বিকল্প গনমাধ্যমের চিন্তা থেকেই এখানে একটু লেখালেখি করি সৌদি আরবে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত আরো দুই বাংলাদেশি নাগরিকের শিরোশ্ছেদ করা হয়েছে। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ এ খবর জানিয়েছে।
সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জিযানে বাংলাদেশি নাগরিক মোহাম্মাদ কবিরকে হত্যার দায়ে নুজুম আব্দুশ শরিফ ও আব্দুল মজিদ হামজার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। অভিযুক্তরা কবিরকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা টিপে হত্যার পর তার টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে গত বছর অক্টোবরে সৌদি আরবে ডাকাতি ও এক মিশরীয় নাগরিককে হত্যার অপরাধে আট বাংলাদেশি শ্রমিকের শিরোশ্ছেদ করা হয়েছিল।
এ নিয়ে সৌদি আরবে চলতি বছর ২২ জনের শিরোশ্ছেদ করা হলো। গত বছর খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, মাদক চোরাচালান ও ধর্মান্তরিত হওয়ার অভিযোগে দেশটিতে ৭৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, বিশ্বে মৃতুদণ্ড কার্যকর করার দিক থেকে সৌদি আরব তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
তর্থসূত্র-
আলোচিত সংবাদ
আন্তঃধর্ম বিয়ে ও উত্তরাধিকার আইন নিয়ে সরকার-আলেম বিরোধ
ঢাকা, ১ মে: বিশেষ বিবাহ আইন প্রণয়ন করে আন্তঃধর্ম বিবাহের অনুমোদন করা এবং ছেলে না থাকলে কন্যাসন্তানকে পুরো সম্পদের মালিক করে মুসলিম পারিবারিক আইন সংশোধনের উদ্যোগে সরকারের সঙ্গে দেশের আলেমসমাজের বিরোধিতা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।
আইন দুটি পাসের ইঙ্গিত দেয়ার পর থেকে আলেমদের বিভিন্ন সংগঠন একে ইসলাম বিরোধী আখ্যায়িত করে বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
অন্যদিকে, সরকার বলছে প্রস্তাবিত আইনে ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো কথা নেই।
আন্তঃধর্ম বিবাহ প্রসঙ্গ
জানা যায়, নিজ ধর্ম বিশ্বাস বাদ দিয়ে যেসব নারী-পুরুষ বিবাহ করতে আগ্রহী তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি করতে গত ১৮ এপ্রিল আইনমন্ত্রীর এপিএস (সহকারী একান্ত সচিব) আকছির এম চৌধুরীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতদিন এই বিয়ে পড়ানোর একমাত্র স্থান হিসেবে নির্ধারিত ছিল পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী শরৎচন্দ্র ব্রাক্ষ্র প্রচারক নিবাস। এখানের প্রাণেশ সমাদ্দার ছিলেন সরকার নিযুক্ত একমাত্র রেজিস্ট্রার। এখন উভয়ে এই বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে পারবেন।
এখানে সবাই স্বাধীনভাবে যেকোনো ধর্মের (হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-মুসলমান) নারী-পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন।
এই আইন অনুযায়ী একজন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদি কিংবা অন্য যেকোনো ধর্মের যে কেউ যে কাউকে বিয়ে করতে পারবে। এজন্য পাত্র-পাত্রী কাউকেই ধর্মান্তরিত হতে হবে না। ধর্ম পরিবর্তন ছাড়াই তারা দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করতে পারবে। ইচ্ছে করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে অথবা যেকোনো একজন নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস বাদ দিতে পারে।
এ ধরনের বিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেয়া সন্তানদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় থাকবে না। বড় হয়ে (১৮ বছর) তারা যেকোনো ধর্ম বেছে নিতে পারবে অথবা ধর্ম বিশ্বাস ছাড়াই জীবন যাপন করতে পারবে।
জানা গেছে, ১৮৭২ সালে প্রণীত বিবাহ আইনের আলোকে এটা করা হচ্ছে।
সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের আলেম সমাজ। তাদের দাবি, এটা সরাসরি ইসলামের পরিপন্থী।
কারণ ইসলাম ধর্ম মতে, অন্য কোনো ধর্মের কাউকে বিয়ে করতে হলে তাকে আগে ইসলাম গ্রহণ করতে হবে।
তাদের মতে, এই আইনের ফলে ধর্ম পরিচয়হীন একটি উচ্ছৃঙ্খল ও অসামাজিক প্রজন্ম গড়ে উঠবে। মুসলমানেরা তাদের জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, উত্তরাধিকার ইত্যাদি ধর্মীয় আইনের পবিবর্তন মেনে নিতে পারে না। বাংলাদেশ কখনো ধর্মহীন প্রজন্মের জন্য নয়। তারা এ ধরনের আইনের সংশোধন দাবি করেন।
উত্তরাধিকার আইন
উত্তরাধিকার সম্পদে মেয়ের অধিকার নিশ্চিত করতে ১৯৬১ সালের মুসলিম আইনের সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই সংশোধনী ছেলে সন্তানের অবর্তমানে বাবার সম্পদে মেয়ে সন্তানের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করবে। এ আইনটি কার্যকর হলে ছেলেহীন ব্যক্তির সম্পদে মেয়ে সন্তানের জ্ঞাতিভাইদের আর কোনো অধিকার থাকবে না।
