আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুম-খুনের রাজনীতি আর জামায়াতের নারদ-নারদ রব!!

বাংলাদেশের রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন এবং গুম-খুনের রাজনীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে জেনারেল জিয়ার আমল থেকে, যার জের এখনও চলছে। জিয়ার আমলে অভ্যুত্থান দমনের অজুহাতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় দুই হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে, যার কোন তদন্ত ও বিচার হয়নি। জিয়ার সুযোগ্য সহধর্মিণী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে জিয়া হত্যারও বিচার করেননি। জিয়া হত্যার পর রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ যে ১৩ জন সামরিক কর্মকর্তাকে বিচারের প্রহসন করে হত্যা করেছেন তাঁরা সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। জিয়া হত্যার অভিযোগে তাদের বিচার হয়নি।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গের। খালেদা জিয়া দু’বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, কেন তিনি তাঁর স্বামী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকারীদের বিচার করেননি এ প্রশ্নের জবাব তাকেই দিতে হবে। জিয়া ’৭১-এর খুনীদের বিচার থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন, খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খুনীদের বিচার করেননি, ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’-এর নামে যে সব খুন ও গুমের ঘটনা ঘটেছে তার নায়কদের বিচার থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তার শেষ জমানায় সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যে নজিরবিহীন খুন, গুম ও সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিল তারও বিচার হয়নি, বলা হয়েছে এ রকম ঘটনা নাকি বাংলাদেশে ঘটেনি, শাহরিয়ার কবির ও মুনতাসীর মামুনরা সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে, ওদেরই গ্রেফতার করে বিচার করতে হবে এবং তা তিনি করেছেনও। খালেদা জিয়া তাঁর দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ঘটনায় যেভাবে মাতম করছেন মনে হচ্ছে বাংলাদেশে এর আগে গুম ও খুনের ঘটনা ঘটেনি।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার খবর এবং এর প্রতিক্রিয়া গত ১৫ দিন যাবত বাংলাদেশের প্রতিদিনের সংবাদপত্রে প্রধান শিরোনাম হচ্ছে। বিএনপির একজন বিতর্কিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ নেতার এহেন অন্তর্ধান সরকারের জন্য যেমন এক বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তেমনি বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারী দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধান একটি সাজানো নাটক। বিএনপির নেতারা বলছেন, তাদের নেতাকে সরকারই গুম করেছে।

আওয়ামী লীগ দুষছে বিএনপিকে আর বিএনপি দুষছে আওয়ামী লীগকে; মাঝখানে জামায়াত বসে ‘নারদ নারদ’ বলে বগল বাজাচ্ছে। ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধান যে কোন শান্তিপ্রিয় নাগরিকের জন্য উদ্বেগনজক ঘটনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং পুলিশ ও গোয়েন্দাদের উপর্যুপরি আশ্বাসবাণী আমজনতাকে এতটুকু স্বস্তি দিতে পারছে না। ইলিয়াস আলীকে যেই গুম করুক সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। কেউ তাকে হত্যা করলেও লাশ খুঁজে বের করে অপরাধীদের শনাক্ত করা সরকারের গোয়েন্দাদের দায়িত্বের অন্তর্গত।

আমরা জানি গোয়েন্দা বাহিনী ইলিয়াস আলীকে খুঁজছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের অথর্ব মনে করার কোন কারণ নেই। কোন রাজনৈতিক চাপ বা আর্থিক লেনদেনের বিষয় না থাকলে ইলিয়াস আলীর মতো বহুল পরিচিত অন্তর্হিত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা এমন কোন কঠিন কাজ নয়। আমরা জানি না আমাদের গোয়েন্দাদের সন্দেহের তালিকায় জামায়াত বা তাদের পোষ্য জঙ্গীরা কিংবা তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বি কোন গোয়েন্দা সংস্থা আছে কি না। রাজনৈতিক নেতাকর্মী খুন ও গুম হওয়া পাকিস্তানে এখন এক মারাত্মক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।

সেখানে হত্যা ও গুমের তালিকায় গবর্নর, মন্ত্রী, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, দেশী-বিদেশী সাংবাদিক, পর্যটক, পেশাজীবী কেউ বাদ নেই। পাকিস্তানের তালেবান, আল কায়দা, সমগোত্রীয় জঙ্গী মৌলবাদী এবং তাদের স্রষ্টা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’ এই হত্যা ও অপহরণযজ্ঞে যারপরনাই পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। পাকিস্তানের এই কর্কট ব্যাধি বাংলাদেশে সংক্রমিত করতে পারে জঙ্গী মৌলবাদীদের গডফাদার জামায়াতে ইসলামী, যাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংগঠনিক ও সন্ত্রাসী কর্মকা- দুই দেশে সমানভাবে বিস্তৃত। মওদুদী-গো আযমদের জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে ও পাকিস্তানে আনুষ্ঠানিকভাবে দু’টি পৃথক দল হলেও আদর্শগতভাবে দুই দলই সৌদি ওহাবিবাদের অনুসারী। দুই দলেরই কার্যক্রম পরিচালিত হয় এক কেন্দ্র থেকে।

বাংলাদেশে জামায়াতের ছয় জন শীর্ষ নেতাকে ’৭১-এর গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পর থেকে পাকিস্তানের জামায়াত নেতাদেরও ঘুম হারাম হয়ে গেছে। প্রতিপক্ষকে খুন ও গুম করার কলাকৌশল যে কোন সন্ত্রাসীকে নতুন করে শিখতে হবে পাকিস্তানের জামায়াত ও জঙ্গীদের কাছ থেকে। সূত্র: ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।