আজ বাংলাদেশকে দেখলে কোনো একক রাষ্ট্র মনে হয় না। মনে হয় পৃথিবীর দুই প্রান্ত থেকে দুই জাতি এই ভূখন্ডে এসে মিলিত হয়েছে। কেন এমন হল ? এই বহু মিশ্র প্রাণের সংসার যেখানে আমাদের সুনাম ছিল অসাম্প্রদায়িকতার উদাহরণ হিসেবে সেখানে আমাদের আজ এতো শোচনীয় অবস্থা কেন ?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের একটু ২০০ বছর পিছনে যেতে হবে। আমরা আসলেই এক কালে ছিলাম এক পরিবারের মত। শত শত বছর ধরে আমাদের এই সুনাম টিকে ছিল।
সাম্প্রদায়িকতা আমাদের স্পর্শ করতে পারে নি। কারন তখন সবাই সত্যিকার অর্থেই ধর্ম পালন করত। শান্তির ধর্ম ইসলামের চর্চা হত প্রকৃত অর্থেই। তারপর ইংরেজরা আসল। আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেল এটা হল ধর্মীয় জীবন আর এটা হল সামাজিক জীবন।
ধর্ম আর সমাজকে কখনও এক করা যাবে না। অথচ ধর্মের আবির্ভাবই হয় এই সমাজ ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য। তারা এটা করেছিল কারন এ ছাড়া তারা বাঙ্গালীর ঐ আত্মিক বন্ধনে ফাটল ধরিয়ে আধপত্য বিস্তার করতে পারত না। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে তারা নিজেরা মাওলানা প্রশিক্ষণ দিত। তারপর তাদের এখানে পাঠানো হত নতুন মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
ওয়াহাবী ও মাজহাবী তারই ফসল। এভাবে করে প্রথমে বিভক্ত করা হল মুসলমানদের তারপর দ্বন্দ্ব লাগানো হল হিন্দু-মুসলিমের। যে রেশ আমরা আজও কাটিয়ে উঠতে পারি নি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। আমাদের সমাজে যারা ধর্ম বুঝে তারা সমাজ বুঝে না।
আর যারা প্রগতিশীল তারা ধর্মের পরোয়া করে না। কিন্তু ইসলাম প্রগতি আর আধ্যাত্মিকতা দুইয়ের সমন্বয়েই গঠিত অর্থাৎ ইসলাম একটি প্রগতিশীল ধর্ম। মসজিদে আমরা আল্লাহ আল্লাহ করি কিন্তু বাইরে বের হলেই বাস্তবতার খাতিরে ধর্মকে ভুলে যাই। অন্যায় অপরাধ দূর্নীতি করার সময় বলি বাস্তবতাকে মাঝে মাঝে মেনে নিতে হয়। অথচ এটা কখনও বাস্তবতা ছিল না।
বাস্তবতা ছিল অন্তরে আল্লাহকে স্মরণ করে সকল ধরনের অন্যায় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা।
আজ আমাদের দেশে একদল হচ্ছে ধর্মান্ধ আর আরেক দল হল ধর্ম বিদ্বেষী। এর আরেকটা কারন হচ্ছে আমদের শিক্ষা ব্যবস্থা। আমাদের দেশে যে ছাত্র মাদ্রাসা থেকে পাশ করে তারা ইংলিশ মিডিয়ামের এক ছাত্রকে দেখলে বলে পাগল আর যে ইংলিশ মিডিয়াম থেকে পাশ সে এক মাদ্রাসার ছাত্রকে দেখলে বলে পাগল আর এক বাংলা মিডিয়ামের ছাত্র ঐ দুই ছাত্রকে দেখে বলবে পাগল। এভাবে যখন একই সমাজে জন্ম থেকেই ভিন্ন ধরনের মানুষ তৈরী হচ্ছে তখন সে সমাজের মানুষ একত্র হবে কীভাবে ?
দেশে আজ যেমন দুই মতবাদ সৃষ্টি হয়ে গেছে যে শাহবাগীরা সব নাস্তিক আর হেফাজতে ইসলামীর সব রাজাকার ভন্ড এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল।
এই হিসেবে বলা যায় বাঙ্গালীর ইতিহাসে ষাট-সত্তরের দশক ছিল আমাদের জন্য স্বর্ণযুগ। আমাদের মধ্যে এক চেতনা সৃষ্টি হয়েছিল যে বাঁচতে হলে আমাদের এক হতে হবে। সেই চেতনা আর নেই আমাদের মাঝে।
সব শেষে বলি সবাই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দাবী করে তারা সঠিক পথে আছে। তাই ন্যায় অন্যায়টা এখন এক আপেক্ষিক ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমি সাদা কালোর বাইরে নিজেকে ধূসর রাখতে পছন্দ করি। অথচ আমাদের মত মানুষের এখন সমাজে কোন অস্তিত্ব নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।