লিখে খাই, সবার ভাল চাই
এক গ্রামে ছিল এক কূটবুদ্ধির লোক। কূটনামি করতে না পারলে তার পেটের ভাত হজম হতো না। রাতের ঘুম হতো হারাম। তাই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সুযোগ বুঝে তিনি নেমে পড়তেন কূটনামিতে। বিষয়টি গ্রামের সবাই জানেন।
একদিন ওই কূটনা ক’জন কামলা নিয়ে তার ধানের জমিতে আগাছা সাফ করছিলেন। হঠাৎ দেখেন রাস্তা দিয়ে বরযাত্রী যাচ্ছে। তার তো মাথা গরম হয়ে গেছে। কার বিয়ে? এ বিয়ের খবর আমি জানলাম না কেন? আমি তো কূটনামি করতে পারিনি। এক কামলাকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেন পাশের গ্রামের রহমতের মেয়ের বিয়ে।
আর যায় কোথায়? কূটনা হাতের কাজ ফেলে আস্তে আস্তে বরযাত্রী বহরের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। জিজ্ঞেস করেনÑবরের বাবা কে? এগিয়ে আসেন বরের বাবা। বলেন, আচ্ছা বলুন তো সবাই আমাকে কূটনা বলে ডাকে। এই যে আজ আপনি আপনার ছেলেকে রহমতের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে যাচ্ছেন এতে আমি মহা খুশি। কিন্তু মেয়ে যে রাতে ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে আমি কি তা আপনাদের বলেছি?
আসলে কথায় বলে নাÑ কয়লা যায় না ধুলে, অভ্যাস যায় না মরলে।
যার যে অভ্যাস কখনও তা বদলাবে না। দেশের রাজনীতি এখন উত্তপ্ত। গুম নিয়ে গোটা দেশে এখন আলোচনা। বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী গুম নিয়ে খই ফুটছে রাজনীতিতে। বিরোধী দল তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সরকারকে দোষারোপ করছে।
আর সরকারি দলও একইভাবে বিরোধী দলকে দুষছে। কিন্তু দু’সপ্তাহ পার হলো ইলিয়াস আলীর কোন খোঁজ মেলেনি। সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাদের মনোভাব জানিয়েছেন। বলেছেন, ইলিয়াসকে জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এরপর কি সরকার কিংবা আওয়ামী লীগের কোন নেতার এ সম্পর্কে মন্তব্য করা উচিত? কিন্তু দেশবাসী অবাক হন, যখন দেখেন সরকারের হয়ে কথা বলছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম হানিফ।
প্রশ্ন জাগে, তিনি কি সরকারের মুখপাত্র? সরকার কি তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন ইলিয়াস গুম বিষয়ে সরকারের মনোভাব মিডিয়ার সামনে জানাতে? এমন কোন কথা তো ইদানীংকালে তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়নি। ওদিকে এক ধাপ এগিয়ে একটি অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান ইলিয়াসের স্ত্রীকে বিধবা বলে উল্লেখ করেছেন। এ নিয়ে হৈচৈ হচ্ছে সারাদেশে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান তো প্রশ্নই তুলেছেনÑ শ্রম প্রতিমন্ত্রী কিভাবে জানলেন ইলিয়াস আলী খুন হয়েছেন? আসলে সবই অতিকথনের ফল। দেশ এ থেকে মুক্ত হবে কিভাবে? এ প্রশ্ন রাখতেইÑ দাদা উপরের গল্পটি শুনিয়ে দিলেন।
বললেন, সমাজে এ ধরনের লোক যতদিন সক্রিয় থাকবে ততদিন অশান্তিও থাকবে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দাদা আরও বললেন, যার যে দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করলেই সমাজ বিশৃঙ্খলমুক্ত হবে। কিন্তু আমাদের সমাজে যে তা হওয়ার নয়। যুগে যুগে কূটনারা ছিল, থাকবে।
যারা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে পারে তারাই জয়ী হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইলিয়াসের স্ত্রী, সন্তান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ইলিয়াসের স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেন। সান্ত্বনা দেন। বলেন, ইলিয়াসকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের।
ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী। দেরি হলেও রাষ্ট্রনায়কোচিত কথা বলার জন্য। শুধু তা-ই নয়। ইলিয়াসের স্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রার্থনার জবাবও প্রধানমন্ত্রী চটজলদি দিয়েছেন। যা প্রশংসা কুড়িয়েছে সারাদেশে।
এখন ইলিয়াসের স্ত্রী’র সঙ্গে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর কথার বাস্তবায়ন দেখতে চায় সাধারণ মানুষ। তারা এ অপেক্ষায়ই আছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যের পর আর কোন নেতা এ নিয়ে কোন কথা বলবেন না। দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হন এমন মন্তব্য করবেন না। এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।