির্ঘদিন ধরে ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকি। বয়স অনুযায়ী বাড়ীওয়ালা/ওয়ালীকে যেমন ইচ্ছে ডাকি। তবে আমার নিজের ইচ্ছাটা সবসময় সব বাড়ীর মালিকের পছন্দ হয় এমনটি নয়। তার বাস্তব প্রমাণ মিলল বর্তমান বাসার বাড়ীওয়ালীর সাথে পরিচয় হবার পর থেকে। ঘটনাটি সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছি।

এপ্রিলের শুরুতে নতুন বাসা খুজতে খুজতে চোখে ধান্ধা লেগে যায়। কি সকাল...আর কি বিকাল..বাসা খুজতেছি আর খুজতেছি। অবশেষে মিলল পছন্দসই একটি সুন্দর ও মনোরম ফ্ল্যাট বাসা। পাচতলা বাড়ীর ২য় তলা। দুই বেড়, ডাইনিং, ড্রইং, দুই বারান্দা ও দুই বাথরুম।

ফ্ল্যটের উত্তর দিক বাদে তিন দিকেই খোলা আকাশের হাতছানি চোখে পড়ে। বাসাটি আমি ও আমার স্ত্রী ভালভাবে দেখে ও সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে বাড়ীওয়ালীর সাথে কথাবার্ত চুড়ান্ত করতে যাই। বাড়ীওয়ালীকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ‌‌'মা' বলে ডাকলেন। ভাবলাম যার এত বড় একটা মেয়ে তাকে আন্টি বলে ডাকাই ভাল। বললাম, আন্টি বাসা দেখে মোটামুটি পছন্দ হইছে এখন ভাড়া পছন্দ হলে আজই এ্যাডভান্স করে যাব।

বাড়ীওয়ালী বেশ বাকপটু এবং খোলামেলা মনের মানুষ। আলাপচারিতার ফাকে আমি ওনাকে বেশ কয়েকবার আন্টি বলে সম্বোধন করেছি। শেষ পর্যন্ত ভাড়া ও আনুসঙ্গিক বিষয়াদি চুড়ান্ত হয়ে গেল। এরপর বললাম আন্টি, তাহলে কিছু এ্যাডভান্স করে যাই? প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, এই মাহবুব ভাই-কিসের আন্টি আন্টি লাগাইছেন! আন্টি মান্টি ভাল লাগেনা..আপা কন..। বললাম, ছরি আপা.. ঠিক আছে।

সেই থেকে বাড়ীওয়ালীকে আপা বলে সম্বোধন শুরু করি। এখনো মধুর শুরে আপা বলে ডেকে যাচ্ছি। আর যতদিন এই বাসায় থাকবো ততদিন এই আপা বলেই ওনাকে ডাকবো বলে পণ করেছি। তাতে আমার কোন সমস্যা নাই। কিন্তু সমস্যা হলো-ওনার মেয়েকে নিয়ে।

বাসার ছাদের চাবি আনতে গিয়ে দেখি বাড়ীওয়ালীর মেয়ে অন্যদিকে মুখ করে কি যেন একটা করছেন। কয়েকবার খোলা দরজায় কড়া নাড়লাম, সাড়া নেই। আমিও ইতস্তত বোধ করছি-যে তাকে কি বলে ডাকবো। তার মাকে যদি আপা বলি তাহলে তাকেতো আপনাআপনিই আন্টি বলে ডাকতে হবে। কিন্তু তার আম্মার অসন্তোশের কথা মনে পড়লো, যে একজন ৪৫ উর্দ্ধো মহিলা যদি আন্টি ডাকা পছন্দ না করেন তাহলে ২৫ বছরের একটা মেয়ে কিভাবে সেটা বরদাস্ত করবেন।

তাই কোন রিস্কের ভিতর না গিয়ে তাকেও আপা বলে ফেললাম। বললাম, আপা ছাদের চাবিটা একটু দিবেন! চাবিটা হাতে নিয়ে এসে বললেন, এই নেন ভাইয়া। ধন্যবাদ দিয়ে ছাদে উঠার সিড়িতে দেখা হলো বাড়ীওয়ালীর সাথে, ছাদে যাবেন কেন মাহবুব ভাই? বললাম, আচার শুকাতে আপা! এরপর বাসায় ফিরলাম। বাড়ীওয়ালী আপার মেয়ের সাথে মাঝে মধ্যে দেখা হলে তার কুশলাদি জিজ্ঞেস করি। সেদিন মা-মেয়ে দুজন বাসায় হাজির।

দুজনকে কিছুই বলা হলোনা, কোন সম্বোধন ছাড়াই আপ্যায়ন করলাম আপা ও তার মেয়ে আপাকে। এতদিনে বুঝলাম "এরই নাম ঢাকা, আপার মেয়ে আপা!" ## ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।