গত ১৯ এপ্রিল রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী এ ধরনের আইন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে মন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে এ ধরনের আইন পাস করার আগে ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথাও বলেছেন।
শীর্ষ আলেমদের বক্তব্য অনুযায়ী, উত্তরাধিকার আইনে এ ধরনের সংশোধন সম্পূর্ণ ইসলাম পরিপন্থী এবং কোরআনের সঙ্গে সরাসরি বিরোধিতা। ত্যাজ্য সম্পত্তি কে কতটুকু পাবে তা কোরআনে স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে। এখানে নতুন করে আইন করার কোনো প্রয়োজন নেই।
আলেমদের প্রতিবাদ
আন্তঃধর্ম বিয়ে ও উত্তরাধিকারসংক্রান্ত দুটি আইনেরই বিরোধিতা করেছেন দেশের শীর্ষ আলেমরা। নানা ইস্যুতে তাদের আভ্যন্তরীণ বিরোধ থাকলেও এ ক্ষেত্রে সবাই একমত হয়ে এ ধরনের আইন প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার পৃথক বিবৃতিতে তারা দাবি করেছেন, ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার যে বিশেষ বিবাহ আইন প্রণয়ন করেছিল, ওই আইন বর্তমান সরকার আবার প্রবর্তন করছে।
বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সভাপতি শাহ আহমদ শফি, মহাসচিব আবদুল জব্বারসহ শিক্ষা বোর্ডের নেতারা যৌথ বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, সরকার বিশেষ বিবাহ আইন করে আগামী প্রজন্মের মুসলিম পরিচয় বিলুপ্তির ষড়যন্ত্র করছে। সব ধর্মের লোকদের জন্য আন্তঃধর্ম বিবাহ চালুর মাধ্যমে দেশে ধর্মহীন প্রজন্ম তৈরির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীও এ আইন প্রণয়নের নিন্দা জানিয়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য বিশেষ করে আলেমসমাজের প্রতি আহবান জানিয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে দাবি করেন, এ আইন প্রণয়ন করে সরকার দেশের মুসল-মানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করেছে।
পৃথক বিবৃতিতে সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদের নেতারা বলেন, নিজ নিজ ধর্ম অক্ষত রেখে ছেলেমেয়েদের বিয়ের বৈধতা দিয়ে যে বিবাহ আইন পাস করা হয়েছে, তা কোরআনের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা
সোমবার আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিবাহ আইন সম্পর্কে একটি ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বিশেষ বিবাহ আইনটি ১৮৭২ সালে প্রণীত। এ আইন এখনো বর্তমান আছে। বর্তমান সরকারের সময় এ আইনের কোনো প্রকার সংশোধন হয়নি।
আইনটি অপরিবর্তিত অবস্থায় বহাল আছে। তাই সরকার ও আইমন্ত্রী বিয়ে-শাদী থেকে ধর্ম বাদ এবং সন্তানের কোনো ধর্মীয় পরিচয় নেই বলে আইন পাস করার বক্তব্য ভিত্তিহীন।
ব্যাখ্যায় বলা হয়, ১৮৭২ সালের বিশেষ বিবাহ আইনে বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তি খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু, মুসলিম, পার্সি, বৌদ্ধ, শিখ অথবা জৈন ধর্মের অনুসারী নয় এবং যেসব ব্যক্তি হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ অথবা জৈন ধর্মের অনুসারী তাদের কতিপয় বিয়ে সন্দেহযুক্ত ও আইনসম্মত করার লক্ষ্যে এ আইন করা হয়েছে। এ আইন কোনোভাবেই মুসলিম বিবাহ আইনের সাথে সম্পর্কিত নয়। এ আইনের অধীনে সরকার বিশেষ বিবাহ নিবন্ধকের লাইসেন্স প্রদান করে থাকে।
এ আইনের অধীন লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিবাহ নিবন্ধক কোনো মুসলমানের বিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন না। এই আইনের অধীন নিবন্ধিত দম্পতিদের ত্যজ্য সম্পত্তির উত্তরাধিকার ১৯২৫ সালের উত্তরাধিকার আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। তথ্য বিবরণী
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বার বার ইসলামবিরোধী আইন প্রণয়ন না করার আশ্বাস দেয়া হলেও তা বিশ্বাস করতে পারছেন না দেশের আলেম সমাজ। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকার অতীতেও ফতোয়া বিরোধী রায় ও নারী নীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইসলাম ও কোরআন-হাদিসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, দেশের চলমান নানা সংকটকালে সরকারের উচিত আলেমদের সঙ্গে বসে আলোচনার ভিত্তিতে ধর্মসংক্রান্ত আইনের সংশোধন আনা।
আলেমদের সঙ্গে বিশ্বাস ও আস্থার সংকট যাতে সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে আন্তরিকতার পরিচয় দেয়া।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।